24বিডি

24বিডি 24BD is a news sharing page, here the latest breaking news from all print and electronic media is shared. Stay with us. Thank you

ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি জাহাজ ফি'লি'স্তি'নে'র অবরুদ্ধ গা'জা'র জলসীমায় প্রবেশ করেছে। তবে জাহাজটি ই'স...
02/10/2025

ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি জাহাজ ফি'লি'স্তি'নে'র অবরুদ্ধ গা'জা'র জলসীমায় প্রবেশ করেছে। তবে জাহাজটি ই'স'রা'ই'লি নৌবাহিনী জব্দ করেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

বিস্তারিত কমেন্টে...



প্রকল্প... প্রকল্প মানেই ব্যাক্তিগত আয়ের বড় উৎস। তাই সংশ্লিষ্ট সবাই এতে আগ্রহী। তা কাজে লাগুগ বা না লাগুক, তাতে কি আসে য...
02/10/2025

প্রকল্প... প্রকল্প মানেই ব্যাক্তিগত আয়ের বড় উৎস। তাই সংশ্লিষ্ট সবাই এতে আগ্রহী। তা কাজে লাগুগ বা না লাগুক, তাতে কি আসে যায়। তাইতো মন চাইলেই নিত্য নতুন প্রকল্প পাস হয়ে যায় সহজে, কোন রকম কার্যকারীতা যাচাই ছাড়াই। এতে ফলাফল শুন্য হলেও পকেট কিন্তু ভরে ঠিকই।

অসংখ্য ধন্যবাদ শহিদুল আলম !  এটি একটি বিশাল কাজ. জীবনের রিস্ক থাকা সত্ত্বেও ত্রাণ জাহাজ নিয়ে কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন. আল্ল...
02/10/2025

অসংখ্য ধন্যবাদ শহিদুল আলম ! এটি একটি বিশাল কাজ. জীবনের রিস্ক থাকা সত্ত্বেও ত্রাণ জাহাজ নিয়ে কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন. আল্লাহ রক্ষা করুন Alam Well done !

আলহামদুলিল্লাহ, ২০২৬ সালের সরকারি ভাবে হজ্জ্ব প্যাকেজসমূহ, ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই আমরা আমাদের প্যাকেজ ঘোষনা করবো।      A...
29/09/2025

আলহামদুলিল্লাহ, ২০২৬ সালের সরকারি ভাবে হজ্জ্ব প্যাকেজসমূহ, ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই আমরা আমাদের প্যাকেজ ঘোষনা করবো।

Air China 24বিডি Haramain IndiGo U.S. Embassy Dhaka

থালাপতি বিজয়ের বিরুদ্ধে মামলাসম্প্রতি থালাপতির সমাবেশের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মামলা করা হয়সিনেমা জগতে ক্যারিয়ারের ত...
29/09/2025

থালাপতি বিজয়ের বিরুদ্ধে মামলা

সম্প্রতি থালাপতির সমাবেশের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মামলা করা হয়

সিনেমা জগতে ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে যোগ দেন দক্ষিণি তারকা থালাপতি বিজয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিনেমা ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা জানান তিনি। তার দলের নাম তামিলাগা ভেটরি কাজাগম (টিভিকে)। দল ঘোষণার আট মাস পর এ বছরের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো জনসভায় আসেন এই তামিল সুপারস্টার। সেই জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাজনীতি সিনেমা নয়, যুদ্ধক্ষেত্র।’’

এবার ফের আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে টিভিকে। গত বৃহস্পতিবার ভারতের মাদুরাই জেলায় দলটির মহাসমাবেশে যোগ দেন বিজয়। সমাবেশের কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সমাবেশে তিনি জানান, মাদুরাই পূর্ব আসন থেকে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন তিনি।

সেই সভায় ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তিনি। এবার জানা গেল দক্ষিণি এই সুপারস্টারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। টিভিকের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সমাবেশের মঞ্চে ভক্তের সঙ্গে তার দেহরক্ষীর দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ওই মামলা হয়েছে। খবর ইন্ডিয়া টুডে ও এনডিটিভির

সংবাদমাধ্যমগুলো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভক্তকে দেহরক্ষীদের নির্যাতনের অভিযোগে দক্ষিণি সিনেমার সুপারস্টার-রাজনীতিক ও টিভিকের প্রধান থালাপতি বিজয়ের বিরুদ্ধে কুন্নাম থানায় মামলা হয়েছে। থালাপতির পাশাপাশি তার দেহরক্ষীদেরও এই মামলার আসামি।

পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তামিলনাড়ু রাজ্যের পেরাম্বালুর জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে শরৎকুমার নামে এক ব্যক্তি এই অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই মামলা হয়েছে। অভিযোগকারী জানান, বিজয়ের দেহরক্ষীরা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন।

এ বিষয়ে কুন্নাম পুলিশ বলছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির তিনটি ধারায় বিজয় ও তার দেহরক্ষীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মাদুরাইয়ে টিভিকের দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে ডিএমকেকে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আখ্যা দেন থালাপতি বিজয়। সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) টিভিকের একমাত্র ‌আদর্শগত শত্রু হিসেবে ঘোষণা দেন তিনি।

https://bangla.dhakatribune.com/101108

ঘূর্ণিঝড় বুয়ালইয়ের তাণ্ডবে ফিলিপাইনে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যুগ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় বুয়ালইয়ের তাণ্ডবে ফিলিপাইনে কমপক্ষে ২৬ জন ...
29/09/2025

ঘূর্ণিঝড় বুয়ালইয়ের তাণ্ডবে ফিলিপাইনে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় বুয়ালইয়ের তাণ্ডবে ফিলিপাইনে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত, ১৪ জন নিখোঁজ এবং ৩৩ জন আহত হয়েছেন। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশটির সংবাদ সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আনাদোলুর।

ফিলিপাইনের জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল জানিয়েছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় যা স্থানীয়ভাবে ওপং, নান্দো এবং মিরাসোল নামে পরিচিত- কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত, বন্যা এবং ভূমিধসে মোট ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৪টি পরিবার বা ২৭ লাখ ৯৭ হাজার ৭০৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সংস্থাটির তথ্যানুসারে, ৪৬ হাজার ৬১১টি পরিবার বা ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বর্তমানে ২ হাজার ৬৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে এবং আরো ৩১ হাজার ৪৪৮টি পরিবার বা ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৭ জন ব্যক্তি এই কেন্দ্রগুলোর বাইরে সাহায্য পাচ্ছে।

কাগায়ান উপত্যকায় ৮ জন, বিকোল অঞ্চলে ৯ জন, কর্ডিলেরা প্রশাসনিক অঞ্চলে ৪ জন, সেন্ট্রাল লুজন অঞ্চলে ২ জন, সেন্ট্রাল ভিসায়াস অঞ্চলে ২ জন পূর্ব ভিসায়াস অঞ্চলে ১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

ভারী বৃষ্টিপাত, তীব্র বাতাস এবং বন্যায় মোট ৮ হাজার ৯১৬টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির সরকার বিভিন্ন জাতীয় সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার ইউনিটের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬৭৫টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে।

গত শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় বুয়ালই ফিলিপাইনে আঘাত হানে। এর প্রভাবে মধ্য ফিলিপাইন ও দক্ষিণ লুজনে মুষলধারে বৃষ্টিপাত ও শক্তিশালী ঝড় বয়ে যায়। এতে ইতিমধ্যেই বন্যকবলিত বুলাকানের জনজীবন আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

গত সপ্তাহে সুপার টাইফুন রাগাসার ক্ষয়ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ফিলিপাইন। এর মধ্যে নতুন করে ঘূর্ণিঝড় বুয়ালইয়ের কবলে পড়ে দেশটি। সুপার টাইফুন রাগাসার তাণ্ডবে তাইওয়ান ও ফিলিপাইনে ২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় বুয়ালই আজ সোমবার দুপুরে মধ্য ভিয়েতনামে আঘাত হানবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। পূর্বসতর্কতা হিসেবে দেশটি তার বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে এবং ঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে।

বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য: সাংবাদিকদের ব্রিটিশ হাইকমিশনারবাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ...
29/09/2025

বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য: সাংবাদিকদের ব্রিটিশ হাইকমিশনার

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তি পূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য। সোমবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাতের পর ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সাংবাদিকদের একথা বলেন।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, সিইসির সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের সহায়তা করবে ইউকে। বিশেষ করে ভোটার এডুকেশন, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ নির্বাচনের আনুষঙ্গিক বিষয়ে সহায়তা দেবে ব্রিটিশ হাইকমিশন।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে এ বৈঠক শুরু হয়। এর আগে এ বছরের ১০ মার্চ প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।

https://www.dailyamardesh.com/national/amdwrat65tgwt

সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মারা গেছেনসাবেক শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লা...
29/09/2025

সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মারা গেছেন

সাবেক শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

ফেসবুক পোস্টে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন নূরুল মজিদের ছেলে মনজুরুল মজিদ মাহমুদ সাদি। পোস্টে মাহমুদ সাদি লিখেছেন, ‘আমার বাবা আর নেই। সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহ পাক যেন তাকে জান্নাত নসিব করুন।’

গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এদিন নরসিংদীতে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

গত বছরের ৪ আগস্ট মাধবদীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা হয়। সেই হামলায় মাধবদীর শ্রমিকনেতা জাহাঙ্গীর হোসেন নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আমির হোসেন বাদী হয়ে ৯ আগস্ট মাধবদী থানায় মামলা করেন। এ মামলায় নূরুল মজিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দিল্লি থেকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হাসিনারবিস্তারিত ভিডিও লিংক : https://www.dailyamardesh.com/video/amdawodjektfcYu...
29/09/2025

দিল্লি থেকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হাসিনার

বিস্তারিত ভিডিও লিংক : https://www.dailyamardesh.com/video/amdawodjektfc

Yunus Centre Vishal & Shekhar

ভারতে আওয়ামী আস্তানা উদঘাটনবিস্তারিত ভিডিও লিংক : https://www.youtube.com/watch?v=fclgpVWmApcজুলাইয়ের ছাত্র-জনতা গণঅভ্যু...
29/09/2025

ভারতে আওয়ামী আস্তানা উদঘাটন

বিস্তারিত ভিডিও লিংক : https://www.youtube.com/watch?v=fclgpVWmApc

জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের আস্তানা উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। তারা কলকাতায় মূল আস্তানা গেড়েছেন। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (আইবি) বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে কলকাতায় অবস্থান নেওয়া এমন ৭৩৪ পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিস্টের একটি ডেটাবেস তৈরি করেছে। এই ডেটাবেসে তাদের নাম-ঠিকানা, পাসপোর্ট ও টেলিফোন নম্বরও উল্লেখ রয়েছে। ডেটাবেসটি আমাদের হাতে এসেছে।
আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে এ তথ্য ছাড়াও পলাতকদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার পরপরই এসব নেতা ভারতে পালিয়ে যায়। পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের স্ত্রী-সন্তানও সেখানে অবস্থান করছেন। কোনো কোনো নেতা তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, বাড়ির কাজের লোকও সঙ্গে নিয়ে গেছেন। পলাতক আওয়ামী নেতাদের নাম-ঠিকানা সংবলিত এই ডেটাবেসে তাদের পরিবারের সদস্যদের তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে।
ভারতে অবস্থান করা এসব নেতার মধ্যে কয়েকজন ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে কথাও বলেছেন। তাদের কেউ কেউ পালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। কয়েকজনকে বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত টকশোতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, পলাতক নেতাদের কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে এসব নেতার পাসপোর্ট ৫ আগস্টের পরপরই বাতিল করা হয়েছে। এরপরও ওই পাসপোর্ট তারা কীভাবে পেয়েছেন—তা রহস্যজনক। আরো জানা গেছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করছেন কলকাতায় অবস্থানরত একাধিক পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তা। অনুসন্ধানে এও জানা গেছে, পলাতকরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রথম দিকে শহরের পার্ক, মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে দেখা গেলেও বর্তমানে তাদের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, এসব নেতার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তাদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে তারা নির্দিষ্ট কিছু এলাকার বাইরে যাচ্ছেন না।
এদিকে কলকাতায় অবস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের একাধিক সূত্র আমার দেশকে জানিয়েছে, এসব নেতার পারিবারিক ব্যয়ের প্রায় পুরোটাই নিয়মিত বাংলাদেশ থেকেই যাচ্ছে। এর সিংহভাগই হুন্ডির মাধ্যমে যায় বলে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
পলাতক শেখ হাসিনার আশ্রয় হয়েছে দিল্লির অভিজাত লুটিয়েন্স বাংলো জোনের সুরক্ষিত একটি বাড়িতে। বাংলোর ঠিকানা হলো ১১ রাজাজি মার্গ। বাকি আওয়ামী নেতারা আস্তানা গেড়েছেন কলকাতায়। ওবায়দুল কাদের, শেখ সেলিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মতো ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী এবং শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতার বসবাস এখন কলকাতায়। জুলাই গণহত্যা এবং বিগত ১৫ বছর ধরে গুম, খুন, নির্যাতন, বেপরোয়া দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মে জড়িত আ.লীগ নেতার পাশাপাশি ওই সরকারের শীর্ষ আমলা, পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশনার, সরকারি আইনজীবীসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সামরিক বাহিনীর শীর্ষ জেনারেলরাও আশ্রয় নিয়েছেন কলকাতায়। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার এই ডেটাবেসে অন্তত ৭৩৪ জনের তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করা হয়েছে। ডেটাবেসে প্রত্যেকের নামের পাশাপাশি তার পিতা বা স্বামী-স্ত্রীর নাম, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর, দলীয় পদ-পদবি, বাংলাদেশে স্থায়ী ঠিকানা, কলকাতার বর্তমান ঠিকানাসহ তারা যে ফোন নম্বরটি ব্যবহার করছেন—তা সবিস্তারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই ডেটাবেসে প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। কলকাতায় আস্তানা গাড়া প্রত্যেকেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যারাই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা কেউই যেন গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের বাইরে না থাকেন, তা নিশ্চিত করতে চাইছে ভারতের ডিপ স্টেট। ইতোমধ্যে প্রত্যেকের জন্য বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিশ্চিত করা হয়েছে, যা রীতিমতো রহস্যের জন্ম দিয়েছে। অধিকাংশই অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন; অথচ তাদের প্রত্যেকের হাতে এখন বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট! এ ব্যাপারে কলকাতার একটি সূত্র আমার দেশকে জানিয়েছে, পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের কোনো একটি গোষ্ঠীকে সহযোগিতা করেছে।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কলকাতার অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে শহরতলিতে আশ্রয় নিয়েছেন পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা। কেউ কেউ বাড়ি ভাড়া করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রীতিমতো সংসার পেতে বসেছেন। অনেকে আবার থাকছেন হোটেল ভাড়া করে। তবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ নেতারা রুম ভাড়া নিয়ে মেস সিস্টেমে থাকছেন। ভারতীয় ডেটাবেসের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার স্ত্রী ইশরাতুন্নেছা কাদেরকে নিয়ে ‘পিএস ওয়ান-১০, থাকদারী, নিউ টাউন, কলকাতা’—এই ঠিকানায় অবস্থান করছেন। তার হাতে এখন যে বাংলাদেশি পাসপোর্টটি রয়েছে, তার নম্বর ডি-০০০১০৭৫৯। ওবায়দুল কাদের কলকাতায় যে মোবাইল সিম ব্যবহার করছেন, তার নম্বর +৯১৯৩৩০৩৪১৮১০।
আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম তার দুই ছেলে শেখ ফজলে নাইম ও শেখ ফজলে ফাহিমকে (এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি) নিয়ে কলকাতায় অবস্থান করছেন। তার বর্তমান বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর ডি-০০০১২০৬৯। তার ফোন নম্বর +৯১৭০০৫৬৮৩৬৯৩।
প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, তার স্ত্রী পারভীন চৌধুরী এবং কাজের লোক মো. মামুন হোসেনকে নিয়ে তার সংসারজীবন পার করছেন কলকাতায় বসে। তার বর্তমান বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর এ-১২৩২৮৭৯৬। তার কলকাতার ফোন নম্বর +৯১৭৪৩৯৩৩৪৭৬৪।
প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক তার স্ত্রী সাইয়েদা আনজুমান বানু, মেয়ে আমরিন রাখি, জামাতা মো. নাজমুল ইসলাম, নাতি আফফান সিদ্দিক, নাতনি মেজরিশ কবীর, নাতি নাজেইর ওয়াজদি আসওয়াত, এপিএস অপূর্ব ত্রিপুরা এবং পিএস (রাজনৈতিক) মাসুদুর রহমান বিপ্লবকে নিয়ে কলকাতায় বসবাস করছেন। নানকের বর্তমান বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর বি-০০৬৯২২৬৬। তিনি এখনো বাংলাদেশি নম্বর ব্যবহার করছেন। তার ফোন নম্বর ০১৭৭৭৭৭৭৭৭৫।
প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান তার স্ত্রী শাহীন আখতার, দুই মেয়ে অনিকা ফারিহা জামান ও মাইশা সামিহা জামানকে নিয়ে কলকাতা সদরে অবস্থান করছেন। তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর ডি-০০০১২৮৩০। তিনি কলকাতায় বাংলাদেশি সিম ব্যবহার করছেন। তার বর্তমান ফোন নম্বর ০১৭১১৮১০৯৭০।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তার মেয়ে সাফিয়া তাসনিম খান ও কাজের লোক মো. সাইফুল ইসলামকে নিয়ে কলকাতার নিউ টাউনের রোজ ডেল টাওয়ারে বসবাস করছেন। তার বর্তমান বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর ডি-০০০১০০২০। কলকাতায় তার ব্যবহৃত ফোন নম্বর +৯১৯৩৩০৩৬০৪৫৪।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ তার স্ত্রী ফৌজিয়া আলমকে নিয়ে নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া-৩, কলকাতা—এ ঠিকানায় অবস্থান করছেন। তার বর্তমান বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর ডি-০০০১১৯৫৮। তার বর্তমান ফোন নম্বর +৯১৬৯০৯৭৯৩০৩৩।
সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু তার স্ত্রী সীমা হামিদকে নিয়ে কলকাতার অভিজাত এলাকা সল্টলেকের সেক্টর-২, সিজে ব্লক, সিজে ৩৩৩—এ ঠিকানায় বসবাস করছেন। তার কাছে থাকা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর ডি-০০০১২৪৭৭। তার বর্তমান ফোন নম্বর +৯১৯৩৩০৩৮৯৪২২।
আইইবির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর কলকাতায় কেষ্টোপুর এলাকায় প্রফুল্ল কুমার রোডে অবস্থিত বিশ্বরবর অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন। তার বর্তমান বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর ডি-০০০১২৯৬৪। তার বর্তমান ফোন নম্বর +৯১৮১১৮৯৭৮২৮৩।
অন্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই সাবেক এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ (বরিশাল-১)। তিনি কলকাতায় আছেন এক সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে। এছাড়া শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন (বাগেরহাট-১) ও তার ছেলে শেখ তন্ময় (বাগেরহাট-২), শেখ হেলালের ভাই সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল (খুলনা-২), শেখ সেলিমের বোনের স্বামী যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, শেখ হাসিনার ভাগ্নে চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন (মাদারীপুর-১) ও মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন (ফরিদপুর-৪), আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম (ঢাকা-৮) কলকাতায় অবস্থান করছেন।
অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১), স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম (কুমিল্লা-৯), শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (চট্টগ্রাম-৯), স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক (মানিকগঞ্জ-৩), রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম (রাজবাড়ী-২), যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহ্সান রাসেল (গাজীপুর-২), দ্বিতীয় স্ত্রী সিলভিয়া পারভীনসহ সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম (রাজশাহী-৬, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ (ময়মনসিং-৩), সাবেক প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ (ময়মনসিংহ-২), আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম (জামালপুর-৩), সফিউল আলম খান নাদেল (মৌলভীবাজার-৩), এসএম কামাল হোসেন (খুলনা-৩), সুজিত রায় নন্দী, দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাবেক এমপি সেলিম মাহমুদ (চাঁদপুর-১), উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, দলের কেন্দ্রীয় নেতা রেমন্ড আরেং কলকাতায় অবস্থান করছেন।
এছাড়া কলকাতায় আছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন (ঢাকা-৬), সাবেক এমপি মৃণাল কান্তি দাস (মুন্সীগঞ্জ-৩), সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩) ও তার স্ত্রী অপু উকিল, সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী (রাজশাহী-১), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু (নারায়ণগঞ্জ-২), সাবেক হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল (কক্সবাজার-৩), আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার (কুমিল্লা-৬), তাহসিন বাহার সূচনা (সাবেক মেয়র, কুসিক), আলী আসগর টগর (চুয়াডাঙ্গা-২), শিবলী সাদিক (দিনাজপুর-৩), মাহমুদ হাসান রিপন (গাইবান্ধা-৫), ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা (রাজশাহী-২), আয়েন উদ্দিন (রাজশাহী-৩), তারভীর শাকিল জয় (সিরাজগঞ্জ-১) হাবিবে মিল্লাত (সিরাজগঞ্জ-২), আকরামুল হক (সিরাজগঞ্জ-২), সাইফুজ্জামান শিখর (মাগুরা-১), বীরেন শিকদার (মাগুরা-২), এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট-৪), আক্তারুজ্জামান (খুলনা-৬), সাবেক সিইসি নূরুল হুদার ভাগ্নে এসএম শাহজাহান (পটুয়াখালী-৩), পংকজ নাথ (বরিশাল-৪), একেএম আউয়াল সাইদুর রহমান (পিরোজপুর-১), মহিউদ্দিন মহারাজ (পিরোজপুর-২), আমানুর রহমান রানা (টাঙ্গাইল-৩), ছোট মনির ((টাঙ্গাইল-২), অনুপম শাহজাহান জয় (টাঙ্গাইল-৩), মো. জোয়াহেরুল ইসলাম (টাঙ্গাইল-৮), শাহীন চাকলাদার (যশোর-৬), শওকত হাচানুর রহমান রিমন (বরগুনা-২), সাবেক হুইপ আতিউর রহমান আতিক (শেরপুর-১), সানোয়ার হোসেন ছানু (শেরপুর-১), আব্দুল মালেক সরকার (ময়মনসিংহ-৬), ফাহিম গোলন্দাজ বাবেল (ময়মনসিংহ-১০), মোস্তাক আহমেদ রবি (নেত্রকোনা-১), সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি (কিশোরগঞ্জ-১), আওলাদ হোসেন (ঢাকা-৪), মশিউর রহমান সজল (ঢাকা-৫), যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিল (ঢাকা-১৪), ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা (ঢাকা-১৫), মো. হাবিব হাসান (ঢাকা-১৮), সাইফুল ইসলাম (ঢাকা-১৯), শাহদাব আকবর (ফরিদপুর-২), মোয়াজ্জেম হোসেন রতন (সুনামগঞ্জ-১), জিল্লুর রহমান (মৌলভীবাজার-৩), ময়েজ উদ্দিন শরিফ (মৌলভীবাজার-২), জাহাঙ্গীর আলম সরকার (কুমিল্লা-৩), প্রাণ গোপাল দত্ত (কুমিল্লা-৭), আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম (ফেনী-১), নিজাম উদ্দিন হাজারী (ফেনী-২), নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন (লক্ষ্মীপুর-২), মহিউদ্দিন বাচ্চু (চট্টগ্রাম-১০), আশেক উল্লাহ রফিক (কক্সবাজার-২) ও মহিলা এমপি পারুল আক্তার।
এর বাইরে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশকিছু মধ্যম সারির নেতা, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়রও আছেন সেখানে। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর শরিফ, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডু, সাবেক ছাত্রনেতা জয়দেব নন্দী, গোলাম সারোয়ার কবীর, যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, ঢাকা উত্তর সিটি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকা অভিনেত্রী তারিন জাহানও বর্তমানে আছেন কলকাতায়।
https://www.dailyamardesh.com/politics/amd5julmw1bkc

*হাসিনার দুঃশাসনে বিধ্বস্ত জনপদ : বরিশালদুই হাজারের বেশি মামলা আসামি ৪০ হাজার**ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের প্রায় সাড়ে ১৫ বছর...
29/09/2025

*হাসিনার দুঃশাসনে বিধ্বস্ত জনপদ : বরিশাল
দুই হাজারের বেশি মামলা আসামি ৪০ হাজার*

*ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের প্রায় সাড়ে ১৫ বছর বরিশালে ছিল শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই ও তার স্বজনদের একচ্ছত্র আধিপত্য। শেখ মুজিবের ভাগ্নে ও সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এবং তার কথিত ‘৬ খলিফা’র নিয়ন্ত্রণে ছিল জেলাসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চল। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, বাসস্ট্যান্ড দখল, নমিনেশনবাণিজ্যÑসবকিছুরই নিয়ন্ত্রক ছিল সেরনিয়াবাত পরিবার। রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে তাদের দমন-পীড়নে কোণঠাঁসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যে কারণে একটা সময় নিজেদের মধ্যেই সংঘাতে জড়ায় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা।
জানা গেছে, ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের সময় পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন অন্তত ১১ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন একজন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধী মতাদর্শের কারণে তিনজনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন সাতজন।
এদিকে বিএনপির বিরুদ্ধে দুই হাজারের বেশি মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৫ হাজার জনকে। গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মী। অন্যদিকে জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর চলেছিল আওয়ামী ও পুলিশি নির্যাতনের স্টিমরোলার। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে বরিশাল নগরীতে দুই শতাধিকসহ জেলায় মোট সাত শতাধিক মামলা হয়, আসামি করা হয় ১৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে। একইভাবে জামায়াতের এক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার দুঃশাসনে দেশের গণতন্ত্র হত্যা করে কালো দিবসের সূচনা করা হয়। বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা-নির্যাতনসহ ভোটকেন্দ্র দখল, দিনের ভোট রাতে করাÑএর সবগুলোকে ছাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে ফ্যাসিস্ট দানবে পরিণত হয় আওয়ামী লীগ ও দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। আর নব্য দানব সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে বরিশালে হাজার হাজার বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে হামলা-মামলার শিকার ও কারাবরণ করতে হয়।
নাশকতাকারী ও সন্ত্রাসীর তকমা দিয়ে রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা ও গুম করা হয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের। তবে জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতাসহ বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর প্রশাসন ও ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনীর তাণ্ডব ছাড়িয়ে যায় নির্যাতনের সব মাত্রা।
আ.লীগ ক্যাডার ও পুলিশের সহযোগিতায় তিনজনকে খুন
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করায় স্থানীয় রাজনৈতিক হত্যার শিকার হয়েছেন জাসদের বানারীপাড়া উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন করীর। ২০১৩ সালের ১৯ জুলাই দুপুরে চাখার ডাকবাংলো সংলগ্ন মাদারকাঠী বাসস্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন তিনি। এ ঘটনায় চাখার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মজিবুল ইসলাম টুকু জড়িত ছিলেন বলে দাবি নিহতের পরিবারের।
অন্যদিকে ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক টিপু সুলতান ওরফে টিপু হাওলাদার ও উপজেলা জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা মো. কবির মোল্লাকে ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী পুলিশ।
হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পাননি নিজ দলের নেতাকর্মীরাও
আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন অন্তত সাতজন। মেহেন্দীগঞ্জে বিভিন্ন সময় বিশেষ করে ইউপি নির্বাচন ও ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অন্তত সাতজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে উলানিয়া উত্তর ইউপির স্থগিত হওয়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও ‘বিদ্রোহী প্রার্থীর’ সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে সিদ্দিকুর রহমান ও ছত্তার ঢালী নিহত হন। তারা দুজনেই আওয়ামী লীগের কর্মী। একই বছর দক্ষিণ উলানিয়ায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারের জেরে সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম সরদার ও সাঈদ চৌধুরী মারা যান। তারা দুজনই আওয়ামী লীগের কর্মী।
এদিকে ২০২৩ সালে উপজেলার আলিমাবাদ ইউনিয়নে দোকানে ঢুকে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। নিহত আরিফ জমাদ্দার (৪০) স্থানীয় মুরগি ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন।
২০২৪ সালে সর্বশেষ ঘটনায় হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল মাঝি (৫২) নিহত হন।
এর আগে বরিশালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনি জনসভার মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথ ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শাম্মী আহমেদের সমর্থকদের সংঘর্ষে কৃষক লীগ নেতা সিরাজ সিকদার (৫৮) অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে মারা যান তিনি।
গুমের শিকার সহোদর দুই ছাত্রদল নেতাসহ ছয়জন
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ ছয় প্রভাবশালী ব্যক্তি গুম হয়েছেন। আজও তাদের কোনো হদিস পায়নি পরিবার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর এসব রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে।
২০১০ সালের ২৩ নভেম্বর রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে অপহরণ করা হয় উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর খানকে। স্ত্রী রত্না বেগম জানান, নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আশায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সুফল মেলেনি।
বরিশাল নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবুল হায়দার একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করতেন। ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর কোম্পানির কাজে হায়দার তার সহকর্মী কবির হোসেনকে নিয়ে রাজধানীর মহাখালীর একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। হোটেলের নিচতলা থেকে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। তাদের পারিবারিক সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলে নিয়েছিলেন তৎকালীন সময়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান জিয়াউল আহসানের ভাই জিয়াউর রহমান বিপ্লব ওরফে ল্যাটো বিপ্লব। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বরিশাল আদালতে মামলা-সংক্রান্ত বিষয়ে আবুল হায়দার আদালতে যান। তখন আদালত প্রাঙ্গণে হায়দারকে মারধর করতে করতে হুমকি দেন বিপ্লব। এর এক সপ্তাহের মাথায় গুম হন বিএনপি নেতা হায়দার। এরপর থেকে তার হদিস মেলেনি।
২০১২ সালের ৩ এপ্রিল বরিশাল নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি ফিরোজ খান কালু ও তার ভাই মিরাজকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম থেকে আটক করে। এরপর থেকে তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। এমনকি গুম হওয়া এ দুই ছাত্রদল নেতাকে ফিরে পেতে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এখনো তাদের অপেক্ষায় দিন গুনছে পরিবার।
২০১৩ সালের আগস্টে গৌরনদীর টরকী এলাকা থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয় পাশের কালকিনি উপজেলার বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির টিপুকে। এছাড়া ২০১৪ সালে নিখোঁজ হন বরিশাল জেলা টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন ওরফে ফাঁসি কামাল। নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা থানায় জিডি করার পাশাপাশি র‌্যাব সদর দপ্তরে গিয়েও সুফল পাননি।
হাসানাতের ছিল ছয় খলিফা
আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর দাপটে পুলিশ-র‌্যাবসহ প্রশাসন ছিল তটস্থ। যে কারণে তার সব নির্দেশ পালন করত পুলিশ প্রশাসন। কাকে গ্রেপ্তার করতে হবে কিংবা কার বিরুদ্ধে মামলা দিতে হবেÑতা ঠিক করতেন হাসানাতের ‘ডানহাত’ এবং তার কথিত ‘ছয় খলিফা’র অন্যতম গৌরনদীর পৌর মেয়র হারিচুর রহমান হারিচ। তার ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিত পুলিশ।
প্রশাসন ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, হাসানাত আব্দুল্লাহ তার ছয় খলিফাকে দিয়েই পুরো বরিশাল ও তার অপরাধের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। এদের মধ্যে কেউ দেখতেন জমিজমা, টেন্ডারবাজি; কেউবা দেখতেন হাটবাজার, বালুমহাল, টেম্পুস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, মাছবাজার। তবে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন ও নেতা বানানোর বাণিজ্য সামলাতেন হাসানাত নিজেই।
সূত্রমতে, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ত্রাসের রাজত্বের প্রধান ছিলেন গৌরনদী পৌরসভার মেয়র হারিছুর রহমান হারিচ। গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। এখানকার টেন্ডারবাজি ও হাটবাজার থেকে সবকিছুই ছিল তার দখলে। এ ছাড়া বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুছ ছিলেন তার বিশ্বস্ত নেতা। তবে পারিবাবিক কেনাকাটা, ভারতে টাকা পাচারের বিষয়গুলো দেখাশোনা করতেন বানারীপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম ফারুক।
একইভাবে উজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল, বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারমান খালেদ হোসেন স্বপন এবং মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান খান মিঠু সব সময়ই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে ঘিরে থাকতেন। যে কোনো সিদ্ধান্ত আসত এসব নেতার মতামতের ভিত্তিতে। তবে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ও কমিটি গঠন সবকিছুরই নিয়ন্ত্রক ছিলেন হাসানাত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাসানাতের বড় ছেলে ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং বড় মেয়ে কান্তা আব্দুল্লাহ ও ছোট ছেলে আশিক আব্দুল্লাহ মনোনয়নবাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র পদের মনোনয়নে এক কোটি, ইউপি নির্বাচনে ৫০ লাখ থেকে এক কেটি টাকার মনোনয়নবাণিজ্য করে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে দাবি নির্ভরযোগ্য সূত্রের। এ ছাড়া জেলার সব হাট-বাজার ও বালুমহাল এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসানাতের ছোট ছেলে আশিক। প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করতেন তিনি। এ ছাড়া আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মেঝ ছেলে মঈন আব্দুল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করতেন ঠিকাদারির কাজ।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বক্তব্য
বরিশাল সদর-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমার দেশকে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ২৭টিসহ মোট ৩৫৭ মামলার আসামি হয়েছি। বর্তমানে ৩০টি মামলা চলমান। আলাল বলেন, শেখ মুজিব অন্য দলের সমালোচনা পছন্দ করতেন না বলেই বাকশাল কায়েম করেছিলেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বাকশালের উৎকর্ষ সাধন করে ফ্যাসিস্ট হয়েছেন। তারা রাজতন্ত্রের মনোভাবে ছিলেন বলেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল সদর আসনে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘বিএনপিসহ অন্য সমমনা দলগুলোকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার ছিল, তা-ই করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। তারা মূলত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে স্বৈরাচার থেকে ফ্যাসিস্ট হয়েছিল। আর আওয়ামী অপরাজনীতির শিকার হয়েছিলেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুয়াযযম হোসাইন হেলাল আমার দেশকে বলেন, আওয়ামী শাসনামলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন জামায়াত নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও ভাঙচুরসহ ১৯টি মামলা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় খালাস পেয়েছি। এ ছাড়া বরিশাল মহানগরে দুই শতাধিক এবং জেলায় কমপক্ষে পাঁচ শতাধিকসহ সব মিলিয়ে সাত শতাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এক হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন।

https://www.dailyamardesh.com/bangladesh/amdmu6vrtesqe

নিক্যাপিংয়ে চিরপঙ্গু শত শত তরুণশেখ হাসিনার দুঃশাসনে গুম, খুন ও ক্রসফায়ার ছিল নিয়মিত ঘটনা। এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ছিলেন দ...
25/09/2025

নিক্যাপিংয়ে চিরপঙ্গু শত শত তরুণ

শেখ হাসিনার দুঃশাসনে গুম, খুন ও ক্রসফায়ার ছিল নিয়মিত ঘটনা। এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিমের সাতক্ষীরা-খুলনা অঞ্চলের মানুষ। ক্রসফায়ারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্ধশত মানুষকে হত্যা করা হয়।

৬০ হাজার নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা হয় ৯৭৮ হয়রানিমূলক মামলায়। এছাড়াও নির্যাতনের বহু কায়দা ছিল বিরোধীদের দমনে। এর মধ্যে একটি ছিল টার্গেট নিক্যাপিং বা হাঁটুতে আঘাতের মাধ্যমে পঙ্গু করে দেওয়া। এর মাধ্যমে চিরপঙ্গু করে দেওয়া হয় ওই অঞ্চলের কয়েকশ তরুণকে, যাদের মধ্যে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৮৫ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে।

বিরোধী মত দমনে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ ও র‌্যাব এসব ভয়াবহ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে ভয়াবহ এ তথ্য উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও এ-সম্পর্কিত অনেকগুলো অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে যারা এসব গর্হিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, তারা এখনো রয়ে গেছেন অধরা।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এসব মিশনের মূল হোতা ছিলেন সাতক্ষীরার তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সদ্যসাবেক সচিব ও সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) নাজমুল আহসান এবং সাতক্ষীরা সরকারি হাসপাতালের তৎকালীন সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। এর মধ্যে ডা. জাহাঙ্গীর কথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটকের পর ভুক্তভোগীদের পরিকল্পিতভাবে নিক্যাপিং করতে পুলিশকে সহায়তা করতেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত এসব সরকারি কর্মকর্তা এখনো অধরাই রয়ে গেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার সাবেক এসপি মঞ্জুরুলকে জুলাই বিপ্লবের পর গ্রেপ্তার বা শাস্তি না দিয়ে শুরু বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়, তাও একটি প্রমোশন দিয়ে। অবসরে পাঠানোর আগে তিনি অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক হিসেবে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার নোয়াখালীতে কর্মরত ছিলেন। ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর তাকে অবসরে পাঠানো হয়। সাবেক ডিসি নাজমুল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে গত ১৭ আগস্ট অবসরে যান। তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

নিক্যাপিং নাটকে পঙ্গু বহু যুবক

বিরোধী মত দমনে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরিতে ভয়াবহ সহিংস পদ্ধতি নিক্যাপিং চালু করে আওয়ামী লীগ। বিচারবহির্ভূত এই অপরাধের মাধ্যমে কারো হাঁটুতে বা হাঁটুর নিচে কিংবা আশপাশে পরিকল্পিতভাবে গুলি এবং আঘাত করে তাকে চিরপঙ্গু করে দেওয়া হতো।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিক্যাপিংয়ের মাধ্যমে পঙ্গু করে দেওয়া খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলের ৮৫ জনকে এ পর্যন্ত শনাক্ত করা গেছে। তদন্ত চলমান। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে এ ধরনের নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করা ভুক্তভোগীর সংখ্যা কয়েকশ হতে পারে।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুলিশ-র‌্যাবের নিক্যাপিং নাটকে সাতক্ষীরা-খুলনা অঞ্চলের পঙ্গু যুবকরা বর্তমানে পরিবারের বোঝা হয়ে বেঁচে আছেন। এসব নাটক মঞ্চস্থ করতে জামায়াত-শিবির কিংবা বিএনপি-ছাত্রদলের কাউকে কাউকে কখনো বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হতো। অনেককে আবার জনসম্মুখে জোর করে আটক করে নেওয়া হতো থানায়। আবার কাউকে আটকের পর তুলে দেওয়া হতো সাদা পোশাকধারীদের কাছে। থানায় নেওয়ার পর তাদের ওপর চলত অমানবিক নির্যাতন। পরে চোখ ও হাত-পা বেঁধে পুলিশের গাড়িতে করে মধ্যরাতে নেওয়া হতো ফাঁকা জায়গায়। নির্জন স্থানে নিয়ে পুলিশ সদস্যরাই ফাঁকা গুলি ছুড়ত। তার আগে কারো পা অবশ করতে বিশেষ ধরনের স্প্রে ব্যবহার করা হতো। এরপর ঠান্ডামাথায় বন্দুকের নল ঠেকিয়ে হাঁটুতে বা পায়ে গুলি করা হতো। এভাবে কখনো কখনো কয়েক ঘণ্টা থানা বা নির্জন জায়গায় ফেলে রাখা হতো। দীর্ঘ সময় এভাবে ফেলে রাখার পর ভুক্তভোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার পর শুরু হতো আরেক ‘শাস্তি’। দ্রুত কোনো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে ভয়াবহ রক্তক্ষরণ হওয়ার পর এমন পরিস্থিতি করা হতো, যেন পা কেটে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়।

নাশকতা দমনের নামে পরিকল্পিত নাটকে ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারগুলোর জবানে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ এসব চিত্র। তাদেরই একজন সাতক্ষীরার শিবির নেতা শামছুল আলম (বুলবুল)। পুলিশের টার্গেট কিলিং থেকে বেঁচে যাওয়ায় তাকে স্থানীয়রা ‘জীবন্ত শহীদ’ বলে ডাকেন। আমার দেশ-এর কাছে তিনি পুলিশের দ্বারা ভয়াবহ নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরেন।

বুলবুল বলেন, ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের গাজনা গ্রামের দাউদ আলী সানার বাসা থেকে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই রাতে আমাকে গ্রেপ্তার করে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে পুলিশের গাড়িতে উঠিয়ে কলারোয়া থানায় নেওয়া হয়। রাত ২টার দিকে টর্চার রুমে নিয়ে পাঁচ-ছয়জন পুলিশ অফিসার মোটা লোহার রড দিয়ে আড়াই ঘণ্টার বেশি দুই পায়ের হাঁটু, কোমর, নিতম্ব ও পায়ের তালুতে মারতে থাকে। প্রথমে দাঁড়ানো অবস্থায় ৩০-৪০ মিনিট মারার পর আমি ফ্লোরে পড়ে যাই। এ অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ মারার পর আবার কাঠের হাতলওয়ালা চেয়ারে বসিয়ে মুখের ভেতর গামছা দিয়ে হ্যান্ডকাফ লাগানো দুই হাত একজন পেছনে টেনে ধরে আর অন্যরা দুই পায়ের হাঁটুর উপরে মারতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, এভাবে মারতে মারতে যখন সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন আমার দুই পায়ের হাঁটুর জয়েন্ট এবং এর উপর-নিচে ১০-১২ ইঞ্চি হাড় ভেঙে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। রাত শেষ হওয়ার আগে তারা নির্যাতন বন্ধ করে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে পুলিশ ভ্যানে উঠিয়ে মুরারিকাটি পাওয়ার হাউসে ঢোকার মুখে ঘাসের ওপর চিত করে শুইয়ে ভেঙে টুকরা টুকরা হওয়া দুই হাঁটুতে শটগান ঠেকিয়ে গুলি করে। ভাঙাচোরা হাড়ে গুলি করায় আমার ডান পায়ের প্যাটেলা টুকরা টুকরা হয়ে দুই-তৃতীয়াংশ, হাঁটুর উপরে পাঁচ-ছয় ইঞ্চি হাড় এবং মাসল বের হয়ে যায় এবং বাম পায়ের হাঁটুর জয়েন্ট ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে প্যাটেলাসহ হাড় এবং মাসল নিয়ে চলে যায়। এ অবস্থায় আমাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসা না দিয়ে পরিকল্পিতভবে ফেলে রাখা হয়। ফলে রক্তক্ষরণে মারা যাওয়ার মতো অবস্থা হলে দুই পা কেটে ফেলার সব বন্দোবস্ত করা হয়।

ভুক্তভোগীদের আরেকজন সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার আব্দুর রউফ। ২০১৩ সালে তিনি ইউনিয়ন বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। নাশকতার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে তার পায়ে গুলি করে। সেই থেকে পঙ্গু জীবনযাপন করছেন তিনি। এক পায়ে ভর করে কোনোরকম দিন চলছে তার।

ভয়াবহ ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আব্দুর রউফ বলেন, ওই দিন মধ্যরাতে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ট্রাকে করে নেওয়া হয় স্থানীয় সখিপুর কলেজ মাঠে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাঁটুর নিচে গুলি করে পুলিশ। আমার নামে আগে কোনো মামলা ছিল না। বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকার কারণে পরিকল্পিতভাবে ধরে নিয়ে গুলি করে।

ভয়ার্ত ওই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাইনি। প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বলা হয় চিকিৎসা না দেওয়ার নির্দেশনা আছে। এভাবে তিনদিন ফেলে রাখার পর অনুরোধ করলে খুলনায় পাঠায়। ওখানেও একই কথা বলা হয়। এভাবে কোনোরকম চিকিৎসা দিয়ে ১৬ দিনের মতো পার করে দেওয়া হয়। ওই সময়ে পা পচে গন্ধ বের হচ্ছিল। পরে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হলে পা কেটে ফেলা হয়। সময়মতো চিকিৎসা পেলে হয়তো পা কেটে ফেলা লাগত না।

এ ঘটনার পর উল্টো বিএনপি-জামায়াতের ছয়জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত এক থেকে দেড় হাজারজনকে আসামি করে মামলা করেন দেবহাটা থানার তৎকালীন এসআই বছির উদ্দীন। অভিযোগে বলা হয়, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল, লাঠিসোঁটা ও দা নিয়ে যৌথবাহিনীর ওপর আক্রমণ করে। আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া দুষ্কৃতকারীদের ঘটানো বিস্ফোরণে আরো দুজন মারা যান।

সেদিন আব্দুর রউফের ভাগনে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা রিয়াজুল ইসলামকেও তুলে নিয়ে হাঁটুর নিচে গুলি করা হয়। ওই ঘটনায় রিয়াজুলও স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে চিরপঙ্গু হন। রিয়াজুল বলেন, ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ার কারণে সাজানো বন্দুকযুদ্ধে আমি নিক্যাপিংয়ের শিকার হই। পায়ে গুলি করার পর থেকে সেটি এখন অকেজো।

ওই ঘটনায় পুলিশের করা সাজানো মামলায় মোট সাক্ষী করা হয় ২৮ জনকে। এদের মধ্যে নিরপেক্ষ তিনজন, বাকি সাক্ষী পুলিশ ও চিকিৎসক। মামলার নিরপেক্ষ সাক্ষীরা জানান, মনগড়া কথা লিখে শুধু সই নেওয়া হয়। ঘটনা সম্পর্কে কিছু না জানলেও তাদের সাক্ষী করা হয়। পুলিশের এজাহার ও তদন্ত প্রতিবেদনেও রয়েছে গরমিল। পুলিশের এজাহারে দুজনের মৃত্যু ও দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা বলা হলেও তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

নিক্যাপিংয়ের শিকার দেবহাটা উপজেলার গড়ানবাড়িয়া এলাকার রুহুল আমীনের ঘটনাও একই রকম। রুহুল আমিনের এক পা কেড়ে নেয়া হয় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নামে নাটক সাজিয়ে। এক সময় এলাকায় তিনি ভালো ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি ছিলেন। ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই সন্ধ্যার পর তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ বাড়ি ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাকে জোর করে থানায় নেওয়া হয়। থানায় বেঁধে তার ওপর চলে নির্মম নির্যাতন। পরে রাতে অজ্ঞাত স্থানে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এরপর পায়ে গুলি করে ফেলে রাখা হয়।

রুহুল বলেন, তখন মনে হয়েছিল পুলিশ আমাকে মেরে ফেলবে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার সময় আমি পানি চাই। একটু পানি খাওয়ার পর কিছুটা জ্ঞান ফিরলে বলে, ‘এ তো শুয়োরের জান, এতক্ষণ তো মরে যাওয়ার কথা।’ হাসপাতালে নেওয়ার পর ঠিকমতো চিকিৎসা দেওয়া হয় না। বলেÑনির্দেশনা আছে, পা কেটে ফেলতে হবে। পরে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে পা কেটে ফেলে। টার্গেট ছিল মেরে ফেলার। পরে যখন বেঁচে যাই তখন পঙ্গু করে দেয়, যেন ভবিষ্যতে দাঁড়াতে না পারি।

তৎকালীন সরকারি দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দমনে পুলিশ এতটাই বেপরোয়া ছিল যে, পায়ে গুলি করার পর হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। ফলে অনেকের পা কেটে ফেলা হয় এবং এগুলো করা হয় পরিকল্পিতভাবে।

পরে রুহুলের ঘটনায় দেবহাটা থানার তৎকালীন এসআই মনিরুল ইসলাম একটি মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, ঘোনাপাড়া এলাকায় জাকির মেম্বারের হ্যাচারির সামনে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা গোপন মিটিং করছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। সেখানে ১০-১২ মিনিট গোলাগুলির পর রুহুল আমীনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার সাক্ষী করা হয় স্থানীয় শামসুর রহমান গাজীকে। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। ঘটনার কিছুই জানি না। পুলিশ রাত ৩টার দিকে ডেকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। ওখানে কোনো জিহাদি বই বা আসামিদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি দেখিনি। শুধু একজনকে গুলিবিদ্ধ দেখেছিলাম।

স্থানীয়রা জানান, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য রুহুল আমিনকে গুলি করে পঙ্গু করার পর সেটি ধামাচাপা দেওয়ার এ কৌশল ধোপে টিকবে না জেনেও পুলিশ মিথ্যা নাটক সাজায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, মামলায় নিরপেক্ষ সাক্ষীর ১০ জনই স্থানীয় আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা, যাদের অনেকেই এখন পলাতক।

ভুক্তভোগী পরিবার এবং নির্যাতনের শিকার অনেকে জানান, ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকে শুরু হওয়া এ ঘটনাগুলো এতটাই ব্যাপক আকার ধারণ করে যে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে এক ধরনের ত্রাসের রাজত্ব চলছিল।

তদন্ত সংস্থার অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালে শুধু সাতক্ষীরা জেলায়ই শতাধিক বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় পা হারানোর ঘটনা অন্তত অর্ধশতাধিক, যাদের টার্গেট করে পায়ে গুলি করা হতো এবং পরে হাসপাতালে নেওয়া হলেও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হতো না। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের যোগসাজশে ঘটানো হতো এসব নৃশংস ঘটনা। আরো ভয়াবহ বিষয় হলো, সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি করার আগে পা অবশ করার জন্য বিশেষ ধরনের স্প্রে ব্যবহার করত, যেগুলো প্রশাসনিকভাবে সরবরাহ করা হতো।

২০১৫ সালে সংঘটিত আরেক ঘটনার ভুক্তভোগী হলেন আব্দুল মজিদ সরদার। ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মজিদ বলেন, ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারের পর আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই একটি মাইক্রোবাসে কয়েকজন সাদা পোশাকধারীর হাতে আমাকে তুলে দেয় শার্শা থানা পুলিশ। পরে কলারোয়ার কাজীরহাট কলেজের পাশে নিয়ে পায়ে গুলি করে। সেদিন প্রথমে চোখ ও হাত বাঁধে, এরপর গাড়ি থেকে নামায়। পরে পায়ে এক ধরনের স্প্রে করে। একটু পরেই ফাঁকা গুলি, মাটিতে গুলি করে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজায় এবং একপর্যায়ে পায়ে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে গুলি করে।

আরেকটি ঘটনায় ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট যশোরের চৌগাছা থানার দুই শিবির নেতাকে আটক করা হয়। কিন্তু সে সময় তাদের গ্রেপ্তার না দেখিয়ে থানায় আটক করে পরদিন ৪ আগস্ট পরিকল্পিতভাবে দুই হাঁটুতে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে মারাত্মক আহত করা হয়। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং সে কারণে তারা আহত হয়েছে উল্লেখ করে পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার নামে প্রেরণ করা হলেও যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে পঙ্গু করে পা কেটে ফেলতে বাধ্য করা হয়।

জুলাই বিপ্লবের পর ভুক্তভোগীদের অনেকেই ন্যায়বিচারের জন্য সোচ্চার হন। এসব ঘটনায় জড়িত জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম হাসান, হোসাইন শওকত ও ইকবাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন তারা।

এ বিষয়ে গুম কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নাবিলা ইদ্রিস আমার দেশকে বলেন, বিগত সময়ে নিক্যাপিং, গুমসহ বিচারবহির্ভূত যেসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে, ওই সব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। এ বিষয়ে আমরা সোচ্চার রয়েছি। আর আইনগত কিছু বিষয়ের কারণে গুম কমিশন এখন শুধু গুমের বিষয় নিয়ে কাজ করছে।

নাবিলা ইদ্রিস আরো বলেন, আমরা সে সময়কার অনেক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। অনেককে তখন কথিত ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হয়, অনেকের পায়ে গুলি করে চিরপঙ্গু করে দেওয়া হয়। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি তখন অনেক সাধারণ মানুষের ওপরও নৃশংসতা করা হয়েছে। ওই সব ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিত।

নিক্যাপিংয়ের মতো ভয়াবহ টার্গেটেট নৃশংসতা প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বহু নিক্যাপিং ও ক্রসফায়ারের অভিযোগ আমরা পাচ্ছি। আমাদের তদন্ত সংস্থা অভিযোগগুলো গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে এবং এ-সংক্রান্ত মামলার অগ্রগতি আপনারা শিগগির দেখতে পাবেন। নিক্যাপিংয়ে পঙ্গু করার পাশাপাশি কথিত বন্দুকযুদ্ধে খুন, অনেকের বাড়িঘরে আগুন, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙাসহ নানা স্পর্শকাতর অভিযোগও আছে। এ মামলাগুলো ট্রাইব্যুনাল আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু করবে।

https://www.dailyamardesh.com/court-law/amdtsen5glrh3

Address

Bangladesh � � �
Puran Bogra
1201

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when 24বিডি posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to 24বিডি:

Share