14/10/2024
ইসলামী সংস্কৃতি
মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ
সংস্কৃতি হলো মানুষের আচার-আচরণের সমষ্টি। এটি হলোআদর্শ ও রীতিনীতি, চিন্তাচেতনা, প্রথা, মূল্যবোধ, মানবিক ধারণা, ভাব, বিশ্বাস, আচার-আচরণ এবং কলাকৌশলের অবিচ্ছেদ্য সামগ্রিকতা। যে সংস্কৃতি ইসলামি আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে তাই ইসলামি সংস্কৃতি। যেহেতু ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন। তাই মানব জীবনের কল্যাণকর সব কর্মকা- এই সংস্কৃতির আওতাভুক্ত। সে হিসেবে বলা যায়, ইসলামি ভাবধারায় অর্জিত জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, শিল্প-কারিগরি, সামাজিক রীতিনীতি, চাল-চলন, জীবনপদ্ধতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদির এক যৌগিক সমন্বয় প্রকাশ পায় তাই ইসলামি সংস্কৃতি।
একজন মুসলমানের আদর্শ ও রীতিনীতি, চিন্তাচেতনা, প্রথা, মূল্যবোধ, মানবিক ধারণা, ভাব, বিশ্বাস, আচার-আচরণসবই ইসলামের আলোকে গড়ে ওঠে। ইসলামি আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হলোপবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ। পবিত্র কোরআনে ইসলামি সংস্কৃতির বিস্তারিত রূপ বর্ণিত হয়েছে এবং হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা ও জীবনাচরণ এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর জীবনাদর্শের মাধ্যমে তা পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়েছে। ইসলামি সংস্কৃতি একজন মুসলমানের জীবন পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। কেননা, আল্লাহতায়ালা দুনিয়ায় মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং জীবনযাপনের জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল প্রেরণ করে তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলার জন্য দুনিয়াবাসীকে শিক্ষা, দীক্ষা প্রদান ও সতর্ক করেছেন। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। সুতরাং ইসলামি সংস্কৃতি হচ্ছে, আল্লাহপ্রদত্ত জীবনধারা সামগ্রিকভাবে পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে মানবজীবনকে উভয় জগতে সফল ও সার্থক করে তোলার নাম।
ইসলামি সংস্কৃতির মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে, জ্ঞানগত উপাদান, বিশ্বাস, আদর্শ ও মূল্যবোধ, ভাষা, সমাজব্যবস্থা। নিম্নে বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো
জ্ঞানগত উপাদান : ইসলামি সংস্কৃতির জ্ঞানগত উপাদান হচ্ছেআল্লাহ প্রেরিত আসমানি কিতাবসমূহ, কোরআন এবং হাদিস। মানবজীবন পরিচালনার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত জীবনপদ্ধতি যুগে যুগে আসমানি কিতাব আল্লাহ তার প্রেরিত বিশেষ দূত নবী-রাসুলদের মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন। ইসলামি সংস্কৃতির জ্ঞানগত মৌলিক উপাদান হচ্ছে কোরআন এবং সুন্নাহ।
বিশ্বাস : ইমান। এটি ইসলামি সংস্কৃতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ইসলামি জীবনধারায় ব্যক্তির ইমান-আকিদা (বিশ্বাস) পরিশুদ্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। ইমানের বলেই সে মানুষের মধ্যে সততা, বিশ্বস্ততা, সচ্চরিত্র, আত্মানুশীলন, সত্যপ্রীতি, আত্মসংযম, সংগঠন, বদান্যতা, উদারদৃষ্টি, আত্মসম্ভ্রম, বিনয়-নম্রতা, সৎসাহস, আত্মত্যাগ, কর্তব্যবোধ, ধৈর্যশীলতা, দৃঢ়চিত্ততা, আনুগত্য, আইনানুবর্তিতা, ইত্যাকার উৎকৃষ্ট গুণরাজি সৃষ্টি করে। এর মধ্যে মানুষের কর্মশক্তিকে সুসংহত করার এবং তাকে সুপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করার মতো প্রচ- শক্তি বর্তমান রয়েছে।
আদর্শ ও মূল্যবোধ : বিশেষ কোনো অবস্থায় মানুষ কীভাবে কাজ করে, চিন্তা কিংবা অনুভব করে সে সম্পর্কিত সমাজের যে আকাক্সক্ষা তারই নাম আদর্শ। সমাজব্যবস্থায় মানুষের কাজ, চিন্তা-চেতনা, আশা-আকাক্সক্ষা সমাজে প্রতিষ্ঠিত ইসলামি আদর্শ ও মূল্যবোধে গড়ে ওঠে। প্রতিটি সমাজ ও সংস্কৃতির নিজস্ব আদর্শ ও মূল্যবোধ রয়েছে। এসব আদর্শ ও মূল্যবোধ গড়ে উঠে সমাজজীবনে দীর্ঘদিন একত্রে বসবাস করার মানবীয় অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার মাধ্যমে।
ভাষা : প্রত্যেক সংস্কৃতির ভিত্তি হচ্ছে ভাষা। জাতি-বর্ণ, শ্রেণিভেদে ভাষা সবাইকে একীভূত করে। ভাষার মাধ্যমেই সংস্কৃতি প্রস্ফুটিত হয়। ভাষা হচ্ছে সমাজ কাঠামোর অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দিক। বস্তুত ভাষা হচ্ছে সবার অস্তিত্বের ভিত্তিস্বরূপ এবং চেতনার বাহনস্বরূপ। ভাষার মাধ্যমেই মানুষ সাংস্কৃতিক শিক্ষা অর্জন করে এবং সমাজজীবনে এর প্রতিফলন ঘটায়।
সমাজব্যবস্থা : ইসলামি সংস্কৃতি সমাজের ব্যক্তিদের মধ্যে এমন শৃঙ্খলা গড়ে তোলে, যাতে ব্যক্তির চরিত্র ও সমাজব্যবস্থায় আল্লাহ প্রদত্ত ভারসাম্যপূর্ণ গুণাবলির প্রতিফলন ঘটে।
#ইসলামেরকথা #ইসলামেরআলো #সংস্কৃতি