12/02/2025
শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যাকাণ্ড: এক হৃদয়বিদারক ঘটনা
২০১৫ সালের ৮ জুলাই, বাংলাদেশে এক নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে, যা পুরো জাতিকে কাঁপিয়ে দেয়। ১৩ বছর বয়সী শেখ সামিউল আলম রাজন, সিলেটের এক নিরীহ কিশোর, নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারায়। তার হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
ঘটনার বিবরণ
সিলেটের কামারখেলা এলাকায় রাজনকে একটি রিকশা চুরির মিথ্যা অভিযোগে ধরে ফেলে কিছু স্থানীয় লোক। কিন্তু পুলিশের কাছে না নিয়ে গিয়ে, তারা নিজেরাই বিচার করতে শুরু করে।
রাজনকে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নির্যাতন করা হয়।
রাজন কান্নাকাটি করে, কাকুতি-মিনতি করে, বলেছিল—
"আমাকে এভাবে মারবেন না, আমি মরে যাবো!"
কিন্তু নির্যাতনকারীরা থামেনি, বরং হাসাহাসি করতে করতে তাকে মারতে থাকে।
এক পর্যায়ে রাজন পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তারা আবার ধরে এনে মারতে থাকে। এই ভয়ংকর নির্যাতনের ফলে রাজন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়।
ভিডিও ভাইরাল হলে জাতির ক্ষোভ
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে হত্যাকারীরা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। তারা ভেবেছিল, এতে তারা বাহবা পাবে।
কিন্তু উল্টো পুরো দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শিশুটির চিৎকার, কান্না আর যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু দেখে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
তদন্ত ও গ্রেপ্তার
রাজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
মূল অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম হত্যার পরপরই সৌদি আরবে পালিয়ে যায়।
অন্য অপরাধী মুহিত আলম (কামরুলের ভাই), কৌশার আহমেদ, ও আলী হায়দার গ্রেপ্তার হয়।
জনগণের চাপের মুখে বাংলাদেশ সরকার সৌদি আরবের সহযোগিতায় কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনে।
আদালতের রায় ও শাস্তি
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে আদালত দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে।
২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর, সিলেটের আদালত রায় ঘোষণা করে—
কামরুল ইসলাম, মুহিত আলম, কৌশার আহমেদ ও আলী হায়দার → মৃত্যুদণ্ড
বাকি ৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে কিছু সাজা হ্রাস করা হয়, তবে মূল অপরাধীদের ফাঁসির রায় বহাল থাকে।
জাতির প্রতিক্রিয়া ও শিক্ষা
রাজনের মৃত্যু দেশের মানুষের হৃদয়ে গভীর দাগ কেটেছিল।
মানুষ বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে।
শিশু নির্যাতন ও গণপিটুনি নিয়ে মানুষ সচেতন হতে শুরু করে।
সরকার এ ধরনের অপরাধ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।
উপসংহার
শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নৃশংস ঘটনা। যদিও তার হত্যাকারীরা শাস্তি পেয়েছে, তবু এই ঘটনা একটি তেতো শিক্ষা দিয়ে গেছে—আমাদের সমাজে এখনো নিরীহ ও অসহায়দের উপর নির্যাতন চলছে।
আজও মানুষ রাজনকে স্মরণ করে, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো শিশু এমন নির্মম পরিণতির শিকার না হয়।