12/06/2025
📻 বিবিসি, কাশেম মোল্লা আর ‘বিবিসি বাজার’ – এক গল্প, এক ইতিহাস 🇧🇩
১৯৪১ সালের ১১ অক্টোবর। শুরু হয়েছিল বিবিসি বাংলা বেতারের যাত্রা—লন্ডন থেকে বাংলায় অনুবাদ করা নিউজলেটার পড়ে শোনানো দিয়ে। ধীরে ধীরে সেটিই হয়ে ওঠে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতীক। আর এই রেডিওর সাথে জড়িয়ে আছে এক অনন্য নাম—কাশেম মোল্লা, আর তার ছোট্ট একটি চায়ের দোকান, যা পরিণত হয় ‘বিবিসি বাজার’-এ।
📍১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর গ্রামে কাশেম মোল্লার চায়ের দোকানে ভিড় করত শত শত মানুষ—শুধু খবর শোনার জন্য। তখন আশেপাশে তিন ব্যান্ডের রেডিও একটিও ছিল না। সেই ফিলিপস রেডিওই হয়ে ওঠে যুদ্ধের সংবাদ জানার একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।
📡 সন্ধ্যা হলে চারদিক থেকে লোকেরা ভিড় জমাত, বলত—"চল, বিবিসি শুনতে যাই"। ধীরে ধীরে নাম হয়ে যায় "বিবিসি বাজার"। রেডিও শোনার ছুতোয় মানুষ একত্র হত, বিনিময় হতো খবর, গড়ে উঠত সম্পর্ক। কাশেম মোল্লা গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের দিতেন তথ্য, সহযোগিতা করতেন সাহস করে।
⚔️ কিন্তু সে সাহসের মূল্যও দিতে হয় তাকে। পাকিস্তানি সেনারা একদিন হানা দেয় তার দোকানে। রেডিও শোনানোর ‘অপরাধে’ মারধর করে। সেই আঘাতে ক্ষতবিক্ষত পায়ে সারাজীবন খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয় কাশেম মোল্লাকে।
🕊️ বিজয়ের মাত্র চার দিন আগে ঢাকায় বিবিসির সাংবাদিক নিজামউদ্দিনকে হত্যা করে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা। এমনই ছিল বিবিসির খবরের প্রভাব।
🎉 স্বাধীনতার পরে সেই বাজার ঘিরে গড়ে ওঠে শত শত দোকান। বিবিসি বাজার হয়ে ওঠে একটি ঐতিহাসিক নাম। ১৯৯২ সালে বিবিসির ৫০ বছর পূর্তিতে লন্ডন থেকে প্রতিনিধি দল এসে কাশেম মোল্লার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, জানায় শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
📪 সিরাজুর রহমান চেয়েছিলেন তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে, লন্ডন থেকে পাঠিয়েছিলেন চিঠি—কিন্তু সেগুলো আর পৌঁছায়নি কাশেম মোল্লার হাতে।
🌳 কাশেম মোল্লার লাগানো সেই কড়ই গাছ এখন ছায়া দেয় বাজারজুড়ে। কিন্তু অনেকেই জানেন না এই বাজারের নামকরণের পেছনে এক সাহসী মানুষের গল্প।
🕯️ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলার রেডিও সম্প্রচার থেমে গেছে, কিন্তু কাশেম মোল্লার সেই ফিলিপস রেডিও, বিবিসি বাজার আর তার আত্মত্যাগের গল্প থেকে যাবে ইতিহাস হয়ে।
শ্রদ্ধা কাশেম মোল্লাকে, শ্রদ্ধা বিবিসি বাংলাকে।
একটি রেডিও, একটি দোকান, একটি মানুষ—লিখে গেল ইতিহাস।
#বিবিসিবাজার #কাশেম_মোল্লা #মুক্তিযুদ্ধ #ঐতিহাসিকগল্প #বাংলারগর্ব #রেডিওরইতিহাস