27/09/2022
-- TOEFL or IELTS, which one is needed to study in America? |
TOEFL নাকি IELTS, আমেরিকা পড়তে আসার জন্য কোনটা লাগবে? –
যেকোন একটা হলেই হবে। শুধু আমেরিকা নয়, বর্তমানে পৃথিবীর সবদেশই TOEFL এবং IELTS দুইটাই গ্রহন করে- তার মানে যেকোন একটা দিলেই হল। তবে যারা জিআরই প্রস্তুতি নেয় তার জন্য টোফেলটা সহজ হয়ে যায়, তাই দেখা যায় লকজন জিআরই দেবার পর টোফেল দেয়। তোমার কাছে যেটা সহজ মনে হবে সেই পরীক্ষাটা দিয়ে দাও।
GRE’র পর TOEFL কেন দিতে হয়?
মনে কর, তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, তাহলে কি করতে হবে? ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে, তাই না? GRE হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা। এখন বল- যে কেউ কি ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে? নাকি ন্যূনতম একটা যোগ্যতা থাকতে হয়, কিছু শর্ত পূরণ করতে হয় ! যেমন- ভর্তি পরীক্ষা পাশের পরও ফার্মেসী পড়তে চাইলে রসায়ন এবং বায়োলজিতে বিশেষ মার্কস/যোগ্যতা থাকতে হয়। এটাই হচ্ছে TOEFL। অর্থাৎ, আমেরিকায় আসতে হলে এবং দুইটা পরীক্ষাই দিতে হবে। GRE প্রমান করে চিন্তাশক্তির দক্ষতা আর TOEFL প্রমান করে ভাষা দক্ষতা। দুইটা পরীক্ষা একেবারেই আলাদা জিনিস। আমেরিকায় যেকোন ডিগ্রী নিতে গেলে তোমাকে TOEFL দিতে হবে, অন্যদিকে GRE দিতে হবে শুধু মাত্র গ্র্যাজুয়েট বা পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট করতে চাইলে। সহজে বলি, তুমি যদি মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে আমেরিকায় আসতে চাও, তাহলে GRE এবং TOEFL দুটোই দিয়ে আসতে হবে।
TOEFL জিনিসটা কী?
IELTS এর কথা শুনেছ নিশ্চয়ই! এর মাধ্যমে আমাদের ইংরেজির দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়। TOEFL ঠিক এমনই, TOEFL হচ্ছে Test of English as a Foreign Language এর সংক্ষিপ্ত রূপ। কিভাবে এটা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হল জানতে চাও? অনেকদিন আগের কথা, ১৯৬২সালে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিদ্ধান্ত নিল যারা বিদেশ থেকে আমেরিকায় পড়তে আসবে অর্থাৎ যাদের ভাষা ইংরেজি না, তাদেরকে একটা পরীক্ষার মাধ্যমে ইংরেজির দক্ষতা প্রমাণ করে আমেরিকায় পড়তে আসতে হবে। এই পরীক্ষার ফল দেখে তারা বুঝতে পারবে সে আমেরিকায় এসে ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে পারবে কি পারবে না। ব্যাস, শুরু হয়ে গেল। আমাদের মত দরিদ্র দেশের ইংরেজিতে দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের জন্য সপ্নের দেশে যাবার পথে একটা বাঁধা ছলে আলো। প্রথম দিকে কাগজে কলমে TOEFL পরীক্ষা নিলেও এখন নানাবিধ পরিবর্তন-পরিবর্ধন এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়া যায়। ২০১৯ সালের ১লা আগস্ট থেকে আগের নিয়মের কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে যেখানে লিসেনিং, রিডিং ও স্পিকিং সেকশনে প্রশ্ন পদ্ধতি ঠিক রেখে কমানো হচ্ছে প্রশ্নের সংখ্যা ও পরীক্ষার সময়। তবে রাইটিং সেকশন থাকছে আগের মতোই।
TOEFL-এ কী কী থাকে?
IELTS এর মতই TOEFL চার ভাগে বিভক্ত, যেমন- Reading, Listening, Writing, Speaking. রিডিং অংশে কয়েকটা পেসেজ থাকবে। এটা অনেকটা কম্প্রিহেনশন এর মতো। আমার মনে আছে ছোটবেলায় ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষায় যখন কম্প্রিহেনশন আসতো তখন অনেকেরই মাথা গরম হয়ে যেত এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে। একবার আমি আমার সামনে বসা বন্ধুকে একটার উত্তর জিজ্ঞাসা করলাম। সে বলল- ‘আমি এক একটা প্রশ্নের উত্তরে কম্প্রিহেনশন থেকে দুই লাইন লিখে দিয়েছি।’ আমি হাসব নাকি কাঁদব বুঝতে পারলাম না। ২০০৩ সালে যখন বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেই তখনো কম্প্রিহেনশন ছিল। যা হোক, তুমি যদি রিডিং ভালো পারো, তাহলে ভয় পাবার কিছু নেই। এই অংশে ভালো করার উপায় হচ্ছে দ্রুত রিডিং পড়ে বুঝার ক্ষমতা অর্জন করা। নতুন নিয়মে ৩-৪ টি প্যাসেজ থাকে, প্রত্যেকটা থেকে প্রায় ১০ টা করে প্রশ্ন থাকবে, সময় দেয়া হবে ৫৪-৭২ মিনিট। প্যাসেজের সংখ্যা কম হলে সময় দেয়া হবে, ৪ টা থাকলে সময় প্রায় ২০ মিনিট বাড়িয়ে দেয়া হবে।
লিসেনিং পরীক্ষাটা রিডিং পরীক্ষা শেষ হলেই শুরু হবে। এটা দিয়ে মূলত পরীক্ষা করা হবে ইংরেজিতে আলোচনা বা প্রফেসরদের লেকচার শুনে তোমার বুঝার ক্ষমতা। এখানে ৩-৪ টি অডিও রেকর্ডিং শোনানো হবে, প্রতিটি থেকে ৬টি করে প্রস্ন থাকবে। দুইজন ছাত্র কিংবা একজন ছাত্র এবং একজন শিক্ষক কোন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে, এরকম ২-৩ টি আলোচনা শুনে ৫টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সময় দেয়া হবে ৪১-৫৭ মিনিট। আমাদের দেশের অনার্সে পড়ালেখার মাধ্যম ইংরেজি হলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে বাংলায় লেকচার দেওয়া হয়। এসব লেকচার যদি সম্পূর্ণ ইংরেজিতে হত কিংবা ছাত্রের সাথে শিক্ষকের আলোচনা ইংরেজিতে হলে এই লিসেনিং পরীক্ষাটার জন্য কারও নতুন করে প্রিপারেসন নেওয়ার দরকার হতনা। বাংলাদেশের শিক্ষকতার বিষয়ে একটা জোকস শুনেছিলাম, এক লোক একটা ভার্সিটির ইংরেজি ক্লাসে গিয়ে দেখলেন বাংলায় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে, তারপর বাংলা ক্লাসে গিয়ে আরও অবাক হলেন কারন সেখানে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে আঞ্চলিক ভাষায়! যা হোক, সিস্টেমের দোষ নিয়ে লাভ নেই, তুমি যদি ইচ্ছে কর, কয়েকদিন প্রিপারেসন নিয়েই লিসেনিং এ ভাল করতে পারবে।
স্পিকিং হচ্ছে ইংরেজি দক্ষতা প্রমানের আসল পরীক্ষা। আমরা পড়ে ইংরেজি বুঝি, শুনেও বুঝি কিন্তু সমস্যা হল স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলতে পারিনা। এই ধাপে প্রথমে একটা স্বাধীন টাস্ক থাকবে, অর্থাৎ তোমার মনে যা ইচ্ছে তাই বলতে পারবে। টপিকগুলো খুবই সহজ সহজ, যেমন- How do you want to celebrate your birthday?
তারপর তিনটি সম্মিলিত ধাপে তোমাকে কিছু নির্দেশনা দেয়া থাকবে, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কথা বলবে। মূলত প্রতি সেকশনে একটা অডিও শোনানো হবে, এবং এর উপর একটা লেখাও পড়তে হবে। ঐ অডিও ও লেখার মধ্যে তুলনা করতে হবে বা নিজের আইডিয়া বলতে হবে। যেমন, মনে কর- বাসায় না থেকে ভার্সিটির হলে থাকার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কথা বলছে। ছেলেটা হলে থাকার পক্ষে যুক্তি দিল, মেয়েটা বিপক্ষে যুক্তি দিল। শেষ পর্যন্ত কেউ কারো কথা মানলোনা। তোমার কাছে জানতে চাওয়া হতে পারে- কার যুক্তি বেশি গ্রহণযোগ্য? ভয় পেলে চলবেনা, ভয় পাবার কারনে এই ধাপ অনেকে ভাল করতে পারেনা। প্র্যাকটিস কর, কয়েকদিন অনুশীলন করলেই এই ধাপে অনেক ভাল করতে পারবে।
রাইটিং সেকশনে তোমাকে দুইটা রচনা লিখতে হবে। একটা হবে সম্মিলিত লেখা, আরেকটা হবে স্বাধীন। সম্মিলিত লেখায় তোমাকে লেকচার শোনার সাথে সাথে একটা পেসেজ রিডিং পড়তে হবে এবং তার উপর ভিত্তি করে পেসেজ ও লেকচারের মধ্যে পার্থক্যগুলো লিখতে হবে। স্বাধীন ধাপে একটা বাক্য থাকবে, যার উপর তোমার মতামত দিতে হবে। এই সেকশনের সাথেই শেষ হয়ে গেল তোমার TOEFL পরীক্ষা। এবার যে ফলাফলই আসুক না কেন সেটা দিয়েই আবেদন করা শুরু কর।
কিভাবে পরীক্ষা দিতে হয়?
GRE’র মতই TOEFL ও ETS (Education Testing Service) এর তত্বাবধানে হয়। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষার কেন্দ্র নির্বাচন করে সঠিক সময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষাটা দিতে হয়। আমার জানামতে TOEFL পরীক্ষার ফি ১৬৫ডলার, পরীক্ষা দেয়ার আগে তুমি চারটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রি-তে স্কোর পাঠাতে পারবে এবং পরবর্তিতে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কোর পাঠাতে আলাদা খরচ করতে হবে।
IELTS না দিয়ে TOEFL দিলে কি সুবিধা?
আমেরিকা এবং কানাডায় টোফেলের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। আইইএলটিএসে স্পিকিং এর জন্য এক্সট্রা ১ দিন দিতে হবে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্কোর ব্রিটিশ কাউন্সিলে যেয়ে কালেক্ট করতে হয়। আইইএলটিএসের স্কোর সেন্ডিং প্রসেস তুলনামূলক জটিল। আইইএলটিএসে প্রতি স্কোর সেন্ড করতে ২৪০০-৩৫০০ টাকা গুনতে হবে, যদিও কিছু ইউনিভারসিটিতে ইলেক্ট্রনিক্যলি স্কোর সেন্ড করা যায়। টোফেলে একবার রেজিস্ট্রেশন করলে চারটা ভার্সিটিতে ফ্রি স্কোর পাঠানো যায়। পরবর্তীতে প্রতিটা ইউনিভার্সিটিতে স্কোর পাঠাতে ২০ ডলার করে লাগে। TOEFL এর সব ধাপই অনলাইন বেইজড কিন্তু IELTS এর অধিকাংশ ধাপই এনালগ মানে কাগজের পদ্ধতি। আমার মনে বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করার সময় এবং স্কোর পাঠানোর সময় IELTS স্কোর পাঠাতে যে দৌড়ঝাপটা দিতে হয় তা TOEFL এ দিতে হয় না বলেই TOEFL এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
GRE দেইনি, তবে TOEFL স্কোর আছে, আবেদন করতে পারব?
কয়েকদিন আগে একটা আর্টিকেল পড়লাম, সেখানে একজন অধ্যাপক বিশ্লেষণ করেছেন আমেরিকায় যারা বায়োলজিক্যাল সাইন্সে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে আসে, তাদের আসলে GRE দেবার কোন প্রয়োজন নেই। ইদানিং অনেক ভার্সিটি GRE থেকে সরে আসতে চাইছে। কিছু কিছু নিচের দিকের বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে GRE লাগে না তবে TOEFL অবশ্যই লাগে। খুঁজে দেখতে পারো, প্রফেসর যদি রাজি হয়ে যায় তাহলে আর কোন সমস্যাই না। তোমরা শুনলে অবাক হবে যে অস্ট্রেলিয়া কিংবা কানাডার মত দেশেও IELTS/TOEFL ছাড়া মাস্টার্স/পিএইচডি করতে যাওয়া যায়। তোমার যা আছে তা নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে হবে, আগে আবেদন কর, তারপর নিজেই খুঁজে বের কর কি লাগবে কি লাগবে না?
স্কলারশিপ এর জন্য TOEFL এ কত স্কোর লাগে?
আমি এটা আসলে জানিনা। অনেকে বলে ৮০ এর উপরে TOEFL এর স্কোর থাকা মানে ভাল স্কোর। তবে স্কলারশিপ অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। শুধু TOEFL এর স্কোর ভালো হলেই যে পাবে ব্যাপারটা এমন নয়, আবার TOEFL এর স্কোর খারাপ বলে যে পাবেনা, তাও নয়। এটা কেউ আগে থেকে বলতে পারবে না। এটা GRE, TOEFL, CGPA, Letter of Recommendation, Statement of Purpose এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ফান্ডিং এর সুযোগ এসব কিছুর উপর নির্ভর করে। তবে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সর্বনিম্ন গ্রহনযোগ্য TOEFL স্কোর দেয়া থাকে, সেই স্কোরের চেয়ে তোমাকে অবশ্যই বেশি পেতে হবে ।
writer: Md Israfil Ali
original post link in comment