08/03/2025
মানুষ ভয় পায় কেন?
এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাঃ
মানুষ ভয় পায় মূলত তার মস্তিষ্কের জটিল নিউরোলজিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল প্রতিক্রিয়ার কারণে। ভয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বোঝার জন্য আমাদের মস্তিষ্কের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও তাদের কার্যপ্রণালী বুঝতে হবে।
১. অ্যামিগডালা ও ভয়ের অনুভূতি
অ্যামিগডালা (Amygdala) হল মস্তিষ্কের একটি অংশ, যা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন কোনো সম্ভাব্য বিপদ (যেমন উচ্চ শব্দ, কোনো হিংস্র প্রাণী বা অন্ধকার) আমাদের সামনে আসে, তখন অ্যামিগডালা দ্রুত সিগন্যাল পাঠায় এবং আমাদের শরীরকে বিপদের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
২. ফাইট-অর-ফ্লাইট প্রতিক্রিয়া
ভয় পাওয়ার ফলে শরীর "Fight or Flight" (লড়াই বা পালানো) প্রতিক্রিয়ায় চলে যায়। এই প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম (Sympathetic Nervous System)।
এই প্রতিক্রিয়ায় যা ঘটে:
অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল হরমোন নিঃসরণ: অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড থেকে এই হরমোন নিঃসৃত হয়, যা হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
শরীরে শক্তি বৃদ্ধি: মাংসপেশিতে বেশি রক্ত প্রবাহিত হয়, যাতে দ্রুত দৌড়ানো বা লড়াই করা সম্ভব হয়।
সচেতনতা বৃদ্ধি: চোখের মণি প্রসারিত হয়, শুনার ক্ষমতা তীব্র হয়, এবং সংবেদনশীলতা বাড়ে।
হজম বন্ধ হয়ে যায়: পেটের কাজ ধীর হয়ে যায়, কারণ শরীর তখন শুধু গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকেই শক্তি দিতে চায়।
৩. ভয়ের বংশগত ও শিখিত কারণ
বংশগত ভয়: কিছু ভয় জন্মগত (Genetic) এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এসেছে। যেমন, সাপ বা উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়ার ভয়।
শিখিত ভয়: আমাদের অভিজ্ঞতা ও শেখার মাধ্যমে তৈরি হয়। যেমন, কেউ যদি ছোটবেলায় কুকুরের কামড় খায়, সে হয়তো বড় হয়ে কুকুরকে ভয় পাবে।
৪. ভয়ের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক
✅ ইতিবাচক দিক:
ভয় আমাদের বিপদ থেকে সতর্ক থাকতে সাহায্য করে।
বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
❌ নেতিবাচক দিক:
অতিরিক্ত ভয় বা দুশ্চিন্তা (যেমন ফোবিয়া, প্যানিক অ্যাটাক) মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে।
কিছু মানুষ অযৌক্তিক বিষয়েও ভয় পায়, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করে।
সুতরাং, ভয় আমাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যা মূলত বেঁচে থাকার জন্য দরকারি, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হলে তা ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।