22/08/2025
পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে কিছু নাম আছে যাদের কথা মনে পড়লেই এক অন্যরকম সৌন্দর্যের ছবি চোখে ভেসে ওঠে। সেই তালিকার শীর্ষে আছেন মোহাম্মদ ইউসুফ—যিনি ছিলেন এক নিখুঁত শিল্পী, ব্যাট হাতে যিনি গড়ে তুলেছিলেন কবিতার মতো সব ইনিংস। জন্মেছিলেন একজন সাধারণ পরিবারে, কিন্তু তাঁর ক্রিকেট প্রতিভা ছিল অসাধারণ। নরম হাতের কবজির খেলা, ক্লাসিকাল স্ট্রোক আর অদ্ভুত রকমের ব্যাটিং কৌশল তাঁকে বানিয়ে দিয়েছিল এক অনন্য ব্যাটসম্যান।
ইউসুফ যখন ক্রিজে নামতেন, তখন স্টেডিয়ামের পরিবেশ বদলে যেত। মনে হতো, তিনি ব্যাট করছেন না—বরং ক্রিকেটকে এক শিল্পে রূপ দিচ্ছেন। তাঁর কাভার ড্রাইভ, অন-ড্রাইভ কিংবা স্কয়ার কাট—সবকিছুতেই ছিল পরিশীলিত ছন্দ। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ বহু বছর ধরে ভরসা পেয়েছে তাঁর কাঁধে ভর করে।
২০০৬ সালে তিনি গড়েছিলেন এক অনন্য রেকর্ড—এক ক্যালেন্ডার বছরে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রান। ১৭৮৮ রান করে তিনি শুধু রেকর্ডই ভাঙেননি, প্রমাণ করেছিলেন, ক্লাসিক ব্যাটিং ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার। সেই বছর ৯টি টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল তাঁর, যা এক কথায় অভূতপূর্ব।
মোহাম্মদ ইউসুফ ছিলেন শান্ত স্বভাবের, মাঠে খুব বেশি আড়ম্বর ছিল না তাঁর খেলায়। তবু প্রতিটি ইনিংসে তিনি প্রমাণ করতেন—প্রযুক্তি আর ধৈর্যের ওপর ভরসা রাখলে যেকোনো পরিস্থিতিতে জয়ী হওয়া যায়। ক্রিকেটের আধুনিক দুনিয়ায় যেখানে পাওয়ার হিটিংয়ের দাপট, সেখানে ইউসুফ ছিলেন ‘ক্লাসিক্যাল এলিগ্যান্স’-এর প্রতীক।
পাকিস্তানের বহু জয় এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে জন্ম নেওয়া ইনিংসে। একদিনের ক্রিকেটে যেমন তাঁর ভরসা ছিল অবিচল, তেমনি টেস্ট ক্রিকেটে তিনি ছিলেন দেয়ালের মতো অটল। সময়ের সঙ্গে অনেক কিংবদন্তি এসেছেন, অনেকেই চলে গেছেন, কিন্তু মোহাম্মদ ইউসুফের নাম সবসময়ই থাকবে ক্রিকেটের পাঠ্যপুস্তকের সোনালী পাতায়।
মোহাম্মদ ইউসুফের গল্প শুধু সংখ্যার বা রেকর্ডের গল্প নয়, এটি ধৈর্য, দক্ষতা ও নৈপুণ্যের গল্প। প্রতিটি ইনিংস ছিল তাঁর ক্রিকেটের প্রেমের এক ব্যাখ্যা, যেখানে শক্তি নয়, পরিমিতি ও শৈল্পিকতা বড় ভূমিকা নিয়েছে। তাঁর ব্যাট থেকে উঠে আসা প্রতিটি স্ট্রোক যেন আজও নতুন প্রজন্মকে শেখায়—ক্রিকেট কেবল খেলা নয়, এটি শিল্পের এক রূপ, যা ধৈর্য, নিয়ন্ত্রণ এবং মনোযোগের সঙ্গে খেললে সবসময়ই মনে গেঁথে যায়। মোহাম্মদ ইউসুফ সেই শিল্পীর মতোই, যাঁর নাম ও খেলা চিরকাল ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।