07/06/2025
🕯️ গল্পের নাম: "এক কাপ চা, প্রতিদিন"
তাদের নাম আনিস আর লাবণ্য। বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই। শহরের এক কোণে ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। তাদের ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে বিদেশে, এখন এই দুইজনই একে অপরের পৃথিবী। কেউ তাদের সংসার দেখে বলবে না, এরা অনেক লড়াই করে আজ এখানে এসেছে। কারণ সবকিছুই যেন খুব সাদামাটা, অথচ হৃদয়ছোঁয়া।
প্রতিদিন ভোর ছয়টায় আনিস উঠে পড়েন। একমগ গরম পানি মুখে দেয়, বারান্দায় দাঁড়িয়ে লাল রঙের ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। তারপর নরম গলায় ডাক দেন—
“লাবণ্য, উঠো তো। চা বানিয়ে ফেলি।”
লাবণ্য ততক্ষণে উঠে পড়ে, হালকা হাসে। তার মুখে কোনোদিন বিরক্তি থাকে না।
আনিস রান্নাঘরে গিয়ে কাপ ধুয়ে রাখেন, আর লাবণ্য চা বানান।
চা তৈরির সময় দুজনের কথোপকথন হয় খুব ছোট ছোট, কিন্তু তাতেই একটা আলাদা উষ্ণতা:
— “তোমার চিনি একটু কম করে দিলাম আজ।”
— “হ্যাঁ, তুমি তো সব বোঝো।"
চা খেতে খেতে দুজনে একসাথে পত্রিকা পড়েন। আনিস খবরের শিরোনাম পড়েন, আর লাবণ্য তার পাশে মাথা নোয়ান। মাঝে মাঝে আনিস ভুল উচ্চারণ করেন, তখন লাবণ্য শুধরে দেন। এই ঠিক-ভুলের খেলাটা বহু বছর ধরে চলছে। কখনো থামেনি।
একদিন বৃষ্টি হচ্ছিল ভীষণ। আনিস বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, ছাতার নিচে ছোট ছেলেমেয়েগুলো দৌড়াচ্ছে দেখে হেসে উঠলেন।
লাবণ্য এসে বললেন, “তুমি আগে এমন হেসেছিলে, মনে আছে? আমাকে প্রথম চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলে বৃষ্টির দিনেই।”
আনিস একটু চুপ করে বললেন, “তুমি সেই দিন এক কাপ চা খেতে এসেছিলে, আর আজ এত বছর ধরে প্রতিদিন আমার জন্য চা বানাও। এটা কি কেবল ভালোবাসা?”
লাবণ্য হাসলেন, বললেন,
“না, এটা অভ্যাস নয়, এটা হল সেই ভালবাসা যা শব্দে প্রকাশ হয় না, কিন্তু এক কাপ চায়েই বোঝা যায়।”
একদিন ছেলে-মেয়ে দেশে আসে। দেখে, মা-বাবা আজও একইভাবে চা বানায়, একইভাবে বসে। ছেলে বলে,
“তোমাদের দেখে মনে হয়, ভালোবাসা আসলে খুব সিম্পল একটা ব্যাপার, তাই না?”
আনিস উত্তর দেন না। শুধু লাবণ্যের দিকে তাকিয়ে থাকেন। লাবণ্য এক চুমুক চা খেয়ে বলেন,
“ভালোবাসা জটিল নয়, শুধু একটু বুঝে নিতে হয় কে কেমন চা খেতে পছন্দ করে।
আপনার কাছে গল্প টি ভালো লাগলে একটি ফলো দিন। please Follow My page🙏...