09/03/2025
কোথায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে....
আমাদের বুঝতে হবে সমাজের প্রধান সমস্যাটা কোথায়? আধুনিক রাষ্ট্রে সেকুলার কাঠামোর মধ্যে ইসলামের বিকাশ ও চর্চার ধরণ নিয়ে সংঘাত নতুন কোন সমস্যা না। এটা প্রতিটি মুসলিম দেশেই হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামিস্টরা যেহেতু মূল ধারার সাংষ্কৃতিক বয়ানে এখনও ‘অপর’ এবং এখানের সেকুলাররা পশ্চিামের মতো সবধর্মকে এক সাথে রাখার মতো সহনশীল না। এখানে সেকুলারিজমের নামে যেটা চলেছে সেটা হলা ইসলাম বিদ্বেষ, এটা তৈরি হয়েছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদি বয়ানের আলোকে ফলে এরা আসলে ইসলাম বিদ্বেষী।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন ধারার মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলেও মৌলিক বিষয়গুলোতে যে ধরণের ঐক্য দরকার তার নজির নাই। বরং হাসিনার আমলে কওমী জননী উপাধি দেয়ার মধ্য দিয়ে নিজের খুনির কাছে নিজের আত্মাকে বিক্রির আয়োজন ইসলামী সমাজের বা আলেম ও কওমী মানুষদের বিষয়ে মানুষের আশাভঙ্গ করেছে। শাপলার শাহবাগী পরিণতি হয়েছে। এতে সমাজের মোরাল পিলার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেটা লম্বা আলাপ অন্য সময় করতে হবে। এখন ৫ তারিখের পরে বাংলাদেশে নতুন বাস্তবতা হাজির হয়েছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রমাটা করতে হবে ডানপন্থীদের। কেন না বাম প্রগতীশীল বলয়ের চেনতার বয়ানের শাহবাগী মডেল ফ্যা....*সি.... বাদ কায়েম করেছিল। এর মধ্য দিয়ে প্রগতীপন্থি সব প্রতিশ্রুতির রাজনৈতিক জানাজা হয়ে গিয়েছে। এবং মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী-বাম চেতনার বিরুদ্ধেই এখানে অভ্যুত্থান হয়েছে। কাজেই এটাকে ডানপন্থি অভ্যুত্থান বলতে পারেন।
এখন এদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো তাদের একটা ইনক্লুসিভ ও গণতান্ত্রিক শাসন কাঠামোর বিকাশ ঘটাতে হবে। বিশ্ব বাস্তবতায় আপনাকে রাষ্ট্র হিসেবে টিক থাকতে হলে একটা গণতান্ত্রিক প্রকৃয়া যেমন লাগবে আবার আপনার ইসলামী ধারাকে বা জ্ঞানগত অবস্থাকে সমাজে মূলধারা করার জন্য যে ধরণের বয়ান লাগবে তাও তৈরি করতে পারতে হবে। দায়িত্ব আপনার কিন্তু আপনার হাতে কোন ক্ষমতা নাই। কোন প্রতিষ্ঠান নাই। কোন সুপার পাওয়ার আপনার পাশে নাই। কিন্তু এটা আপনি না করলে ধীরে ধীরে আপনি শাহবাগী মূলধারার কাছে পরাজিত হতে থাকবেন।
বুঝতে হবে-
আপনাকে যখনই মব, নারী বিরোধী বা তৌহিদী জনতা আকারে চিহ্নিত করে, উগ্র আকারে আখ্যায়িত করে গোটা নাগরিক ডিসকোর্স থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় তখনই লীগের সাংষ্কৃতিক-বয়ানের কাঠামো অটুট রাখা যায়। এই বয়ানে অনেক লীগ বিরোধীও অংশ নেন। আপনাকে জঙ্গি ও বিদেশী এজেন্ট প্রমাণে যুদ্ধ শুরু হয়।
ফলে এখানে আপনার চ্যালেঞ্জ হলো- তাদের নাগরিক ধারণার যে আওয়ামী-ভারতীয়-শাহবাগী ধারা তাকে ভেঙে ফেলা- প্রথমে। তার পরে আপনি নিজেই নিজের বিশ্বাসের স্বাধীনতার অধিকার অর্জন ও অন্যের অধিকারের পক্ষের এজেন্সি হিসেবে হাজির হওয়া। সেকুলার-বাম-শাহবাগী নাগরিক পরিসরের মনোপলি ভেঙে ফেলা। মানে আপনাকে নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের সেল্ফকে, কোর সার্বভৌমত্বকে রক্ষার অগ্রভাগে হাজির হওয়া। কোটা হিসেবে না থেকে মূল নাগরিক শক্তির অংশ হয়ে যাওয়া। এবং কোন ইসলামী কমিউনিটি যদি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোন পদক্ষেপ নেন (সেটার সাথে আপনি একমত হলেও) তাকে আলোচনার মাধ্যমে শান্ত করা। তাকে জাতীয় স্বার্থকে বুঝাতে চেষ্টা করা। এটা করতে হবে আলেম সমাজকে। আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। লীগ ও শাহবাগী বা ভারতীয় মিডিয়া কিন্তু আপনার যে কোন উদ্যোগকে সন্ত্রাসী উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করতে সদা প্রস্তুত- এটা মনে রাখতে হবে।
ফলে আপনাকে বুঝতে হবে, সেকুলার কাঠামোর মধ্যে আপনি বাস করছেন, থাকছেন, এখানে থেকে থিওলজিক্যাল রাষ্ট্র পাইছেন -ধরে আচরণ করলে আপনাকে নাগরিক ডিসকোর্স -এর বাইরে রেখে আলাপ শুরু হবে। আপনি মুসলিম কিন্তু আপনার রাষ্ট্র ইসলামী না- এটা মনে রেখে আচরণ করতে হবে। এটা কোন শরিয়া রাষ্ট্র না। সমাজও না। ফলে আপনি আপনার বিশ্বাস ও ধর্মকে মেজরিটির জায়গা থেকে পুশ করলে সাথে সাথে রিএকশন শুরু হবে। আপনি প্রতিকৃয়াশীল হয়ে যাবেন। আপনার বিশ্বাসের কারণ, আপনার বিজাবের কারণে আপনি অত্যাচারিত হলে সমাজে প্রতিবাদ হয় না। প্রতিবাদ হয় প্রকাশ্যে বিড়ি খাইতে না পারলে- এটা বুঝতে হবে। তার মানে সেকুলার কাঠামোতে আপনার অধিকারের প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হলো ২% বা ৫% মানুষের সাংষ্কৃতিক আধুনিকতার চর্চ ঠিক মতো করতে পারছে কি না। কারণ পলিটিক্যাল ইকোনোমিতে সে ম্যাটার করে, আপনি না। তার বয়ানেই সমাজ পরিচালিত হয়। আপনার বয়ানে না। ফলে আপনার লড়াই দুই তরফে। এক. তাকে তার বিড়ি খাওয়ার অধিকার দিতে হবে। সে কোন কোন ভাবেই ইনসিকিউর ফিল না করে। আবার নিজের মূল্যবোধকে রক্ষা ও চর্চা করতে হবে। এটাকে মূলধারা করতে হবে পিওর এসথেটিকস নিয়ে। গায়ের জোরে না।
আপনি এটা করতে ব্যার্থ হলে কি ঘটবে সেটা আপনি হয়তো চিন্তাও করতে পারতেছেন না। একাট উদাহরণ দিয়া শেষ করি:
১.
এই যে ”তৌহিদী জনতা” টার্মটাকে কিভাবে সামনে আনা হয়েছে- একবার চিন্তা করে দেখেছেন? তৌহিদ ইসলামী বিশ্বাসের শুধু না, আব্রাহামিক এবং একেশ্ববাদি বিশ্বাসের সব চেয়ে কোর বা বেসিক জায়গা। যারা এক গায়েবে বিশ্বাস করেন সবাই তৌহিদী। ইসলামী ও অন্য আহলে কিতাবের ভাই-বোনরাও এর অংশ।
এবার এই গোটা বা বিপুল মানুষকে ‘মব’, উগ্র -ট্যাগ দেয়ার ফলে গোটা ক্ষমতার কাঠামো ঠিক করে দেয়ার বয়ানটা সেই পুরানা মুষ্টিমেঢ প্যাগান বা বস্তুপূজারীদের ( যারা মর্ডান সেকুলার ওয়াল্ডভিউর সাথে নিজেদের ভালো ভাবেই মিশায়ে নিছে) অবস্থান অটুট থাকে। তারাই আপনার পরিচয় তৈরি করে দেয়। অথচ তৌহিদী পরিচয় কোন রাজনৈতিক পরিচয় না। সব তৌহিদী মানুষ এক রকম না। তাদে রমধ্যে বিপুল পার্থক্য ও ফারাক আছে। আস্তিক শাহবাগীও কিন্তু তৌহিদী জনতার অংশ। সেও আপনাকে ট্যাগ দিচ্ছে। গোটা কমিউনিটিকে ট্যাগ করে, মেইমিং করে কার রাজনীতিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে চিন্তা করে দেখেছেন?
ইসলামের মধ্যে অনেক ধরণের ধারা আছে। সাবার রাজনীতি এক না। কিন্তু মেইমিং করার সময় ইসলাম বা একেশ্বাবাদি ভারসেস পুরানা ইসলাম বিরোধী ভারতীয় বাঙালি জাতীয়তাবাদি সেকুরার বর্গ মুখোমুখি দাঁড়ায়। এখানে অনেক মডারেট পস্থি বা রাজনৈতিক ভাবে শাহবাগ বিরোধীও শাহবাগী পজিশন নিয়ে ফেলেন। নিজেকে অপরাধীর থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য তিনিও এন্টি সেকুলার হয়ে সেকুলার ছাতার তলে আশ্রয় নিতে থাকেন।
এই ভাবে এন্টি-ইসলামী প্যাগান ধারাই সেকুঅর নাম ধরে- সমাজে মূল ধারা হিসেবে থেকে যায়।
সমাজে ইসলামের একটা ইউনিভারসাল ভেল্যুকে বাংলাদেশে এখনও মূলধারা করা যায় নাই। এই সামাজে নামাজ,ওয়াজ, সুধ, ঘুষ মিথ্যা সব এক সাথে চলে। নারীদের বিশাল অংশ ইসলামের কথা বলা সামনের সারির মানুষদের চরম অপছন্দ করেন। সামাজিকভাবে আপনাকে তো স্টেইক তৈরি করতে হবে। তা না করে আপনি যদি খালি অনুভূতির রাজনীতি করতে থাকেন -এটা একটা ফ্যানাটিক প্রবণতার বেশি কিছু হবে না। লীগ লীড দিবে। আপনি অপরাধীর পিছনে ইসরামী জোস নিয়ে আন্দোলনে দাঁড়িয়ে যাবেন ( শাহবাগের ওড়না ঘটনায় যেটা দেখা গেল)। এই জন্য চরম দেহতত্ববাদি খাটাসকেও আপনি ইসলামী আন্দোলনের নেতা মনে করে খুশিতে নাচেন। বিশ্বাস করেন। কারণ ভন্ডগুলা জানে আপনি আপনার বিশ্বাস ও নবীর ইজ্জতের প্রশ্নে অনঢ়। এটাকে কাজে লাগিয়ে যার যার মতোন ফায়দা নিতে চায়। ফলে আপনার সেল্ফ ডেবলপ করতে হবে। আপনি আর কতকাল দ্বতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে থাকবেন? কোটায় ব্যবহার হবেন?
এইজন্য আমি প্রথম দিন থেকে বলছি, বাংলাদেশের কোন মাতাদর্শত ফোর্সকে ক্ষমতায় আনা যাবে না। কারণ এখানে ভিন্নতাকে শ্রদ্ধ করার কোন মানসিকতা গড়ে ওঠে নাই। প্রগতীশীলরাই সব চেয়ে বেশি প্রতিকৃয়াশীল এই দেশে। এরা নিজেদের সাংষ্কৃতিক স্বাধীনতার জন্য বিশাল গোষ্ঠির আবেগ ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। ইসলামিস্টদের কথা তো আগেই বলেছি।
ক্ষমতায় আসবে যারা সব মতাদর্শকে ধারণ করে একটা ভ্যালু বেইজড রাজনীতি করবে তারা। মতার্শগত সংগ্রাম সমাজে জারি থাকবে। সমাজে এরা তাদের প্রভাব ও জনপ্রিয়তা বিস্তারের চেষ্টা করবে। এরা থাকবে কমিউনিটি আকারে। তাদের অধিকার থাকতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্র হবে ভ্যালু-বেইজড। এখন ভ্যালু তো মানুষ পয়দা করে না। ভ্যলু বা মূল্যবোধ আসে ডিভাইন অর্ডার থেকে। বাংলাদেশে সেটা তৈরিতে ইসলামের একটা ভূমিকা থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। ইসলামের ভ্যালুজগুলার ইউনিভারসাল একটা রুপ দিতে পারতে হবে। এটার জন্য আমাদের প্রচুর আলেম যেমন লাগবে তেমনি প্রচুর সেকুলার থিওলজিশিয়ান লাগবে। যারা এমন একটা দার্শনিক বয়ান তৈরি করবে যেটা সমাজের প্রতিটি মানুষ নিজে স্বাধীন থেকেও গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না।
আমরা সবাই ঐক্যের কতা বলি। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের জন্য কমন বয়ান লাগে। সেটা স্পিরিচুয়ালি পাওয়ারফুল হতে হয়। এই জাতীয়- সিভিলাইজেশনাল বিলংগিং -বয়ান তৈরি করতে না পারলে ঐক্য তৈরি হবে না। সবাই সবাইকে তার চেয়ে নিচে মনে করবে। একটা ট্রাইবাল ঝগড়া চলতেই থাকবে। এটা আমাদের থেরি করতে পারতে হবে।
এটা বলা যত সহজ, করা ততই কঠিন। কিন্তু এটা করতে পারতে হবে। সিজনাল হুজগেপনা দিয়ে হবে না।