06/04/2023
আমাদের সমাজে ছেলেরা বিয়ের যোগ্য হয় তখনই, যখন তার একটা স্ট্যেবল ক্যারিয়ার হয়, থাকার জন্য নিজের একটা বাড়ি থাকে এবং ব্যাংকে অন্তত কিছু হলেও টাকা জমা থাকে। অর্থাৎ দুনিয়াবি ভোগের জন্য তার কাছে যখন যথেষ্ট রসদ হবে, তখনই তাকে বিয়ের যোগ্য ভাবা হবে। আর মেয়ের পিতারাও ভাবে এই দুনিয়াবি ভোগই বুঝি মেয়ের প্রকৃত কল্যান ও সুখ এনে দিতে পারে। অথচ সাহাবিরা ছিলেন এর উল্টো। তাদের নিকট মেয়ের কল্যানের মাপকাঠি ছিল দরিদ্রতা। ব্যাপারটা আশ্চর্যের না?
দুনিয়াবিমুখ যত সাহাবি ছিলেন, তাদের ভেতর আবু দারদা (রা.) অন্যতম। তিনি যেমন দুনিয়াবিমুখ ছিলেন, তিনি চাইতেন তার পরিবার, সন্তানরাও তেমন দুনিয়া বিমুখ হোক।
একবার আবু দারদা (রা.)-এর মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে খলিফা মুআবিয়া (রা.) এর পক্ষথেকে ছেলে ইয়াযীদের জন্য। এত বড় খলিফার ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসায় আবু দারদা (রা.)-এর তো খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু না। তিনি খুশি না হয়ে তাদের প্রত্যাখ্যান করে দেন। এর কিছুদিন পর তিনি তার মেয়েকে এক দরিদ্র ছেলের সাথে বিয়ে দেন। তার এমন আচরণ দেখে সবাই জিজ্ঞেস করতে থাকে, ‘তুমি খলিফার ছেলের কাছে নিজের মেয়ে বিয়ে দেয়ার পরিবর্তে কেন একজন দরিদ্র লোকের সাথে বিয়ে দিলে?’
তাদের প্রশ্ন শুনে আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের কল্যানের কথা ভাবি। তাকে যদি খলিফার ছেলের কাছে বিয়ে দিই, তবে তার আশেপাশে অনেক দাসী থাকবে। সে এমন সব ঘরবাড়ি দেখতে পাবে যা দেখে তার চোখ ঝলসে যাবে। সেদির তার দ্বীন কোথায় থাকবে?’
একটু খেয়াল করে দেখুন, আমাদের সমাজের পিতারাও মেয়েদের কল্যান চান, আর সাহাবিরাও তাদের মেয়েদের কল্যান চাইতেন। কিন্তু উভয়ের কল্যান চাওয়ার লেন্সটা আলাদা। একজন দুনিয়াবি ভোগকেই প্রকৃত কল্যান ভাবেন, আরেকজন আখিরাতের সফলতাকে কল্যান ভাবেন। একজনের কল্যান জান্নাত এনে দিবে, আরেকজনের কল্যান জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিবে।
সম্পদশালী হয়েও অনেকে দুনিয়াবিমুখ থাকে, তবে সে সংখ্যাটা খুবই কম। নিশ্চয় সাহাবিদের চিন্তা আর ফিকির আমাদের থেকে গভীর ছিল। আল্লাহ আমাদের যেমনই রাখুন না কেন, যেন সবাই দুনিয়াবিমুখ হয়েই থাকতে পারি।
|| সাহাবিদের চোখে যোগ্য পাত্র
|| সাওদা সিদ্দিকা নূর