03/08/2025
ভারতের বিখ্যাত ডাক্তার দেবী শেঠীর কাছে...চিকিৎসা নিয়ে পা হারালেন রুগি
হার্টে ব্লক হয়েছিল। গিয়েছিলেন দেবী শেঠীর কাছে। যদিও কথিত আছে, ওনার টিম কেবল অপারেশন করে, উনি করেন না। যা হোক, অপারেশন হলো। সফল অপারেশন। দেখতে দেখতে দেশে ফেরার সময় হয়ে গেল। সম্ভবত অপারেশনের ৮ম দিন। এমন সময় পায়ে একটু ব্যথা, ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। দুই পায়েই।
প্রথমটায় কেউই পাত্তা দেননি। যখন দিলেন ততক্ষণে অনেক দেরি। পায়ে সাডেন ব্লক হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অ্যাকিউট লিম্ব ইস্কেমিয়া। সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো, ডান পা হাঁটুর নিচে আর বাম পায়ের পাতার গোড়ালির সামনে থেকে কেটে ফেলতে হবে! রোগীর মেয়ে নিজেও ডাক্তার। বিষয়টা মেনে নিতে পারলেন না। পারবেন কী করে! এসেছেন হার্টের বাইপাস করতে, এখন দুই পা হারানোর ঝুঁকি।
একটা কমপ্লেইন লিখে সরাসরি দেশে ফিরে এলেন। দেশে ফিরে আমাদের আন্ডারে ভর্তি হলেন। মেডিকেল বোর্ড করলাম। চিকিৎসা শুরু হলো। না, পা আর কাটতে হয়নি। তবে পায়ের পাতার কিছু অংশ দুপাশেই হারাতে হয়েছে। তবুও তিনি মহাখুশি। কারণ তার চাওয়া ছিল কষ্ট হলেও নিজের পায়ে হাটতে চান।
রোগীরা ব্যথা পায়, ডুকরে কাঁদে, নীরবে কাঁদে। আমার এই রোগীর কান্নার শব্দ শুনি নাই। নীরবে শুধু অশ্রু ঝরাতে দেখেছি। দুটো পা হারাতে হবে এটা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। কেউই পারার কথা না।
আজ এসেছিলেন প্রায় ৫ বছর পরে। নিজপায়ে হেটে। সঙ্গী এই বিশেষ জুতা। নিজের বিজনেস নিজেই দেখভাল করছেন। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছেন। এতেই যেন শান্তি তার।
গল্পটা আগেই লিখতে পারতাম। রোগী, রোগীর লোকের ভিডিও আগেই আপলোড করতে পারতাম। কিন্তু সাহস পাইনি। সত্যি বলতে আগ্রহ পাইনি। দেবী শেঠীর কাছে বাইপাস অপারেশন করতে গিয়ে পা হারিয়ে এসেছেন, এমন সংবাদ মার্কেট পাবে না। মানুষ খাবে না।
ভুল আমাদেরও হয়। হয় জটিলতা। তবে সবচেয়ে বেশি হয় সফলতা বা সাকসেস। এই সাকসেসের খবরগুলো এ দেশে মার্কেট পায় না। যতটা মার্কেট পায় ভুল চিকিৎসার তকমা পাওয়া বেশিরভাগ জানা জটিলতাগুলো। চিকিৎসা মানেই কেবল চিকিৎসক নয়। চিকিৎসক কেবল অন্যতম একটা উপাদান। প্রয়োজন দক্ষ নার্স থেকে শুরু করে সব স্বাস্থ্যসেবক। সবার ওপরে প্রয়োজন গুড গভর্নেস, যেখানে স্বাস্থ্যখাত অগ্রাধিকার পাবে।
দেশের মানুষ দেশেই চিকিৎসা নিতে চায়। দেশি মুরগি, দেশি পেঁয়াজের মতো প্রয়োজনে বেশি দামে নিতে চায়। দরকার শুধু তাদের আস্থার জায়গাটা তৈরি করা। এই জায়গাটা তৈরি করতে আন্তরিকতার সাথে সবার এগিয়ে আসা জরুরি। শুধু চিকিৎসকের ওপর অঙুলি তুলে নিজের দায় শোধ করা যায় না।
(লেখা ও ছবি ডা. সাকলায়েন রাসেলের ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া)
সুত্র Rtvnews