15/10/2025
এটি ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত একটি ঘটনা, যা ন্যায়বিচার, খোলামেলা সমালোচনা গ্রহণ এবং শাসকের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার উদাহরণ হিসেবে পরিচিত। ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল আমীরুল মু’মিনীন খলিফা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর সময়।
মদিনায় এক জুমার খুতবার সময় উমর (রা.) মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন: "হে লোকেরা! শুনো এবং মান্য করো!"
এ কথা শুনে মুসলমানদের মধ্য থেকে একজন সাহাবি উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন: "আমরা তোমার কথা শুনব না, মান্যও করবো না।"
সবাই বিস্মিত হয়ে গেল। একজন সাধারণ মুসলিম খলিফাকে সরাসরি এ কথা বলতে পারেন—এটা কল্পনাতীত ছিল! উমর (রা.) শান্তভাবে বললেন: "কেন? কী কারণে শুনবে না?"
সেই ব্যক্তি বললেন: "কারণ তুমি আমাদের প্রত্যেককে যুদ্ধের গনিমতের কাপড় থেকে এক টুকরা কাপড় দিয়েছিলে, কিন্তু তোমাকে আমরা সম্পূর্ণ একটি লম্বা পোশাক পরতে দেখছি। আমাদের প্রত্যেকের প্রাপ্ত কাপড় দিয়ে এত বড় পোশাক তৈরি সম্ভব নয়। তুমি অতিরিক্ত কাপড় কোথা থেকে আনলে? নাকি অবিচার করেছ?"
অভিযোগের জবাব দিতে উমর (রা.) সঙ্গে সঙ্গে নিজের ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-কে ডাকলেন এবং বললেন তাকে সত্যটি ব্যাখ্যা করতে। আবদুল্লাহ (রা.) বললেন: "আমার অংশের কাপড় আমি বাবাকে দিয়েছি। তখন উনি তার কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে এই বড় পোশাকটি সেলাই করেছেন। এতে কোনো অবিচার হয়নি।"
এ উত্তর শুনে সাহাবি বললেন: "আচ্ছা ঠিক আছে, এখন তুমি বলো, হে উমর! আমরা তোমার কথা শুনব এবং মান্য করবো।"
এরপর উমর (রা.) খুতবা চালিয়ে যান এবং কোনো রাগ বা বিরক্তি প্রকাশ করেননি। খলিফা হলেও উমর (রা.) সমালোচনার জবাব দিতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং তিনি নিজেকে আইনের উপরে মনে করেননি।
অথচ আমরা বর্তমানে এমন এক ইসলামের ভার্সন প্রেকটিস করছি যেখানে খলিফা বা আমিরুল মু'মিনিন তো অনেক দূরের বিষয়, কারো পছন্দের দল বা আলেমের বিপরীতে আওয়াজ তুললেই অপ্রিয় ও নিন্দনীয় হতে হয়। এমন উপস্থাপন করলে অবিশ্বাসীদের ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা তো দূরের বিষয়, মুসলিম পরিচয় দেওয়া আমাদের ছেলে-মেয়েদেরাও বিভ্রান্ত হয়ে যাবে।
নিজেদের খেয়াল খুশি মত নয়, বরং ইসলামের পক্ষে কাজ করতে হবে কুরআনের শিক্ষা আর নবী-রাসূলদের মানহাজে।