15/06/2025
সরকারি চাকরিজীবী বাবার চেয়ে আমার কাছে আমার গ্রামের পল্লীচিকিৎসক বাবা অনেক বেশি শ্রদ্ধার, ভালোবাসার। কারণ আমার বাবা সারা জীবন নিরবচ্ছিন্নভাবে মানুষের প্রিয় পোষা গরু ছাগলের সেবায় নিজেকে নিবেদন করেছেন।
তিনি কখনো সময় দেখেননি, দিন বা রাতের হিসাব করেননি। কখনো রাত দুইটায়, কখনো ভোরে, আবার কখনো বিকেলের শেষে শহর থেকে গ্রামে ছুটে গেছেন অসুস্থ কোনো প্রাণীর চিকিৎসা দিতে। সরকারি চাকরির ব্যস্ততা সামলেও সকাল কিংবা অফিসে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন গ্রামের মানুষদের প্রাণীদের।
আজ অবসরের পরও তাঁর দিন কাটে আগের মতোই। সকাল থেকে রাত অবধি তিনি ছুটে বেড়ান গ্রামের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। তাঁর হাতে এখনও সেরে ওঠে বহু গরু ছাগল, এখনও অনেক মুখে শোনা যায় তাঁর জন্য কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার গল্প।
ছোটবেলায় দেখতাম, গ্রামের বাজারে আমাদের ওষুধের দোকানের সামনে নারী পুরুষেরা গরু ছাগল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাবার জন্য। কলেজ শেষে বাবা একটানা দোকানে কাজ করেছেন, চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।
গ্রামের কোনো দরিদ্র নারী বা পুরুষ যখন তাঁর প্রিয় গরু বা ছাগলটির অসুস্থতায় ভেঙে পড়েন, তখন আমার বাবা যেন হয়ে ওঠেন তাদের একমাত্র ভরসা। প্রাণপণে চেষ্টা করেন তিনি প্রাণীটিকে বাঁচাতে। কারণ তিনি জানেন, একটি গরু বা ছাগলই হতে পারে একটি দরিদ্র পরিবারের শেষ সম্বল, একটুকরো স্বপ্ন।
যারা গ্রামে গেছেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, চোখে চোখ রেখে শুনেছেন তাদের গল্প... তারা জানেন, গরু ছাগল শুধু পশু নয়, এটি একেকটি পরিবারে ভালোবাসার প্রতীক, জীবিকার অবলম্বন, কখনো সন্তানের মতো আপন।
বাবা সেই অনুভূতিই বোঝেন। তাই প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেন যেন কোনো দরিদ্র পরিবারের সেই একমাত্র স্বপ্নটুকু হারিয়ে না যায়।
এখনও কয়েক গ্রামের মানুষ ভরসা রাখে বাবার অভিজ্ঞ হাতে। তাঁদের চোখে আমার বাবাই ভরসার শেষ আশ্রয়, প্রাণীদের একজন নির্ভরযোগ্য সেবক।
আমার বাবার নাম আবুল কাশেম। আমাদের গ্রামের দোকান ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সেনুয়া বাজারে।
এই বাবা দিবসে তাঁকে জানাই আমার শ্রদ্ধা আর নিঃশর্ত ভালোবাসা।
লেখক: আমিনুর রহমান হৃদয়, সোশ্যাল মিডিয়া মডারেটর, দৈনিক প্রথম আলো।