23/04/2023
পুরুষেরা স্বভাবগতভাবে কিছুটা অগোছালো । তার সেই অগোছালো জীবন একজন স্ত্রী ছাড়া কেউই গুছিয়ে দিতে পারে না । আর স্ত্রী যদি হয় একজন মুহস্বানাত , তাহলে সেই স্ত্রী ব্যক্তির দ্বীন - দুনিয়া উভয়ই আল্লাহর ইচ্ছায় গড়ে দেবে । আর স্ত্রী যদি হয় বানের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া কচুরিপানা , তাহলে দ্বীনও গেল , দুনিয়াও গেল । দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ হচ্ছে নেককার স্ত্রী । প্রিয় নবীﷺ বলেন , "পুরুষের জন্য সুখ ও সৌভাগ্যের বিষয় হলো চারটি, - সতী-সাধ্বী নারী , প্রশস্ত ঘর , সৎ প্রতিবেশী এবং সচল গাড়ি । আর দুঃখ ও দুর্ভাগ্যের বিষয়ও চারটি — অসৎ প্রতিবেশী , অসতী স্ত্রী , অচল গাড়ি এবং সংকীর্ণ ঘর ।" [ আস সিলসিলাতুস সহীহাহ - ২৮২]
আরেক হাদীসে এসেছে , "সৌভাগ্যের স্ত্রী সে - ই , যাকে দেখে স্বামী মুগ্ধ হয় । সংসার ছেড়ে বাইরে গেলে স্ত্রী ও তার সম্পদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকে । আর দুর্ভাগার স্ত্রী হলো সে - ই , যাকে দেখে স্বামীর মন তিক্ত হয় , যে স্বামীর ওপর জিহ্বা লম্বা করে ( মুখে মুখে তর্ক করে ) এবং সংসার ছেড়ে বাইরে গেলে ওই স্ত্রী ও তার সম্পদের ব্যাপারে সে নিশ্চিন্ত হতে পারে না" । [ মুস্তাদরাকআল হাকেম- ২/১৬২, হাদীস - ২৭৩১ (২৬৮৪) ]
বিয়ে হচ্ছে দ্বীনের অর্ধেক । প্রিয় নবীﷺ বলেন , "মুসলিম বান্দা যখন বিবাহ করে , তখন সে তার অর্ধেক ঈমান পূর্ণ করে , অতএব বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে । [তালখীসুর হাবীর, আসক্বালানি - ৩/১১২০]
ব্যভিচার থেকে বাঁচার জন্য ও পবিত্র জীবন গঠনের উদ্দেশ্যে বিবাহ করলে দাম্পত্য জীবনে আল্লাহর সাহায্য আসে । [সহীহুল জামে, ওয়া যিয়াদুতহু- ৩০৫০]
যত প্রকার মৌলিক গুনাহ রয়েছে এমন অধিকাংশ গুনাহ থেকেই বাঁচা যায় বিয়ের মাধ্যমে । আবার মৌলিক বড় বড় যেসকল নেক আমল রয়েছে সেসব আমলের রাস্তাও বিয়ের মাধ্যমেই সহজতর হয় । ইসলামে বিয়ে এতটাই ফযিলতপূর্ণ যে , স্বামী - স্ত্রী একে অপরের সাথে মিলিত হলেও তা সওয়াব ও সদকা বলে গণ্য হয় । একদিন কিছু সাহাবী নবীﷺ -কে বলেন , “ হে আল্লাহর রাসূল , বিত্তবান লোকেরা প্রতিফল ও সওয়াবের কাজে এগিয়ে গেছে । আমরা নামায পড়ি তারাও সে রকম নামায পড়ে , আমরা রোযা রাখি তারাও সে রকম রোযা রাখে , তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সদকা করে ।
” তিনি উত্তরে বলেন , “ আল্লাহ কি তোমাদের জন্য এমন জিনিস রাখেননি যে , তোমরা সদকা দিতে পারো ? প্রত্যেক তাসবীহ্ ( সুবহান আল্ল” তিনি উত্তরে বলেন , “ আল্লাহ কি তোমাদের জন্য এমন জিনিস রাখেননি যে , তোমরা সদকা দিতে পারো ? প্রত্যেক তাসবীহ্ ( সুবহান আল্লাহ্ ) হচ্ছে সদকাহ , প্রত্যেক তাকবীর ( আল্লাহু আকবার ) হচ্ছে সদকাহ , প্রত্যেক তাহমীদ ( আলহামদুলিল্লাহ ) হচ্ছে সদকাহ , প্রত্যেক তাহলীল ( লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ) হচ্ছে সদকাহ , প্রত্যেক ভালো কাজের হুকুম দেয়া হচ্ছে সদকাহ এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত করা হচ্ছে সদকাহ । আর তোমাদের প্রত্যেকে আপন স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও হচ্ছে সদকাহ । ” তারা জিজ্ঞাসা করেন , “ হে আল্লাহর রাসূল , আমাদের মধ্যে কেউ যখন যৌন আকাঙ্ক্ষা সহকারে স্ত্রীর সাথে সম্ভোগ করে , তাতেও কি সওয়াব হবে ? ” তিনি বলেন , “ তোমরা ভেবে দেখো , যখন সে হারাম পদ্ধতিতে তা করে , তখন সে গুনাহগার হয় । আর যখন ওই একই কাজ সে বৈধভাবে করে তখন এর জন্য সে প্রতিফল ও সওয়াব পাবে । ” [ সহীহ মুসলিম - ১০০৬ ]
বিয়ে করলে আমলে পরিপূর্ণতা আসে , মন - মেজাজ ফুরফুরে থাকে । ফাতওয়ায়ে শামীর কিতাবে রয়েছে , যে ইমাম তার স্ত্রীর ওপর সন্তুষ্ট সেই ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করা অধিক উত্তম । কারণ , ওই ইমাম স্ত্রী দ্বারা সন্তুষ্ট হওয়ার ফলে তার নামাযের মধ্যে খুশু - খুযু অধিক হবে ।
এভাবে মুহস্বানাত নারী জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়ার মাধ্যমে একজন পুরুষের জীবন সুন্দর হয় । ইলম ও রিযিকে বরকত আসে , দ্বীনের ব্যাপারে পরিপক্বতা আসে।
|| পবিত্র স্ত্রী ||
- মুহসিনীন, ১৭৫ পৃষ্ঠা।