09/08/2024
জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা
এক তাওহীদবাদী বোন! অনলাইন দাওয়াতের ময়দানের তার কাজের উপমা চলে শুধু মহিলা যোদ্ধা সাহাবি খাওলাহ বিনতে আল আযওয়া রা. এর সাথে। যুদ্ধের ময়দানে যিনি পুরুষদের মত যুদ্ধ করতেন এবং তার আরবীয় পোশাক ও বর্মের কারনে অন্যান্য যোদ্ধারা আলাদা করতে পারতেন না তিনি মহিলা নাকি পুরুষ। তার যুদ্ধের ধরন ছিলো খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. মত। ফলে অনেকেই তার ব্যাপারে এই মন্তব্য করতেন “এই যোদ্ধা খালিদ বিন ওয়ালিদের মতো লড়ছিলো কিন্তু আমি নিশ্চিত সে খালিদ না।”
অনলাইন মিডিয়া যুদ্ধে বোন নাবিলার ভুমিকাও প্রায় একই ধরনের ছিলো। তিনি একাই ১৫ টি টেলিগ্রাম চ্যানেল পরিচালনা করতেন যেখানে তার ফলোয়ার ছিলো ২৫ হাজারের অধিক। সুবহানাল্লাহ।
ফেসবুকে বখাটেদের উৎপাত থেকে বাচার জন্য তিনি উপনাম ধারন করেছিলেন শাফায়াত মুসান্না ইসা। তারপর তিনি দাওয়াতি কাজ করে যাচ্ছিলেন যুবকদের মতই। তিনি একা যে পরিমান কাজ করেছেন তা একশ যুবক মিলেও করা সম্ভব ছিলো না।
বোন নাবিলা ছিলেন বহু প্রতিভার অধিকারী এক মেয়ে। তিনি তাওহীদ ও নববী মানহাযের দাওয়াতের স্বার্থে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন এবং কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা অর্জন করেছেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন, পিডিএফ তৈরি, বিভিন্ন লেখা সংকলন , বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বয়ান ও আর্টিকেল সংকলন ও তার প্রচার, নসীদ সংকলন ও তার প্রচার করাই ছিলো তার প্রধান কাজ।
আর এসব কাজ করার জন্য তিনি নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি ছিলেন বাঙ্গালী মুসলিম নারীদের মাঝে এমন একজন কন্যা -যাকে একাই একটা মিল্লাত বলা ভুল হবে না। তিনি ছিলেন লাখের মাঝে একজন। যেখানে লাখ লাখ মানুষের জীবন পশুপাখির মত খানা খাওয়া আর ঘুমের মাঝেই কেটে যায় সেখানে তিনি তার জীবনকে কাজে লাগিয়েছেন উম্মাহর জাগরণের জন্য। ১৯ বছর বয়সেই ইতিহাস রচনা করেছেন। ত্বাগুতি শাসন ব্যবস্থার জন্য বিরাট হুমকিতে পরিনত হয়েছেন। তার দাওয়াত এতটাই শক্তিশালী ছিলো যে হাজার দায়ীদের ভিরে তিনি ত্বাগুতের বাহিনীর কাছে রত্ন হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়েছেন। ত্বাগুত যাকে স্পেশাল ভাবে টার্গেট করে খুজেছে।
যে বয়সে একটা মেয়ের চিন্তা থাকে নিজের সংসার নিয়ে- রঙ্গীন প্রেমের জগৎ নিয়ে সেই বয়সে তিনি উম্মাহর দুর্দশা নিয়ে চিন্তা করেছেন।উম্মাহর হারানো গৌরব ও মর্যাদার দিনগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য কাজে নেমে পড়েছেন। উম্মাহর মাঝে প্রাণসঞ্চার করার চেষ্টা করেছেন। উম্মাহকে মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত করার জন্য নিজেকে উম্মাহর তরে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ ।
উম্মাহর মাঝে এরকম আত্মমর্যাদাশীল ত্যাগী বোন খুব কমই রয়েছেন। বোন নাবিলা হলেন সেই কম সংখ্যক আত্মমর্যাদাশীল নারী মাঝে এক কিংবদন্তি।যে বাংলার জমিনে তাওহীদের বিজয় এবং হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন থেকে বাংলার মুসলমানদের রক্ষার জন্য এক বিপ্লবের জন্ম দিয়েছেন।
বোন জোবাইদার এক যুগান্তকারী সংকলন হলো “ইয়া উখতি “কিতাবটি। যেখানে তিনি বোনদের ব্যাপারে লেখা বিভিন্ন শাইখদের মুল্যবান লেখাগুলো একত্র করেছেন যাতে বাংলার মুসলিম নারীদের মাঝে জাগরণ সৃষ্টি করা যায় -। যে বই পড়ে নিসন্দেহে অনেক বোনের জীবনই পরিবর্তন হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
বোন জোবাইদা শুধু উম্মাহকে তাওহীদ ও নববী মানহাযের দিকে আহবানই করতেন না বরং তিনি নিজেই ছিলেন তার দাওয়াতের ক্ষেত্রে এক সত্যবাদী নারী। যে জিহাদের ভুমিতে হিজরত করার ইচ্ছা রাখতেন এবং বিয়ের জন্য পাত্র দেখতে আসলে তাকে শর্ত দিয়েছিলেন যে উম্মাহর মুক্তির জন্য জিহাদ করতে হবে এবং শহীদ হতে হবে।
গ্রেফতারের পরবর্তি সময়ও তিনি তার আদর্শের উপর ছিলেন অটল এবং অবিচল। যখন তার সামনে ত্বাগুতি বাহিনীর সবচেয়ে হিংস্র ও জানোয়ার সদস্যরা দাড়িয়েছিলো- তখনও তিনি ছিলেন নির্ভীক। তিনি তার আদর্শের পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত দলিল উপস্থাপন করেছেন।
বাংলার এই কিংবদন্তি নারী- যে উম্মাহর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছে ত্বাগুতই তাকে রত্নকন্যা উপাধি দেয় – এটা ছিলো তার কাজের শত্রুর পক্ষ থেকেই এক স্বীকৃতি।
বোন জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলার পরিচয়–
জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলার জন্ম ভোলার লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ গ্রামে, তবে বড় হয়েছেন লালমোহন সদরে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েন। এরপর ভর্তি হন লালমোহন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। এই স্কুল থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসএসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। আর দুই বছর পর (২০১৯) এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ–৪ পান তিনি। মাধ্যমিক পাস করার পর জোবাইদা আর কলেজে ভর্তি হতে চাননি, চেয়েছিলেন কোরআনের হাফেজ হতে।
জোবাইদার মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে স্কুলে পড়লেও পারিবারিক আবহের কারণে ছোটবেলা থেকে নামাজ পড়ত। ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিল। “
জোবাইদার বাবা শাহ গোলাম মাওলা ভোলার লালমোহনের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক।
মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার
বোন জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলাকে পুলিশ কয়েকদিন গুম করে রাখে এরপর মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখায়। তাকে অনসার আল ইসলামের নারী সদস্য হিসেবে দেখানো হয়। অথচ আল কায়েদার বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম কখনই কোনো নারীকে সদস্য করে না । তাকে বোন আফিয়া সিদ্দিকীর মতই এক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে রেখেছে এই তাগুত প্রশাসন। অথচ এই বোন তো ছিলেন বিশুদ্ধ তাওহীদের একজন দায়ী মাত্র। যিনি উম্মাহকে জাগরিত করতে চেয়েছিলেন তাওহীদের চেতনায় উজ্জীবিত করে।
বাংলার যুবক ভাইদের নিরবতা
এক তাওহীদবাদী বোনকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে মিথ্যা মামলা দিয়ে -ত্বাগুতি প্রশাসন অথচ বাংলার মুসলিম যুব সমাজ এ ব্যাপারে একদমই নিরব ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে! আগামিকাল কি যদি তাদের ঘর থেকেই তার বোনকে এভাবে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তবেও কি তারা এরকম নিরব থাকবে? বাংলার যুবকরা কি এতটাই কাপুরুষ হয়ে গেলো? এতটাই পৌরুষহীন হয়ে গেলো? কোথায় গেলো তাদের আত্মমর্যাদাবোধ? কোথায় গেলো তাদের উম্মাহর মা বোনদের রক্ষা করার আল্লাহর প্রদত্ত দায়িত্ববোধ? হায় আফসুস তাদের জন্য যারা বোনদের উপর জুলুম দেখেও নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। হায় আফসুস তাদের জন্য যারা বেচে থেকেও মৃত ব্যক্তির ন্যায় চেতনা ও আত্মমর্যাদাহীন!
আমাদের কি এই বোনের জন্য কিছুই করার নেই?অবশ্যই আছে! আমরা তার মুক্তির ব্যাপারে আওয়াজ তুলতে পারি! অনলাইনে অফলাইনে তার জুলুমের ব্যাপারে কথা বলতে পারি! নাকি এতটুকু করার মত সাহসও আর আমাদের মাঝে অবশিষ্ট নেই?
বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নিরাবতা
খিলাফতবিহীন উম্মাহর অভিভাবক হিসেবে ভুমিকা পালন করে ইসলামি সংগঠনগুলো। উম্মাহর বিপদ আপাদে তাদেরই আবশ্যিক দায়িত্ব হয়ে যায় তাদের পাশে দাড়ানো- বাংলাদেশে অর্ধশতক ইসলামি রাজনৈতিক অরাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে। এক বোনকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে যার অপরাধ ছিলো- তাওহীদের দাওয়াত দেয়া- ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা এবং সে জন্য মানুষকে আহবান করা- ইসলামের কথা বলার অপরাধে যখন এই বোনকে গ্রেফতার করা হলো- তখন সকল ইসলামি সংগঠনের আবশ্যিক দায়িত্ব ছিলো- এই জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া- এবং কথা বলা। আজকে ইসলামের কথা বলার জন্য এক বোনকে গ্রেফতার করা হয়েছে- আগামিকাল শতাধিক বোনকে গ্রেফতার করা হবে- সেদিনও কি এসব ইসলামি সংগঠনগুলো নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে যাবে? তাহলে এসব সংগঠন থেকে উম্মাহর প্রাপ্তি কি?
সময় হয়েছে অন্যায় ভাবে জুলুম করে বন্দি করে রাখা বোনকে নিয়ে কথা বলার! আমরা বোন জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলার মুক্তি চাই। এই জুলুমের অবসান চাই।
(এই বোনের জন্য যদি কিছুই করার ক্ষমতা না থাকে আপনার তাহলে অন্ততপক্ষে এই লেখাটা কপি পরে নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করুন- মুসলিম বোনের উপর চালানো জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিন)
#বাংলার_রত্নকন্যা
#জোবাইদা_সিদ্দিকা_নাবিলা
(সংগৃহিত)