05/11/2025
নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনে মামদানির ঐতিহাসিক জয়
অবশেষে সব জল্পনা–কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নিউইয়র্ক সিটি পেয়েছে তার নতুন মেয়র। দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত তরুণ রাজনীতিক জোহরান মামদানি জয়ী হয়েছেন এই শহরের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে। নিউইয়র্ক সময় রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
চূড়ান্ত ফলাফলে মামদানি পেয়েছেন ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো পেয়েছেন ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া পেয়েছেন মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এই ফলাফলের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন মুসলিম এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত তরুণ শহরের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দায়িত্বে নির্বাচিত হলেন।
ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই নিউইয়র্ক সিটি পরিণত হয় এক উৎসবের নগরীতে। টাইমস স্কয়ার, ব্রুকলিন ব্রিজ, জ্যাকসন হাইটস, ম্যানহাটন এবং ব্রঙ্কসে দেখা যায় হাজারো মানুষের মিছিল। কেউ কণ্ঠে স্লোগান তুলেছেন, কেউ পতাকা হাতে দাঁড়িয়েছেন। বড় স্ক্রিনে যখন মামদানির মুখ ভেসে ওঠে, তখনই মানুষ চিৎকার করে বলে ওঠে, “Yes, we did it!”
শহরের সাবওয়ে স্টেশনে স্ট্রিট মিউজিশিয়ানরা গাইতে শুরু করে: “This is our city, our time!” রাতটা যেন কেবল এক প্রার্থীর জয়ের রাত ছিল না, বরং নাগরিক চেতনার জাগরণের রাত।
নিউইয়র্ক সবসময়ই পরিবর্তনের শহর। প্রতিদিনই এখানে কিছু না কিছু নতুন ঘটে। কিন্তু আজকের রাতের এ পরিবর্তন ইতিহাসে বিশেষ স্থান করে নিলো। একজন অভিবাসী পিতার সন্তান, দক্ষিণ এশীয় পটভূমির তরুণ রাজনীতিক যখন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী শহরের নেতৃত্বে আসীন হলেন, তখন সেটি কেবল ব্যক্তিগত বিজয় নয়, বরং এক শহরের আত্মপরিচয়ের পুনর্নির্মাণ।
এই নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তরুণ ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ। আগাম ভোটে প্রায় ৩২ শতাংশ ভোটার ছিলেন ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্মজীবনের প্রথম পর্যায়ের তরুণরা প্রচারণায় অংশ নেন সক্রিয়ভাবে। তাদের হাতে ছিল ব্যানার, কাঁধে ব্যাগ, আর কানে হেডফোন। তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে একটাই আহ্বান—“Vote for change.”
এই বিজয় নিউইয়র্কের অভিবাসী সমাজের জন্যও এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে রইল। শহরের প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষ জন্মেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে। এই বিশাল অভিবাসী জনসংখ্যার অনেকেই আজ গর্বের সঙ্গে বলছেন, “নিউইয়র্ক এখন সত্যিকার অর্থে আমাদের শহর।”
এক বাংলাদেশি–আমেরিকান ব্যবসায়ী টাইমস স্কয়ারে আনন্দ মিছিলে অংশ নিয়ে বলেন, “আজকের এই জয় আমাদের প্রজন্মের জাগরণ। আমাদের সন্তানরা এখন বুঝবে, পরিশ্রম করলে তারাও নেতৃত্বে আসতে পারে।”
বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম মামদানির বিজয়কে “ইতিহাসের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত” বলে বর্ণনা করেছে।
দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, “Zohran Mamdani’s victory symbolizes a generational shift in American urban politics.”
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট মন্তব্য করেছে, “New York elects its first Muslim mayor, reflecting the city’s enduring faith in diversity.”
আল জাজিরা বলেছে, “A victory beyond politics—this is a statement of inclusion.”
বিশ্বনেতাদের শুভেচ্ছাও আসতে শুরু করেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘Congratulations to Mayor Mamdani. New York’s choice is an inspiration for cities across the world.”
লন্ডন সিটি মেয়র সাদিক খান টুইট করেছেন, “Welcome to the club, my brother. From London to New York, progress wins today.”
নিউইয়র্কের বর্তমান গভর্নর ক্যাথি হোচুল অভিনন্দন বার্তায় বলেছেন, “নিউইয়র্কের মানুষ প্রমাণ করেছে তারা বৈচিত্র্য ও মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “এই বিজয় মানবিক নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। শহরটি সহাবস্থানের মডেল হয়ে উঠবে।”
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক পোস্টে লিখেছেন, “Zohran Mamdani’s story is the story of America itself—hope, hard work, and humanity.”
নির্বাচনের আগের দিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক জনসভায় বলেছিলেন, “যদি মামদানি জিতে যান, তাহলে নিউইয়র্ক ধ্বংস হবে। আমরা তহবিল বন্ধ করে দেব।” এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন সাধারণ নিউইয়র্কবাসী। ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে তার কথারই উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন।
বিজয় ঘোষণার পর মামদানি কুইন্সে তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “এই জয় শুধু আমার নয়। এটি তাঁদের, যারা স্বপ্ন দেখেন একটি ন্যায্য ও নিরাপদ শহরের।” তিনি অঙ্গীকার করেন, “বাসস্থানের সংকট সমাধান, গণপরিবহন সাশ্রয়ী করা এবং যুবসমাজের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি—এই হবে আমার প্রথম তিন অগ্রাধিকার।”
মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্ক এখন নতুনভাবে নিজের গল্প লিখতে শুরু করেছে। এটি সেই গল্প, যেখানে ভালোবাসা ঘৃণাকে জয় করে, সাহস ভয়কে পরাজিত করে, আর বৈচিত্র্য হয়ে ওঠে শক্তি। একটি শহর আবারও প্রমাণ করল—পরিবর্তন সম্ভব, যদি মানুষ চায়। এটাই নিউইয়র্কের মুহূর্ত, এটাই নতুন সূর্যের গল্প।
অভিনন্দন, নিউইয়র্ক। অভিনন্দন, মেয়র জোহরান মামদানি।
#রিলসভিডিওシ #ভাইরালভিডিওシ #জোহরান
ফলো The Muslim Lens