06/02/2024
সিচুয়েশনের অজুহাত দিয়ে যে প্রেমগুলো ভেঙে যায়, ওগুলো আসলে আগে থেকে ভাঙাই ছিলো।
সিচুয়েশন নামক একটা মুখোশ পাওয়ার সাথে সাথেই লোকজন তাই প্রেমটারে ছুড়ে ফেলার সুযোগ পায়। এতে মানুষের কাছে খারাপ হওয়া লাগে না, নিজের বিবেকের কাছেও একটা ভালোমানুষি লজিক থাকে, যে আমি কী করবো, সিচুয়েশন তো আমারে বাধ্য করেছে....
অথচ সে নিজেও জানে, এতোদিন সে উপরে উপরে ভালোবাসাটারে টাইনা নিলেও মন থেকে সে আসলে একটা এস্কেপই চাইতেসিলো। ভালো পাত্র/পাত্রী আমাদেরকে সেই সেইফ এক্সিট আইনা দেয় মাত্র, আর কিছু না।
আনন্দবাজার পত্রিকার পূজো সংখ্যায় একটা গল্পে পড়েছিলাম, ভালোবাসি বলা যত কঠিন, ভালোবাসি না বলা তারচেয়েও বেশি কঠিন। লাইনটা পড়ে চমকে উঠেছিলাম, আসলেই কি তাই?
এরপর বহু মানুষের সাথে পরিচয় হলো, অনেক অনেক গল্প শোনা হলো, এখন আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, আমাদের চারপাশের বেশিরভাগ সম্পর্ক থেকে মানুষ এখন আর পরিণতি খোঁজে না, বরং এস্কেপ খোঁজে। তাই পাত্র বিসিএস ক্যাডার হলে মেয়ের বিয়ে করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়, পাত্রী সুন্দরী, লম্বা, কম বয়স হলে ছেলেও আর ৫ বছরের প্রেমিকার জন্য বাসা ম্যানেজ করতে পারে না। প্রেমিকাকে বিবাহ করলে নাকি মা বিষ খেয়ে মরে যাবে।
অথচ, এই অজুহাতগুলো ম্যাক্সিমাম সময়েই থাকে বানানো। এন্ড ইন দ্য মোস্ট অব দ্য কেসেস, এরা চেষ্টা তো দূরের কথা, মিনিমাম এফোর্টটাও দেয় না পরিবারকে মানানোর জন্য। জাস্ট পরিবারকে স্কেপগোট হিসেবে ইউজ করে ঐটার আড়ালে এতোদিন করতে চাওয়া ব্রেকাপটা করে ফেলে।
প্রশ্ন হলো, ব্রেকাপটা তাহলে আগে কেন করে না?
উত্তর হলো, পিয়ার প্রেশারে। প্রেম বা ভালোবাসা জিনিসটা ওভারগ্রোরিফাইং আর ওভারশেয়ারিং এর সবচে বড় বিপদ হলো, এই প্রেম ফুরাইয়া গেলে আপনি বের হয়ে আসতে পারবেন না। ক্যাম্পাস, বন্ধু বান্ধব কী বলবে, লোকে কী বলবে টাইপের হাজারটা প্রেশার আপনাকে এই প্রেম থেকে এস্কেপ নিতে দেয় না। ফলাফল? ভালোবাসাহীন কঙ্কাল বয়ে বেড়ানো হাজার হাজার ক্লান্ত ছেলে মেয়ে।
এদের কেউ বাপ মা আর পরিবারের অজুহাত দেখানোর অপেক্ষা করতে থাকে, কেউ আবার এতো কিছু না ভেবে ডাবল টাইমিং করতে শুরু করে দেয়। শুধু ভালোবাসাই অন্ধ হয় না, বরং ভুল ভালোবাসা থেকে মুক্তির জন্যও মানুষকে অনেক বেশি ডেয়ারিং হয়ে যেতে দেখেছি আমি।
ফলে যে ভালোবাসার হওয়ার কথা ছিলো এনার্জি জেনারেটিং, সাপোর্টিং এবং পজিটিভ এনার্জির একটা বিরাট সোর্স, সেই ভালোবাসাই দিনদিন হয়ে উঠে একটা বার্ডেন, একটা ব্ল্যাকহোল, যে ব্ল্যাকহোল সমস্ত পজিটিভ এনার্জি চুষে নিতে থাকে আস্তে আস্তে।
অথচ ভালোবাসা জিনিসটা কী অসম্ভব সুন্দর হওয়ার কথা ছিলো, না?
চিলড্রেন অব হ্যাভেনের আলীর কথা মনে আছে? জাস্ট বোনকে এক জোড়া জুতো দেওয়ার জন্য এই ছেলে ফার্স্ট সেকেন্ড ভুলে গেল, রেস ভুলে গেল, নেইম ভুলে গেল, ফেইম ভুলে গেল। সে ফার্স্ট হতে চাইলো না , নেইম ফেইম চাওয়ার মানবিক প্রবৃত্তি ভালোবাসার কাছে হাইরা গেল।জাস্ট বোনকে সে ভালোবাসতো, তাই সে জয়ের মুকুট পায়ে পিষে ফেলে হাসতে হাসতে পরাজয় কামনা করে বসলো।
ভালোবাসা তাই দিনশেষে পরাজয়ের মধ্যে থাকে, জয়ের মধ্যে থাকে না।
যখনই কোন মানুষ সিচুয়েশনের অজুহাত দিতে চায়, আপনি থাকলে সে জিততে পারবে না, অজুহাত দিয়ে দূরে সরতে চায়, সে আপনারে কখনও ভালোবাসেইনি।
ভালোবাসা মানে পৃথিবীর যোগ্যতম মানুষ হওয়া না, ভালোবাসা মানে পরিবার, বংশ, কুল মান রক্ষা করে সবার মন জয় করে নিজেরে যোগ্য করে তোলার মধ্যে না।
বরং ভালোবাসা লুকাইয়া থাকে পরাজয়ের মধ্যে। কেউ আপনার জন্য দুনিয়া জয় করে আনলে ঐটার মধ্যে আপনার ভাগ কতটুকু সেটা নিয়ে সন্দেহ করতে পারেন। কারণ, ঐ জয়টা আপনার জন্য করেছে নাকি নিজের জন্য করেছে, তার কোন নিশ্চয়তা নাই।
বাট কোন মানুষ যদি আপনার জন্য দুনিয়া ছাইড়া পরাজয় বরণ করে নিয়েও আপনাকে ভালোবাসি বলতে পারে, তাহলে সেই ভালোবাসার মধ্যে আপনি আছেন। খুব ভালো করেই আছেন।
মানুষ নিজের জন্য স্বেচ্ছায় জিততে পারলেও নিজের জন্য কেউ হারতে পারে না। হারার জন্য মানুষের নিজের চেয়েও ভ্যালুয়েবল কিছুর দরকার হয়, ঐটারেই আমরা ভালোবাসা বলে থাকি