16/09/2025
#অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা বা ইউরোপের নাম শুনলেই এক লাফে মেয়ে বিয়ে দিবেন না।
আজকাল বিভিন্ন পোস্ট নজরে পড়ছে, এছাড়াও আমার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা মিলেই বলছি, কোনো বিদেশী সেটেল পাত্রের প্রস্তাব এলে সরাসরি ডিটেইলস চাবেন। নাহলে পরে মেয়ে বিয়ে দিয়ে পস্তাবেন।
ইদানিং প্রচুর বাংলাদেশি স্টুডেন্ট ভিসায় বিভিন্ন দেশে গেছে। তাদের পেপারস পেতে ন্যূনতম ১০ থেকে ১৫ বছর লেগে যেতে পারে। হ্যাঁ, তারা চাইলে তার পার্টনারকে ডিপেন্ডেন্ট ভিসায় নিতে পারবে, কিন্তু অবস্থা হবে দিল্লির লাড্ডুর মতো। বিদেশে স্টুডেন্ট ভিসায় যারা থাকে তাদের কষ্ট আর জীবনযাপন এর কথা আমি বাদই দিলাম। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সেটেলমেন্ট নিয়ে, কবে পেপারস পাবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই মেয়ে বিপদে না ফেলে সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন হোক সেটা অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা বা কানাডা PR বা সিটিজেন পাত্র/পাত্রী ছাড়া বাকিদের ভিসা বা তাদের নিজেদেরই কোনো ভরসা নেই।
এরপর আসি ইউরোপের কথায়। খরচের তুলনায় বেতন অনেক কম। বাংলাদেশি টাকায় তারা হয়তো মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ইনকাম করছে, কিন্তু দুই রুমের অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়াতেই যদি ৯০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা চলে যায়, তাহলে সে চলবে কিভাবে? আমি নিজের চোখেই এগুলো দেখে এসেছি। দুই টাকা জমানোর জন্য তারা যেভাবে থাকে আর খায় সেটা বাংলাদেশের মানুষের ধারণার বাইরে। এক রুমের মধ্যে ৬ থেকে ৮ জন ব্যাচেলর আরেকরুমে বৌকে নিয়ে থাকছে, একটা কিচেন একটাই বাথরুম! বাকিটা বুঝে নিন কি হতে পারে সেখানে ঢুকলে। এগুলো নিয়ে কেউ মুখ খুলে বলবে না, কারণ বললে নিজেরই সম্মান নষ্ট হবে।
দেশে আসার পর ইতালির সিটিজেন, ফ্রান্সের সিটিজেন, স্পেনের সিটিজেন, বিয়ের ৬ মাস পরেই বৌকে নিয়ে যাবে! এসব মিষ্টি কথা শুনে কেউই কিছু যাচাই বাছাই না করেই এক লাফে তাদের হাতে মেয়েকে দিয়ে প্রতারিত হচ্ছে। বিয়ের পর ১০ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও তারা তাদের স্ত্রীকে নিতে পারছে না, খরচ দিতে পারছে না, এমন ঘটনার অভাব নেই। আমার লিস্টেও অনেক আছে যারা ইউরোপের সিটিজেন শুনে বিয়ে করেছে, কিন্তু জীবনে ঢাকা এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যেতে পারেনি।
আমার সোজা সাপ্টা কথা: বিদেশের নাম শুনেই মেয়ের হাত তুলে দেওয়া যাবে না। আগে সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করতে হবে নাহলে মারা খাবেন।
কি কি দেখতে হবে?
১) ছেলের নিজের ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্ট আছে কিনা যেখানে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে পারবে, সাবলেট ছাড়া। (এর জন্য রিয়েল এস্টেট এগ্রিমেন্ট কপি চাইবেন) বাসার ছবি ও এড্রেস চাবেন, প্রয়োজনে ওখানকার কাউকে পাঠিয়ে সবকিছু চেক করবেন। (এগুলোর পেছনে লাগলে ২০ হাজার টাকা খরচ হোক)
২) চাকরি বা ব্যবসা কি করে। চাকরি করলে কোথায় করে, সেটা চেক করবেন। অফিসে চাকরির কথা বললে এপয়েন্টমেন্ট লেটার চাবেন, আর রেস্টুরেন্ট হলে উনি আসলেই ম্যানেজার/শেফ নাকি থালা বাসন মাজছে, এগুলো সরাসরি যাচাই জরুরি।
৩) রেসিডেন্সি স্ট্যাটাস। মুখের কথায় নয়, সরাসরি ডকুমেন্ট দেখতে হবে। ছেলে যদি PR বা সিটিজেন না হয় তাহলে ভবিষ্যৎ নেই। স্টুডেন্ট ভিসা বা অন্য কোনো ভিসায় থাকলে মেয়ে গিয়ে উল্টো সংসার চালাবে এটাই বাস্তবতা। স্কলারশিপ পেলেও সেটা কেবল নিজের খরচের জন্য যথেষ্ট, সংসার চালানোর মতো না। পিএইচডি হোল্ডার হলেও পেপারস না থাকলে বিদেশে কোনো মূল্য নেই। এগুলোর ভ্যালু বাংলাদেশে থাকলেও ওখানে দুই টাকারও মূল্য নেই।
কথাগুলো অনেকের কাছে তিতা লাগতে পারে, কিন্তু এটাই বাস্তবতা। বিদেশের চকচকে স্বপ্ন দেখে দেশের হাজার হাজার মেয়ে এই স্ক্যামে পড়েছে।
আমি নেগেটিভ নয় বাস্তবতা নিয়ে লিখলাম। কারণ এসব স্ক্যাম দেখতে দেখতে আমি বড় হয়েছি, তাই মানুষ হিসাবে সতর্ক করা এখন দ্বায়িত্বের মধ্যে পরে আরেকদিন আরো গভীর ভাবে লিখবো।
ধন্যবাদ।