22/10/2025
দেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতালের উন্নয়নে একনেকে ১হাজার ৩৬৫কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন, পাবনায় আনন্দের বন্যা।
-----------------------------------------------------------
এবিএম ফজলুর রহমান।। অপ্রতুল শয্যা সংখ্যা সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতালে সু চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। তবে এইসব মানসিক রোগীদের সুচিকিৎসা ও গবেষণার জন্য সরকার যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য সোমবার জাতীয় অর্থনেতিক নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভায় ১হাজার ৩৬৫কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এই প্রকল্প অনুমোদনের খবরে পাবনার মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাবনা মানসিক হাসপাতাল একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন "মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল" এ রূপান্তর হবে। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১হাজার ৩৬৫কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পাবনা মানসিক হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা পাঁচ শ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজারে উন্নীত হবে। সাথে থাকবে গবেষণা, কেস স্টাডি ও মানসিক রোগীদের পুর্নবাসন ব্যবস্থা।
সুত্র জানায়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিনের উদ্যোগে প্রায় দুই বছর আগে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। অজ্ঞাত কারণে একনেকে অনুমোদনের আগেই তা স্তিমিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন এবং একনেকে প্রকল্পটি উত্তোলন ও অনুমোদন লাভের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
পাবনা মানসিক হাসপাতাল সুত্র জানায়, ১৭কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই দেশে মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য একমাত্র মানসিক হাসপাতাল ছিলো "পাবনা মানসিক হাসপাতাল"। কিন্তু সেখানে আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিলো অপ্রতুল। ২০২৫সালের ১০অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যে ছিলো "মানসিক স্বাস্থ্য একটি সার্বজনিন মানবাধিকার"। কিন্তু পাবনা মানসিক হাসপাতালে এই প্রতিপাদ্যের বিষয় ছিলো স্তরে স্তরে উপেক্ষিত।
পাবনা মানসিক হাসপাতাল সুত্র আরও জানায়, পাবনা মানসিক হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫০০টি। এরমধ্যে ৩৫০টি জেনারেল বেড এবং ১৫০টি পেয়িং বেড। সব বেডেই রোগীতে পুর্ন। দেশের বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতাল গুলোতে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। ঢাকার মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে মাত্র ১‘শ মানুষ চিকিৎসা নিতে পারে। ফলে সারা দেশের মানসিক রোগীর চাপ পড়ে পাবনা মানসিক হাসপাতালে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, একজন মানসিক রোগীর জন্য দিনে ১০ প্রকারের ঔষধ প্রয়োজন হয়। অর্থাভাবে সেখানে মাত্র ৩ প্রকারের ঔষুধ দেয়া হচ্ছে। খাবার নিয়ে রয়েছে নানা সমস্যা। নিন্মমানের খাবারের ফলে রোগীরা প্রোটিনের অভাবে দিনদিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া অন্তত ডজন খানেক রোগী সুস্থ হওয়ার পরেও দীর্ঘ ৪০ থেকে ৫০ বছর হাসপাতালে রয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, দেশের মানসিক রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই হাউজে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় "পাবনা মানসিক হাসপাতাল" । এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে পাবনা শহরের অদূরে হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটি। প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিলো ৬০টি। সময়ের চাহিদায় যা বৃদ্ধি করা হয় ৫০০// শয্যায়। শয্যা সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চিকিৎসকের পদ। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। স্বল্পসংখ্যক কর্মচারী দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এই হাসপাতাটিতে ৩১জন চিকিৎসকের বিপরিতে কর্মরত রয়েছে ২২জন, ১১৯জন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর বিপরীতে ৭২জন, আর ১৭০জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ৬১জন।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সেলিম মোরশেদ নানা সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, একজন মানসিক রোগীর জন্য মেডিসিন, সেবা ও শারিরীক প্রোটিন অপরিহার্য। কিন্তু তা মেটানো সম্ভব হয় না।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ এহিয়া কামাল বলেন, হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা ১২‘শ তে উন্নীত করার কথা থাকলেও ১হাজার শয্যা করা হয়েছে, এটাই সু খবর।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করে তার বলেন, পাবনা বাসীসহ সারা দেশের মানুষের জন্য এটি একটি সুখবর । তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুকে লেখেন “আলহামদুলিল্লাহ, দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত “পাবনা মানসিক হাসপাতাল"কে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন " মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল"এ রূপান্তর প্রকল্প আজ একনেকে (এক্সিকিউটিভ কমিটি অব দ্য ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিল) অনুমোদন পেয়েছে। ৩বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটির মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১,৩৬৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পাবনা মানসিক হাসপাতাল ৫০০ শয্যা থেকে এক হাজার শয্যায় উন্নীত হবে। দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির বিশেষ উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় প্রায় দুই বছর আগে এ প্রকল্পের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস একনেকে প্রকল্পটি উত্তোলনে গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাবনা তথা সমগ্র দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে ইনশাআল্লাহ”।
পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্প অনুমোদনের মধ্যে দিয়ে এই সরকার পাবনাবাসীর কাছে চির স্মরনীয় হয়ে থাকবেন। তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও শিমুল বিশ্বাসের চেষ্টার কথাও স্মরণ করেন। পাবনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, পাবনাবাসীর জন্য এটা একটি যুগান্তকারী খবর।