22/10/2025
পীরগঞ্জে ইউএনও’র সহযোগিতায় খাস খতিয়ানভুক্ত জমি উদ্ধার
মুনসুর আহাম্মেদ
**নিজস্ব প্রতিনিধি :**
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমি জবরদখলকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রকিবুল হাসানের সহযোগিতায় ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এন এম ইশফাকুল কবীরের নির্দেশে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১১টায় উপজেলার ৮ নম্বর দৌলতপুর ইউনিয়নের বনুয়াপাড়া ও অবাশ্রম এলাকায় এই উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।
সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের দখলমুক্ত করতে সার্ভেয়ার পাঠান সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তিনি সরেজমিন গিয়ে ফিতা টেনে সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি বসিয়ে দেন। পরে উপস্থিত ভূমিহীন পরিবারগুলোর সামনে সরকারি জমির মাপযোগ করেন। এসময় ভূমিহীনদের সঙ্গে প্রভাবশালী দখলদারদের বাকবিতণ্ডা হলেও সার্ভেয়ার পরিস্থিতি শান্ত করে কাজ সম্পন্ন করেন।
জমির মাপযোগ শেষে উভয় পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
স্থানীয় ভূমিহীন পরিবারগুলো দাবি করেন, বনুয়াপাড়া নদীর চর এলাকায় আগে একটি খেলার মাঠ ছিল। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় তরুণরা খেলাধুলা করত। ৮ নম্বর দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কার্তিক চন্দ্র রায় ও বর্তমান চেয়ারম্যান সনাতন চন্দ্র রায়ও সেখানে একাধিকবার ফুটবল খেলার উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি জোরপূর্বক মাঠটি দখল করে আমবাগান ও ফসলি জমি তৈরি করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রশাসন ঘটনাস্থলে সার্ভেয়ার পাঠায় এবং খাস জমি উদ্ধার শুরু করে।
ভূমিহীন পরিবারগুলোর দাবি, মাঠটি খেলাধুলার জন্য সংরক্ষণ রেখে অবশিষ্ট সরকারি জমি তাদের বন্দোবস্ত হিসেবে দেওয়া হোক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান বলেন,
“সার্ভেয়ার পাঠিয়ে সরকারি খাস জমির সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। দুই পক্ষের কাগজপত্র যাচাই করে আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সহকারী কমিশনার (ভূমি) এন এম ইশফাকুল কবীর বলেন,
“উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বনুয়াপাড়া এলাকায় সার্ভেয়ার পাঠানো হয়েছে। জমির কাগজপত্র ও সীমানা যাচাই শেষে দুই পক্ষকে ডাকা হয়েছে।”
এ বিষয়ে স্থানীয় শিক্ষক ও জেলা রোভার স্কাউট নেতা বাকাউল হক জিলানী এবং রিংকু চৌধুরী বলেন,
“দীর্ঘদিনের দাবির পর প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়েছে। আমরা আশা করি, খেলার মাঠটি শিশু-কিশোরদের ব্যবহারের জন্য ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন,
“২০২৪ সালে আমরা মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। এখন প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে, এটা ইতিবাচক। সরকারি খাস জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়া হোক।”
ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ চৌধুরীও বলেন,
“দীর্ঘদিন ধরে ওই স্থানে খেলাধুলা হতো। মাঠটি যেন খেলাধুলার উপযোগী করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, এটি আমাদের প্রত্যাশা।”
পীরগঞ্জের বনুয়াপাড়া এলাকায় সরকারি খাস জমি উদ্ধারে প্রশাসনের এই পদক্ষেপে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তারা আশা করছেন, ভূমিহীনদের ন্যায্য দাবি ও স্থানীয় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জায়গা দুটোই সংরক্ষিত হবে।