08/12/2024
পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখালেন (রাবি)'র শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিনিধি
এফ এম টেলিভিশন.কম
পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়ে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। আজ রবিবার বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম পিটার।
কর্মসূচি চলাকালে আগামীকাল সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে শিক্ষকদের সঙ্গে পোষ্য কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্কের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘জনে জনে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে লড়াই হবে একসাথে’, ‘আপোস না মৃত্যু, মৃত্যু মৃত্যু, ‘তুমি কে? আমি কে? মেধাবী মেধাবী’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাত চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ মার্ক ৪০। সেখানে পাশ মার্কেরও অর্ধেক ১৯.৫০ নম্বর পেয়ে এক শিক্ষকের ছেলেকে পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছে। দেখা গেছে পরে তাকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় ৩.৭০ নম্বর দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তাহলে আমরা এটাকে পোষ্য কোটা বলতে রাজি না। এটা হচ্ছে কিছু অযোগ্য মানুষদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানানোর মেশিন। সে মেশিনটাকে আমরা বিলুপ্ত করতে চাই। পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে যেকোনো আলোচনায় যেতে আমরা রাজি না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের অপশন পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল।’
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে রাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে আজকে আমরা রেড কার্ড প্রদর্শন করলাম। আগামীকালের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যদি তারা তাদের পোষ্য কোটার পক্ষে যুক্তি দেখাতে পারে তাহলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটাকে মেনে নেব। আর যদি কোনো যুক্তি দেখাতে না পারে, তাহলে সেখান থেকে পোষ্য কোটার বাতিল ঘোষণা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট একটা সরকারের পতন ঘটিয়েছি।
পোষ্য কোটা নিয়ে তালবাহনা করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পতন ঘটাতে ১০ মিনিটের বেশি সময় আমরা নেব না।’
অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম পিটার বলেন, ‘১৯৯৩ সালে তৎকালীন যে উপাচার্য ছিলেন তার ছেলেকে ৩৭ মার্কেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়া হয়নি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ন্যূনতম মার্ক ৪০। পরবর্তীতে দেখা গেছে, ২২, ২৫, ২৮, ৩২ এবং ৪০ পায় না এমন ছাত্র-ছাত্রীদের কোটায় ভর্তি করা হয়েছে। পরে এসব ছাত্র-ছাত্রী সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ফার্স্ট-ক্লাস ফার্স্ট এবং সেকেন্ড হয়েছে। কিভাবে হয়েছে,তেল দিয়ে ? এদেরকেই পরবর্তী সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই কারণে আমি চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষকের ছেলে বা মেয়ে কোটায় ভর্তি হোক।’
বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গত ১৪ নভেম্বর রাবির ভর্তি পরীক্ষায় তিন শতাংশ পোষ্য কোটা রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেদিন রাতেই এই কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা। পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীনকে সভাপতি করে ২০ সদস্যের কোটা পর্যালোচনা কমিটি গঠিত হয়। তবে এ কমিটি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও কার্যকারী কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার পরও প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না আসায় এ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন শিক্ষার্থীরা।