24/07/2023
সূরা বাকারা, কুরআনের সবচেয়ে দীর্ঘতম সূরা, আয়াত সংখ্যা ২৮৬। এই সূরাটি মাদানী সূরা ।
বাকারাহ মানে গাভী। এ সূরার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াত পর্যন্ত হযরত মুসা এর সময়কার বনি ইসরাইল এর গাভী কুরবানীর ঘটনা উল্লেখ থাকার কারণে এই সূরাকে বাকারা নামকরণ করা হয়েছে।
গাভীর ঘটনা🐂🐃
মুসনাদ ইবনে আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে, বনি ইসরাঈলের এক ধনী লোক—যার কোনো সন্তান ছিল না, তাঁর উত্তরাধিকারী ছিল এক ভ্রাতুষ্পুত্র। তাড়াতাড়ি সম্পত্তি লাভের আশায় সে চাচাকে হত্যা করে বসে। রাতে গ্রামের এক লোকের দরজার ওপরে রেখে আসে এবং সকালে গিয়ে ওই লোকটির ওপর হত্যার অপবাদ দেয়। অবশেষে দুই দলে বিভক্ত লোকদের মধ্যে মারামারি ও খুনাখুনির উপক্রম হয়। এমন সময় জ্ঞানী লোকেরা তাদেরকে বলেন- তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নবী মূসা (আ.) বিদ্যমান থাকতে একে অপরকে হত্যা করবে কেন? সুতরাং তারা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে ঘটনাটি বর্ণনা করে।
হযরত মূসা (আ.) অলৌকিক পন্থায় এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন। তিনি বনী ইসরাইলীদের বললেন, আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন যে, একটি গাভী জবাই করতে হবে। এরপর জবাই করা গাভীর এক টুকরো গোশত নিহত ব্যক্তির গায়ে স্পর্শ করলে সে জীবিত হয়ে হত্যাকারীর নাম বলে দেবে।
তারা এই নির্দেশ শুনে মূসা (আ.)কে বলল, এ ধরনের পরামর্শ দিয়ে তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছো ? হযরত মূসা (আ.) জবাবে বললেন, ঠাট্টা বিদ্রূপ করা অজ্ঞ লোকদের কাজ। আল্লাহর নবীরা কখনও এমনটি করেন না। যদি হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে চাও তবে নির্দেশিত এই কাজ করতে হবে।
যখন ইহুদীরা বুঝতে পারলো যে, গরু জবাই করার আদেশ সত্য এবং অবশ্য পালনীয়, তখন তারা তালবাহানা শুরু করল এবং জানতে চাইল কোন ধরনের গরু জবাই করতে হবে? যদিও প্রশ্নের মাধ্যমে অনেক অস্পষ্টতা দূর হয়, কিন্তু ইহুদীরা এ ধরনের প্রশ্ন তুলে মূলত দায়িত্ব পালন না করার চেষ্টা করছিল। তাই তারা অভদ্রভাবে প্রশ্ন উত্থাপন করতে থাকে।
"বনী ইসরাইলীরা মূসাকে বলেছিল, তুমি আমাদের জন্যে তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বল যে, তা কী রকম গরু? মূসা বলল, তিনি (আল্লাহ) বলেছেন, সেই গরু বৃদ্ধও নয়, অল্প বয়স্ক বা শাবকও নয়, বরং মধ্য বয়সী। অতএব তোমরা যেমন আদেশ পেয়েছ তেমনই পালন কর।" (সুরা বাকারা: ৬৮)
এবার অবাধ্য ইহুদিরা গরুর রঙ কেমন হবে জানতে চাইল। অথচ আল্লাহর প্রথম নির্দেশে গরুর কোনো নির্দিষ্ট রঙের কথা উল্লেখ ছিল না। যদি রঙের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হত, তবে আল্লাহ প্রথম নির্দেশেই তা উল্লেখ করতেন। কিন্তু আল্লাহ তাদের অজুহাত সৃষ্টির পথ বন্ধ করে দেয়ার জন্য পরে নির্দিষ্ট রঙের কথা উল্লেখ করে আয়াত নাজিল করেন। যে নির্দেশের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাদের কাজকে আরও কঠিন করে দিলেন।
"তারা বলল- তুমি আমাদের জন্যে তোমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের গরুর রঙ কেমন তা বর্ণনা করেন। মুসা বললেন, তিনি ( আল্লাহ) বলেছেন, সেই গরুর বর্ণ গাঢ় হলুদ যা দর্শকদেরকে আনন্দ দেয়।" (সুরা বাকারা: ৬৯)
তারপর ইহুদিরা সেরকম গরু একটি লোকের কাছে পেলো। যা অন্য কারো কাছে ছিল না। লোকটি বলল, আল্লাহ তায়ালার শপথ! এই গরুর চামড়াপূর্ণ স্বর্ণের কম মূল্যে আমি বিক্রি করব না। সুতরাং তারা ওই মূল্যেই তা কিনে নেয় এবং জবাই করে।
তারপর তারা ওই জবাইকৃত গরুর একখণ্ড গোশত দিয়ে ওই মৃত ব্যক্তির ওপর আঘাত করে। তখন মৃত লোকটি দাঁড়িয়ে যায়। লোকগুলো তাকে জিজ্ঞেস করে, তোমাকে কে হত্যা করেছে? সে বলল- ‘আমার এই ভ্রাতুষ্পুত্র’। এ কথা বলেই সে মারা যায়। ফলে তাকে মৃত ব্যক্তির কোনো সম্পদ দেয়া হয়নি।
এ ঘটনার মাধ্যমে মূলত আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করলেন যে, ‘এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং স্বীয় নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করেন যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম করো।’ সুতরাং আমাদের সব প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কর্ম আল্লাহ তায়ালা জানেন ও দেখেন। তাঁকেই ভয় করে আমাদের সব অপকর্ম বর্জন করা উচিত।