03/10/2025
বিয়ের আগের রাতে শুভর মৃত্যুঃ আনন্দমুখর গ্রামজুড়ে এখন শোকের মাতম!
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের মীরমর্দন গ্রামে এখন আর আলো-ঝলমলে বিয়ের সাজ নেই, নেই বাদ্যযন্ত্রের সুর বা অতিথিদের কোলাহল। বৃহস্পতিবার রাতের পর থেকে গোটা গ্রাম শোকে নিস্তব্ধ হয়ে আছে। কারণ, যে বাড়িতে শুক্রবার বাদ আসর মো. শুভর (২৬) হাসিমুখে বিয়ের মঞ্চে বসার কথা ছিল, সেই বাড়িতেই আজ শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুভ, প্রবাসী নুরুল ইসলামের ছেলে, সবার প্রিয়, প্রাণবন্ত এক তরুণ পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে বিয়ের আনন্দে মেতে ছিল। সন্ধ্যায় শুভ নিজেও নাচ-গানে অংশ নিয়েছিলেন, হাসছিলেন প্রাণভরে। কিন্তু সেই হাসি যে হঠাৎ থেমে যাবে, কেউ কল্পনাও করেনি।
রাত ৯টার দিকে তিনি নিজের দোকানে যান। অনেকক্ষণ পরও ফিরে না আসায় মা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন,শুভর নিথর দেহ দোকানের আড়ার সঙ্গে দড়িতে ঝুলছে। আনন্দের বাড়ি মুহূর্তেই কান্নায় ভরে ওঠে। মা-চাচা-চাচি আর আত্মীয়রা ভেঙে পড়েন। চিৎকারে গ্রাম ছুটে আসে মানুষ। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দশমিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক নিশ্চিত করেন,হাসিখুশি সেই শুভ আর নেই। শুভর দাদা আবদুর রব হাওলাদার ভেঙে পড়া কণ্ঠে বললেন, ওর বাবা প্রবাসে থাকে, আমরা নিজেরাই মেয়েটি দেখে ঠিক করেছি। ওও রাজি ছিল। বিকেল পর্যন্ত তো আনন্দ-উৎসবে মেতে ছিল। হঠাৎ সে কেন এমন করল, আমরা কেউ বুঝতে পারছি না। বন্ধু রাবিনও জানালেন একই কথা,একটু আগেও যে ছেলেটা আমাদের সঙ্গে হেসে নাচছিল, সে এভাবে চলে যাবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। গ্রামের মানুষের চোখেও প্রশ্ন,একজন সুস্থ, স্বাভাবিক, আনন্দময় যুবক কেন এমন করল? কী এমন চাপ বা কষ্টে ছিল, যা পরিবার-বন্ধু কারও কাছে প্রকাশ করেনি? গ্রামজুড়ে এখন শুধু কান্নার সুর। আলো-ঝলমলে সাজানো বিয়ের বাড়ি পরিণত হয়েছে শোকসভায়। যে বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র সবাই হাতে নিয়েছিল, সেটিই আজ শোকবার্তার মতো হয়ে গেছে। দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আবদুল আলীম জানান, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। পরিবারের হাতে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। মীরমর্দন গ্রামে বিয়ের সাজসজ্জা আজও বাতাসে উড়ছে। রঙিন ফানুস, লাইট আর তোরণগুলোর নিচে কান্নার শব্দই এখন একমাত্র বাস্তবতা। শুভর মৃত্যু শুধু তাঁর পরিবারকেই ভেঙে দেয়নি, ভেঙে দিয়েছে গোটা গ্রামকে।