09/12/2024
এমপিও শিক্ষকদের নভেম্বরের বেতন দেরির নেপথ্যে
তাদের সরকারি সহকর্মীরা ১ তারিখেই ইএফটিতে বেতন পেয়েছেন। তাদের এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা ও কারিগরির সহকর্মীরাও ইতিমধ্যে নভেম্বর মাসে বেতন পেয়েছেন। কিন্তু একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরধীন সাধারণ হাইস্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা অদ্যাবধি নভেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পাননি। দৈনিক শিক্ষার কাছে গত ১৪ বছর ধরে সারাদেশ থেকে এমপিও শিক্ষকরা টেলিফোন ও ইমেইলে জানতে চান এমপিওর চেক ছাড়ের খবর। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। এসব কারণে ইএফটিতে বেতন-ভাতারজন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা, ইএমআইইএস সেলে প্রকল্পভুক্ত কয়েকজন অস্থায়ী কর্মকর্তা ও সোনালী, অগ্রনীসহ এমপিও বিতরণকারী ব্যাংকগুলোর বিরোধীতায় ইএফটিতে দেরি হচ্ছে। এমপিও শিক্ষকদের মাসিক প্রায় হাজার কোটি তরল টাকা অতিরিক্ত সময় ব্যাংকের কাছে থাকলে ব্যাংকের অনেক লাভ। এই লাভের সামান্য একটা অংশ শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজনকে চাঁদা বাবদ দিয়ে আসছে ব্যাংকগুলোর কর্তারা। এছাড়া প্রকল্পভুক্ত ইএমআইএস সেলের কর্তারাও চাঁদা পান। তারা চাইলেই যে কাউকে এমপিওভুক্ত করতে পারেন। এখানে চাকরি করা প্রায় সবাই কোটি কোটি টাকার মালিক। কিছুদিন পরপর দুদক খোঁজে। মোটা অঙ্কের টাকা আর রাজনৈতিক তদবির দিয়ে দুদক থেকে রক্ষাও পান।
তবে, নভেম্বরের বেতনে দেরির বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচচশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে এবারে নতুন অনেক শিক্ষক এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আবার কয়েকজন নতুন উপপরিচালক যোগ দিয়েছেন। একই বুলি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের মুখেও। বাস্ততে এসবই ঘুমপাড়ানি মাসিপিসির গল্প।
দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইএমআইএস সার্ভারের দায়িত্বে সেসিপের অস্থায়ী কর্মকর্তারা। সংক্ষুব্ধ সেসিপ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, তাদের চাকরি রাজস্বখাতে নেয়ার বিরোধীতা করছেন সেসিপে কর্মরত একজন নারীসহ কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। যিনি গত ১৮ বছল ধরে শিক্ষা ভবনেই চাকরি করছেন। যার বোনের স্বামী ছাত্রদলের সাবেক নেতা। আওয়ামী লীগ আমলে মন্ত্রী ইনু ও নুরুল ইসলাম নাহিদ ছিলেন তার কাকা।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গত ১৯ আগস্ট শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বেতন-ভাতা প্রক্রিয়াকরণের ও বিতরণের কারিগরি শাখা ইএমআইএস সার্ভার বন্ধ করে দেন চাকরি রাজস্বখাতে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত সেসিপ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা শিক্ষা ভবনের নতুন ভবনে অবস্থিত ইএমআইএস সেলে ঢুকে সার্ভার বন্ধ করে দেয়। ওই সেলে কর্মরত সবাই সেসিপ প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মকর্তা।
📷
আন্দোলনকারীরা জানান, কর্মরত জনবলসহ সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) ১ হাজার ১৮৭টি পদ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হয়। এরই অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান ও শিক্ষা ভবনের গেটে তালা দেয়াসহ চার কর্মসূচি পালন করেন তারা।
কর্মকর্তারা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে চরম বৈষম্যের শিকার সেসিপ কর্মকর্তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন সেসিপ প্রোগ্রামে প্রায় ৩০ শতাংশ নারী কর্মরত। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসগুলোতে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে এখনো ইনক্রিমেন্টবিহীন স্কেলভিত্তিক বেতনে কর্মরত আছেন তারা। দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষিত, ১০-২২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ১ হাজার ১৮৭ জনবলকে মানবেতর জীবন-যাপন থেকে মুক্তি দিতে পদগুলো জনবলসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
তারা বলছেন, এসব পদ রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বাই নেইমে পদ সৃজনের সম্মতি দিলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এ পদগুলো রাজস্বখাতে স্থানান্তর করার সম্মতি দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিপাকে ১ হাজার ১৮৭টি পদের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই ওই পদগুলো রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবিতে গত কয়েকবছরে একাধিক কর্মসূচি দিলেও দাবি মানা হয়নি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় তারা ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছেন।
সেসিপ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. আবদুল হাকিমের মতে, সরকার ও এডিবির যৌথ অর্থায়নে ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সেসিপ প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়। সেসিপের ফলোআপ হিসেবে ২০০৭ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন মেয়াদে এসইএসডিপি হাতে নেয়া হয় এবং এর ফলোআপ প্রজেক্ট হিসেবে সব কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) চালু করা হয়।
Send a message to learn more