28/07/2023
#আশূরার রোযা
মুহার্রাম মাসের রোযার মধ্যে সবচেয়ে বেশী তাকীদপ্রাপ্ত হল ঐ মাসের ১০ তারীখ আশূরার দিনের রোযা। রমাযানের রোযা ফরয হওয়ার আগে এই রোযা ওয়াজেব ছিল। রুবাইয়ে’ বিন্তে মুআউবিয বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আশূরার সকালে মদ্বীনার আশেপাশে আনসারদের বস্তিতে বস্তিতে খবর পাঠিয়ে দিলেন যে, ‘‘যে রোযা অবস্থায় সকাল করেছে, সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে নেয়। আর যে ব্যক্তি রোযা না রাখা অবস্থায় সকাল করেছে সেও যেন তার বাকী দিন পূর্ণ করে নেয়।’’
রুবাইয়ে’ বলেন, ‘আমরা তার পর হতে ঐ রোযা রাখতাম এবং আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাদেরকেও রাখাতাম। তাদের জন্য তুলোর খেলনা তৈরী করতাম এবং তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যেতাম। অতঃপর তাদের মধ্যে কেউ খাবারের জন্য কাঁদতে শুরু করলে তাকে ঐ খেলনা দিতাম। আর এইভাবে ইফতারের সময় এসে পৌঁছত।’[1]
মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘কুরাইশরা জাহেলিয়াতের যুগে আশূরার রোযা পালন করত। আর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-ও জাহেলিয়াতে ঐ রোযা রাখতেন। (ঐ দিন ছিল কাবায় গিলাফ চড়াবার দিন।) অতঃপর তিনি যখন মদ্বীনায় এলেন, তখনও তিনি ঐ রোযা রাখলেন এবং সকলকে রাখতে আদেশ দিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে যখন রমাযানের রোযা ফরয হল, তখন আশূরার রোযা ছেড়ে দিলেন। তখন অবস্থা এই হল যে, যার ইচ্ছা হবে সে রাখবে এবং যার ইচ্ছা হবে সে রাখবে না।’[2]
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদ্বীনায় এলেন, তখন দেখলেন, ইয়াহুদীরা আশূরার দিনে রোযা পালন করছে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘এটা কি এমন দিন যে, তোমরা এ দিনে রোযা রাখছ?’’ ইয়াহুদীরা বলল, ‘এ এক উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ বানী ইসরাঈলকে তাদের শত্রু থেকে পরিত্রাণ দিয়েছিলেন। তাই মূসা এরই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে এই দিনে রোযা পালন করেছিলেন। (আর সেই জন্যই আমরাও এ দিনে রোযা রেখে থাকি।)’
এ কথা শুনে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘মূসার স্মৃতি পালন করার ব্যাপারে তোমাদের চাইতে আমি অধিক হকদার।’’ সুতরাং তিনি ঐ দিনে রোযা রাখলেন এবং সকলকে রোযা রাখতে আদেশ দিলেন।[3]
বলাই বাহুল্য যে, উক্ত আদেশ ছিল মুস্তাহাব। যেমন মা আয়েশার উক্তিতে তা স্পষ্ট। তা ছাড়া মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘আজকে আশূরার দিন; এর রোযা আল্লাহ তোমাদের উপর ফরয করেন নি। তবে আমি রোযা রেখেছি। সুতরাং যার ইচ্ছা সে রোযা রাখবে, যার ইচ্ছা সে রাখবে না।’’[4]
আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লার রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আশূরার দিন রোযা রাখা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বললেন, ‘‘আমি আশা করি যে, (উক্ত রোযা) বিগত এক বছরের পাপরাশি মোচন করে দেবে।’’[5]
ইবনে আববাস (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) রমাযানের রোযার পর আশূরার দিন ছাড়া কোন দিনকে অন্য দিন অপেক্ষা মাহাত্ম্যপূর্ণ মনে করতেন না।’[6] অনুরূপ বর্ণিত আছে বুখারী ও মুসলিম শরীফে।[7]
এক বর্ণনায় আছে, এই রোযা এক বছরের রোযার সমান।[8]
অবশ্য যে ব্যক্তি আশূরার রোযা রাখবে তার জন্য তার একদিন আগে (৯ তারীখে)ও একটি রোযা রাখা সুন্নত। যেহেতু ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) যখন আশূরার রোযা রাখলেন এবং সকলকে রাখার আদেশ দিলেন, তখন লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ দিনটিকে তো ইয়াহুদ ও নাসারারা তা’যীম করে থাকে।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে আমরা আগামী বছরে ৯ তারীখেও রোযা রাখব ইনশাআল্লাহ।’’ কিন্তু আগামী বছর আসার আগেই আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর ইন্তিকাল হয়ে গেল।[9]
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা ৯ ও ১০ তারীখে রোযা রাখ।’[10]
পক্ষান্তরে ‘‘তোমরা এর একদিন আগে বা একদিন পরে একটি রোযা রাখ’’ -এই হাদীস সহীহ নয়।[11] তদনুরূপ সহীহ নয় ‘‘তোমরা এর একদিন আগে একটি এবং একদিন পরেও একটি রোযা রাখ’’ -এই হাদীস।[12]
বলা বাহুল্য, ৯ ও ১০ তারীখেই রোযা রাখা সুন্নত। পক্ষান্তরে কেবল ১০ তারীখে রোযা রাখা মকরূহ।[13] যেহেতু তাতে ইয়াহুদীদের সাদৃশ্য সাধন হয় এবং তা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর আশার প্রতিকূল। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, ‘মকরূহ নয়। তবে কেউ একদিন (কেবল আশূরার দিন) রোযা রাখলে পূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবে না।
✅ উল্লেখ্য যে, মুহাররমের ৯ ও ১০ তারিখে দুটি রোযা রাখাই বেশী ভাল। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশা প্রকাশ করেছিলেন, যে আগামী বছর বেঁচে থাকলে নয় তারিখেও রোযা রাখবেন। কিন্তু তার পরের বছর আর বাঁচেন নি। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম)
✅তবে কোন ব্যক্তি যদি, কোন কারণ বশত: ৯ তারিখে রোযা না রাখতে পারে। তবে তিনি আরবি মাসের ১০ ও ১১ তারিখেও রোযা পালন করতে পারবেন।ইন'শা'আল্লাহ্!!