20/06/2024
পিতামাতাদের উপদেশনা :- counselling :-
প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে পিতামাতা যে সমস্যার সম্মুখীন হন সেক্ষেত্রে পিতামাতাকে সাহায্য করার পেসাগত বেবস্তার নাম উপদেশনা (Counselling)।
প্রতিবন্ধী শিশুর বিকাশ্মুলক ঘাটতি, আচরণগত সমস্যা, শিক্ষা পদ্ধতি এবং পিতামাতার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ও ব্যক্তিগত আনুভুতি বিশেষ করে তাদের ব্যক্তিগত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, আশা-নিরাশা, আগ্রহের অভাব এর সমস্যা নিরসনের জন্য পিতামাতার সাহায্যের প্রয়োজন হয়।
এ প্রেক্ষিতে আচরণ বাদি মনোবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে 'পারস্পরিক, আবেগীয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান কৌশল শিখতে কোন ব্যক্তিকে সাহায্য করার প্রক্রিয়া হল উপদেশনা (Counselling is a process of hepling people to learn how to solve certam interpersonal, emotional and decision problems. Krumboltz and Thorsesen 1976)। উপদেশনা সম্পর্কে কার্ল রজার্স বলেছেন- এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপন করে নিজের দৃষ্টিভঙ্গী ও আচরণের যে পরিবর্তন আনয়নের ব্যবস্থা করে তা-ই উপদেশনা। ফিলিপ বার্নার্ড (১৯৯৫) উপদেশনার কয়েকটি কার্যকরী
সংজ্ঞা উপস্থাপন করেছেন- উপদেশনা হল একটা উপায় যার দ্বারা একজন ব্যক্তি উদ্দেশ্যমূলক কথোপকথনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে সাহায্য করে।
সমস্যা সমাধানমূলক ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার বৈঠকসমূহ হল উপদেশনা।
উপদেশনা হল জীবন ও কর্মকেন্দ্রিক সমস্যার প্রায়োগিক সমাধান খুঁজে বের করার কৌশল।
উপরের আলোচনার আলোকে বলা যায়, প্রতিবন্ধী শিশুকে কেন্দ্র করে পিতামাতার যেসব নেতিবাচক অনুভূতির জন্ম হয় এবং শিশুর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে যেসব সমস্যা হয় সেগুলি নিরসনের মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই হল পিতামাতার উপদেশনা।
পিতামাতার উপদেশনার প্রয়োজনীয়তা (Needs of Parental Counselling)
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবন্ধী শিশুর পিতামাতারা নিজেদের জন্য উপদেশনা ও শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। পিতামাতারা প্রধানত শিশুর ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চান এবং তাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি বিষয়ে আলোচনার তুলনায় শিশুর উন্নয়নের জন্য করণীয় সম্পর্কে জানতে অধিক আগ্রহী (ব্যারক্লে, গাউলেট, হল্টগ্রিভ ও শার্প ১৯৬২)। উপদেশনা কার্যক্রম একাধিক বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করে। নিরাময়মূলক প্রতিবন্ধী শিশুর সাথে পিতামাতাকে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করা হয়। একই ভাবে বলতে গেলে উপদেশনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতার প্রকৃতি, পিতামাতার সঙ্গে শিশুর কোনও শিশু বিকাশ নীতি, শিশুর কার্যকরী ব্যবস্থাপনা এবং সামাজিক সুযোগ-সুবিধা জানানো হয়।
ব্যতিক্রমী ব্যক্তি ও পরিবারকে সারাজীবন তথ্য ও উপদেশনা প্রদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এরা যখন প্রথম প্রতিবন্ধী হিসাবে চিহ্নিত হয় সে সময়ের মানসিক আঘাত নিষ্পত্তিতে সন্দেশনা অত্যন্ত জরুরী। সে সময়ের একবার উপদেশনা বৈঠকে শিশুর জন্য সকল বিদেশ পরিকল্পনা তৈরি করা যায় না কিংবা সকল তথ্যও দেয়া যায় না বা পিতামাতার চাকর অনুভূতির নিষ্পত্তি হয় না। সে জন্য আরো দীর্ঘদিন এ সকল বিষয়ে উপদেশনা প্রার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হয়। এরপর শিশু যখন স্কুলে যায় তখন স্কুলে শিশুর উপযোজন, ২শুর জন্য প্রয়োজনীয় করণীয় বাস্তবায়ন কিংবা পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অন্যদের অবাঞ্ছিত আচরণ ইত্যাদির মোকাবেলায় উপদেশনা সাহায্য করে। আবার শিশু এখন স্কুল ত্যাগ করে তখন পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান, বিবাহ ইত্যাদি বিষয়ে যে নতুন সমস্যার সৃষ্ট হয় সেগুলি মোকাবেলার জন্যও উপদেশনা প্রয়োজন হয়। এছাড়া পারিবারিক কোন মস্যার কারণে প্রতিবন্ধী শিশুর বিষয়টি নতুন কিছু সমস্যা তৈরি করে। যেমন- পারিবারিক,আর্থিক সমস্যা কিংবা পিতামাতার দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি হলে প্রতিবন্ধী শিশুটিকে নিয়ে নতুনভাবে মোকাবেলা করতে হয়। এসব কিছু বিবেচনায় বলা যায়, প্রতিবন্ধী শিশুর পিতামাতার জন্য উপদেশনা কার্যক্রমের সুযোগ থাকলে তারা প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য নিতে পারে।
উপদেশনা কার্যক্রমের উদ্দেশ্য (Objectives) :--
১. প্রতিবন্ধী শিশুর উন্নতিতে পিতামাতাকে সাহায্য করা এবং শিশুর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থ গ্রহণে পিতামাতাকে উদ্বুদ্ধ করা।
২. শিশুর বাস্তব অবস্থা অনুধাবনে পিতামাতাকে সাহায্য করা।
৩. প্রতিবন্ধী শিশুকে প্রথমত সন্তান হিসাবে গ্রহণ করতে এবং দ্বিতীয়ত সমস্যাগ্রস্ত শিশু হিসেবে মেনে নিতে সাহায্য করা।
৪. বর্তমান সমস্যার কার্যকরী সমাধান খুঁজে বের করা এবং নতুন সম্ভাবনার দিকনির্দেশ দেয়া।
৫. প্রতিবন্ধী শিশুর অবস্থা সঠিকভাবে অনুধাবন ও তার উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণের ভ প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা।
৬.বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সন্তানকে দৈনন্দিন জীবনযাপন সম্পর্কে নির্দেশনা দান এবং পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে ধীরে ধীরে স্বনির্ভর হতে নির্দেশনা দান।
৭. শিশুর ক্ষতিকর কোন পরিণতি প্রতিরোধ করা।
৮. শিশুর প্রতিবন্ধিতা কেন্দ্রিক পিতামাতার মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করা।