29/06/2025
ইতিহাস যখন টার্গেট: দেয়াল ভাঙে, মুজিব মুছে ফেলা হয়
বিজয় স্মরণীর দেয়ালগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে
বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস,ঐতিহ্য, যা ভাষা, সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, চারুকলা, স্থাপত্য, এবং উৎসব-পার্বণের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত, এটি একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক। এই ঐতিহ্য কেবল একটি জাতির পরিচয় নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত ধারা যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। সেই দেয়াল, যেখানে আঁকা ছিল ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা, আর ছিল বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ স্বাধীনতার স্বপ্নময় সময়ের চিত্রমালা।
এই দেয়াল ভাঙা কি শুধুই কোনো নগরায়নের অংশ? নাকি এটা একটা সুপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক নির্মূল অভিযান?
আজকের বাংলাদেশে,
মুজিব মানেই সমস্যা, মুক্তিযুদ্ধ মানেই জ্বালা।
কারণ নতুন ‘বাংলাস্তান’-এ ইতিহাস ধরে রাখার অধিকার নেই। সেখানে দেয়াল নয়, ইতিহাস ভাঙা হয়। সেখানে বীরত্ব নয়, অপরাধী বানানো হয় মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারীদের।
বাংলাস্তানের সংস্কার: ইতিহাসের বিরুদ্ধে এক নীরব যুদ্ধ
আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি, যেখানে নতুন করে একটি ভিন্ন বাংলাদেশ নির্মাণের প্রয়াস চলছে।
এই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ 'বিতর্কিত', বঙ্গবন্ধু 'একটি দলের সম্পত্তি', আর ৭১'এর চেতনা নাকি 'পুঁজি' হয়ে গেছে।
এই কথাগুলো কে বলছে?
যারা নিজেদের সুশীল সমাজ বলে দাবি করে, মিডিয়াতে বসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জ্ঞান দেয়, তারা বিগত বছরগুলোতে এই বার্তাই ছড়িয়েছে—
“৭১ কারো একার না।”
“আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ভাবমূর্তি নিয়ে রাজনীতি করে।”
কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা—
আজ যখন বিজয় স্মরণীর দেয়ালে আঁকা মুক্তিযুদ্ধের ছবি তুলে ফেলা হয়, তারা নীরব।
যখন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রক্ষা করতে হয়, তারা অনুপস্থিত।
যখন গাজীপুরে বা ঢাকায় ‘মুজিব কর্নার’ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, তারা তা 'নান্দনিক রূপান্তর' বলে চালিয়ে দেয়।
সুশীলের মুখোশ খুলছে
একটি দীর্ঘ সময় ধরে আমরা যাদের ‘সুশীল সমাজ’ মনে করতাম, তারা আদতে স্বাধীনতা বিরোধী এক নব্যচক্রের মুখপাত্র।
এই চক্রের কাজ—
৭১'কে বিতর্কিত করা বঙ্গবন্ধুকে দখলদার বানিয়ে তোলা
মুক্তিযুদ্ধকে পণ্য বা রাজনৈতিক কৌশল বলে আখ্যা দেওয়া
ইতিহাসের মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো
তাদের চোখে মুক্তিযুদ্ধ মানেই "ভোটের রাজনীতি", বঙ্গবন্ধু মানেই "চেতনার দখল"।
কিন্তু প্রশ্ন হলো,
এই ইতিহাসের জন্য কারা জীবন দিয়েছে?
কারা নিষিদ্ধ সময়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি বুকে রেখেছে?
কারা রাজপথে গুলি খেয়েছে শুধুমাত্র ৭১-এর চেতনা রক্ষার জন্য?
উত্তর একটাই: আওয়ামী লীগ ও তার কর্মীবাহিনী।
নীরব মুক্তিযোদ্ধারা, জেগে উঠুক আপনারা!
আজ বাংলাদেশে হাজারো বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবিত আছেন।
কিন্তু দেয়াল ভাঙার সামনে তারা চুপ।
তাদের সংগ্রামের ইতিহাস মুছে ফেলা হচ্ছে চোখের সামনে।
তবু তারা দাঁড়িয়ে আছেন, নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে।
এখন সময়, তারা যেন বলেন—
“৭১ আমাদের, বঙ্গবন্ধু আমাদের, বাংলাদেশ আমাদের।”
ইতিহাসের একক উত্তরাধিকার: আওয়ামী লীগ
সব বিতর্ক, সব ষড়যন্ত্রের মধ্যেও একটি সত্য বারবার উঠে আসছে—
আওয়ামী লীগই এই রাষ্ট্রের জন্মদাতা, ইতিহাসের একমাত্র ধারক ও বাহক।
যারা জাতির পিতা বলে না, যারা ৭ মার্চের ভাষণের কথা ভুলে যেতে চায়, যারা বীরাঙ্গনা শব্দ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে—তারা কখনো মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার হতে পারে না।
এই বাংলাদেশে আজ যদি কেউ ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে,
যদি কেউ আজও স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে,
তবে সে আওয়ামী লীগ—
আর সেই দলটির নেতৃত্বে আছেন শেখ হাসিনা—
যিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যা নন, ইতিহাসের একমাত্র সংরক্ষক।
বাংলাদেশ আজ শুধু উন্নয়ন নয়, ইতিহাস রক্ষার লড়াইয়ে আছে।
যেখানে দেয়াল ভাঙা হয়, সেখানে প্রাচীর দিয়ে রক্ষা করতে হয় চেতনা।
যারা ইতিহাস চায় না, তারা ভবিষ্যতও চায় না।
তাই বলি—
আওয়ামী লীগ মানেই স্বাধীনতার উত্তরাধিকার।
শেখ হাসিনা মানেই সেই উত্তরাধিকারের অগ্রসেনানী।
বাঙালির ঐতিহ্য কেবল অতীতকালের স্মৃতিচিহ্ন নয়, বরং এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে বাঙালি জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে....
- সাখাওয়াত হোসেন
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়