07/11/2025
**গল্পের নাম : নিঃশব্দ শহরের ঘড়ি**
একটা শহর ছিল—নাম *নির্বাকপুর*। ওখানে কেউ কথা বলত না। জন্মের পর থেকেই সবাই নীরব। শুধু একটাই শব্দ শোনা যেত—শহরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল একটা ঘড়ির টিকটিক শব্দ।
ঘড়িটার নাম ছিল **সময়রক্ষক**। কেউ জানত না কে বানিয়েছিল, কখন থেকে ওটা টিকটিক করছে। তবে সবাই জানত, একবার যদি ঘড়িটা থেমে যায়, শহরটা চিরদিনের জন্য অন্ধকারে ডুবে যাবে।
শহরের সব মানুষ ইশারায় কথা বলত। দোকানদার হাত তুলে দাম দেখাত, স্কুলে শিক্ষক চক দিয়ে বাতাসে অক্ষর আঁকতেন। তবু সবার চোখে এক অদ্ভুত শান্তি ছিল—যেন কথা না বলেও সবাই সব বুঝে নিত।
একদিন, এক কিশোরী মেয়ে—নাম **মৃন্ময়ী**—রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখল, ঘড়িটার টিকটিক থেমে গেছে। শহর নিঃশব্দ থেকে আরও নিঃশেষ। আকাশে কোনো তারা নেই, বাতাসও থেমে গেছে।
মৃন্ময়ী দৌড়ে গেল ঘড়ির কাছে। সেখানে একটা ছায়া দাঁড়িয়ে ছিল—কালো, কুয়াশার মতো। ছায়াটা ফিসফিস করে বলল, “তুমি কি আমার কণ্ঠ ফিরিয়ে দিতে পারবে?”
মৃন্ময়ী ভয় পায়নি। সে জানত, এই শহর একদিন কথা বলত। কেউ তাদের কণ্ঠ নিয়ে নিয়েছে। সে নিজের বুকের ভেতর হাত দিল—একটা আলোর কণা বেরিয়ে এল, নরম, গরম আলো। সে সেই আলোটা ছায়ার দিকে এগিয়ে দিল।
ছায়াটা ধীরে ধীরে মানুষে পরিণত হল—এক বৃদ্ধ ঘড়িওয়ালা। চোখে দুঃখ, হাতে যন্ত্রপাতি। সে বলল, “আমি এই শহরের প্রথম ঘড়িওয়ালা। আমি সময় বাঁচাতে গিয়ে সবার কণ্ঠ চুরি করেছিলাম, যাতে কেউ তর্ক না করে, কেউ রাগ না করে—শান্তিতে বাঁচে। কিন্তু শান্তি কণ্ঠহীন নয়।”
তারপর সে ঘড়িটায় হাত রাখল, আর ঘড়ির কাঁটা আবার চলতে শুরু করল।
টিক—টক—টিক—টক। একটা এক করে মানুষ জেগে উঠল, মুখ খুলে প্রথমবারের মতো শব্দ করল। কেউ হাসল, কেউ কাঁদল, কেউ শুধু বলল— “ধন্যবাদ।”
সেই রাতের পর নির্বাকপুরের নাম বদলে গেল। নতুন নাম—**স্বরপুর**
লেখক : রিয়াজ খন্দকার