15/07/2025
বগুড়ায় শ্বশুর-পুত্রবধু হ ত্যা র ঘটনায় গ্রে প্তা র তিন
বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া থানাধীন লক্ষীমন্ডপ গ্রামে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস ডাকাতিসহ জোড়া হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী, ডাকাত সর্দারসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় ০৩ জন ডাকাত গ্রেফতার এবং ডাকাতি হওয়া স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা উদ্ধার।
বাদীনি তহমিনা বিবি (৪০) গত ১০/০৭/২০২৫ খ্রি. বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া থানায় হাজির হয়ে এজাহার দায়ের করেন যে, বাদীনির পিতার বাড়ী বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া থানাধীন জিয়ানগর ইউনিয়নের লক্ষীমন্ডপ গ্রামে বাদীনির বয়স্ক পিতা মোঃ আফতাব উদ্দিন ও বাদীনির ভাইয়ের স্ত্রী রিভা এবং ভাতিজি (শিশু কন্যা) রুকাইয়া তাসনিম মালিহা থাকে। গত ০৮/০৭/২০২৫ খ্রি. দিবাগত রাত ১০.০০ ঘটিকার পর হইতে ০৯/০৭/২০২৫ খ্রি. ভোর ০৪.০০ ঘটিকার পূর্বে যেকোন সময় অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা বাদীনির পিতার বসত বাড়িতে কৌশলে প্রবেশ করিয়া তার পিতার শয়ন ঘরের দরজায় ডাকাডাকি করিলে বাদীনির পিতা দরজা খুলে বাহির হওয়া মাত্রই দুষ্কৃতিকারীরা বাদীনির পিতার ডান চোখের উপরে লাঠি দ্বারা আঘাত করলে সে উক্ত স্থানেই পড়িয়া গেলে তাহার হাত, পা রশি দ্বারা বাধিয়া মুখের মধ্যে শাড়ি কাপড়ের কিছু অংশ গুজে দিয়ে শ্বাসরোধ পূর্বক হত্যা করে এবং তার পিতার শয়ন ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া খাটের উপরে থাকা বাদীনির পিতার একটি বাটন মোবাইল ফোন নিয়া ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে উল্লেখযোগ্য কোন জিনিসপত্র না পাইয়া দুষ্কৃতিকারীরা বাদীনির ভাইয়ের স্ত্রী ডিসিসড রিভার শয়ন কক্ষের দরজা খুলিয়া ভিতরে প্রবেশ করিয়া বাদীনির ভাইয়ের স্ত্রী রিভা ও তার শিশু কন্যা রুকাইয়া তাসনিম মালিহা টের পাইয়া চিৎকার করিলে দুষ্কৃতিকারীরা তার ভাইয়ের স্ত্রী ডিসিসড রিভাকে হাত, পা রশি ও কাপড় দ্বারা বাধিয়া শ্বাসরোধ পূর্বক হত্যা করে এবং তার ভাতিজিকে ভয়ভীতি দেখাইয়া চোখ বন্ধ করিয়া থাকিতে বলিলে তার ভাতিজি ভয় পাইয়া চোখ বন্ধ করিয়া থাকে।তখন দুষ্কৃতিকারীরা বাদীনির ভাতিজির গলায় এবং ঘরের ভিতরে থাকা স্বর্ণের চেইন, স্বর্ণের মালা, স্বর্ণের কানের দুল, স্বর্ণের রুলি বালা, মোবাইল ফোন এবং ঘরে থাকা নগদ ৬,২০,০০০/- টাকা লুন্ঠন করিয়া নিয়ে মেইন গেট দিয়ে বাহির হইয়া চলিয়া যায়। পরবর্তীতে এ সংক্রান্তে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া থানায় মামলা নং-০৮, তারিখ-১০/০৭/২০২৫, ধারা-৩৯৪/৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ জেদান আল মুসা, পিপিএম মহোদয়ের নির্দেশনায় বগুড়া ডিবি অত্র মামলাটি তদন্ত শুরু করেন। পরবর্তীতে অফিসার ইনচার্জ ডিবি বগুড়া জনাব মোঃ ইকবাল বাহার এর সার্বিক তত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক ডিবি জনাব মোঃ রাকিব হোসেন এর নের্তৃত্বে ডিবি বগুড়া’র একটি চৌকস টিম ১৪/০৭/২০২৫ খ্রি. বিকাল অনুঃ ১২.৩০ ঘটিকার সময় তথ্য প্রযুক্তি ও নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিএমপি ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস ডাকাতিসহ জোড়া হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী, ডাকাত সর্দারসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য অত্র মামলার তদন্তে প্রাপ্ত আসামী ডাকাত সর্দার ১। মোঃ আব্দুল হাকিম (৩৪), পিতা-মোঃ আব্দুল করিম, সাং-বেরুঞ্জ, ২। মোঃ আব্দুল মান্নান (৫০), পিতা-মৃত মকবুল হোসেন, সাং-লক্ষীমন্ডপ, উভয় থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়াদ্বয়কে গ্রেফতার পূর্বক তাদের হেফাজত হইতে ০১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ০২ জোড়া সিটি গোল্ডের চুড়ি, ০২ টি সিটি গোল্ডের আংটি, নগদ ৭,৫০০/- টাকা, ০২টি মোবাইল ফোন ও ০১টি হাতঘড়ি উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে ধৃত আসামীদ্বয়ের দেওয়া তথ্য মোতাবেক তথ্য প্রযুক্তি ও নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অদ্য ১৫/০৭/২০২৫ খ্রি. ভোর অনুঃ ০৬.০০ ঘটিকার সময় কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানাধীন চর জামাল গ্রামে অভিযান পরিচালনা করিয়া অত্র মামলার তদন্তে প্রাপ্ত আসামী ডাকাত সদস্য ৩। মোঃ রফিকুল ইসলাম (৪১), পিতা-মৃত লছির আকন্দ নছির, সাং-বাশিকোড়া, থানা-আদমদিঘী, জেলা-বগুড়াকে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য যে, ধৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী আব্দুল মান্নান ডিসিসড আফতাব সাহেবের সেচ পাম্পে পানির লাইনে কাজ করতো। আসামী আব্দুল মান্নান বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সহিত জড়িত থাকার কারণে তাকে উক্ত কাজ হতে বাদ দিলে সে ডিসিসড আফতাব সাহেবের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাহাকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করিতে থাকে। সেই মোতাবেক আসামী আব্দুল মান্নান ও তাহার সহোযোগীরা ডাকাত সর্দার আব্দুল হাকিমসহ অন্যান্য ডাকাতদের সাথে পরিকল্পনা করে। উক্ত পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাত সর্দার আব্দুল হাকিম অন্যান্য ডাকাতদের নিয়ে উল্লেখিত ০৮/০৭/২০২৫ খ্রি. তারিখ দিবাগত রাত অর্থ্যাৎ ০৯/০৭/২০২৫ খ্রি. রাত্রী অনুমান ০২.০০ ঘটিকার সময় বাড়ি পিছনের প্রাচীরের সাথে থাকা পেয়ারা গাছ বেয়ে প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ডিসিসড আফতাব সাহেবকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ পূর্বক হত্যা করে তার ঘরে কিছু না পেয়ে তার পুত্রবধু ডিসিসড রিভার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে ডিসিসড রিভার হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ পূর্বক হত্যা করে তার ঘরে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
প্রকাশ থাকে যে, অত্র মামলার তদন্তে প্রাপ্ত ধৃত আসামী ডাকাত সর্দার মোঃ আব্দুল হাকিম এর রিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ডাকাতি, চুরি এবং জুয়াসহ ০৭টির অধিক এবং ধৃত আসামী ডাকাত সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে চুরি ও মাদকসহ ০২টির অধিক মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন আছে।
ধৃত আসামীদেরকে উল্লেখিত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হইবে। ইহা ছাড়ার অজ্ঞাতনামা পলাতক ডাকাতদের গ্রেফতার অভিযান চলমান আছে।