08/09/2025
জীবনে কোনোদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দাতেও পা না রাখা আমার বন্ধু সিয়ামের গত কয়েকদিন ধরেই ডাকসু নির্বাচনের চিন্তায় রাতে ঘুম হচ্ছে না। ফেসবুকে একটু পরপর এসে পোস্ট দেয়। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বসে থাকে। আড্ডায় এসে চিন্তিত মুখে চা খেতে খেতে বলে, 'আমার মনে হচ্ছেনা সাদিক কায়েম ইজিলি জিতবে। ধরি ঢাবীতে যদি শিবিরের তিন হাজার ফিক্সড ভোটও থাকে তারপরও অনাবাসিক ছাত্রছাত্রীরা যাকে ভোট দিবে, সেইভাবে যদি চিন্তা করি তাহলে পরিসংখ্যান বলছে...! ইত্যাদি ইত্যাদি।
মিথ্যা বলব না, আমারো গতকাল রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি। স্বপ্নে দেখি আবিদুল ইসলাম বিড়াল কোলে নিয়ে ঘুরতেছে। আর বলতেছে, ব্যালট কিন্তু একুশ।
বউ সকালে বলতেছে তুমি ঘুমের মধ্যে উমামা উমামা করতেছিলে কেন? সত্যি করে বলো এই মেয়ে কে? এইজন্যই তো বলি এখন আর আমাকে ভালো লাগেনা কেন! আমি তো পুরান হয়ে গেছি, না?
সত্যি বলতে ২০০৮ সালে লাস্ট কোনো নির্বাচন নিয়ে টেনশন করছিলাম। অধীর আগ্রহে ফলাফল দেখার জন্য না ঘুমিয়ে সারারাত বসে ছিলাম৷ তারপর গত ১৬/১৭ বছর লীগ আলহামদুলিল্লাহ আমাদের নির্বাচন নিয়ে টেনশন করার কোনো সুযোগই দেয়নি। একদম নিশ্চিন্ত ফলাফল। জাতীয় নির্বাচনের আগেরদিন দেখি এক চায়ের দোকানে মানুষ কথা বলতেছে, অরিজিনাল নদীর পাঙ্গাসের টেস্ট নিয়ে।
বাংলাদেশ আর নেপালের ফুটবল খেলা থাকলেও মানুষ নির্বাচনের চেয়ে বেশি এক্সাইটেড থাকত।
৫ ই আগস্টের পর আবারো ভোটের রাজনীতি নিয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে তার প্রমাণ এই ডাকসু ইলেকশন। গ্রাম থেকে চাচা ফোন দিয়ে বলতেছে, 'ভাতিজা ডাকসু না কি ভোট হইতেছে, সিলটা কিন্তু ধানেরশীষে দিও।'
আমি বলছি, 'চাচা, আমি তো ভোটার না। শুধু ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ে যারা তারাই ভোট দিবে।'
চাচা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, 'ভোট দেওয়ার জন্য এহন বারসিটিতে পড়া লাগবো! ইউনুস সরকার এই নিয়ম করছে, তাইনা? কি আর বলব, ডাক্তার সাব দেশটারে শেষ করে দিলো!'
তবে আমার পছন্দের প্রার্থী শামিম হোসেন ভাই। আমি চাই সাধারণ ছাত্রদের মধ্য থেকে কেউ ভিপি হোক। তার যেন কোনো দল বা নির্দিষ্ট মতবাদকে সার্ভ করার দায় না থাকে। সে যেন নিরপেক্ষভাবে ছাত্রদের জন্য কাজ করতে পারে।
ব্যতিক্রমী ইশতেহার দিয়ে ভাইরাল হওয়া আশিক নামের পাগলা ছেলেটাকেও আমার ভালো লেগেছে। ওর মধ্যে কোনো ভান নেই।
এদিকে আমার কলেজে পড়ুয়া ভাগ্নে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে সে জরিপ করে দেখেছে সাদিক কায়েম ফার্স্ট, আবিদ সেকেন্ড, আব্দুল কাদের থার্ড। শামীমের নামও নাকি মানুষ জানেনা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, জরিপ কোথায় করেছিস?
সে বললো, 'আমাদের মাগুরা শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজের অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে।'
'আচ্ছা!'
'কেন, জরিপে ভুল আছে?'
'না, ঠিক আছে।'
কয়দিন আগে আমার ছোটখালা জিজ্ঞেস করেছিলো ফেসবুকে সবাই '10 seconds back to back✅ 💯 কমেন্ট করে কেন? এইটার মানে কি?
আজ ফোন দিয়ে বলতেছে, 'এখন ফেসবুকে সবাই "Sorry bro its only 22" কমেন্ট করে কেন? এইটার আবার কি মানে?'
জিজ্ঞেস করলাম কোথায় কমেন্ট করেছে?
বললো, 'একটা থ্রিপিসের লাইভ দেখতেছিলাম, সেখানেও দেখি মানুষ its only 22 লিখে কমেন্ট করতেছে।'
'থ্রিপিস কি পাকিস্তানি ছিলো?'
'হ্যা, তুই কিভাবে বুঝলি?'
'না এমনি।'
খালার বড় মেয়ে তামান্না আবার কড়া নারীবাদী। সে পাশ থেকে বলছে, 'আজকাল মিসোজিনিস্ট বাঙ্গু পুরুষরা চায় বাইশ বছরের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাক। এজন্যই এই কমেন্ট করতেছে! আই হেট দেম। আমি এদেরকে দেখিয়ে দিব যে আমাদের জন্ম শুধু বিয়ে করে বাচ্চা পয়দা করার জন্য হয়নি।'
ফোন রাখার আগে খালা ফিসফিস করে বললেন, 'তামান্নার জন্য একটা ভালো ছেলে দেখিস। বিয়ে দিয়ে দিব। ছেলে বিসিএস ক্যাডার আর নামাজী হলে ভালো হয়।'
যাই হোক, আগামীকালই সেই কাঙ্খিত ডাকসু নির্বাচন। কাল সন্ধ্যার পরপরই হয়তো জানা যাবে কে জিতলো আর কে হারলো। কে কত ভোট পেলো। ফেসবুকে চলা গত কয়েকদিনের জল্পনা কল্পনা পরিসংখ্যান আর সকল জরিপের অবসান ঘটবে।
তবে নির্বাচনে যেই জিতুক তার কাছে আমার একটাই দাবী থাকবে, '২০২২ সালে ঢাবীর প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শারমীন আমাকে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে ব্লক দিছিলো। সে যেন আমাকে আনব্লক করে।'
পরিশিষ্ট: গ্রাম থেকে কিছুক্ষণ আগে চাচাতো ভাই ফোন দিয়ে বললো, 'ভাই, কি মনে হয়। শামীমের কি জেতার চাঞ্চ আছে? শামীমের পক্ষে একএ তিন দিচ্ছে। আমি ভাবছি দুই ধরবো।'
'একএএ তিন দিচ্ছে মানে?'
'মানে শামিম ভিপি হলে এক হাজারের বদলে তিন হাজার দিবে। সাদিকের পক্ষে দেড় হাজার। আবিদের পক্ষে দুই হাজার।'
দেশে একটা ভালো জিনিস হচ্ছে, এটা নিয়েও শুরু হইছে জুয়া৷ হাইরে বাঙালী!