
08/08/2025
প্রিয় জীবনসঙ্গিনী পেয়ারী,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আজ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। আশঙ্কা করছি, আগামীকাল বা আগামী রাতেই ফাঁসির সেলে আমাকে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী, এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
এই সরকারের সময় এখন প্রায় শেষের পথে। তাই তারা চায়, এ দুঃখজনক কাজটা দ্রুত শেষ করে ফেলতে। আমার মনে হয়, তারা রিভিউ আবেদন গ্রহণ করলেও, রায় পাল্টাবে না। যদি আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় কিছু ভিন্ন করে থাকেন, তাহলে তো হিসাব অন্যরকম। কারণ, আল্লাহর নিয়ম হলো, তিনি সব সময় দুনিয়ায় ন্যায়ের বিজয় ঘটান না। অনেক নবীকেও কাফেররা হত্যা করেছে, সাহাবীদের— এমনকি নারী সাহাবীদেরও নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছিল। সেই শাহাদাতের বিনিময়ে আল্লাহ দ্বীনকে বিজয়ী করেছেন। আমার ক্ষেত্রেও আল্লাহ কী পরিকল্পনা করেছেন, তা একমাত্র তিনিই জানেন।
গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। এমনকি এরশাদকেও প্রভাবিত করেছেন। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, জামায়াত ও শিবিরকে ভারতের কতটা ভয় ও ঘৃণা। আমি তো বহু আগেই বলে আসছি— আমাদের বিরুদ্ধে চলমান ষড়যন্ত্রের মূল ছক ভারতেই আঁকা। আওয়ামী লীগ এ পথ থেকে ফিরতে পারবে না, কারণ তাদের ক্ষমতা এসেছে ভারতের সাথে আপোষের বিনিময়ে।
আমাদের বিরুদ্ধে যে অন্যায়ভাবে মামলা ও রায় হয়েছে, তা জাতিকে জানিয়ে যেতে পারলাম না— এটাই আমার আফসোস। গণমাধ্যম সরকারপন্থী হয়ে যাওয়ায় সত্যের প্রকাশ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবে বিশ্বাস করি, সত্যপ্রিয় মানুষ একদিন জানবেই। আমার মৃত্যু ইনশাআল্লাহ এই জুলুমবাজ সরকারের পতনের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে, এবং ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে যাবে বহুদূর।
গতকাল সূরা তাওবার ১৭-২৪ আয়াত পুনরায় পড়লাম। ১৯ নং আয়াতে কাবার খেদমত এবং হাজিদের পানির ব্যবস্থা করার চেয়েও আল্লাহর পথে জান ও মাল দিয়ে জেহাদ করা মানুষের মর্যাদা বেশি— এ কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে ইসলামী সংগ্রামে শহীদ হওয়া আল্লাহর কাছে অনেক বড় মর্যাদার। যদি আল্লাহ আমাকে জান্নাতের কোনো মর্যাদার আসনে বসাতে চান, তবে আমার উচিত সেই মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করা।
মনে পড়ছে, ১৯৬৬ সালে মিসরের তৎকালীন শাসক সাইয়্যেদ কুতুব ও অন্যান্য নেতাদের ফাঁসি দিয়েছিল। আমাদের দেশের শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব প্রায় বলতেন, "এই গলায়ও তো সেই রশি আসতে পারে।" আজ হয়তো সে কথাই সত্যি হতে যাচ্ছে। যদি আমার এই মৃত্যু ইসলামের অগ্রযাত্রা এবং জুলুমের পতনের মাধ্যম হয়— তবে তাতে ক্ষতি কোথায়? রাসূল (সা.) নিজেও বহুবার বলেছেন— যদি সম্ভব হতো, তিনি বারবার শহীদ হতে চাইতেন।
এই রায় কার্যকর হলে সম্ভবত ঢাকায় জানাজার সুযোগও মিলবে না। তাই মহল্লার মসজিদ এবং বাড়িতে জানাজার ব্যবস্থা করো। পাশের জেলাগুলোর মানুষ চাইলে আমাদের এলাকায় এসে জানাজায় অংশ নিতে পারবে।
আমার কবর যেন হয় আমার মায়ের পায়ের কাছে। কোনো শোভাবর্ধন বা কবর সাজানোর মতো বেদআত যেন না করা হয়। চেষ্টা করো— এতিমখানা বা অসহায়দের মাঝে কিছু দান করার জন্য। ইসলামী আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সাহায্য করবে, বিশেষত যারা শহীদ হয়েছে বা অভাবগ্রস্ত অবস্থায় আছে— তাদের আগে প্রাধান্য দিতে হবে।
হাসান মওদূদের পড়াশোনা শেষ হলে দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করো। নাজনীনের ব্যাপারেও তাই।
প্রিয় পেয়ারী,
তোমাদের প্রতি আমার অনেক দায়িত্ব ছিল, অনেক হক আদায় করতে পারিনি। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি দোয়া করি— আল্লাহ যেন তোমাকেও আমার সঙ্গী হিসেবে জান্নাতে মিলিয়ে দেন।
তুমি আল্লাহর কাছে দোয়া করো, যেন আমার অন্তর থেকে দুনিয়ার সব মোহ দূর করে শুধুই আল্লাহ ও রাসূলের ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করেন। ইনশাআল্লাহ, জান্নাতের সিঁড়িতে আমাদের দেখা হবে।
সন্তানদের বলো— সব সময় হালাল খাবে, নামাজের প্রতি যত্নবান হবে। আত্মীয়-স্বজনদেরও নসিহত করো।
আমার বাবা যদি জীবিত থাকেন— তাকে সান্ত্বনা দিও।
ইতি,
তোমাদেরই প্রিয়
আব্দুল কাদের মোল্লা
৫ ডিসেম্বর ২০১৩
#কপিপোষ্ট