Aronno's Story

Aronno's Story পেজে অনেক কিছু পোস্ট করা হয় সেটাকে কেউ সিরিয়াস ভাবে নিবেন না।
(1)

"চলে এসো! এখানে আর এক মুহুর্তও নয়।" সারফারাজ তার স্বদ‍্য বিয়ে করা নববধূর উদ্দেশ্যে কাঠ কাঠ কন্ঠে কথাগুলো বলেই নববধূর নরম...
17/07/2025

"চলে এসো! এখানে আর এক মুহুর্তও নয়।" সারফারাজ তার স্বদ‍্য বিয়ে করা নববধূর উদ্দেশ্যে কাঠ কাঠ কন্ঠে কথাগুলো বলেই নববধূর নরম হাতখানা নিজের হাতের ভাজে শক্ত করে ধরে পা বাড়ালো রাস্তায় অপেক্ষায়মান গাড়ির দিকে।

দু পা বাড়াতেই বিয়ে বাড়ির জন সমাগমের মাঝ থেকে পুরুষালি তেজস্বী কন্ঠে বলে উঠলো, "আরেহ্ কোথায় যাচ্ছো? এভাবে মেয়ে নিয়ে অনুমতি ব‍্যতীত নিয়ে যেতে পারো না! ভদ্রতা, সভ‍্যতার ও একটা ব‍্যপার আছে। এটা ভদ্রলোকের সমাজ। তোমার মধ্যে ভদ্রতা না থাকতে পারে কিন্তু আমাদের আছে। মেয়ের বাবার অনুমতি না নিয়ে এক পা ও আগাবে না!"

সারফারাজ হাঁটা থামিয়ে পিছন ঘুরে তাকালো। ওষ্ঠদ্বয়ে হাসির রেখা ফুটিয়ে অত্যন্ত স্বাভাবিক স্বরে বলল, "আপনি কে? কি হন?"

"আমি অন্বেষার বড় চাচা।"

সারফারাজ তার নববধূর নরম হাতখানা ছেড়ে দিল। পাশে থাকা ফাঁকা চেয়ারে নিজে আয়েশ করে বসলো। পাশেরটাই অন্বেষাকে ঠাস করে বসিয়ে দিল।

ভদ্রলোক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছু বলছেন না। ভরা বিয়ে বাড়ির মানুষ আগ্রহ ভরা নয়নে তাকিয়ে আছে সারফারাজের দিকে। বিয়ে বাড়ির মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সারফারাজ। নিরবতার অবসান ঘটিয়ে সারফারাজ অন্বেষার বড় চাচাকে উদ্দেশ্য করে বলল, "কোথায় ছিল আপনার ভদ্রতা, সভ‍্যতা? বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় যখন অতটুকু মেয়েটার ওপর ওর সৎ মা, অনান‍্য মহিলাগুলো চড়াও হয়ে যা নয় তা বলে গালি দিচ্ছিল তখন কোথায় ছিলেন আপনি? পাত্রের অনুপস্থিতিতে যখন আপনার গ্রামের মাতাল, গাঞ্জাখোর ছেলেটার সাথে ওর সৎ মা বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় করছিল কোথায় ছিলেন আপনি? আর কোথায় ছিল আপনাদের ভদ্রতা, সভ‍্যতা?"

উপস্থিত মানুষের মাঝে একটা প্রাণিও কথা বলে না। প্রতিত্তোরে সবাই নিরব। ক্ষেপে ওঠে সারফারাজ। ব‍্যাগ্র কন্ঠে শুধায়, "কি হলো কথা বলছেন না কেন? মুখে তালা লাগিয়ে বসে আছেন কেন? আমার তো মনে হয় দুই ঘন্টায় পরিচিত এই মেয়েটার জন্য আমার যতটুকু দয়ার উদ্রেক হয়েছে তার ছিটে ফোঁটাও আপনাদের কারো মধ্যে নেই। এখানে একটা মানুষের মধ্যে সামান্যতম মায়া দয়া নেই। মানুষ নামের অমানুষ একেকটা। জানোয়ারের দল।"

"দেখ এবার কিন্তু বেশি বেশি করছো ছেলে। যা নয় তাই বলবে?"

"একশবার বলব। কি করবেন?"
সারফারাজ ততক্ষণে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছে। শার্টের হাতা গুটিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতেই অবস্থা বেগতিক দেখে দুরে দাড়ানো সারফারাজের বন্ধু রাকিব এসে আটকায় সারফারাজকে। কেউ না জানুক সে অন্তত জানে সারফারাজকে আটকাতে না পারলে একটাকেও আস্ত রাখবে না সে। প্রচণ্ড রকম রাগী ছেলেটা।

আস্তে আস্তে বিয়ে বাড়ির লোকজন যে যার মত প্রাণ নিয়ে সরে পড়ছে। আপাতত তাদের তামাশা দেখে প্রাণ খোয়াবার কোন ইচ্ছে নেই। মিনিট খানিকের মধ্যে বিয়ে বাড়ি ফাঁকা। হাতে গোনা দু চারজন মানুষজন আছে। কিছুক্ষণ পর অন্বেষার বাবা এসে সারফারাজের উদ্দেশ্য নমনীয় কন্ঠে বলে উঠলো, "জামাই বাবা শান্ত হোন। ওদের কথায় কিছু মনে করবেন না।"

শশুরের নরম কন্ঠে মন গললো না তার। বিরক্তির রেখা ফুটে উঠলো চোখে মুখে। বিরক্তিকর কন্ঠে বলল, "রাখেন আপনার ফ‍্যচফ‍্যাচানি। আপনার এ অবস্থার জন‍্যই মেয়েটার এ দশা। বলি আপনি কি কোন খোঁজ খবর রাখেননি? মেয়ের কোথায় বিয়ে ঠিক হলো কার সাথে ঠিক আবার বিয়েটা যখন ভেঙে গেল পূনরায় আবার কার সাথে দিতে চাইলো কিছুই কি আপনার চক্ষুগোচর হয়নি? কেমন বাবা আপনি?"

মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। প্রতিত্তোরে কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

সারফারাজ পূনরায় বলল, "আমি এখন আমার বউকে নিয়ে চলে যেতে চাই। কেউ যদি আটকানোর দুঃসাহস করে গলা থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে দিব। আমার বউয়ের সাথে এ বাড়ির এ প্রাণিও যেন যোগাযোগ করার চেষ্টা না করে। আর একটা কথা আপনার দ্বিতীয় স্ত্রী শাস্তিটা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা দিবেন। আল্লাহ্ ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না। মা হারা মেয়েটার সাথে যে ঘৃণ্য অন‍্যায় করতে যাচ্ছিলেন আল্লাহর ওপর আস্থা রাখছি এর বিচার তিনি করবেন।"

সারফারাজ অন্বেষাকে এক প্রকার টেনে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল। পিছনে রেখে গেল কতগুলো মানুষ রূপি অমানুষ।

রাকিব নিরব দর্শকের মত সবটা দেখছিল। সে ভাবতেও পারেনি ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হৃদয়ের ছেলেটার মধ্যে এতটা দয়া লুকিয়ে থাকতে পারে। কত অনুরোধ করে ছেলের আকিকায় নিমন্ত্রণ করে এনেছিল সারফারাজকে। তার নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেই কি বিপদে পড়লো ছেলেটা। কখনও বিয়ে করবে বলে পণ করা ছেলেটারও আজ বিয়ে হয়ে গেল। দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো বুক চিরে। প্রাণপ্রিয় বন্ধুর সামনে নিজের অবস্থান খুব নিচে নেমে গেল এমনটাই মনে হচ্ছে রাকিবের।

"সারফারাজ আমি কি তোর সাথে যাবো?"

"নাহ্ দরকার নেই। তোর এখন তৃণা আর বাবুর কাছে থাকা উচিত। আমার জন্য চিন্তা করতে হবে না।"

"বললেই হলো চিন্তা করতে হবে না। চিন্তা এসে যায় রে ভাই। বাড়িতে জানিয়েছিস?"

"সময় পেলাম কোথায়?"

"তাও ঠিক। তোরা ক্লান্ত। আমি বড় রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি?"

"সমস‍্যা নেই। আমি পারবো। তুই বাসায় যাহ্।"

সারফারাজ গাড়িতে উঠে পড়েছে। পাশে দাড়ানো অন্বেষাকে উদ্দেশ্য করে বলল, "তোমাকে কি নিমন্ত্রণ করে উঠাতে হবে? উঠে বসো!"

অন্বেষা ঠায় দাড়িয়ে তখনো। সে প্রয়োজনে কয়েকবার মাইক্রেবাসে উঠেছে। কিন্তু তখন তো ড্রাইভার দরজা খুলে দিয়েছে। কিন্তু এসব প্রাইভেট কারে চড়ার অভ‍্যাস নেই সাথে দরজাটাও খুলতে পারছে না। সারফারাজ গাড়ি থেকে নেমে রাগী স্বরে বলল, "এটুকুও পারো না? তবে পারো কি মেয়ে, ফ‍্যাচফ‍্যাচ করে কাঁদতে?"

সারফারাজ গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল, "যাও উঠে বসো।"

অন্বেষা বাধ‍্য মেয়ের মত উঠে বসলো। সারফারাজ সামনে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিবে এমন সময় আবারও রাকিবের আগমন। সারফারাজ অবাক কন্ঠে বলল, "কিরে যাসনি এখনো?"

"চলেই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে যাওয়া উচিত। অগ‍্যতা আবার ফিরে আসা।"

"দয়া করে আপনার গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো বলে আমাকে উদ্ধার করেন। এমনিতেই তোদের এদিকটার রাস্তা ভালো না। ঢাকায় পৌছাতে না জানি কত সময় লাগে।"

"বলছি মেয়েটার ওপর অযত্ন অবহেলা করিস না। সবটা তো দেখলি সচক্ষে। অন্তত ওর আত্মীয়দের মত আচরণ করিস না।"

"এই চিনলি আমাকে? সারফারাজ কখনও দায়িত্ব অবহেলা করে না। ইনশাআল্লাহ দায়িত্ব পালনে কোন হেরফের হবে না। নিশ্চিন্তে বাড়ি যা।"

"আমি জানি তুই কেমন। তবুও পরিস্থিতি এখন পুরাই হাতের বাহিরে। মেয়েটার অভিভাবক এখন তুই। দেখে রাখিস। আমি যায় তাহলে।"

"আচ্ছা যা। আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ হাফেজ।"

"ওয়ালাইকুমুস সালাম। আল্লাহ হাফেজ।"

রাকিব বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছে। অতঃপর সারফারাজ গাড়ির ইঞ্জিন স্টর্ট দিল।

সন্ধা লগ্ন পার হয়ে রাত্রি নেমেছে ধরণীতে। সফেদ রঙা প্রাইভেট কারটির ভেতরে বহু লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অবহেলা, অনাদর সহ‍্য করা মেয়েটা যাচ্ছে তার অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বিয়ে হওয়া স্বামীর সাথে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।

গ্রামের আধ ভাঙা রাস্তায় গাড়িতে থাকা মানুষগুলোর জীবন তেজপাতা হয়ে যায়। একের পর এক ধকল সহ‍্য করে অন্বেষার শরীর আর চলছে না। দৃষ্টি নিভে আসছে। একটানা ঘুম হলে ভালো লাগতো। হঠাৎই গাড়ির চাকা ছোট্ট একটা গর্তে পড়েছে। বেশ ঝাকুনি খেয়েছে অন্বেষা। ফলে তার পেটের সব যেন বেড়িয়ে আসতে চাইছে। বমি করতে পারলে ভালো হতো। সারাটা সময় জড় বস্তুর মত চুপ থাকা অন্বেষা সামনের মানুষটির উদ্দেশ্য নিভু গলায় বলল, "শুনছেন? গাড়িটা একটু থামাবেন? আমার বমি আসছে।"

অন্বেষার কন্ঠস্বর সারফারাজের কর্ণকুহরে ঠিক স্বদ‍্য জন্মানো বিড়ালের বাচ্চার চেও চেও আওয়াজের মত লাগলো। এক সাইডে গাড়ি থামিয়ে পিছন ফিরে অন্বেষার উদ্দেশ্য বলল, "কি হয়েছে?"

"বমি পাচ্ছে।"

বিরক্তিতে কপাল কুচকে গেল সারফারাজের। শুরু হয়ে গেল তার জীবনেও মেয়ে মানুষের ফ‍্যাচফ‍্যাচানি। এজন্যই বিয়ে করতে চাইছিল না।

প্রয়োজন সমাধা করে বোনের ফোনে একটা টেক্সট পাঠিয়ে সারফারাজ আবারও গাড়ি স্টার্ট দিল। চললো নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
______________
সারফারাজের ভার্সিটির ফ্রেন্ড রাকিব আর তৃণা। বেস্ট ফ্রেন্ড বলা চলে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল রাকিব-তৃণা। বিয়ের প্রায় তিন বছর পর কোল আলো করে ছেলে সন্তানের জন্ম। প্রাণপ্রিয় দুই বন্ধুর অনুরোধে ঢাকা ছেড়ে ফুলতলী গ্রামে ছুটে আসতে হয় সারফারাজের। কিন্তু সেখানে তার জন্য ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছিল কে জানতো!

ইনশাআল্লাহ চলবে,

প্রণয়_হাওয়া_লাগলো_মনে(০১)

Collected

কিছুটা ভিন্নধর্মী। কেমন লাগলো জানাবেন। আসসালামু আলাইকুম।

Next part at 12 PM

14/07/2025

#প্রেমদণ্ড (১১/অন্তিম)💚
Collected

প্রবাদে আছে, 'সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।' সময় এবং পানির স্রোত দুই ই বয়ে চলে তার আপন গতিতে। প্রকৃতির কোন পরিবর্তনই তাদের থামাতে পারে না। তেমনি ইজহান-অনুজা দম্পতির জীবন থেকে কেঁটে গিয়েছে ছয় ছয়টি মাস। সময়ের সাথে ব‍্যস্ততা বেড়েছে ইজহানের জীবনে। সে এখন তেইশের তাগড়া যুবক। পুষ্ট শরীর। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব‍্যবসায়ের হালও কিছু ধরেছে। এমনিতেই সে পড়াশোনা শেষে বাবার ব‍্যবসায়ের দেখাশোনা করতো। কিন্তু দায়িত্ব যখন ক‍্যারিয়ার গড়ার আগেই ঘাড়ে এসে পড়েছে তাই বেকার বসে না থেকে বাবার কাজে সাহায্য সহযোগিতা করছে। রমিজ উদ্দিন অবশ‍্য নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু ইজহান তার সিদ্ধান্তে অনড়। সে বাবার ছেলের তার পয়সায় খেতেই পারে কিন্তু স্ত্রীসহ তো নয়। নিজের উপার্জিত অর্থে প্রেয়সীর জন্য কিছু কেনার আনন্দ দুনিয়াতে আর খুজেঁ পাওয়া যায় না। অনুজাও এগিয়ে চলেছে সময়ের তালে। সে এখন ষোড়শী কিশোরী থেকে সতেরোতে গিয়ে ঠেকেছে। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেড়িয়ে পা দিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকে। পড়াশোনা, সংসার দুটোই সমান গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ব‍্যস্ততা তার খুব কম নয়। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভাব ভালোবাসা যেমন আকাশ ছোঁয়া। তেমনি ঝগড়াও কিছু কম হয় না। আজ আড়ি কাল ভাব। সম্পর্ক এখন আপনি থেকে তুমি তে গড়িয়েছে। কিন্তু গতরাতে হওয়া ঝগড়ার তীব্রতা খানিকটা বেশিই ছিল। ফলস্বরুপ অনুজা এখন মায়ের বাসায় অবস্থান করছে।

ইজহান সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সারা বাসা এক চক্কর দেওয়ার পরেও কোথাও অনুজা নামক মেয়েটির ছায়া দেখতে পেল না। বুঝতে অসুবিধা হল না তার কিশোরী রেগে পিত্রালয়ে গিয়ে অবস্থান করেছে। অনুজা বাসায় নেই জেনেও চুপ রইল ইজহান। পাছে মা ঝগড়ার বিষয়ে কিছু জেনে যান! স্বামী, স্ত্রীর মধ্যকার ঝুট ঝামেলা নিজেদের মধ্যে রাখাই উত্তম মনে করে ইজহান। বাসায় ফাতিমা বেগম, জামিলার বাসায় থাকলেও ইজহানের নিজেকে একেবারেই একা নিঃসঙ্গ লাগছে। মনে হচ্ছে খুব মূল‍্যবান কিছুর অনুপস্থিত। যা না থাকলে তার ঘর, মন দুটোই শূন্য মৃত্যুপ্রায়! মাগরীবের নামাজ শেষে মন খারাপ করে রুমে বসে ছিল ইজহান। ফাতিমা বেগম চায়ের কাপ নিয়ে এলেন ছেলের রুমে। ছেলের মন খারাপে ঠোঁট এলিয়ে আসলেন তিনি। একবেলা বউ নেই ছেলের মুখ শুকিয়ে আমসত্ব হয়ে গিয়েছে। ধোয়া ওঠা গরম চায়ের কাপ ছেলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, "নিয়ে এলেই হয়। শুধু শুধু মন খারাপের কোন দরকার আছে? যাকে ছাড়া আমার ছেলের একবেলা চলে না তার সাথে মিছে ঝগড়া কেন হু?"

মায়ের থেকে হাত বাড়িয়ে কাপ নিয়ে লাজুক হাসে ইজহান। যাহ মা ঠিক পেয়ে গেলেন তবে!

ফাতিমা বেগম বলেন, "সম্পর্কে মান-অভিমান থাকবে এটাও খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। সব সম্পর্কেই হয়। যেখানে ভাব ভালোবাসা বিদ‍্যমান সেখানেই ঝুট ঝামেলা। কিন্তু বাবা, সবসময় মনে রাখতে হবে রাগের বশে কখনও এমন কথা বলা যাবে না যে কথায় সঙ্গীনির মন ভাঙে। তবে অনুজা কিন্তু ভারি বুদ্ধিমান! মায়ের কাছে যাওয়ার সময় এমনভাবে গেল যেন সে খুব খুশি। ঝগড়ার ছিটে ফোঁটাও তার মধ্যে নেই। আমার কাছে অনুমতি তবে গিয়েছে। আমি বলি কি যাও। গিয়ে আমার ঘরের আলোকে নিয়ে এস।"

ইজহান শুকনো কন্ঠে বলল,
"আমি গেলেই কি সে আসবে?"

"গিয়েই দেখ। প্রিয় মানুষের মুখ দেখলে পৃথিবীর কোন মেয়ে মানুষ রাগ ধরে রাখতে পারে না। যেটা থাকে ওটা মিথ্যা। আর মুখ শুকনো করে থাকতে হবে না। যাও এখন!"

ফাতিমা বেগম ছেলেকে তাড়া দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন। ইজহান তড়িঘড়ি করে পরনের টিশার্ট বদলে সফেদ রঙা একটা নতুন টিশার্ট গায়ে জড়ালো। এই টিশার্টটি অনুজার খুব পছন্দের। গায়ে সুগন্ধি আতর মেখে শাশুড়ির বাসার দিকে রওনা হল।
_______________________
দুবার কলিং বেল বাজাতেই আইরিন রহমান দরজা খুলে দিলেন। ইজহান শুকনো হাসল। মেয়ের জামাইকে দেখে খুব খুশিই হলেন আইরিন রহমান। ইজহানের দুহাত ভর্তি চিপস, চকলেট আর ফলমূলের প‍্যাকেট। ইজহানকে দেখে ইয়াশ এসে জড়িয়ে ধরল। অনিশাও গুটিগুটি পায়ে দুলুর সন্নিকটে এসে দাড়াল। পছন্দের খাবার প‍্যাকেট চোখে পড়তেই ভাইবোনের চোখ চকচক করে উঠল। আইরিন রহমান একমাত্র জামাই আপ‍্যায়নে ব‍্যাস্ত হয়ে পড়লেন। অনুজাকে ডাকতে নিলে ইজহান নিষেধ করল। বলল, "এত ব‍্যাস্ত হতে হবে না আন্টি। অনুজা রুমে না?"

আইরিন রহমান মাথা দুলালেন। ইজহান আর কথা না বাড়িয়ে তার অভিমানী প্রেয়সীর দিকে এগিয়ে গেল।

জানালার দিকে মুখ করে চুপটি করে বসে আছে অনুজা। ইজহান নিঃশব্দে রুমে ঢুকে প্রথমেই দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর গুটি গুটি পায়ে অভিমানীর দিকে এগুলো। অনুজা তখনও দৃষ্টি স্থির রেখে প্রকৃতি দেখায় মগ্ন। ইজহান মুখে একটি শব্দও উচ্চারণ না করলে স্ত্রীকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল। অনুজা কিছুক্ষণ জড় পদার্থের মত চুপ করে রইল। তারপর ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। ইজহানের হাতের বাধন আরেকটু শক্ত হল। ইজহান মুখ ফুটে কিচ্ছু বলল না। প্রেয়সীর অভিমান গলার সময় দিল। অনুজা ভেজা কন্ঠে নিজেই বলল, "তুমি খুব খুব খারাপ বুঝলে? এত কষ্ট কেন দাও? তুমি জানো না তোমার দেওেয়া কষ্ট সহ‍্য করার মত সহ‍্য ক্ষমতা তৈরি হয়নি আমার। এমন করলে দুচোখ যেদিকে যায় চলে যাব। আমার ছায়াটি পর্যন্ত দেখতে পারবে না।"

স্ত্রীর অভিযোগে কেঁপে ওঠে ইজহান। অনুতপ্তায় ছেয়ে যায় মুখ মণ্ডল। দুহাতে অনুজার মুখ উচিয়ে কাছাকাছি এনে ইজহান বলে ওঠে, "ভুলেও অমন কথা বলিও না বউ। তুমি জানো না হৃদয়ের ঠিক কতখানি জুড়ে তোমার বসবাস। তুমি না থাকলে আমার কি হবে একবারও ভেবে দেখছো? তুমি জানো না তোমাকে জড়িয়ে না ধরে রাতে আমার চোখে ঘুম ধরা দেয় না। একটু ঝগড়া নাহয় হয়েছেই। তাই বলে রাগ করে চলে আসতে হবে?"

প্রতিত্তোরে কপট রাগ দেখিয়ে অনুজা বলে, "একশবার আসতে হবে।"

ইজহান হাসে। অনুজার ফোলা গালদুটো আদর করে টেনে দেয়। হাতদুটো মুঠোয় পুড়ে বলে, "চল আজ ঘুরতে যায়। বহুদিন যাওয়া হয় না।"

অনুজা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ইজহান পুনরায় বলে, "কি যাবে না আমার সাথে? এখনো রেগে থাকবে?"

প্রতিত্তোরে অনুজা কিছু না বললে আলমারি খোলে। হালকা বেগুনি রঙের লং হাতার কুর্তির সাথে হিজাব পেচিয়ে নেয়। মুখে নিকাবের পরিবর্তে মাস্ক লাগিয়ে ইজহানের উদ্দেশ্যে বলে, "চলো!"

ইজহান অনুজার হাত ধরে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। এদিকে অনুজাকে তৈরি হতে দেখে আইরিন রহমান বিস্ময় নিয়ে শুধায়, "একি কোথায় যাচ্ছিস? আজ এলি। কটা দিন থাকবি। তা না! কোথায় বেড়চ্ছিস?"

অনুজা বলল, "ঘুরতে যায় আম্মু। অনেকদিন যাওয়া হয় না।"

"কিন্তু আমি ভেবেছিলাম তোরা থাকবি। নাস্তা বানিয়েছি খাবি।" আইরিন রহমানের কন্ঠে মন খারাপের ছাপ।

ইজহান চট করে সিঙ্গেল সোফার একটাতে বসে পড়ল। বলল, "কিছুক্ষণ ঘুরে এখানেই চলে আসব। সমস্যা নেই।"

আইরিন রহমান হাসিমুখে ইজহানকে একটার পর একটা নাস্তা খাইয়ে তারপর ছাড়ল। ফাল্গুনের সন্ধা রাত। পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশ। তারারা ঝলমল করছে। অনুজা ইজহানের বাইকের পিছনে চেপে বসল। ইজহান বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগে একবার বলল, "ঠিকমতো বসেছ তো?"

পিছন থেকে অনুজা অভয় দিতেই ইজহান বাইক স্টার্ট দিল। সায় সায় করে বাইক এগিয়ে চলছে। বাতাসের দমকায় অনুজার হিজাবের কোনা উড়ছে। অনুজা ইজহানের দিকে আরেকটু চেপে বসল। রাস্তার দুধারে কর্মব্যস্ত মানুষের ঢল। কৃত্রিম আলোয় ঝকমক করছে গোটা শহর। অনুজার হঠাৎ করেই নিজেকে খুব সুখী সুখী লাগছে। অনুজা মনে মনে ভাবে, "প্রিয় মানুষটার সান্নিধ্যে বুঝি এত সুখ?"
______________________
ইসরাত তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে মায়ের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে আজ তাকে দেখতে আসবে। তার ভাবনায় খুব একটা ভুল নেই। বেলা একটু গড়াতেই তার ছোটখালা তার ছেলেমেয়ে নিয়ে হাজির। এই শহরে ইসরাত আর ও ছোটখালারা পাশাপাশি একই শহরে বাস করে। যার জন্য দু পরিবারের মধ্যে কোন কিছু হলেই একে অন‍্যে ছুটে যায়। ইসরাতের ছোট খালা বেশ চটপটে মানুষ। সে দ্রুত কথায় যেমন পটু, তেমনি কাজেও। ইসরাত ব‍্যালকনি গিয়ে লক্ষ্য করল তার মহামান‍্য পিতা দুহাত ভর্তি বাজার নিয়ে ফিরছেন। ইসরাতে চোখে অশ্রুকণা ভর করেছে। মনের মধ্যে স্পষ্ট হাহাকারের শব্দ। এটা ঠিক তার কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক নেই। কিন্তু সেই সাথে এটাও তো সে অস্বীকার করতে পারে না কোনরকম মন দেওয়া নেওয়ার সম্পর্কে না জড়িয়েই আইমানকে কে সে মন দিয়ে বসে আছে। ওই গম্ভীর, শ‍্যামবর্ণের সুদর্শন মুখখানা যে তার মনে একেবারে সেটে গিয়েছে। ভুলবে কি করে সে! মানুষটার দূর থেকে করা যত্ন, হুটহাট পার্সেলের সাথে খুব যত্ন নিয়ে লেখা দু লাইনের প্রেমময় চিরকুট সেসব কি করে অস্বীকার করবে সে? কিন্তু বাবা-মাকে ই বা সে কি বলবে? অজানা আশংকায় হৃদয় কেঁ'পে ওঠে ইসরাতের। সে যে আইমান নামক পুরুষটাকে একটু বেশি ভালোবাসে সেটা বুঝতে তার একটুও সময় লাগে না। শান্তি করে মন খারাপটাও করা হল না ইসরাতের। এর মধ্যেই তার ছোট খালা প্লেট ভর্তি গরম খিচুড়ি নিয়ে এসে হাজির। ঝরঝরে অথচ নরম খিচুড়ি ইসরাতে ভিষন প্রিয়। সাথে ডিম ভাজি হলে তো কথায় নেই। ইসরাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ভাত নলা পাকিয়ে ইসরাতকে খাইয়ে দিতে লাগলেন ছোট খালা। সাথে সমানতালে বকবক করছেন। অতিরিক্ত কথা বলার জন্য ইসরাত তার ছোট খালাকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। কিন্তু সে যতই এড়িয়ে চলুক তার ছোট খালা ঠিক ততই চিপকে থাকেন সঙ্গ পেলেই। ইসরাতের মাঝেমাঝে মনে হয় ছোটখালা তার নিজের ছেলেমেয়ের থেকেও বেশি তাকে ভালোবাসে। যত্ন, আদরের কোন কমতি রাখেন না। মন খারাপে আজ ইসরাতের পেট এমনিতেই ফুলে ফেপে আছে। বেশি খাবার তার পেটে জায়গা হবে না। খাবার গালে থাকা অবস্থায় অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল, "আর খেতে পারব না খালামনি। পেট ভরে গিয়েছে।"

"বেশ পারবি। না খেয়ে চেহারার কি হাল করেছে মেয়ে। বলি, তোর মা কোন খেয়ালে থাকে হ‍্যাঁ? মেয়ের চোখমুখ শুকিয়ে যে কাঠ হয়ে গিয়েছে সে খেয়াল আছে তার? উঠতি বয়স, ভাত খাবি দু প্লেট। তা না দু লোকমা ভাতে তার পেট ভরে আছে। আমি কোন কথা শুনব না। পুরোটা খেতে হবে না। আজ বাড়িতে খুব ব‍্যাস্ততা। এখন ভালো মেয়ের মত সবটা খা তো।"

ইসরাতের দুটো বাক‍্যের পিঠে ছোটখালার একগাদা কথায় ইসরাত দমে গেল। চুপচাপ খাবার গিলতে লাগলো।

ছোটখালা খাইয়ে যেতেই ইসরাত হাপ ছেড়ে বাঁচল। দরজা আটকে তার প্রিয় ডায়েরি নিয়ে বসল। প্রিয় মানুষের দেওেয়া প্রথম উপহার ছিল এটা। হয়তো আজই সেই মানুষটাকে নিয়ে শেষ লেখা হবে এটা। যদি সত্যিই তার মনের ভাবনাগুলো সত্যি হয় তাহলে এ মূল‍্যবান উপহারগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলা ছাড়া উপায় কোথায়? টপটপ করে চোখের কার্নিস বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ভিজে যাচ্ছে ডায়েরির সাদা পাতা। নিজের অসহায়ত্ত্বের কথা কাউকে বলতেও পারছে না। আর বলেও বা লাভ কি? গভীর ধ‍্যানে মগ্ন হয়ে ইসরাত কলমের আচরে ফুটিয়ে তুলছিল ডায়েরির সাদা পৃষ্ঠা। হঠাৎ দরজায় কড়াঘাতে লেখায় মনযোগ ক্ষুণ্ন হল। বিরক্ত হল সে। কে আসল আবার! পরপর কড়াঘাতের শব্দে ইসরাত দরজা খুলতেই চোখে পরল অনুজার হাসিহাসি মুখখানা। অনুজাকে দেখে কিছুটা হলেও শান্তি লাগল ইসরাতের। টেনে ভিতরে নিয়ে আসল অনুজাকে। গভীর আগ্রহ নিয়ে শুধালো, "সত‍্যি করে বল তো অনু? বাড়িতে কি হচ্ছে? আমার মন বলছে দেখতে আসবে আজ। কিন্তু কে আসবে, কেন আসবে আমার মাথায় ঢুকছে না। আম্মু-আব্বু হঠাৎ আমার বিয়ে নিয়ে এত পরলেন কেন? আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা অনু। তুই তো সব জানিস।"

অনুজার মধ্যে কোন হেলদোল লক্ষ্য করা গেল না। সে খুশিমনে বলল, "চিন্তার কিছু নেই। মেয়ে বড় হলে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে সেটাই স্বাভাবিক। আন্টি বললেন পছন্দ হলে আজই বিয়ে পড়িয়ে দিবেন।"

ইসরাত রাগে খামচে ধরল অনুজার হাত। অনুজা ব‍্যাথায় নাকমুখ কুচকে বলল, "কি করছিস? হাত ছাড়। আমার বর আমাকে কত্ত আদর করে। সেখানে তুই ডায়নির মত আচরে দিচ্ছিস! দুষ্টু মহিলা! যা গোসল করে আয়। এগারোটা বেজে গিয়েছে। তারপর তোকে সাজাতে হবে। জুম্মার নামাজ শেষেই মেহমান এসে পড়বেন।"

একমাত্র বেস্টফ্রেন্ডও ইসরাতের মনের দুঃখ বুঝছে না। রাগে দুঃখে চোখে পানিতে থইথই করছে। অনুজা দুষ্টু হাসে। তা দেখে অনুজার পিঠে জোরে কি'ল বসিয়ে দেয় ইসরাত।

খানিকবাদেই ইসরাতের আম্মু এলেন। হাতের ট্রেতে খাবার সাজানো। গ্লাসে শরবত, আর বাটিতে নুডুলস রান্না করা। খাবারের ট্রে বিছানার ওপর রেখে বসলেন তিনি। তারপর বললেন, "অনুজা খেয়ে নিও মা। আর ইসরাত তোমাকে বলার সময় ই পেলাম না। মেহমান আসছে আশাকরি ভদ্রভাবে তাদের সামনে যাবে।" শেষের কথাগুলো একটু কঠিন করেই বললেন তিনি।

ইসরাত মায়ের কথা শুনল চুপটি করে। প্রতিত্তোরে একটি বাক‍্যবায় করল না। যাওয়ার আগে মেয়ের উদ্দেশ্যে বলে গেলেন, "গোসলে যাও। আমরা মা-বাবা হিসাবে তোমার খারাপ কখনও চাইব না। উত্তম পাত্রের সাথে বিয়ে দিতে পারলে তোমারই মঙ্গল। আমরা সবটা বিচার বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশাকরি তোমারও কোন দ্বিমত থাকবে না!"

ইসরাত এবারও চুপ। কি বলার থাকতে পারে! অনুজা বলল, "আন্টি আপনি যান। এত চিন্তা করবেন না। হঠাৎ করে এমন কথা শুনে ও কিছুটা শকে আছে। আশাকরি ঠিক হয়ে যাবে।"

দ্রুতগতিতে বেরিয়ে গেলেন ইসরাতের আম্মু। ইসরাত জড় বস্তুর ন‍্যায় স্থির হয়ে বসে আছে। অনুজা আয়েশ করে নুডুলস খেতে ব‍্যস্ত। বান্ধবীর মন খারাপ তার যেন কিছুই যায় আসছে না।

ইসরাতকে একপ্রকার ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠালো। ইসরাত রাগে হুমকি দিল, "এর শোধ আমি নিব রে অনুজা। খুব মজা নেওয়া হচ্ছে তাই না?"

প্রতিত্তোরে অনুজা হেসে বলে, "যদি ইচ্ছে হয় নিস। আমি কিছু মনে করব না। আপাতত গোসলটা করে আমাকে উদ্ধার কর। মেয়েরা চলে আসবেন এখনই। ছেলেরা নামাজ শেষেই আসবেন। আর দেরি করিস না।"
_____________________
ইসরাত গোসল সেরে আসতেই চোখে পরল একগাদা শপিং ব‍্যাগ। অনুজা একটা একটা করে খুলে দেখাতে লাগল ইসরাতকে। কিন্তু একফোটাও মনোযোগ নেই ইসরাতের। সে তো উদাস হয়ে জানালার বাইরে সচ্ছ আকাশ দেখতে ব‍্যস্ত। বিয়ের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সব। অনুজা নিজেই সাজাবে বান্ধবীকে। বিয়ের এতদিনে সে শাড়ি পড়া শিখে গিয়েছে। ইসরাতের চরম অনিচ্ছা সত্বেও বিয়ের জন্য তৈরি হতে হল তাকে। ইসরাতের পছন্দের সবকিছু। তারপরও এসবের কিছুই তাকে ছুতে পারছে না। মন ভার হয়ে আছে। টকটকে লাল রঙের বেনারসির সাথে লম্বা দোপাট্টা। গলা, কান দুটোয় খালি। ঠোঁটে কটকটে লাল রঙের লিপস্টিক। মুখে হালকা মেকআপ। চুলগুলো হেয়ার ড্রেয়ার দিয়ে শুকিয়ে সিম্পল করে খোপা করে দেওেয়া। খোপায় আর্টিফেশিয়াল বেলি ফুলের গাজরা। সবমিলিয়ে দুধ সাদা বর্ণের ইসরাতকে চমৎকার লাগছে। সাজানো শেষে অনুজা বলল, "আয় কটা ছবি তুলে রাখি। পরে সময় হবে না। যা সুন্দর লাগছে তোকে। আমি নিশ্চিত তোকে দেখে হার্টফেল না হয়।"

অনুজার রশিকতায়ও ইসরাতে মুখভঙ্গীর পরিবর্তন হল না। সে চোখমুখ শক্ত করে বসে রইল। যেখানে বিয়েটাই হচ্ছে নিজের অমতে সে বিয়েতে গদগদ হয়ে ছবি তোলার কোন প্রশ্নই আসে না। ইসরাত রাগে মুখ অন‍্যদিকে ঘুরিয়ে নিল। অনুজা জোর করে কয়েকটা ছবি তুলে তবেই ছাড়ল। এদিকে দরজার ওপাশ থেকে একটা বাচ্চা হাতের ঠকঠক শব্দ। অনুজা গিয়ে দরজা খুলে ছোট্ট আরুকে দেখতে পেল। ঠোঁটের হাসি চওড়া হল তার। আরুকে কোলে করে বিছানার একপাশে এনে বসালো। ইসরাত হতভম্ব! বিস্ময় নিয়ে শুধালো, "ও এখানে কেন? ওদেরও দাওয়াত দেওেয়া হয়েছে নাকি?"

অনুজা কিছু না বলে মিটমিটিয়ে হাসে। বোকা ইসরাত তখনও বোঝে না।

ইসরাতের ভুল ভাঙে যখন বর হিসাবে নিজের পছন্দের মানুষটাকে দেখতে পায়। আবেগে চোখে পানি চলে আসে তার। অভিমানী দৃষ্টিতে অনুজার দিকে তাকায়। অনুজা হাসে। ইসরাতের চোখে পানি মুখে হাসি। আইমানের পাশে নিয়ে বসায় ইসরাতকে। কবুল বলার সময় একটুও সময় না নিয়ে পরপর তিনবার কবুল বলে ইসরাত। পরে নিজেই লজ্জা পায়। আবেগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে সে। চারপাশ অবলোকন করে বুঝল অনুষ্ঠান ঘরোয়া হলেও আয়োজনের কমতি নেই। এক এক করে চেনা মুখগুলো চোখে পরল। বিপরীত পাশের সোফায় মুশফিকা বসে আছে। ইসরাত সেদিকে তাকাতেই দুষ্টু হাসে মুশফিকা। লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে ইসরাতের সুন্দর গালদুটো। চোখের নজর এড়িয়ে ইসরাতের কোমল হাত দুখানা নিজের হাতের মুঠোয় পুড়ে নেয় আইমান। নব বধূর সন্নিকটে গিয়ে শুধায়, "চমক কেমন লাগল কিশোরী?"

লাজুক হাসে ইসরাত। কিন্তু মুখ ফুটে বলে, "খুবই বাজে। খুব কষ্ট দিয়েছেন আমাকে।"

ইসরাতের হাতদুটো শক্ত করে ধরে আইমান বলে, "ভালো কিছু পেতে হলে এইটুকু কষ্ট তো করতেই হবে তাই না? অবশেষে তুমি একমাত্রই আমার হলে। আলহামদুলিল্লাহ্।"

ইসরাতও মৃদুস্বরে বলে, "আলহামদুলিল্লাহ!"
______[সমাপ্ত]_________

13/07/2025

আমাকে হারালে হয়তো তুমি বেশি কিছু হারাবে না, হারাবে কেবল এক জোড়া চোখ যা পৃথিবীর সমস্ত মুগ্ধতা নিয়ে তোমায় দেখে। হারাবে কেবল এক জৌড়া ঠোঁট, যা তোমার কথা ভাবতেই হেসে ওঠে।

হারাবে কেবল এক জোড়া হাত, যা তোমার নামে প্রার্থনার জন্য ওঠে..!💔🙂

13/07/2025

#প্রেমদণ্ড (১০)💚
Collected

"তোমার কোন ক্ষতি করেছি বলে তো মনে পড়ে না। তাহলে এসব নোংরামি করে কেন নিচু মানসিকতার প্রমাণ দিচ্ছো শায়েলা?" ফাতিমা বেগমের রাগান্বিত কন্ঠস্বরের প্রশ্নেবাক‍্যে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল শায়েলা বেগম। সামনে তাকিয়ে দেখলেন রমিজ উদ্দিন আর ইজহান দাড়িয়ে। সকলের মুখ থমথমে। শায়েলা বেগম আমতা আমতা করে প্রতিত্তোরে বললেন, "এসব কি কইতাছেন ভাবি? আফনেরা কেন আমার ক্ষতি করবেন। আমিই বা কি নোংরামি করলাম?"

ফাতিমা বেগম রাগে ফোঁসফোঁস করছেন। ফের রাগান্বিত কন্ঠে বললেন, "জানো না এমন কিছু তো তুমি করোনি। জেনেশুনে করেছ। নাটক কেন করছো? আমি বা তোমার ভাই কখনও বলেছি, তোমার মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিব?"

শায়েলা বেগম এবার সকলের থমথমে মুখের কারণ বুঝতে পারলেন। রেগে মেয়ের দিকে তাকালেন। শর্মিলা ভাবলেশহীন ভাবে দাড়িয়ে আছে। এসবের কিছুই তাকে ছুয়ছে না। শায়েলা বেগমের নিরবতায় ফাতিমা বেগম আবার তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন, "তোমার মেয়ের সাহস হয় কি করে আমার ছেলের বউয়ের সাথে এত অসভ‍্য ভাষায় কথা বলার? পালিয়ে গিয়ে মুচির ছেলের সাথে বিয়ে করেছ। না খেয়ে দিনাতিপাত কর। কেউ খোঁজখবর রাখে না। এই মানুষটা বাড়ি তৈরি করে, মাসের খরচ দিয়ে বাদরকে মাথায় তুলে দিয়েছে নাকি? তুমি যে ব‍্যবহার আমার সাথে করেছ তা কি আমি ভুলে গিয়েছি ভেবেছ? আমার বিবাহিত জীবন বিষময় করে ফেলেছিলে তুমি। ননদ নয় সাক্ষাৎ ডায়নি রূপে আমার জীবন নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছিলে। তবুও মেয়েকে শহরের কোচিংয়ে পড়াবে তাই কোনরকম আপত্তি করিনি। তোমার সাহস হয় কি করে এসব দিবাস্বপ্ন দেখার? তোমার মেয়েকে এত সাহস কে দিয়েছে?"

"কি করছে আমার মাইয়া?"

"তুমি এবং তোমার মেয়ের মত বাকিদেরও নোংরা ভাব কোন সাহসে? শরীর দেখিয়ে আমার ছেলেকে বশ করেছে এসব কি ধরনের কথা? অনুজার জায়গায় তোমার মেয়ের থাকার কথা ছিল এসব কেন বলবে সে? এতবড় সাহস ও কার থেকে পাই?"

শায়েলা বেগম নাকমুখ কুচকে জবাব দিলেন, "ছোট মানুষ নাহয় ভুল করেই ফেলেছে। তার জন্য আপনি এভাবে বলবেন? আমার মাইয়ার মত ভালো মাইয়া কই পাবেন আপনে? ফকিন্নির বাচ্চারে পোলার বউ কইরা আনছেন। জীবনে কিছু পাইবেন?"

"ছোটফুফু! আপনি সব সীমা অতিক্রম করে ফেলছেন। আম্মা, এই মহিলাকে এখনই বাড়ি থেকে তার বেয়াদব মেয়ে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে বল। নাহলে আমি কি করব নিজেও জানিনা। ওদের এত সাহস হয় কি করে আমার বউয়ের সম্পর্কে এমন কথা বলার?" ইজহানের বজ্রকন্ঠে শর্মিলা লাফিয়ে উঠল ভয়ে।

এতক্ষণ নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করা রমিজ উদ্দিন গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন, "চুপচাপ ব‍্যাগপত্র গুছিয়ে আমার বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে যা। অনেক হয়েছে আর না।"

নাকের পানি চোখের পানি এক করে শায়েলা বেগম বলেন, "এসব আপনি কি কইতাছেন ভাই? মা-পোলার কথা শুইনা বোন-ভাগ্নিকে তাড়ায় দিবেন? আল্লাহ সইবে না।"

"কুকুরকে বেশি আদর দিতে হয় না। তুই হচ্ছিস আমার সেই বোন। আবর্জনার সাথে থেকে থেকে নিজেও আবর্জনা হয়ে গিয়েছিস। তাই যেখানে যাচ্ছিস সেখানেই দূর্গন্ধ সৃষ্টি করছিস। অন‍্যদের মত যদি খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দিতাম তাহলেই বোধহয় ভালো হত। তোর সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছি না। আমার বাড়িতে এসে আমারই ছেলের বউয়ের সাথে এহেন ব‍্যাবহার করতে তোদের বাধলো না? কি শিক্ষা দিয়ে মেয়েকে বড় করেছিস?"

"ভাইজান আপনি এমনে করে বলতে পারলেন?"

"পারলাম। এর থেকেও কঠিন এবং কঠোর হওয়া উচিত ছিল। আমার ঘৃণা হচ্ছে তুই আমি একই মায়ের পেটে বেড়ে উঠেছি। এখনই বেড়িয়ে যা। কোনদিনও যদি এমুখো হয়েছিস সোজা পুলিশে দিব।"

শর্মিলা বলে উঠল, "একরত্তি মেয়ের জন্য আমাদের সাথে এমন ব‍্যাবহার করবেন আপনারা? রশিকতা করে নাহয় দুটো কথা বলেছি ই। তাই বলে সঙ্গে সঙ্গে সকলের কানে দিতে হবে? শহরের মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার কোন বালাই নেই।''

পিছন থেকে দুপা এগিয়ে এল ইজহান। চোখ লালচে রঙ ধারণ করেছে। পূর্বের ন‍্যায় চিল্লিয়ে বলে উঠল, "তোর সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারি না। এখনো মুখে মুখে তর্ক করছিস! তুই কি ভেবেছিস ইনবক্সে দেওেয়া সেসব ফটো আমি কাউকে দেখাইনি? সবই আম্মা জানেন। তোর নোংরামি সম্পর্কে অবগত না করলেই নয়। অন‍্যকে বশ করতে শরীর বানিয়েছিস। সেটাই কর। এটা ভদ্রলোকের বাসা। কোন প্রস্টিটিউডের এখানে কোন স্থান নেই।"

"ইজহান তুমি চুপ কর।" পিছন থেকে রমিজ উদ্দিনের শান্ত কন্ঠে বলার কথায় দমে গেল ইজহান। ইজহান বাবার দিকে ফিরে বলল, "ওকে বলুন, অনুজার এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড কোথায় রেখেছে? সেগুলো যেন হয়ে বের হয়।"

শর্মিলা বিছানার নিচ থেকে ফাইলসহ কাগজপত্র বের করে দিল। ইজহান সেগুলো নিয়ে হনহন করে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।

শায়েলা বেগম রাগে ফুসতে ফুসতে ব‍্যাগ গোছাতে লাগলেন। এরপর রমিজ উদ্দিন নিজে ওদের বেড় করে দিয়ে মুখের ওপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আর একটি কথাও বলার সুযোগ দিলেন না।

স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন, "আমাকে বেশি করে লিকার দিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে দাও তো ফাতিমা। মাথাটা ধরেছে।"

ফাতিমা বেগমের চোখমুখ থমথমে। অযথা চিৎকার, চিল্লাচিল্লি করা তার স্বভাবে নেই। চুপচাপ শান্ত থাকতেই পছন্দ করেন তিনি। কিন্তু চুপ থেকে অনেক অন‍্যায় তিনি সহ‍্য করেছেন। তবে আজকে চুপ থাকলে একটি এতিম মেয়ের সাথে অন‍্যায় করা হত। চুপচাপ গিয়ে স্বামী মহাদয়ের জন্য চা করে নিলেন।

ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন রমিজ উদ্দিন। ফাতিমা বেগম সশব্দে চায়ের কাপটি রেখে বললেন, "মন খারাপ লাগছে?"

রমিজ উদ্দিন চোখ বন্ধ করেই জবাব দিলেন, "নাহ। আমি ভাবতেও পারছি না আমার বোনটি এমন হবে। মেয়েটাকেও কি বাজে শিক্ষা দিয়েছে। দুদিনের দুনিয়া, আমি ঝুট ঝামেলা চাই না। আমি কখনোই চাই না আমার ঘরে এসে পরের মেয়েটি কষ্ট পাক। তোমার সাথে হওয়া অন‍্যায়ের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কোনটাই আমি করতে পারিনি। জানিনা কতটা কষ্ট পেয়েছ। বোনের অন‍্যায় মনে না রেখেও যোগাযোগ স্থায়ী রেখেছি। আর সেই বোন কিনা এমন দিবাস্বপ্ন দেখে! মানুষ এত স্বার্থপর কেন হয় ফাতিমা?"

রমিজ উদ্দিনের কন্ঠে অসহায়ত্ত্বের ছাপ। ফাতিমা বেগম স্বামীর হাতদুটো মুঠোবন্ধি করে প্রতিত্তোরে বলেন, "আমার কথা ছাড়ুন। আপনি এবং ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি সুখে আছি এতে শতখুশি আলহামদুলিল্লাহ্। মন খারাপ করবেন না। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুন। নিন চা টা পান করুন। ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।"

ফাতিমা বেগম নিজেই চায়ের কাপ এগিয়ে দিলেন। রমিজ উদ্দিন উঠে বসলেন। স্ত্রীর হাত থেকে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বললেন, "চা টা তুমি বরাবরই ভালো বানাও ফাতিমা!"

স্বামীর প্রশংসায় লাজুক হাসেন ফাতিমা বেগম। বয়স পঞ্চাশের কোঠা পেড়লেও গালদুটোতে লজ্জায় লালচে আভা ধারণ করল।
_______________________
অনুজা টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। ইজহান এসেই ওয়াশরুম থেকে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিয়ে এসেছে। মাথায় যে খুন চেপেছে তাতে নিজেকে আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করল। এরপর গুটি গুটি পায়ে অনুজার সন্নিকটে এসে দাড়াল। চোখ খানিক বাদে বাদে কেঁপে কেঁপে উঠছে। ইজহান যা বোঝার বুঝে গেল। এক টানে অনুজাকে দাড় করাল। নিজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুধাল, "কষ্ট হচ্ছে?"

চোখেমুখে কান্নারা লেপ্টে আছে সজতনে। বহুক্ষণ কান্নার ফরে চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে। স্ত্রীর এমন এলোমেলো রূপ ইজহানকে আবারও মুগ্ধ করল। দুষ্টু হেসে বলল, "কান্নারাও আমার থেকে ভাগ‍্যবান। আমার কিশোরীর কত কাছে গিয়ে লেপ্টে আছে দেখ। অথচ আমার মানুষটা আমার থেকে কত দূরে। সে কেঁদেকেঁটে ভাসিয়ে ফেলছে অথচ আমি কিছুই করতে পারছি না। পারছিনা নিজের সাথে ঠিক কান্নার মত জড়িয়ে নিতে। এ অন‍্যায় কি ক্ষমার যোগ্য ষোড়শী?"

অনুজা ওড়নার কোণা দিয়ে চোখমুখ মুছে ফেলল। ইজহানের প্রেমময় বাক‍্যে পাত্তা না দিয়ে বিষণ্ণ কন্ঠে শুধাল, "আমার জন্য আজ আপনাদের নিজেদের মধ্যে এত ঝগড়া ঝামেলা হয়ে গেল। আমার খুব খারাপ লাগছে। বিশ্বাস করুন আমি এমনটা চাইনি।"

অনুজার এলোমেলো চুলগুলো এক হাতে ঠিক করে দিয়ে ইজহান বলে, "তোমার কিছু চাইতে হবে না। কর্মফল ভোগ করেছে। এর জন্য তুমি কেন মন খারাপ করছো? কাল পরিক্ষা। এখন পড়তে বস। আজেবাজে চিন্তা মাথাতেও আনবে না। কুকুর কামড়ালে কুকুরকে ঠিকই আমরা কামড় দিতে পারি না। কিন্তু লাঠি দিয়ে সরিয়ে কিংবা আঘাত তো করতেই পারি তাই না? ওর এত বড় সাহস আমার বউয়ের সম্পর্কে এতবড় কথা বলে! ওকে আস্ত রেখেছি এটাই অনেক। হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বস। আমি একটু বেড়চ্ছি।"

অনুজা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। ইজহান অনুজার চোখেমুখে চুমু দিয়ে ওয়ালেটটা নিয়ে বেড়িয়ে গেল। পেছনে রেখে গেল প্রেয়সীর হাসিমাখা মুখখানা।
____________________
দিবালোকে আঁধার কেঁটে স্নিগ্ধ সুন্দর আলো ফুটেছে। আঁধারে ঢেকে থাকা পৃথিবীর আলো পেয়ে ঝলমলিয়ে উঠলেও অনুজার মুখে হাসি নেই। ফ‍্যাকাশে বিষণ্ণ মুখমণ্ডল। বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে। পরিক্ষার টেনশনে চোখমুখ শুকিয়ে গিয়েছে। শেষ রাতেই ঘুমের আরাম ত‍্যাগ পড়তে বসেছিল। এখনো একমনে পড়ছে।

ইজহান দু মগ ধোঁয়া ওঠা গরম কফি নিয়ে এল। সেও অনুজার সাথেই জেগে রয়েছে। তদারকি করছে বউয়ের পড়াশোনা। অনুজার দিকে কফি মগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল, "চিল! এত টেনশন করলে যা পড়েছো সেটাও ভুলে যাবে। চিন্তামুক্ত মন পরিক্ষার জন্য বেটার। এত টেনশনের কি আছে? তোমার যতটুকু সামর্থ্য তুমি চেষ্টা করে যাবে। ফলাফল দান করা তো মহান সৃষ্টিকর্তার হাতে।"

ইজহানের মোটিভেশনে অনুজার মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেল না। সে আগের মতোই বিষণ্ণ মুখে বসে আছে। কফি মগ ইজহানের থেকে নিয়ে চুমুক দিল। তারপর ছোট্ট করে জবাব দিল, "হুম ইনশাআল্লাহ।"

কফি খাওয়া শেষে ইজহান বলল, "এখন পড়াশোনা বন্ধ কর। আটটা বেজে গেছে। তৈরি হয়ে খেয়ে বেড়তে হবে। পরিক্ষা কেন্দ্রে যেতে কমপক্ষে বিশ মিনিট লাগবে। প্রথম দিন সিট খুজতে হবে তাই আগেই বেড়িয়ে পরা ভালো।"

অনুজা বলল, "তৈরি হতে দশ মিনিটের বেশি লাগবে না। কিন্তু আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। কেমন বমি বমি লাগছে। কিছুই ভালো লাগছে না।"

ইজহান অনুজার সন্নিকটে গিয়ে দাড়াল। কপালে, গলায় হাত ছুইয়ে তাপমাত্রা চেক করল। নাহ ঠিকই আছে। অনুজাকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে নিজের মুখ বরাবর দাড় করিয়ে বলল, "এসব টেনশনের জন্য হচ্ছে। পরিক্ষার সময় বুবুও এমন করতো। এত টেনশন করিও না। টেনশন করলেও যে প্রশ্ন আসার সেটাই আসবে। না করলেও সেটাই আসবে। তাই উচিত নয় কী? মনকে ফ্রেশ রাখা। আম্মু বলেন, মনে মনে দোয়া কালাম পড়ে আল্লাহ্কে স্বরণ করা উচিত। এতে মন শান্ত থাকে।"

প্রতিত্তোরে অনুজা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল।

হঠাৎ করে ইজহান বলে উঠল, "দেখি বুকে এসো তো মেয়ে।"

অনুজা ইজহানের কথা বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইল তার মুখের দিকে। ইজহান হেসে ইশারা করতেই অনুজা ঝাপিয়ে পরল ইজহানের বুকে। ইজহান দুপা পিছিয়ে গেল অনুজার আক্রমণে। অনুজাকে দু হাতে আগলে নিয়ে শুধালো, "টেনশন কমেছে?"

প্রতিত্তোরে অনুজা বলল, "হুম। শান্তি লাগছে। আচ্ছা, প্রিয়জনের বুকে মাথা রাখলে এত শান্তি লাগে কেন? মনে হয় জনম জনম এভাবে কাটিয়ে দেওেয়া যেত! যাদের আমার মত কিউট, ড‍্যাশিং একটা হাসবেন্ড নেই তাদের টেনশন কি করে কমবে শুনি?"

ইজহান অনুজার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে জবাবে বলল,
"ওদের কথা চিন্তা না করলেও হবে। আমি খাবার নিয়ে আসছি। ততক্ষণে তুমি তৈরি হয়ে নাও।"

অনুজা তড়িঘড়ি করে স্কুল ড্রেস, হিজাব পড়ে তৈরি হয়ে নিল। ইজহান প্লেটভর্তি ভাত মাংসের তরকারি নিয়ে এসেছে। অনুজা ভাতের পরিমাণ দেখে বিস্ময় নিয়ে শুধাল, "এত ভাত কে খাবে?"

ইজহানের নির্বিকার উত্তর, "কে আবার? তুমি। দেখি বিছানায় শান্ত হয়ে বসো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।"

মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত মাখিয়ে অনুজাকে খাইয়ে দিতে লাগল ইজহান। অনুজার কয়েক লোকমা নিয়ে আর খেতে পারল না। তার পেট ভরে গিয়েছে। তারপর বাকিটা ইজহান খেতে নিলে অনুজা হতভম্ব স্বরে জিজ্ঞাসা করে, "আমার এটো ভাত আপনি খাবেন?"

"সমস‍্যা আছে?"

"না। কিন্তু ঘৃণা লাগবে না?"

"ঘৃণা কেন লাগবে? যেখানে আপাদমস্তক পুরোটাই তুমি আমার সেখানে তোমার এটো ভাত আমি খেলে ঘৃণা কেন লাগবে? এতে ভালোবাসা বাড়ে জানো?"

অনুজা দু দিকে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো, "জানিনা।"

অনুজা এক এক করে শশুর, শাশুড়িকে বলে ইজহানের সাথে বেড়িয়ে পরল। ফাতিমা বেগম গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে, কপালে চুমু দিয়ে দোয়া করে দিয়েছে। রমিজ উদ্দিনও দোয়া করে পরিক্ষার সালামি হিসাবে হাতে হাজার টাকার দুটো নোক গুজে দিয়েছেন। এরপর মায়ের ফ্লাটে গিয়ে মায়ের কাছে দোয়া চাইতে গেল অনুজা। সাথে তিনিও যেতেন কিন্তু ছোট্ট ইয়াশের শরীর ভালো না। জ্বর, ঠাণ্ডা তাই ইজহান ই নিষেধ করে বলেছিল, "সে সব দেখবে। চিন্তা করতে হবে না।"

অনিশা অনুজাকে এক প‍্যাকেট ক‍্যাটবেরি দিতে বলল, "খুব ভালো পরিক্ষা দিও আপু।"

অনুজা অনিশার কপালে চুমু দিয়ে বলল, "দোয়া করিও আপা।"

আইরিন রহমান জোর করে আধ গ্লাস দুধ খাইয়ে দিলেন। ইজহান তাড়া দিতেই বেড়িয়ে পড়ল তারা।

গাড়িতে চেপে বসতেই অনুজার বই খুলে বসল। বিশ মিনিটে অনেকগুলো টিকচিহ্ন পড়া যাবে। ইজহান অনুজার পাশে। ড্রাইভার মাঝারি গতিতে গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যস্থল যাচ্ছেন।

পরিক্ষা কেন্দ্রে পৌছাতেই ইসরাতের সাথে দেখা হয়ে গেল। ওর মায়ের সঙ্গে এসেছে। ইজহানের সাথে প্রথম আলাপ ইসরাতের আম্মুর। পরিচয় করিয়ে দিলে কুশল বিনিময় করল ইজহান। ভেতরে ঢোকার মিনিট খানিক আগে মুশফিকা এসে পৌছালো। দুটো বড় সাইজের ক‍্যাটবেরি অনুজা ও ইসরাতের হাতে দিয়ে বলল, "শুভকামনা রইল প্রিয়রা। ইনশাআল্লাহ ভালো হবে পরিক্ষা।" তারপর সকলের চোখ এড়িয়ে ইসরাতে কানে কানে বলল, "শুভকামনা রইল আমার দেবরের পক্ষ থেকে। টেনশন কর না।"

ইসরাত হতভম্ব! অবাক চোখে তাকাতেই মুশফিকা হেসে ইশারা করতেই ইসরাতের চোখে পড়ল রোদ চশমায় আটা শ‍্যামবর্ণের সেই গম্ভীর মুখখানা। রক্ত ছলকে উঠল যেন। বেশিক্ষণ দেখা হল না তার। ঘন্টার আওয়াজ কানে বাজতেই তড়িঘড়ি করে ভেতরে ঢুকে পড়তে হল।

ইনশাআল্লাহ চলবে....

Address

Rajshahi

Telephone

+8801302482507

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Aronno's Story posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Aronno's Story:

Share