20/09/2025
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস ২০২৫: শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের করনীয়!
------------------------------------------------------------
প্রতিবছর ২১ সেপ্টেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস, যা সংযুক্ত জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত একটি দিন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বজুড়ে শান্তি, সহমর্মিতা এবং বিরোধ নিরসনের গুরুত্বকে সামনে আনা। ২০২৫ সালের থিম হলো “শান্তির জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ”, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে শান্তি শুধু প্রত্যাশার বিষয় নয়, বরং এটি অর্জনযোগ্য এবং রক্ষা করার জন্য সক্রিয় প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
বাহাই বিশ্বাসও শান্তিকে মানবজীবনের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে। বাহাই লেখনাবলীতে বলা হয়েছে, “পৃথিবীকে শান্তিপূর্ণ করা সম্ভব, যদি সকল মানুষ ন্যায়, সত্য ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে একত্রে কাজ করে”। শান্তি অর্জন শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতির অর্থ নয়, বরং মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য, সহযোগিতা এবং ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা।
শান্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্বব্যাপী সংঘাত, সহিংসতা এবং সামাজিক বিভাজনের কারণে মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শান্তি হলো এমন একটি পরিবেশ যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারে, তাদের অধিকার সম্মানিত হয় এবং সমাজে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত থাকে। বাহাই শিক্ষায় বলা হয়েছে, শান্তি কেবল রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়; প্রত্যেক ব্যক্তির দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডই শান্তির স্থাপনায় ভূমিকা রাখে।
আপনি কীভাবে পদক্ষেপ নিতে পারেন?
১. সংলাপ ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি করুন
প্রতিদিনের জীবনে বিরোধ ও মতপার্থক্যকে সহমর্মিতা ও সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করুন। বাহাই বিশ্বাসের দিক থেকে, মানুষের অন্তর্দৃষ্টি এবং হৃদয়ের পরিপক্কতা শান্তির মূল চাবিকাঠি। পরিবার, সহকর্মী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা বৃহত্তর সমাজ পরিবর্তনের সূচনা করে।
২. সচেতনতা সৃষ্টি ও শিক্ষা
শান্তি ও সহিষ্ণুতার শিক্ষাকে সমর্থন করুন। শিশু ও তরুণদের মধ্যে সহমর্মিতা, মানবাধিকার এবং বৈচিত্র্যের মূল্য বোঝানোর জন্য শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নিন। বাহাই লেখনায় বারবার জোর দেওয়া হয়েছে যে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষা অপরিহার্য।
৩. কমিউনিটি সেবা ও স্বেচ্ছাসেবিতা
স্থানীয়ভাবে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুন। দুর্যোগে সাহায্য করা, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো, পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবেশ রক্ষা—এসব কাজ শুধু মানবিকতার উদাহরণ নয়, এগুলো শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের অপরিহার্য ভিত্তি।
৪. অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে শান্তির প্রচার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহিংসতা, হিংসাত্মক পোস্ট বা মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। অনলাইনে ইতিবাচক, সহমর্মিতাপূর্ণ বার্তা প্রচার করুন। বাহাই সম্প্রদায়ের তরুণরা নিয়মিতভাবে অনলাইনে শান্তি ও সংহতি প্রচারের উদ্যোগ নেয়।
৫. আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ
শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য আয়োজন করা আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় কার্যক্রমে সক্রিয় অংশ নিন। যেমন, শান্তি দিবসের আয়োজন, র্যালি, আলোচনা সভা, বিতর্ক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাহাই সম্প্রদায়ও বিশ্বব্যাপী শান্তি দিবস উপলক্ষে কমিউনিটি সভা ও ধ্যান-প্রার্থনার আয়োজন করে থাকে।
সমাপ্তি
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, শান্তি অর্জন কেবল সরকার বা আন্তর্জাতিক সংস্থার দায়িত্ব নয়, এটি প্রত্যেক ব্যক্তির দায়িত্ব। বাহাই শিক্ষায় বলা হয়েছে, প্রত্যেকের ছোট ছোট পদক্ষেপও যদি সঠিকভাবে গ্রহণ করা হয়, তবে তা বিশ্বব্যাপী শান্তির সেতু হিসেবে কাজ করতে পারে। ২০২৫ সালের শান্তি দিবসে প্রতিটি মানুষ যেন নিজের জীবনে শান্তি, সহমর্মিতা এবং ন্যায়বিচারকে অগ্রাধিকার দেয়, সেটাই আমাদের চাওয়া।
শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব—যদি আমরা সক্রিয় পদক্ষেপ নিই।