11/07/2023
: মন খারাপের দিনে
মানুষের অযাচিত সমালোচনায় যখন হযরতের হৃদয় বেদনার ভারে নুইয়ে পড়ত, তখন তিনি বিলাল রাযিয়াল্লাহু আনহুকে সালাতের জন্য ডাকতেন আর বলতেন, ‘বিলাল, সালাতের মাধ্যমে আমাদের অন্তরকে প্রশান্ত করো। ১)
যখন কেউ আপনার নামে কুৎসা রটাবে, অনর্থক আপনার নামে সমালোচনা করবে, তখন আপনি ধৈর্যহারা হবেন না। হতবিহ্বল হয়ে পড়বেন না। সবর করবেন। এই সবরের ফল সুমিষ্ট। আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহার ব্যাপারে দেওয়া মুনাফিকদের অপবাদের কথা কি মনে আছে? একবার এক সফরের সময়ে তিনি কাফেলা থেকে একটু পিছিয়ে পড়েন। তিনি যে কাফেলা থেকে ছিটকে পড়েছেন সেটা কেউ বুঝতে পারেনি। এরপর, জনশূন্য সেই প্রান্তরে তিনি ঠিক কী করবেন এমন ভাবনার দোলাচলে সময় যেতে লাগল। একসময় তিনি সেখানটায় ঘুমিয়ে পড়েন। পরে, সাফওয়ান ইবনু সুলামি ওই পথ অতিক্রম করার সময় আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে দেখতে পান এবং তাকে সাথে নিয়ে পুনরায় কাফেলায় যোগ দেন।
এই ঘটনাকে নিয়ে কুৎসা রটিয়ে বেড়ায় মুনাফিকদের সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই। সে প্রশ্ন তোলে আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহার পবিত্র চরিত্র নিয়ে! শুনতে অবাক লাগলেও সত্য, মুনাফিকদের এই কুৎসা, এই সমালোচনা এবং তিরস্কার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহার মাঝে সাময়িক দূরত্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নবিজি বুঝতে পারছিলেন না, সমালোচকদের তিনি কী জবাব দেবেন। কীভাবেই-বা প্রমাণ করবেন যে, আয়িশা একজন সতীসাধ্বী নারী! তাছাড়া, আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই যা প্রচার করে বেড়াচ্ছে, তার সত্য-মিথ্যার ব্যাপারেও তিনি সন্দিহান। তিনি কেবল আল্লাহর ওপর ভরসা করলেন। এমন দোটানা পরিস্থিতি, এমন বিপন্ন সময়ে তিনি এক মহামহিম আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেছেন। আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহাও তা-ই করলেন। কারও সাথে কোনো বিরোধ করেননি। কোথাও উচ্চবাচ্য করেননি। চোখের জল ফেলে কেবল আল্লাহর কাছে নিজের সমস্ত অভিযোগ, সমস্ত বাসনা সোপর্দ করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে নিরাশ করেছেন? হতাশ করেছেন? মুনাফিকদের বিরুদ্ধে, সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে, কুৎসা-রটনাকারীদের বিরুদ্ধে সাহায্য করেননি? অবশ্যই করেছেন। ওহি নাযিলকরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহার চরিত্রের ব্যাপারে মুনাফিকদের সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। কুরআনে আল্লাহ বলছেন—
إن الذين جاؤوا بِالْإِفكِ عُصْبَةٌ مِنكُمْ
নিশ্চয় যারা এই অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল (১)
এটা যে একটি অপবাদ, কুৎসা এবং জিঘাংসা, সেটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন। এভাবেই তো আল্লাহ তার মুমিন ব্যক্তিদের সাহায্য করে থাকেন। কখনো স্পষ্ট সাহায্য, আবার কখনো-বা অস্পষ্ট সাহায্য।
জীবনে আপনিও আপনার চারপাশে একটি দল পাবেন যারা সর্বদা আপনার সমালোচনায় মুখর থাকবে। গভীর পর্যবেক্ষণের দ্বারা আপনার ভালো কাজটির খুঁত বের করবে। আপনার ত্রুটিযুক্ত কাজটিকে ফলাও করে প্রচার করে বেড়াবে যাতে আপনাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেওয়া যায়। যাতে আপনি হতাশ হয়ে পড়েন। আপনার মন যাতে বিষিয়ে ওঠে। এ সবকিছুই তারা আপনার প্রতি হিংসা, ঈর্ষা আর জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে করে থাকে; কারণ, আপনার অবস্থান তাদের পীড়া দেয়। আপনার গ্রহণযোগ্যতা তাদের মনে বিষাক্ত ফলার মতো আঘাত করে। আপনাকে আপনার অবস্থান থেকে নামিয়ে আনার চিন্তায় তারা সদা বিভোর থাকে কীভাবে অন্যদের চোখে আপনাকে খাটো করা যায়, কীভাবে অন্যদের মনে আপনার ব্যাপারে সন্দেহের বীজ বুনে দেওয়া যায়।
এদের ব্যাপারে কখনোই হতাশ হবেন না। এদের কথায় মন খারাপ করবেন না। ভেঙে পড়বেন না। হতোদ্যম হবেন না। এদের কথা কিংবা বক্তব্যের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। শুধু সবর করবেন। আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাদের ক্ষমা করে দেবেন। নিজের এবং তাদের হিদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন। ব্যস! আপনার কাজ কেবল এতটুকুই। এ রকম অবান্তর সমালোচনায় পতিত হলে নিজের সাথে কথা বলুন। ভেবে দেখুন তো, আপনার ইখলাস আর নিয়ত আপনার কাছে পরিশুদ্ধ মনে হয় কি না? যদি অন্তরের ভেতর থেকে এই কথা প্রতিধ্বনিত হয় যে, আমি তো এই কাজ আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্যই করেছি', তাহলে নিশ্চিন্ত মনে আপনার পরবর্তী কাজে মনোযোগ দিন। এ রকম বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে ভুল কাজটার জন্যও আপনার আমলনামায় হয়তো সাওয়ার যোগ হয়ে গেছে।