11/06/2025
একটা খবর দেখলাম। শাকিল চিত্রকর নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। বছরখানেক আগে তার এক কমেন্টে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবমাননা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তার এলাকার অনেকে সম্প্রতি সেই কমেন্টের স্ক্রিনশট সামনে আনে। তার শাস্তি দাবি করে পোস্ট দেয়।
এরপর শাকিল বেশ কয়েকটি পোস্টে নিজেকে ঈমানদার মুসলিম দাবি করে। উক্ত কমেন্টের জন্য তাওবাহ করে, তাকে ক্ষমা করে দেয়ার অনুরোধ জানায়।
শাকিল তার সর্বশেষ ফেইসবুক পোস্টে জানায় তার এবং তার পরিবারের যে অসম্মান হয়েছে তার কারণে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
পুরো ব্যাপারটা অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু এ ঘটনাকে ব্যবহার করে মতাদর্শিক রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই এর জন্য ইসলামপন্থীদের দায়ী করছেন। এর মধ্যে দেখছেন ‘ফার-রাইট’-এর উত্থান। সুশীল হতে উন্মুখ প্রজাতি বরাবরের মতো ‘তাওহিদি জনতা’কে দোষ দেয়ার জন্য ঝাপিয়ে পড়েছেন।
অথচ পুরো সমস্যাটা সেক্যুলার শাসনব্যবস্থার সাথে জড়িত। ইস্যুকেন্দ্রিক আলাপের বাইরে গিয়ে গোঁড়ায় নজর দিলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে এই পুরো ইস্যুটা বাংলাদেশের বর্তমান নিযামের সিস্টেমিক ব্যর্থতা।
এই ব্যবস্থা এমন এক শূন্যতা তৈরি করে রেখেছে যেখানে একদিকে ইসলাম অবমাননা ও আল্লাহ্ বা রাসূল (ﷺ)-কে নিয়ে কটূক্তি থামানোর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই, অন্যদিকে নির্দোষ ব্যক্তির ওপর মিথ্যা অভিযোগ আনা হলে তার সুরক্ষা নিশ্চিত করার উপায় নেই, আবার অনুতপ্ত ব্যক্তির ক্ষমারও কোনো স্বীকৃত পথ খোলা নেই।
ইসলামী শাসন থাকলে এ সবগুলো সমস্যার সমাধান করা যেতো।
ইসলামী শাসনব্যবস্থায় ইসলাম অবমাননা, আল্লাহ্ ও রাসূল (ﷺ)-কে নিয়ে কটূক্তির মতো ব্যাপারগুলো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হতো। এটা এক ধরনের ডিটারেন্ট বা প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করত।
দ্বিতীয়ত, অভিযোগ উঠলে তার আইনী তদন্ত হতো, অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে ব্যক্তি সসম্মানে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যেতে পারতেন। মিথ্যা অভিযোগকারীর শাস্তির বিধান থাকতো। এগুলো নির্দোষ ব্যক্তিকে গণরোষ বা সামাজিক ভিলিফিকেশন থেকে সুরক্ষা দিতো।
অন্যদিকে কেউ যদি সত্যিই কটূক্তি করার পর আন্তরিকভাবে তাওবাহ করতো, তখন আলেমদের পরামর্শে শাসক তাকে ক্ষমাও করতে পারতেন (হানাফি মাযহাবের মত অনুযায়ী, অন্য মতটি হলো অন্য কটূক্তিকারীরা ক্ষমা পেলেও শাতেমে রাসূলের দুনিয়াতে কোনো ক্ষমা নেই)।
অর্থাৎ, একটি সুস্পষ্ট আইনী কাঠামো থাকলে এই দুঃখজনক পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব ছিল। বর্তমান ব্যবস্থা যেহেতু এই বিষয়ে একটি আইনী ও পদ্ধতিগত শূন্যতা তৈরি করে রেখেছে, তাই এধরনের ঘটনা ঘটছে, এবং ঘটতেই থাকবে।
অবমাননা, কটূক্তি ও শাতেমে রাসূল এর ইস্যুর কোন সমাধান এই রাষ্ট্র করেনি। পুরনো আর উঠতি সুশীলরা এ নিয়ে আলাপ করতে আগ্রহী না। তারা সাধারণ সময়ে বিষয়টাকে (ক্রিয়া) দেখেও না দেখার ভান করেন, আর কোন ‘অঘটন’ (প্রতিক্রিয়া) ঘটলে দোষারোপের খেলা খেলেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও; ইসলামী কিংবা সেক্যুলার, এ নিয়ে সিরিয়াস কোন পদক্ষেপ নেয়নি। নিতে চায়ও না।
সব ইসলামিস্ট আর ‘ফার-রাইট’ যদি আগামীকাল বাংলাদেশ থেকে গায়েব হয়ে যায়, তবু এই সংকট থেকে যাবে। এই ইস্যু কোনো দিন তামাদি হবে না। যতো দিন এই যমীনে ঈমান থাকবে ততোদিন অবমাননার প্রতিক্রিয়াও থাকবে। সমাধান চাইলে অবমাননা বন্ধ করতে হবে।
যারা আজকে হায় হায় করছেন তারা যদি আসলেই আন্তরিক হতেন তাহলে সমস্যার মূলে হাত দিতেন। তা না করে আজকের এই বিলাপ একটা সামাজিক-রাজনৈতিক পারফর্মেন্সের বেশি কিছু হয়ে উঠবে না।