
24/07/2025
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তোকিরের ভুমিকা ক্লিয়ার হওয়া উচিত। ক্রাশের আগ মুহূর্তে পাইলট তোকির বিমান থেকে ইজেক্ট করেছিলো। প্যারাশুট ও ইনজেকশন সিট সহ তাকে পাওয়া গেছে মাইলস্টোন স্কুল ভবনের ছাদে।
এখানে ২টি ঘটনা লক্ষ্য করুন:
১ম: এপর্যন্ত বিমান ক্রাশের আগ মুহূর্তের যেসব ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে তার কোনোটাতেই প্যারাশুট খুলতে দেখা যায়নি। তার মানে শেষ মুহুর্তে ইজেক্ট করায় প্যারাশুট কাজ করেনি। যার ফলে পাইলট মাটিতে আছড়ে পরে গুরুতর আহত হয়।
২য়: পাইলট একেবারে বিমানের পাশেই ল্যান্ড করেছে। এটা আবারও প্রমান করে পাইলট একেবারে শেষ মুহুর্তে ইজেক্ট করেছে। অর্থাৎ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানে থেকে পাইলট বিমানটিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে।
কিন্তু তৌকির যদি আরো আগে ইজেক্ট করতো তাহলে সে ক্রাশ এরিয়া থেকে অন্তত কয়েক কিলোমিটার দুরে অবতরণ করতো এবং বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকতো।
সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী বিমান নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলেই ইজেক্ট করতে হয়। উন্নত দেশের পাইলটরা সামান্য ত্রুটি দেখলেই ইজেক্ট করে ফেলে। কিন্তু বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মত দেশগুলোর পাইলটরা সাধারণত এমনটা করেনা ২টি কারনে।
প্রথমত তারা বিমানটিকে লোকালয় থেকে দুরে জনশূন্য স্থানে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে, দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের মত ৩য় বিশ্বের দেশের কাছে একটা বিমান অনেক মুল্যবান জিনিস, তাই পাইলট বিমানটিকে ল্যান্ড করানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।
এই দুটি কারনে এই অঞ্চলের পাইলটরা সাধারণত আর্লী ইজেকশন করেনা। আর এতেই বিপদ ঘটে। যত বেশি দেরিতে ইজেক্ট করে, পাইলটের জীবনের ঝুঁকি ততই বাড়ে। আর্লী ইজেক্ট করলে মাঝ আকাশে প্যারাশুট খোলার জন্য যথেষ্ট স্পেস ও উচ্চতা পায়, ফলে পাইলট নিরাপদে নেমে আসে। দেড়িতে ইজেক্ট করলে প্যারাশুট ঠিকমতো খোলার সময় পায়না, পাইলট মাটিতে আছড়ে পরে মারা যায়।
এছাড়া যেসব বিমানে অত্যাধুনিক জিরো-জিরো ইজেকশন সিট আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে রিক্স নিয়ে লেট ইজেকশন করা যায়। কেননা জিরো-জিরো ইজেকশন সিটকে এমন ভাবে তৈরি করা হয় যেন জিরো স্পিড ও জিরো উচ্চতা থেকেও ইজেক্ট করা যায়। কিন্তু মান্ধাতা মডেলের F-7 এ এই ইজেকশন সিট নাই। তাই জীবন বাঁচাতে আর্লী ইজেকশনের বিকল্প ছিলোনা।
প্রাথমিক আলামত দেখে বলাই যায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তোকির তার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সিভিলিয়ানদের বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন।
এখানে পাইলটকে হিরো বা ভিলেন বানানোর কিছু নেই। তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন, তার যায়গায় অন্য কেউ থাকলেও একইরকম চেষ্টা করতো। এটাই পাইলটদের অফিশিয়াল কর্তব্য ও মানবিকতার মধ্যকার সূক্ষ্ণ অবস্থান।
©️ অনির্বান