04/07/2025
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রদান করে। ইসলামিক শাসনব্যবস্থা মূলত কুরআন ও হাদীসের আলোকে পরিচালিত হয়, যেখানে ইনসাফ, মানবতা, ন্যায়বিচার, সমতা এবং কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার মূলনীতি প্রতিষ্ঠিত থাকে। যদি একটি দেশ ইসলামী শাসনব্যবস্থায় পরিচালিত হয়, তাহলে সেই দেশ হবে ন্যায় ও শান্তির এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
প্রথমত, ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা থাকবে। ইসলামিক শাসনে ধনী-গরিব, শাসক-প্রজার মাঝে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। বিচার হবে নিরপেক্ষ ও শাস্তি হবে অপরাধের ভিত্তিতে। হযরত উমর (রা.) এর শাসনামলে এই ন্যায়বিচারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই।
দ্বিতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তি, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে জোর দেয়। জাকাত, সদকা ও বায়তুল মাল ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় জনগণ আর্থিক সহায়তা পাবে। এতে দারিদ্র্য কমবে এবং সামাজিক ভারসাম্য বজায় থাকবে।
তৃতীয়ত, নৈতিকতা ও চরিত্রগঠনে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ইসলাম মানুষকে আল্লাহভীতি, সততা, সহনশীলতা ও দয়া শেখায়। একজন মুসলমান যদি আল্লাহর ভয়ে জীবন পরিচালনা করে, তবে সে কখনও দুর্নীতি, প্রতারণা বা অন্যায় কাজ করবে না। ফলে সমাজ হবে শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ।
চতুর্থত, নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা পাবে। ইসলাম নারীদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করেছে। ইসলামিক রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরাও নিরাপদে তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চা করতে পারবে। ইতিহাসে দেখা যায়, মুসলিম শাসকরা অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় কতটা সংবেদনশীল ছিলেন।
পঞ্চমত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কল্যাণে রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার থাকবে। ইসলাম শিক্ষাকে ফরজ করেছে, ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য। একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে সকলের জন্য মৌলিক শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে।
সবশেষে বলা যায়, ইসলামিক শাসনব্যবস্থায় পরিচালিত একটি দেশ হবে মানবতা, ন্যায়, শান্তি ও কল্যাণের আদর্শ রাষ্ট্র। এটি হবে এমন এক সমাজ, যেখানে সকল নাগরিক আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করবে এবং পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ লাভে সচেষ্ট থাকবে। তবে এ শাসনব্যবস্থা কেবল নামেমাত্র প্রয়োগ করলেই হবে না; বরং প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান, আন্তরিকতা ও তাকওয়ার ভিত্তিতে পরিচালনার। তখনই একটি ইসলামিক রাষ্ট্র তার পূর্ণ সৌন্দর্য ও সফলতা প্রকাশ করতে পারবে।