27/05/2024
আমি... না! নামটা নাহয় আমি নাই বললাম। আমি একজন নারী। ওই যে কবিতাটা আছে না...
"আমি সেই মেয়ে।
বাসে ট্রেনে ট্রামে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
যার শাড়ি, কপালের টিপ, কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
আপনি রোজ দেখেন।"
হ্যাঁ... এমনই একটা নিতান্তই সাধারণ নারী আমি। একটা ছোট্ট মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম আমার। ধীরে ধীরে বড়ো হতে হতেই বুঝেছিলাম... নারী হয়ে জন্মে ভীষণ বড়ো ভুল করে ফেলেছি আমি। প্রথম বুঝেছিলাম... যেদিন আট বছরের অবুঝ আমি'কে আমার নিজের মামা খারাপভাবে ছুঁয়েছিল। খুব কষ্ট হয়েছিল আমার। কেঁদেছিলাম খুব। মা'কে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম সবটা। মা সব শুনে আমার মুখ চেপে বলেছিলো,
— উনি না তোর গুরুজন হয়! গুরুজনের সম্পর্কে অমন কথা বলতে নেই, মা!
আমি অবাক হয়ে শুনেছিলাম। কষ্টটা নিজের মনে চেপে নিজেই গুমরে মরেছিলাম। আরেকটু বড়ো হলাম। বুঝতে শিখেছিলাম... নারী শরীর সবাই খারাপভাবে ছুঁতে চায় বারংবার। বাসে পাশে বসা যাত্রী, টিউশনের স্যার... সবাই বারবার ছুঁতে চেয়েছে আমার স্তনযুগল, নিম্নাঙ্গ। কেউ একবারের জন্যও তাকায়নি আমার মুখের দিকে। আমার চোখে সে কী ভীতি জমেছে ধীরে ধীরে... তারা কেউ লক্ষ্য করেনি।
কলেজ জীবনে পা দিয়ে যখন প্রথম প্রেমে পড়লাম। ভাসলাম আবেগের সাগরে। তখনও দেখলাম... আমার প্রেমিক পুরুষটি কখনোই ভালোবাসেনি আমাকে। আমার চোখের গভীর ভাষা বুঝে ওঠার আগেই সিনেমা হলের গোপন অন্ধকারে সে আবিষ্কার করতে চেয়েছিল আমার নগ্ন শরীর। প্রত্যাখ্যান করলে বলেছিলো... আমি নাকি ভালোবাসিনা তাকে!
সত্যিই কি আমি ভালোবাসিনি? নাকি সে আমাকে? কেজানে...
সেই যে প্রেমের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এলাম... আর কাউকে কোনোদিন ভালোবাসতে পারিনি। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে কিনা! তাই কলেজ শেষ হতে না হতেই সম্পূর্ণ অপরিচিত এক মানুষের হাতের সিঁদুর উঠলো আমার সিঁথিতে।
এই যে আজ... হ্যাঁ আজ! আজ আমার ফুলসজ্জা। যেই দিন নিয়ে সব মেয়েদের জীবনে কিছু সুখস্মৃতি থাকে। আমি তো চেয়েছিলাম আমার স্বামীকে চিনতে! কিন্তু সে... সে যে এসেই আমার শরীরটা ছিঁড়ে খেতে শুরু করলো। আমার নগ্ন শরীর সে দুচোখ ভোরে দেখলো। আজও একটিবারের জন্য তাকালোনা আমার চোখের দিকে। যে চোখ তাকে ভরসা করতে চেয়েছিল, সে চোখে পাহাড় প্রমান ঘৃণা।
আমি ক্লান্ত...
নারীশরীর বহণ করতে করতে আমি ক্লান্ত। নারীশরীর মানে শুধুই কি তার স্তনযুগল আর নিম্নাঙ্গ? কখনো কি তার চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনের কষ্টটা কেউ বুঝবেনা? স্তনের নীচে চাপা পড়ে থাকা মনের খোঁজ কি কেউ কোনোদিন নেবেনা?
যুগে যুগে নারী ধর্ষিতা...
নারী শরীর ভোগ্য বস্তু হয়েছে সবার কাছে...
নারীমনের খোঁজ কজনই বা রাখে?
আমি চাইনা এ শরীর। চাইনা এ দেহের গঠন। আমার স্তনযুগল... নিম্নাঙ্গ কেউ কেটে বাদ দিয়ে দিক আমার শরীর থেকে। থেকে যাক আমার অশ্রুভরা দুই নয়ন... কাউকে ভরসা করে আঁকড়ে ধরতে চাওয়া দুটো হাত... আমার ভীত কম্পিত অধরোষ্ঠ, সসম্মানে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাওয়া দুটো পা...থেকে যাক!