21/07/2025
#অণুগল্প: #অভীশপ্ত_জুলাই
✍️ লেখনীতে:
⛔ অনুপ্রাণিত হয়ে কিংবা গল্পের কোনো অংশ কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ❌
---
~মাসটি ছিলো জুলাই...
📅 ২১ জুলাই ২০২৫
সে দিনের দুপুরটা ছিলো অন্য সব দিনের চেয়ে ভিন্ন...
যেনো হঠাৎ থমকে যাওয়া নিস্তব্ধতায় ভরা এক অস্বাভাবিক দুপুর।
উত্তরার আকাশে সূর্য তখনও যেনো রোষে ফেটে পরছে, উত্তপ্ত তাপে পুড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসের প্রতিটি কণা।
অথচ সেই গরম বাতাসেই যেনো ভেসে ছিলো এক অদৃশ্য বিপর্যয়ের পূর্বাভাস—যা কেউই টের পায়নি, কেউই আঁচ করতে পারেনি তখন ও।
কেউ বুঝতে ও পারে নি, এই দিনটি শেষ হবে এতটা নির্মমভাবে—
এক বিভৎস ক্ষতের চিহ্ন রেখে যাবে শত শত হৃদয়ে।
---
মাইলস্টোন স্কুলের প্রাথমিক শ্রেণির ক্লাস তখন শেষ।
ছোট ছোট কোমলমতি শিশুরা বসেছিলো কোচিং ক্লাসে, কেউ টিফিনবক্স থেকে খাবার খাচ্ছিলো,
কেউবা পেন্সিল কামড়াচ্ছিল দাঁতে, কেউ নিঃসাড়ে খাতায় আঁকিবুঁকি করছিলো।
তাদের চোখে ছিলো হাজার ও স্বপ্ন, মুখে নিষ্পাপ হাসি।
তারা জানতো ও না,
এই নিরীহ দুপুরটা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ছিন্নভিন্ন করে দেবে তাদের গোটা জীবন, তাদের ভবিষ্যৎ।
🕐 সময় তখন প্রায় দুপুর ১:০৬ মিনিট। ( বোধহয়)
হঠাৎ আকাশ কেঁপে উঠলো এক বিকট বিস্ফো*রণের শব্দে।
একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান—
যা, ১৯৭৬ সালের রাশিয়ান মডেলের একটি চাইনিজ রেপ্লিকা।
সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙে পরলো মাইলস্টোন স্কুলের একেবারে কাছে।
যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পরার আগেই
লৌহবর্ণ আগু*নের পাখি হু হু করে ছুটে গেলো চারিদিকে।
সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে, যেখানে ছোট ছোট প্রাণের গড়ে উঠছিলো ভবিষ্যৎ।
শব্দটা ছিলো বিকট ।
তার উপর হঠাৎ এক ধরনের নিস্তব্ধতা।
একটা গিলে ফেলা নিঃশব্দতা, যেন চিৎকার করার শক্তিটুকু ও গিলে নিয়েছে আ*গুন।
পুরো বিল্ডিং এক মুহূর্তে ভেঙে না পরলে ও
চারদিকে আগু*নের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পরেছিলো—
ধোঁয়া, পোড়া কাগজ, গলিত কাঁচ, আর মানুষের আর্ত*নাদ মিলেমিশে তৈরি করেছিলো এক জীবন্ত ন*রক।
একটি শিশু দরজার ফাঁক দিয়ে র*ক্তমাখা হাত বাড়িয়ে বলছিলো—
"আম্মু... আম্মু..."
কিন্তু সেই মা হয়তো তখন বাড়িতে বসে রান্নায় ব্যস্ত।
এই বুঝি তার ছোট্ট সন্তান বাড়ি ফিরে এসে তার আঁচল ধরে বলবে,
“আম্মু, আমি ক্ষুধার্ত।”
সেই খাবার হয়তো এখনো টেবিলেই রাখা,
কিন্তু যেই প্রাণ টা হাত দিয়ে তুলে খাবার মুখে নেবে,
হয়তো সেই আর নেই...।
---
মুহূর্তেই আ*গুন গ্রাস করলো পুরো ভবন।
যারা একটু আগে ক্লাসে বসে শিখে ছিলল কীভাবে পৃথিবীকে জানতে হয়—
সেই শিশুরাই প্রথমে পু*ড়ে ছাই হয়ে গেলো।
----
ছুটোছুটি শুরু হলো। ফায়ার সার্ভিস খবর পেলে ও উতসুক জনতার ভীড় ঠেলে সময় মতো পৌঁছাতে পারল না।
আশেপাশের মানুষ রা মোবাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো কেউ ভিডিও করতে, কেউ বা ছবি তুলতে।
পো*ড়া গ*ন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পরেছিল,
শিশুদের কা*ন্নার চিৎকারে কেঁপে উঠছিল চারদিক কিন্তু অনেকেরই চোখ ছিলো...
মোবাইলের ক্যামেরায়, চোখে কৌতুহলী আগ্রহ,।
যারা ছিলো হৃদয় না থাকা মানুষ রূপি জা*য়ার।
অবশ্য তারা কেউই সাহায্য করার জন্য ছুটে আসেনি,
তারা ছুটে এসেছিলো ভিডিও করতে, আর ছবি তুলতে।
---
যখন ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা পো*ড়া শরীর নিয়ে টেনে হেঁচড়ে বের হয়ে আসছিল।
পো*ড়া ইউনিফর্ম, গ*লে যাওয়া ত্বক, র*ক্তাক্ত মুখ তারা সাহায্য চাইছিলো, আশেপাশের মানুষেদের কাছে।
কিন্তু তাদের সাহায্য করার জন্য কোনো রিকশা, বা সিএনজি কিছুই মিলছিলো না।
কেউ দেখে ও এড়িয়ে গেছে,
তাদের সাহায্য না করার একটাই কারণ, তারা কেউই “তাদের নিজেদের সন্তান” নয়।
এমনকি যারা সাহায্যের হাত বাড়াতে পারতো, তাদের অনেকেই নিজের প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ও চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। এগিয়ে আসেনি,
যেনো ওরা শুধু শরীরে নয়, হৃদয় থেকে ও অ*মানুষে পরিনত হয়েছিলো।
একেকটা পো*ড়া মুখ, নিষ্পাপ চাহনি ও যেনো তাদের হৃদয় গলাতে পারেনি।
---
একজন লোক দুইজন বাচ্চাকে বের করে এনে ছিলেন তারা তখনো বেঁচে ছিলল,
কিন্তু শরীরের অনেকটা অংশ পু*ড়ে গিয়ে ছিলো। তিনি দৌড়ে গিয়েছিলেন উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তায় একটি সিএনজি ও থামেনি।
শেষে একটি যা থামে,, তা ও গুনতে হয়েছে এক হাজার টাকার ভাড়া।
হ্যাঁ, মাইলস্টোন কলেজ থেকে আধুনিক হাসপাতাল পর্যন্ত, যেতে মাত্র কয়েক কিলোমিটারের পথ,
অথচ আজ জীবন বাঁচানোর সেই পথ হয়ে উঠেছে লোভের এক সিঁড়ি।
এমন কি উত্তরার, উত্তর মেট্রোর নিচে থেকে ও মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে একটি রিকশা ও সহজে পাওয়া যায় নি।
যে রিকশা টা শেষমেশ রাজি হলো,
সে ও ভাড়া চেয়ে বসলো একশ টাকা।
এই শিশুদের পো*ড়া শরীর তখনো ছটফট করছিল, কষ্টে মুখ বিকৃত হয়ে যাচ্ছিল।
আর আমরা,,?
আমরা শুধু তাকিয়ে দেখছিলাম।
এই শহরে উত্তরায় কোনো বার্ণ ইউনিট নেই।
পু*ড়ে যাওয়া শিশুদের দ্রুত চিকিৎসা দেয়া তো দূরের কথা, তাদের গায়ে প্রাথমিক স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থাও ছিলো না আশপাশে।
এমন কি মাইলস্টোন কলেজের ক্যান্টিনে,
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একটু পানি খেতে চেয়েছিল, সেখানে তাদের টাকা দিয়ে পানি কিনতে হয়েছে। পরে চাপ প্রয়োগ করলে, শেষেমেশ সেই ক্যান্টিন টাই বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ, “এই পানির টাকা কে দেবে?”
---
আগুন শুধু ভবন নয়—
পুড়ি*য়ে ছিলো এই দেশের মানবিকতা।
পুড়ি*য়ে ছিলো আমাদের বিবেক।
তারপর এলেন রাজনীতিবিদরা—
প্রটোকলের গাড়ি, ক্যামেরা, মাইক্রোফোন...
সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনার অনুভূতি কী?”
একটি পোড়া শিশুর পাশে দাঁড়িয়ে নেওয়া সেই সাক্ষাৎকার—
ছিলো যেনো আগে থেকেই রচিত চিত্রনাট্যের অংশ।
অথচ যারা সত্যিকারের হাহাকার করে কেঁদেছিলো, তাদের ছায়া পযন্ত কেউ ঠিক করে মাড়ায় নি।
---
সেদিন বিকেলে,
একজন মা হাসপাতালের গেটে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন।
তাঁর ছেলেটি কোচিং ক্লাসে ছিলো।
খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন,
কিন্তু এখন আর তার ছেলে কে চেনার উপায় নেই—
গ*লে যাওয়া মুখ, পো*ড়া শরীর...
সেই মুখে যেনো নিঃশব্দ এক প্রশ্ন হয়ে রয়ে গেছে..
“আমার সন্তান তো সেদিন শুধু পড়তে গিয়েছিল, ওর কী দোষ ছিল?”
---
এই প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারবে না।
কারণ, আমরা ব্যস্ত ছিলাম মোবাইল ক্যামেরা ধরায়,
আর অসহায়ের কষ্ট দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ায়।
সেই শিশুদের মাঝে কেউ আমাদের আপন ছিল না—তাই আমরা এমন নির্লিপ্ত থাকতে পেরেছি।
কিন্তু এই দেশ তো ওদের ও ছিলো।
যারা স্কুল পড়তে গিয়ে মনে হাজার হাজার স্বপ্নের রঙ বুনতো,,।
যারা ক্লাসে শেষ বারের মতো হেসে বলেছিল “স্যার, আজকের হোমওয়ার্কটা আমি করিনি, কাল ঠিক করবো”—সেই বাচ্চাগুলো আজ আর নেই।
তারা বেঁচে থাকলে হয়তো একদিন এই দেশের জন্য অনেক কিছুই করতো,।
________________
হাহ্ আপসোস বাঙালি
আজ, আমরা যারা বেঁচে আছি, আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত। কারণ, শিশুরা পুড়েছে আমাদের উদাসীনতায়, আমাদের ভণ্ড সমাজ ব্যবস্থায়। আগুন তাদের গায়ে লেগেছিল ঠিকই, কিন্তু পুড়েছে আসলে আমাদের বিবেক।
~সমাপ্ত~
💔 শ্রদ্ধাঞ্জলি:
এই লেখাটি ২১ জুলাই ২০২৫-এর মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘ*টনায় নি*হত ও আ*হত সকল শিশুদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে উৎসর্গ করা হলো।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। আমিন। 🤲
---
📛 কেউ দৃষ্টিকটু চোখে দেখবেন না।
এই লেখা শুধুমাত্র মানবিকতা জাগাতে লেখা।
---
© কপিরাইট সংরক্ষিত।
এই গল্পটি সম্পূর্ণ (আমার) মৌলিক সৃষ্টি।
অনুমতি ছাড়া আংশিক বা পূর্ণ কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
তবে চাইলে শেয়ার করতে পারেন মানবিকতা জাগাতে।