22/06/2025
#ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍-(season 2)
| অন্তিমপর্ব|
MD AL Amin Islam
"রাত প্রায় ১২ টা ছুঁই ছুঁই। তিশা গভীর ঘুমে মগ্ন।আজকাল একটু বেশিই ঘুম পায় তিশার। কারণটা একদম অজানা।
রাতে ঝর্ণা জোর করে ডিনার করিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে যায়।এর কিছুক্ষণ পরই যেনো রাজ্যের ঘুম এসে পড়ে তিশার চোখে।কারণটা হলো ডাক্তারকে বলে ওষুধের সাথে ঘুমের ওষুধও দেওয়া হয় তিশাকে।না হলে তিশা সারারাত কেঁদেই কাটিয়ে দেয়।যা তিশা আর বেবির জন্য মোটেও ভালো না।"
---আজও তিশা ঘুমিয়ে গিয়েছে তারাতারি,কিন্তু হঠাৎ আজ ঘুমের ঘোরে অনুভোব করতে পারছে কেউ থাকে গভীর ভাবে স্পর্শ করছে।
খুব চেনা চেনা লাগছে তার প্রতিটি স্পর্শ। মাতাল করা পারফিউম এর ঘ্রাণে তিশা ঘুমের মধ্যেই যেনো আরো মাতাল হয়ে যাচ্ছে।খুব পরিচিত সেই ঘ্রাণ।
খুব কষ্টে তিশা চোখদুটো হালকা খোলার চেষ্টা করে দেখতে চাইলো কে সে।আর তখনি কেউ কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো,
"কি নিষ্পাপ চাওনি তোর--প্রত্যেকবার যেনো বলে দেয় তোর মনের কথা।ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমায়।
কানে একটা চুমো দিয়ে।"
---তিশা একটু মুচকি হেসে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেললো।কি সুন্দর স্বপ্ন,এই স্বপ্ন জেগে উঠে ভাঙ্গতে চায় না তিশা।কতোদিন পর মানুষটিকে অনুভোব করছে তিশা।থাকুক না এমনেই।
তিশা গলায় কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে আবারও চমকে যায়।এবারও তিশা কিছু একটা শুনতে পেলো।
'তৃষ্ণাই মিটেনা যতোই তোকে দেখি,আরো যেনো তৃষ্ণা দিনদিন বেড়েই যায়।আমার এই তৃষ্ণা মিটিয়ে দেনা জান।
এ কেমন নেশা।ঘোরই কাটেনা।এ যেনো এক মরণ নেশা।তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে আমায় তোর এই ভালোবাসার নেশা।'
---তিশা ঘুমের মধ্যেই কেঁদে দিলো।খুব মনে পড়ছে জিসানকে আজ।খুব করে ভালোবাসতে মন চাইছে।কিন্তু তিশার ভয় হয়,হাত বাড়ালে যদি চলে যায়।চোখ খুললে যদি গায়ব হয়ে যায়।তবুও যে মন চাইছে একবার ছুঁয়ে দিতে মানুষটিকে।দু'চোখ ভরে একবার হলেও দেখতে যে খুব মন চাইছে।খুব করে চাইছে।
'-জিসান তিশাকে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
হঠাৎ এমন হওয়ায় তিশা চমকে চোখ দুটো খুলেই বড়সড় ধাক্কা খেলো।
এটা কিভাবে সম্ভব। কাপাকাপা কন্ঠে আ আপনি! এখানে! সত্যিই!
---জান বিশ্বাস হচ্ছে না,ছুঁয়ে দেখ।তিশার একটা হাত দিয়ে গালে স্পর্শ করে।
"তিশা সাথে সাথে জিসানকে ঝাপটে ধরে কাঁদতে লাগলো।জিসানও বাঁধা দিলো না।মাঝে মাঝে কিছু সুখও কান্নার কারণ হয়। আজ তিশা সেই কান্নাই করছে।
জিসানের বুকে কয়েকটা চুমো দিয়ে,আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন নাতো আর।আমি থাকতে পাড়বো না আপনাকে ছাড়া।বিশ্বাস করুন আমি এমন কিছুই করতে চাইনি।আমিতো.... তিশাকে আর কিছুই বলতে দিলো না জিসান।"
---তিশার নরম ঠোঁটদুটি দখল করে নিলো নিজের মাঝে।আজ যেনো কোনও কথা হবে না,শুধু ভালোবাসা হবে।দুটি মানুষ আজ নিজেদের সবটুকু দিয়ে কেবল ভালো বাসবে।হারিয়ে যাবে সুখের সে জগতে যেখানে কেবল সুখ আর সুখ।জিসান যেনো প্রতিজ্ঞা করে এসেছে তিশাকে আজ সেই জগতের রানী করে তুলবে।নিজের সবটুকু ভালোবাসা আজ প্রিয়তমাকে দিয়ে প্রিয়তমার সব কষ্টগুলো শুষে নিবে।
এতোদিনের না বলা কথা,কষ্ট সবই যেনো দূরে ঢেলে দিয়ে বিলীন হয়ে যাবে দুজন দুজনার মাঝে।শরীর মন উজার হয়ে যাবে আজ।
মনের সুখের সাথে যখন দৈহিক সুখটাও মিলে যায় তখন সেই সুখটা হয় স্বর্গীয় সুখ।তবে সেই সুখ কেবল প্রিয় মানুষটির সাথেই অনুভোব করা যায়।তিশা ও জিসান আজ সেই সুখেই পারি দিলো।
________
"সকালের সূর্যের আলো জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে তিশার মধুর ঘুমটা নষ্ট করে দিলো।চোখ দুটো খুলেই জিসানকে সামনে দেখতে পেলো তিশা।ঘুমের মধ্যেও একহাত দিয়ে তিশাকে জড়িয়ে ধরে আছে।জিসানের ঘুমন্ত মুখটির দিকে তাকিয়ে তিশার খুব মায়া হলো।
কতোনা কষ্ট দিয়েছে এই মানুষটিকে ও।কতো অবহেলা,কতো পাগলামি করেছে।কিন্তু সবই হাসি মুখে গ্রহণ করে নেয়। কিভাবে পারে।তিশার খুব অবাক লাগে।
মাঝে মাঝে তো মনে হয় জিসান কোনও মানুষই না।আল্লাহ যেনো মানুষরূপী কোনও ফেরেশতা পাঠিয়েছে ওর জীবনে।তা না হলে কেউ কাউকে এভাবে ভালোবাসতে পারে।"
---তিশা উঠে যেতে নিলেই,জিসান আবার কাছে টেনে নেয়।তাই বাধ্য হয়ে তিশা আবারও জিসানের বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।ঢিপঢিপ শব্দ শোনা যাচ্ছে। জিসানের বুকের এই স্পন্দনের ধ্বনি শুনতে বেশ ভালোই লাগছে তিশার।কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ে তিশা লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
"তিশার এমন আচানক উঠার কারণে জিসানেও ভয় পেয়ে গেলো।জিসান দেখলো তিশা ঘামছে এই ঠান্ডার মাঝেও।শরীরের চাদরটাকে কেমন খামচে ধরে রেখেছে।
-কি হয়েছে জান।জিসান আতংকিত হয়ে।
'তিশা করুন চোখে জিসানের দিকে তাকালো।ত তাওহিদ ভাইয়া!'
-সব ঠিক আছে জান।
'না কিছু ঠিক নেই।আপনি জানেন না। ও ভাইয়াকে কিডন্যাপ করে রেখেছে।বলেছে....'।
-শশশশ!একদম চুপ।তিশাকে টেনে নিজের কোলে বসাতে চাইলো।
'আমি অনেক ভারী হয়ে গিয়েছি আজকাল।'
-তাতে কি? তোকে আর আমাদের সন্তানকে একসাথে কোলে নেওয়ার শক্তি এখনো আছে আমার।কাছে আস।
'তিশাও চুপচাপ জিসানের কোলে বসে পড়লো।একটা চাদর দিয়ে জিসান দুজনের শরীরটা ভালো করে ঢেকে দিলো।'
-আচ্ছা আপনি কি করে জানেন।
'আমাদের বাড়ীর সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে।'
-কি?
'হুম।'
-তোকে যখন এই বাসায় নিয়ে আসছিলাম,তখনই গার্ডরা ফোন করে।গার্ডদের নাকি ধুঁয়ার মতো কিছু একটা দিয়ে বেহুঁশ করা হয়।অন্য গার্ডরা এসে পরে ওদের জ্ঞান ফিরিয়ে আমাকে কল করে।
আমি পুরো বাড়ীর সিসিটিভি ফুটেজ আমাকে ইমেল করে পাঠাতে বলি।তোকে বাসায় রেখে থানায় যাওয়ার সময় আমি ফুটেজে সব দেখতে পাই।কিভাবে তোকে ব্লাকম্যাল করেছে সব।
'খুব খারাপ, খুব বাজে একটা লোক।আমি তাকে কতো বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু উনি কিভাবে করলো।'
-ডাক্তার বাবু পাগল হয়ে গিয়েছিলো তোর প্রেমে।
'কিসব বলছেন।একদম বাজে বলবেন না।ও পাগল হোক, ছাগল হোক যা খুশি হোক একদম সামনে জাতে না আসে আমার।
এবার সামনে পেলে খুন করে ফেলবো আমি।'
-রিলেক্স জান,আর কেউ আসবে না।তিশাকে নিজের সাথে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে,
না কোনও অর্ক,না কোনও লাবনি আর নাহি কোনও নিবিড়।কেউ না।কেউ তোকে আমার কাছ থেকে দূরে সরাতে পারবে না।
'কি করেছেন তার সাথে আপনি।তিশা একটু বিস্মিত চোখে জিসানের দিকে তাকালো।'
-কিছু না। ব্যাটাকে বিনা টিকেটে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।
'উপরে মানে।'
-শালার সাহস কি করে হয়,তোর নাম করে আমাকে থানায় ডিভোর্স পেপার পাঠানোর।আর তোকে নিয়ে নাকি একেবারে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবার পুরো বন্দোবস্তও করে ফেলেছে।এসব জানার পর আমাকে জেল খানায় আটকে রাখার কারো সাধ্য আছে কি।সোমকে বলার সাথে সাথে আমার জামিনের ব্যবস্থা করে ফেলে।
আর নিবিড়কে তোকে ছাড়াই অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দিই।
'উনি এতো সহযে মেনে গিয়েছে।'
-না, সহযে কই।অনেক অনুরোধ করে বুঝানোর পর মানছে।
'সত্যি'।
-কেনো আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তোর।
'আচ্ছা নিবিড় ভাইয়া কি রায়হান ভাইকে গুলি করেছে।'
-না,তবে গুটির চালটা ওই চালছে।
'মানে, কিভাবে।'
-তোকে এতো কিছু জানতে হবে না।আমার বেবির উপর খারাপ প্রভাব পড়বে এসবের।ভালো ভালো কথা শুনবি,বই পড়বি,কুরআন হাদিস এই সময় বেশি বেশি করে পড়বি।এতে করে আল্লাহ তাআলা আমাদের একটি নেক সন্তান দান করবে।আমাকের বেবিও একজন নেক মানুষ হয়ে বড় হতে পারবে।তাই আজ থেকে সব বাজে চিন্তা বাদ।
_________
ফ্লাশব্যাক
" জিসান সিসিটিভিতে দেখেছে তিশার সাথে সেদিন নিবিড় দেখা করতে এসেছে।আর নিবিড়ই তিশাকে ব্লাকম্যাল করেছে ওর সব কথা মানতে।
আর তিশা তখন কোনো উপায় না পেয়ে তাই করেছে।কারণ নিবিড় তাওহিদ কে কিডন্যাপ করে নিজের কাছে আটকে রেখেছে।তাইতো এতো বিপদের মাঝেও কেউ তাওহিদ কে দেখতে পায়নি এতোদিন।"
----তিশার কাছে আর কোনও অপশন ছিলোনা তখন।কারণ রায়হানের অবস্থা ভালো ছিলোনা,তাওহিদ কিডন্যাপ হয়েছিলো।আর জিসান সে সময় তিশার পাশে ছিলো না।আর নিবিড়ের বার বার হুমকি রায়হানের মতো তাওহিদের অবস্থায়ও এমন হবে।এমনকি আরো ভয়ানক হবে।ওর লাশটাও খুঁজে পাবেনা কেউ।
তিশা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।কোনও কিছু ভাবার মতো অবস্থায় ছিলো না তখন,তাই তিশা তাই করেছে যা নিবিড় বলেছে।
"-ঢাকার বাহিরে এক কনফেরান্সে গিয়েছিলো তাওহিদ। তানজিলাকে অবশ্য বলে গিয়েছিলো,বেশি ব্যস্ত থাকলে ফোন ধরবে না।টেনশন জাতে না করে।
তাই রায়হানের এক্সিডেন্টের দিন অনেকবার কল করেও তাওহিদকে পায়নি তানজিলা।ম্যাসেজ দিয়েও রেখেছিলো।
কিন্তু দুদিন হবার পরও যখন কোনও খবর আসছিলো না,তখন তানজিলা খুব ভয় পেয়ে গেলো।বাড়ীতে কেউ ছিলোও না যে কাউকে জানাবে।কি করবে কিছুই তখন মাথায় আসছিলো না।"
---আর তখনি সোম এসে জিসানের ম্যাসেজ দিয়ে যায় তানজিলাকে।
টেনশন করতে মানা করেছে,তাওহিদ ভাই ঠিক আছে।কিছু কাজের জন্য নেটওয়ার্ক থেকে সরে আছে।সময় হলে এসে পড়বে।
জিসানের ম্যাসেজ পেয়ে তখন তানজিলাও কিছুটা আশ্বস্ত হলো।
"নিবিড় ভেবে ছিলো জিসানকে রায়হানের হত্যার দায়ে জেলে দিয়ে দেবে।আর ও তিশাকে ব্লাকম্যাল করে জিসান ও তিশার ডিভোর্স করিয়ে তিশাকে একেবারের জন্য অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবে।জাতে করে তিশাকে আর কেউ খুঁজে না পায়।সবাই ভাববে তিশা মানসিক যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে পাগল হয়ে কোথাও চলে গিয়েছে।"
---সবই ঠিক ছিলো,নিবিড়ের প্লানিং একদম পার্ফেক্ট ছিলো।রায়হানকে মারার জন্য চারা হিসেবে ব্যবহার করলো আশিষকে।
নিবিড় আশিষের সাইক্রিয়াটিস্ট ছিলো।আশিষের মানসিক অবস্থা যখন আবার খারাপ হচ্ছিলো, তখন তার বাবা মা একজন ভালো সাইক্রিয়াটিস্ট এর স্মরণার্থ হলো।আর দূর্ভাগ্য ক্রমে সে ছিলো নিবিড়।আশিষের বাবা মা অনেক ভরসা করে আশিষকে সুস্থ করার দায়িত্ব দিয়েছিলো নিবিড়কে। কিন্তু নিবিড় তার পেশার সাথে বেঈমানি করেছে ।
ট্রিটমেন্ট এর সময়ই নিবিড় জানতে পারে,আশিষ,কুহু আর কুহুর সাথে নিশির মিলের কথা।নিবিড় যেনো না চাওয়া সত্যেও চাঁদ হাতে পেয়ে গেলো।
তিশার যখন কোনও খবর পাচ্ছিলো না তখন নিবিড় কৌশলে আশিষকে নিশির পিছনে লাগিয়ে দিলো। আশিষও নিবিড়ের কথা শুনতে এতো দিনে বাধ্য হয়ে গিয়েছিলো।কারণ নিবিড় আশিষকে ঠিক করার বাহানায় এমন একটা ড্রাগ এর অভ্যস্ত করে ফেলে যা আশিষকে নিবিড়ের গোলাম বানিয়ে ফেলে।ড্রাগসের নেশায় অভ্যস্ত আশিষ নিবিড়ের হাতের পুতুল হয়ে গিয়েছিলো তখন।"
---তাইতো তার কথা মতো নিশির থেকে তিশার খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করতো।আর নিবিড়ের ইশারায়ই সেদিন রায়হানকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো একটা জনমানব শুন্য ব্রিজের উপর।আর সেখানেই রায়হানকে আশিষ তিনটা গুলি করে।গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময়ই হোচট খেয়ে পড়ে গিয়ে হাতে ব্যাথা পায়।
'-জিসান ভিডিও ফুটেজে নিবিড়কে দেখেই বুঝতে পাড়ছে কিভাবে ঠান্ডা মাথায় নিবিড় এমন গেম খেলছে।নিবিড় একজন সাইক্রিয়াটিস্ট তাইতো ও উত্তেজিত হয়ে কিছুই করেনি।বুঝে শুনে ঠান্ডা মাথায় প্লানিং করছে।তাইতো জিসানের সন্দেহও তালিকাতে নিবিড়ের কোনও নামই ছিলো না।'
---তাওহিদ এর কিডন্যাপ হওয়ার কারণেই জিসানও এতোদিন চুপ ছিলো।শত্রুকে কিছুই বুঝতে দিতে চায়নি।সোমকে গোপনে তাওহিদ কে খুঁজার কাজে লাগিয়ে দিলো।
কিন্তু তিনদিনের দিন একজন উকিল আসে জিসানের সাথে দেখা করার জন্য।উকিলকে দেখে জিসান কিছুটা অবাক হয়েছিলো কারণ ওতো কাউকে হায়ার করেনি। তাহলে!
"হ্যালো মিস্টার জিসান।আমি এডভোকেট আনিসুল ইসলাম।"
-জি বলুন।কি করতে পারি আপনার জন্য।আই মিন আপনাকে এখানে কে আসতে বলেছে।
"কিছু কাগজ জিসানের দিকে এগিয়ে দিয়ে,আমাকে আপনার ওয়াইফ তিশা আহমেদ পাঠিয়েছেন। উনি আপনার কাছ থেকে মিচ্যুয়েল ডিভোর্স চায়।"
---জিসানের হাতের কাগজ গুলো ডিভোর্সের পেপার ছিলো।যা দেখে জিসান কিছুতেই নিজের রাগ সামলাতে পারেনি।কলার চেপে ধরে উকিলটির।সাহস কি করে হয় আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠানোর।
বলে দে তোর ম্যাডামকে গিয়ে এই জনমে তো আমি ওকে ছাড়ছি না।আমার থেকে মুক্তি চাইলে আবার জন্ম হতে হবে ওকে।
'উকিল ভয়ে চলে গেলো।আর উকিল যাওয়ার পর পরই সোম এসে হাজির হয়।কারণ তাওহিদকে নিবিড় কোথায় রেখেছে তা জানা গিয়েছে।জিসান খবরটা শুনেই হেসে দিলো।
আর আজও সোম সেই হাসির রহস্য বুঝলো না।'
______________
"জিসানের সামনের চেয়ারে বসে আছে নিবিড়।আর জিসান নিবিড়ের সামনে চেয়ারের উপর এক পা তুলে টেবিলের উপর বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিবিড়ের দিকে।"
---নিবিড়ের দাঁত কিড়মিড়ি করছে।কিভাবে ওর সব প্লান এভাবে শেষ হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছে না।
--তো ডাক্তার তুমি বলবে নাকি আমি।
'নিশ্চুপ।'
--কেনো করলে এমন।
'আমার ওকে চাই।আর আজ পর্যন্ত যে জিনিসটির উপর আমার নযর পড়েছে তা আমি হাসিল করে নিয়েছি।আর না পেলে নিজের হাতেই ধ্বংস করে দিয়েছি।'
---জিসান চেয়ারে একটা লাথি দিয়ে,তিশা কোনও জিনিস না।
'কিন্তু তবুও ওকে চাই আমার।'
--মগেরমুল্লুক পেয়েছো।তুমি চাইবা আর আমি হাততালি দিয়ে দিয়ে দেবো।ডাক্তার তুমি এবার ভুল মানুষের দিকে চোখ দিয়েছো।তুমি আমার রেকর্ড জানো না।জানলে সাহস হতো না আমার তিশার দিকে নযর দেওয়ার।চার বছর বাহিরে থেকেও যার আশেপাশে কাউকে আমি আসতে দিই নাই।ভাবলে কি করে এতো সহযে ওকে পেয়ে যাবে।
'সহযে কোথায়,কতো কাঠ কয়লা পুড়াতে হয়েছে জানো।তোমার দুশমনদের এক এক করে খুঁজে বের করতে হয়েছে।তাদের আমার প্লানে শামিল করতে হয়েছে।
সব ঠিকই চলছিলো কিন্তু ওই লাবণি সব শেষ করে দিয়েছে তিশার উপর হামলা করে।তাই একে একে ওদেরকেও আমি শেষ করে দিয়েছি।আমি আগেই বলে দিয়েছিলাম ওদের তিশার দিকে জাতে ওদের হাত না আসে কিন্তু শুনেনি। তাই অর্ককে মেরে লাবণিকে ফাঁসিয়েছি আর লাবণিকেও জেলখানায় শেষ করে দিয়েছি।'
--কিন্তু লাবণি তোমার নাম নেয়নি কেনো।
'কারণ আমি ওকে বলেছিলাম। আমার নাম না নিলে আমি ওকে ছাড়িয়ে আনবো।পাগল মেয়ে আমার প্রতিটি কথা বিশ্বাস করেছে।'
--জিসান এসব শুনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।ডাক্তার সামান্য একটা জিদের কারণে তুমি তোমার লাইফটা নষ্ট করে ফেললে।সাথে আশিষের ও।
ব্যাচারা এমনেই নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে দহনে জলছিলো।আর তুমি এখন ওর পুরো লাইফটাকে নষ্ট করে দিলে।ভালোবেসে করতে তবুও মনকে সান্তনা দিতাম।কিন্তু তুমি তো তোমার মিথ্যে জিদ,আর অহংকারের বশে এসব করেছো।
"জিসান আর ওখানে থাকতে পাড়লো না,সোমকে বলে গেলো।ওর ব্যবস্থা করে দেও।ওকে আমি আর আমার লাইফে দেখতে চাইনা।আর আশিষকে আগে একটা রিহেভসেন্টারে পাঠানোর ব্যবস্থা করো।তারপর ওর শাস্তি ঠিক করবো।"
---নিবিড় চিৎকার করে বললো,তোমার ভাই আমার কাছে জিসান,বাঁচাতে চাইলে আমাকে মুক্ত করে দেও।
"-জিসান মুচকি হেসে ওটা তোমার ভুল ধারণা নিবিড়।জিসান আর এক মুহুর্তেও দাঁড়ালো না চলে গেলো তিশার কাছে।নিবিড়কে এখানে আনার সময় নিবিড়ের কাছে দুটো প্লেন টিকিট পেয়েছিলো।তা দেখে জিসান বুঝে গিয়েছে নিবিড় তিশাকে নিয়েই উড়াল দিতে চেয়েছিলো।"
____________
"এক বছর পর।জিসান বিছানায় উপর আধো শুয়ে লেপটপে কিছু কাজ করছে।আর তার পাশেই বসে আছে আমাদের ছোট ইশান।বাবার সাথে বুলিবুলি কথা বলছে আর হাসছে।মাঝে মাঝে জিসানের লেপটপ ধরে টান দিতে চাইছে।
জিসানও কাজের ফাঁকেফাঁকে ছেলের সাথে খেলছে।এই সময় নিলয়ও ভিডিও কল দিলো। জিসান ফোন ধরেই দেখে নিলয় মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছে।
--কিরে শালা তোর আবার কি হলো।
"ইয়ার বলিস না,বউ পেগনেন্ট হলে এতো জালা জানলে বউরে পেগনেন্টই করতাম না।দারকার পড়লে মেডিকেল সোপে সোপে গিয়ে ঘুড়তাম।"
--হা হা কেনো কি হয়েছে।
"আরে বলিস না, ঝর্ণা রাত তিনটায় আমারে ঘুম থেকে ডেকে বলে ওর ফুসকা খেতে মন চায়।বল ভাই,প্যারিস শহরে রাত তিনটায় আমি এসব কই পাই।"
--ব্যাপার না দোস্ত,তিশা আমাকে দিয়ে রাতে গরুর মাংশ দিয়ে ভুনাখিচুড়ি রান্না করিয়েছে জানিস।
"ইয়ার এই মেয়েদের এই সময় এমন নাই নাই জিনিস খেতে মন চায় কেনো বলতো।"
--আমি কি করে বলবো,আমি কি পেগনেন্ট হইছি।কিন্তু জানিস,তখন একটু কষ্ট হতো কিন্তু এখন এই দেখ এই দুষ্টটাকে দেখে সব ভুলে গিয়েছি।ঈশানকে দেখিয়ে।
"হুম ঠিক,বলেছিস।আচ্ছা বলতো আমার ঘরে কি হবে।গেস কর।"
---তোর ঘরে ঝর্ণার মতো সুন্দর একটা মেয়ে হবে।আর তোর মেয়েকে আমার ছেলের বউ করে নিয়ে আসবো।কি বলিস।
"হা হা শালা মনে মনে এসব প্লানিং করে রেখেছিস।কিন্তু তোর ছেলে তোর মতই হিটলার হবে।কিন্তু আমার মেয়েকে আমি তিশার মতো হাবা বানাবো না।"
'-এটা শুনে ঈশানও দুহাত নেড়ে হাসতে লাগলো কে জানে কি বুঝলো ও।'
---ঈশানের কান্ড দেখে নিলয় ও জিসানও হাসতে লাগলো।আচ্ছা রায়হান কেমন আছে,আর নিশি।
"সবাই ভালো।নিশির দুমাস চলছে। পেগনেন্সিতে একটু জটিলতা আছে বলে তিশা আর আমার শ্বাশুরী সারাক্ষণ ওর আশেপাশে থাকে।"
---ও..!তুই বাড়ী যাবি না আর।একবছর তো হলো।আন্টি আংকেলও তো অনেক বার এসেছে তোকে নিতে।
"নারে এখনোও সময় হয়নি।ও বাড়ীতে আমি চাইনা তিশাকে কেউ আর অপমান করুক।"
---হুম বুঝছি।আচ্ছা রাখি,পরে আবার ফোন দিবো।
"জিসান ফোন রেখে তাকিয়ে দেখে ঈশান ঘুমিয়ে গিয়েছে।ঈশানের চারপাশে বালিশ দিয়ে জিসান বালকানিতে চলে আসলো।রাতের তারাভরা আকাশটার দিকে তাকিয়ে ভাবনার জগতে ডুব দিলো জিসান।
সেদিন জেলখানা থেকে বের হয়েও জিসান আর আহমেদ ভিলায় ফিরেনি। মাকে দেওয়া কথা জিসান রেখেছে,তিশার ছায়াও আর তার সন্তানদের উপর পড়তে দেয়নি।অবশ্য পরে রাবেয়া বেগম নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাও চেয়েছিলো আর তিশা ও জিসানকে আহমেদ ভিলায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলো।কিন্তু জিসান যায়নি।
ও বাড়ীতে তিশাকে অনেকবার অপমান সহ্য করতে হয়েছে,কিছু না করেও।কিন্তু কেনো?জিসানের বউ বলে।তাহলে আমার বউয়ের সম্মান রক্ষা করাও আমার দায়িত্ব।আমি চাই না তিশার সাথে এমন ঘটনা আর ঘটুক।তখন হয়তো সম্পর্কে বিষাক্ত আরো বাড়বে।তার চেয়ে দূরে থাকা ভালো।
তাই জিসান নিজের একটা ফ্ল্যাট কিনে এখানেই তিশা আর ঈশানের সাথে ছোট একটা সংসার সাজিয়েছে।
রায়হান সব শুনে প্রথমে এর বিরোধিতা করলেও পরে জিসানের দিক দিয়ে চিন্তা করে বুঝতে পারলো ব্যাপারটা।
কিন্তু বোনকে আর বন্ধুকে এভাবে একা ছাড়তে রাজি ছিলো না।তাই জিসানের পাশের ফ্ল্যাটটি রায়হান কিনে নিয়ে পুরো পরিবারসহ এখানেই সিপ্ট হয়ে যায়।"
---হঠাৎ তিশা জিসানকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে,জিসানের পিঠের উপর মাথা রাখে।জিসানও প্রিয়তমার হাতটি ধরে একটা চুমো দিয়ে দেয়।
"আচ্ছা জীবনটা এতো সুখ সুখ লাগে কেনো।"
--প্রিয়জন পাশে থাকলে জীবনটা এমনেই সুখেরই হয় জান।
"ভালোবাসেন কতো আমায়।"
--এতোটা যে মাপতে গেলে মাপতে পারবি না।পরিসংখ্যাও আসবে না।
"কেনো এতো ভালোবাসেন সত্যি করে বলেন তো।"
--কেনো ভালোবাসি বলতে পারবো না,তোকে ছাড়া বাঁচতেও পারবো না।দূরে চলে গেলে মরে যাবো।বার বার তোকে কাছে টেনে নিবো।এতো কাছে যে আমার ভালোবাসার বাঁধন ছেড়ে যাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাববি না।কারণ
"তুই যে আমার এমনি একজন যাকে এক জনমেও ভালোবেসে ভরবে না এ মন।"
পৃথিবীতে এমন ভালোবাসা পাওয়া যায়না আজকাল।এমন করে কেউ তার প্রিয়তমাকে ভালোবাসতেও পারবে না।তাই আমরা দোয়া করবো ওদের এই ভালোবাসা চিরকাল অটুট থাকুক।
------------------------------সমাপ্তি-------------------------