তাওহীদের ডাক-Tawheeder Dak

  • Home
  • তাওহীদের ডাক-Tawheeder Dak

তাওহীদের ডাক-Tawheeder Dak Official page

ঈমান থাকা সত্ত্বেও যে কারণে জাহান্নামীআশরাফুল ইসলাম [দক্ষিণ শালিকা, মেহেরপুর]ভূমিকা : আল্লাহ মানুষকে অনর্থক সৃষ্টি করেনন...
02/07/2025

ঈমান থাকা সত্ত্বেও যে কারণে জাহান্নামী
আশরাফুল ইসলাম [দক্ষিণ শালিকা, মেহেরপুর]
ভূমিকা : আল্লাহ মানুষকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি। বরং তাঁর ইবাদত-বন্দেগীর জন্যই সৃষ্টি করেছেন। মানুষের উপর আবশ্যকীয় বিধানগুলি তারা ফরয ও ওয়াজিব হিসাবে পালন করবে এবং সুন্নাত-নফল ইবাদতগুলি মীযানের পাল্লায় ফরযের সম্পূরক হিসাবে গণ্য হবে। তথাপি কেউ আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি ঈমান বিধ্বংসী কোন পাপে জড়িয়ে পড়লে তার সমস্ত সৎআমল বরবাদ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় একনিষ্ঠ তওবা ব্যতীত তার মৃত্যু হলে পরকালীন জীবনে আদি নিবাস জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামই তার হবে ঠিকানা। আলোচ্য প্রবন্ধে এমন কিছু পাপের কথা উল্লেখ করা হ’ল, যার কারণে ঈমান থাকা সত্ত্বেও মানুষকে জাহান্নামে যেতে হবে।

১.আল্লাহর সাথে শিরক করা : দুনিয়াতে যত পাপ আছে তন্মধ্যে বড় পাপ শিরক। শিরক হ’ল আল্লাহর সাথে যে কোন প্রকার কথা বা কাজের মাধ্যমে অংশী স্থাপন করা। আল্লাহ বলেছেন, لاَ تُشْرِكْ بِاللهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ ‘আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। নিশ্চয়ই শিরক মহাপাপ’ (লোকমান ৩১/১৩)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيْمًا ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করল, সে মহাপাপের মিথ্যা রটনা করল’ (নিসা ৪/৪৮)।

শিরকের পাপ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,الْكَبَائِرُالْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، أَوْ قَالَ: الْيَمِيْنُ الْغَمُوْسُ ‘সবচেয়ে বড় পাপ হ’ল (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা (২) পিতা-মাতার অবাধ্যতা (৩) মিথ্যা শপথ করা’।[1]

শিরককারীর সমস্ত আমলকে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের মাঠে ধ্বংস করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা ১৮জন রাসূলের নাম উল্লেখ করার পর বলেছেন,وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ- ‘যদি তারা শিরক করত, তাহ’লে তাদের সব সৎকর্ম বিফলে যেত’ (আন‘আম ৬/৮৮)। সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে আল্লাহ বলেছেন,وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ- ‘অথচ (হে নবী!) নিশ্চিতভাবে তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তী (নবীদের) প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়েছিল, যদি তুমি শিরক কর, তাহ’লে অবশ্যই তোমার সমস্ত আমল বিফলে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৩৯/৬৫)।

অতঃপর শিরক মানুষের সৎআমলকে বিনষ্ট করে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ- ‘বস্ত্তত যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করে, আল্লাহ অবশ্যই তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। আর যালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদা ৫/৭২)।

তথাপি আল্লাহ সব পাপকে ক্ষমা করলেও শিরকের পাপকে ক্ষমা করেন না। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না, এছাড়া অন্যান্য পাপ তিনি যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন’ (নিসা ৪/৪৮)। হাদীছে কুদসীতে এসেছে,قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِيْ بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً- ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার নিকট আস এবং আমার সঙ্গে কাউকে শিরক না করে থাক, তাহ’লে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাযির হব’।[2]

শিরকের পরিণাম সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করল’।[3]

এজন্যই রাসূল (ছাঃ) মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-কে ইয়মেনে পাঠানোর সময় ১০টি উপদেশ দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে প্রথমটিই হ’ল,لا تُشْرِكْ بالله شيْئاً وَإنْ قُتِلْتَ وحُرِّقْتَ- ‘তোমাকে হত্যা করলে বা আগুনে পুড়িয়ে ফেললেও আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শিরক করবেনা’।[4]

প্রিয় পাঠক! একটু ভাবুন, শিরক কত কঠিন ও ভয়াবহ গুনাহ, যে রাসূল (ছাঃ)-এর অমীয় নির্দেশে বললেন, মরে যাও তবুও শিরক করোনা, জ্বলে পুড়ে যাও তবুও শিরক করোনা।

আল্লাহ আমাদের সম্পর্কে বলেছেন,وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ- ‘তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে। অথচ তারা শিরক করে’ (ইউসুফ ১২/১০৬)। এ আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘যেসব মুসলিম ঈমান সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রকার শির্কে লিপ্ত রয়েছে তারাও এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমি তোমাদের জন্য যেসব বিষয়ের আশঙ্কা করি, তন্মধ্যে সবচাইতে বিপজ্জনক হচ্ছে ছোট শিরক। ছাহাবায়ে কেরামের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘রিয়া’ (লোক দেখানো ইবাদত) হ’ল ছোট শিরক’।[5] অন্য হাদীছে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করাকেও শিরক বলা হয়েছে’।[6] আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে মানত করা এবং যবেহ্ করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এভাবে বর্তমান সমাজের মানুষ নানাভাবে বিভিন্ন শিরকের সাথে জড়িত। আল্লাহ আমাদের শিরক থেকে বাঁচার তাওফীক দিন।

২. বিদ‘আত করা : শিরকের ন্যায় বিদ‘আতও একটি ভয়াবহ অপরাধ। যা বান্দার আমলসমূহ বিনষ্ট করে দেয়, যতক্ষণ না সে তা ছেড়ে দেয়। ইসলামী শরী‘আতে ছওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে নতুনভাবে সৃষ্ট সকল কিছুই বিদ‘আত। আর বিদ‘আত হ’ল ভ্রষ্টতা, যা জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي خُطْبَتِه، وَشَرَّ الْأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ، ‌وَكُلَّ ‌ضَلَالَةٍ ‌فِيْ ‌النَّارْ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ভাষণ দিতেন তখন তিনি বলতেন, দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভাবন সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট কাজ। প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। আর প্রতিটি ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’।[7]

আমাদের সমাজে বিদ‘আত নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা রয়েছে। অনেকে বিদ‘আত নিয়ে হাসি-তামাশা পর্যন্ত করেন। তারা বলেন, যার কোন দাঁত নেই সেটিই হ’ল বিদ‘আত। অথচ রাসূল (ছাঃ) জীবনের প্রতিটি খুৎবাতে বিদ‘আত হ’তে মানুষকে সতর্ক করেছেন। তাহ’লে এটি কত ভয়ংকর পাপ।

সমস্যা হ’ল আমাদের সমাজের মাওলানারা বিদ‘আত কাকে বলে সেটাই জানেনা। তারা বিদ‘আতের শাব্দিক অর্থ ‘নতুন কিছু সৃষ্টি করা’ নিয়েই হাসি-তামাশা করে। কিন্তু বিদ‘আতের একটি পারিভাষিক অর্থ আছে। ইমাম শাত্বেবী (রহঃ) বলেন, اَلْبِدْعَةُ طَرِيْقَةٌ فِيْ الدِّيْنِ مُخْتَرَعَةٌ، تُضَاهِيْ الشَّرْعِيَّةِ বিদ‘আত হ’ল দ্বীনের মধ্যে নবআবিষ্কৃত একটি পথ, যা দেখতে শরীআতের মতই’।[8] অথচ তা শরীআত নয়।

ইবনু রজব (রহঃ) বলেন,وَالْمُرَادُ بِالْبِدْعَةِ مَا أُحْدِثَ مِمَّا لَا أَصْلَ لَهُ فِيْ الشَّرِيْعَةِ يَدُلُّ عَلَيْهِ- বিদ‘আত দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল, এমন কোন কিছু আবিষ্কার করা যে বিষয়ে শরীআতে এমন কোন ভিত্তি নেই যা সেটিকে সাব্যস্ত করে।[9] ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,أَنَّ الْبِدْعَةَ فِيْ الدِّيْنِ هِيَ مَا لَمْ يَشْرَعُهُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ وَهُوَ مَا لَمْ يَأْمُرْ بِهِ أَمْرٌ إِيْجَابٌ وَلَا اِسْتِحْبَابٌ ‘দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত হ’ল আল্লাহ ও তার রাসূল (ছাঃ) যা বৈধ করেননি। আর যে বিষয়ে আদেশ করেননি তা ওয়াজিব বা মুস্তাহাব কোনটিই নয়’।[10]

বিদ‘আত মূলত রাসূল (ছাঃ)-এর বিরোধিতা করা এবং তাঁর আনীত শরীআতকে অবজ্ঞা করার নামান্তর। কেননা বিদ‘আতী দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করে বোঝাতে চায়, এটি কল্যাণকর। অথচ তা রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম জানতেন না। যেমনটি ইমাম মালেক (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন বিদ‘আত আবিষ্কার করল এবং সেটিকে ভাল কিছু মনে করল। তাহ’লে সে ধারণা করল মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর রিসালাত পুরোপুরি আমাদের নিকটে পৌঁছাননি। বরং খেয়ানত করেছেন। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ- ‘আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। সুতরাং রাসূল (ছাঃ)-এর সময়ে যা দ্বীন হিসাবে গণ্য ছিলনা, আজকেও তা দ্বীন হিসাবে গণ্য হবেনা’।[11]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,اِتَّبِعُوْا وَلاَ تَبْتَدِعُوْا فَقَدْ كُفِيْتُمْ كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ- ‘তোমরা আনুগত্য করো, বিদ‘আত করোনা। এটিই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। জেনে রাখো প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’।[12]

বিদ‘আতের ক্ষতিকর দিকসমূহের মধ্যে নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হ’ল - (১) বিদ‘আতী আমল আল্লাহর নিকটে গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও তার পিছনে যতই পরিশ্রম করা হউক না কেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهْوَ رَدٌّ- ‘যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে যা আমাদের দ্বীনে নেই, তা গ্রহণযোগ্য হবে না (অর্থাৎ প্রত্যাখ্যান হবে)’।[13] (২) বিদ‘আত একটি ভয়াবহ পাপ। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন,الْبِدْعَةُ أَحَبُّ إلَى إبْلِيسَ مِنْ الْمَعْصِيَةِ؛ فَإِنَّ الْمَعْصِيَةَ يُتَابُ مِنْهَا وَالْبِدْعَةَ لَا يُتَابُ مِنْهَا ‘ইবলীসের কাছে অন্যান্য পাপের চেয়ে বিদ‘আত বেশি প্রিয়। কারণ মানুষ অন্যান্য সকল পাপ থেকে তওবা করলেও (নেকীর কাজ মনে করে) বিদ‘আত থেকে তওবা করেনা’।[14] (৩) বিদ‘আতীর তওবা কবুল হবেনা, যতক্ষণ না সে তার বিদ‘আত ছেড়ে দিবে’।[15] (৪) বিদ‘আতী হাউযে কাওছারের পানি পান করতে পারবে না।[16] ইত্যাদি।

৩. উপকার করে খোঁটা দেওয়া : মুসলিম ভাইয়ের উপকার করা নেকীর কাজ এতে কোন সন্দেহ নেই। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে’।[17]

উপরের সকল কর্মই শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পরকালের জন্যই হ’তে হবে। অথচ আমরা কারো উপকার করলে সেটা মনে রাখি এবং ভাবনাটা এমন থাকে, সে আমার কাছে ঋণী। আর সেজন্য যখন উক্ত ব্যক্তি কোন প্রয়োজনে সাড়া না দেয়, তখন আমরা খোঁটা দিয়ে বসি। আমি তোমাকে অমুক অমুক উপকার করেছি। অথচ তুমি আমার ডাকে সাড়া দিলেনা! আর এমনটা করতেই হাদীছে নিষেধ করা হয়েছে। দুনিয়াতে অসংখ্য মানুষ আছে যারা উক্ত পাপে নিমজ্জিত। অথচ এই পাপ মানুষকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করে। আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنَّانٌ وَلَا عَاقٌّ وَلَا مُدْمِنُ خَمْرٍ- ‘উপকার করে খোঁটা দানকারী আর পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[18] সুতরাং উপকার একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই হ’তে হবে।

৩.অহংকার করা : মানুষ অতি দুর্বল প্রাণী। আল্লাহ বলেন,يُرِيْدُ اللهُ أَنْ يُخَفِّفَ عَنْكُمْ وَخُلِقَ الْإِنْسَانُ ضَعِيْفًا- ‘আল্লাহ তোমাদের উপর বিধান লঘু করতে চান। (কেননা) মানুষ দুর্বল রূপে সৃষ্ট হয়েছে’ (নিসা ৪/২৮)।

মানুষ তার প্রত্যেকটি বিষয়ে অন্যের মুখাপেক্ষী। জীবনের প্রথম গোসল এবং শেষ গোসল সে নিজে করতে পারেনা। দেহের প্রতিটা অঙ্গই একটি আরেকটির মুখাপেক্ষী। যে কিনা সামান্য অসুস্থ হলেই দুর্বল হয়ে পড়ে। আর চলতে ফিরতে পারেনা, উঠে দাঁড়াতে পারেনা। এই মানুষই পৃথিবীতে এসেছে রিক্ত হস্তে এবং যাবেও রিক্ত হস্তে। তাহ’লে কিভাবে সে অহংকার করতে পারে? অহংকার তো কেবল সৃষ্টিকর্তারই সাজে। আল্লাহ বলেন,وَلَهُ الْكِبْرِيَاء فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ- ‘আর তাঁরই জন্য সকল বড়ত্ব নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে। আর তিনিই মহা পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ (জাছিয়াহ ৪৫/৩৭)।

আর এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অহংকারের পরিণতি সম্পর্কে বলেছেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ ‌مَنْ ‌كَانَ ‌فِي ‌قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[19] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ ‘আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের সম্পর্কে জ্ঞাত করব না? তারা হ’ল বিবাদকারী, বদ মেজাযী ও অহংকারী’।[20]

হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে, قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي، وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي، فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا، قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ- ‘মহান আল্লাহ বলেন, অহংকার হ’ল আমার চাদর এবং মহত্ব হ’ল আমার লুঙ্গি। যে কেউ এর কোনো একটি নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব’।[21]
(ক্রমশঃ)

শায়খ আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী (আমেরিকা)তাওহীদের ডাক ডেস্ক [শায়েখ আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর, মেরিল্যা...
01/07/2025

শায়খ আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী (আমেরিকা)
তাওহীদের ডাক ডেস্ক
[শায়েখ আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর, মেরিল্যান্ডে ১৯৭৩ সালে খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে ইসলাম গ্রহণের পর তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছর অধ্যয়ন করেন এবং আরবী ভাষা, দাওয়াহ ও ইসলামী শরী‘আহ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। ইসলামের শান্তিপূর্ণ বার্তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি ৩৫টিরও বেশি দেশে বক্তৃতা ও দাওয়াহ কার্যক্রম চালিয়েছেন। তিনি PeaceTV, HudaTV, Tayba TV, Sharjah TV, Ges Qatar TV-এর মতো চ্যানেলে উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি IERA (UK) ও One Ummah Charity (UK)-এর দাওয়াহ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। বর্তমানে তিনি আয়ারল্যান্ডে অবস্থান করছেন।]

প্রশ্ন : আপনার পরিচয় ও জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : আমি আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী। ১৯৯৪ সালে আঠারো বছর বয়সে আমি ইসলাম গ্রহণ করি। ইসলাম গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যেই আমি সুদানে একটি সফরে যাই। এরপর ইসলামের গভীর অধ্যয়নের জন্য যাত্রা করি। আলহামদুলিল্লাহ মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি দশ বছর ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করি। স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে আমি দাওয়ার কাজে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেছি। পিস টিভি, হুদা টিভিসহ বিভিন্ন ইসলামী মিডিয়ায় কাজ করার সুযোগ হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি।

প্রশ্ন : ইসলাম গ্রহণের আগে আপনার ধর্মীয় বিশ্বাস কেমন ছিল?

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : আমি ক্যাথলিক খ্রিস্টান পরিবারে জন্মেছি এবং সেই বিশ্বাসেই বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকে আমি ক্যাথলিক স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। কিন্তু আমার দুষ্টু স্বভাবের কারণে আমাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমাদের পরিবার নিয়মিত গির্জায় যেত। বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আমরা গির্জায় যেতাম, এমনকি মাঝে মাঝে প্রতি সপ্তাহেও। আমাদের ঘরে বাইবেল ছিল, আমরা ক্রস চিহ্নের মতো ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করতাম এবং রোজারি পড়তাম। সবকিছু মিলিয়ে খ্রিস্টান ধর্ম আমাদের জীবন-যাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।

প্রশ্ন : ইসলাম গ্রহণের আগে আপনার জীবন কেমন ছিল?

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : আমি তখন ১৮ বছর বয়সে এক কঠিন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম। তখন আমি মাদক বিক্রিতে জড়িয়ে পড়ি। আমার খুব কাছের এক বন্ধু এই জীবনধারার ছিল। সেই সময় গাঁজা-ধূমপান অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। আমার বন্ধু একদিন আমাকে গাঁজা রোল বানিয়ে বলেছিল, ‘সব গ্যাংস্টার আর শক্তিশালী লোকেরা এগুলো করে’। তখন আমি একজন ক্রীড়াবিদ ছিলাম। তাই শুরুতে এসবের বিরুদ্ধে ছিলাম। কিন্তু একটু পর মনে হ’ল, এটা কুল কাজ। এরপর গাঁজা শুরু করলাম। সিগারেট আর মদ্যপানও শুরু করি। মদ্যপান আমার সংস্কৃতিরই অংশ ছিল। এভাবে বাস্কেটবল থেকে সরাসরি ভুল পথে চলে গেলাম, ভুল বন্ধু আর পরিবেশের কারণে।

আমি স্কুলেও যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। মাঝে মাঝে স্কুলে গেলে অস্ত্র নিয়ে যেতে হ’ত। কারণ আমাদের পাড়ার প্রতিপক্ষ ছেলেদের সঙ্গে ঝামেলা ছিল। তারা আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। একদিন এক বন্ধু আমাকে স্কুলের পর তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাল। সে বলল, তোমাকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। সে তার গদি থেকে একটি পিস্তল তুলে আমাকে দিল। বলল, হয়তো তুমি বাঁচবে, নয়তো তারা। আর শোনো, একটি পিস্তল চেম্বারে রাখ। তখন থেকে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় আমি আমার বন্দুক সাথে রাখতাম। তারপর তাদের আসার অপেক্ষা করতাম। তারা একবার এসেছিল, কিন্তু আমাদের স্কুলের বন্ধুদের সাহায্যে তাদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলাম।

প্রশ্ন : তাহ’লে আপনার জীবনে কিভাবে পরিবর্তন শুরু হ’ল?

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, এই ধরনের জীবনধারায় আমি বেশিদিন টিকে থাকতে পারব না। কিন্তু সত্যি বলতে, তখনও আমি এটি ছাড়তে চাইছিলাম না। কারণ আমি এই জীবন উপভোগ করছিলাম। আমি জানতাম, এই পথে চললে হয়তো জেলে যেতে হবে অথবা জীবনের কোনো এক সময় মারা পড়ব। তবুও আমি উচ্চবিলাসী জীবন-যাপন করতে চেয়েছিলাম। ১৭ বছর বয়সে আমি প্রতিদিন এক হাযার ডলার আয় করতাম। আমি সাধারণ জীবন যাপন করতে পারতাম না। আমি হোটেলে থাকতাম, বাড়িতে যেতাম না। কিন্তু কিছু সময় পর বুঝতে পারলাম, এই জীবন আমাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

একবার আমি একটু বেশি মাদক সেবন করেছিলাম। তখন আমার দেখা হয় এমন একজনের সঙ্গে, যে আমার শত্রুদের একজন। সে ইচ্ছা করলেই আমাকে ভয়ানক পরিস্থিতিতে ফেলতে পারত। কিন্তু সে আমাকে করুণা করল। কারণ সে বুঝতে পারল, আমি তখন নেশাগ্রস্তত। আমি নিজেও ভাবলাম, আমি কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছি! আমি কখনো কোকেন বা হেরোইনের মতো মাদক সেবন করিনি, যদিও বিক্রি করতাম। কারণ আমি দেখেছি, কিভাবে এসব মাদক মানুষকে দুর্বল করে দেয়। আর আমিও এত দুর্বল হয়ে গেলাম যে, নিজেকে রক্ষা করতে পারছিলাম না। ফলে আমি আর দুর্বল ও অরক্ষিত থাকতে চাইছিলাম না।

এই উপলব্ধিতে ১৮ বছর বয়সে আমি কঠোর সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের জন্য কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করব। আমি মোট ছয়টি লক্ষ্য ঠিক করলাম। সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ভাল ছিল না। যেমন, হারাম সাম্রাজ্য গড়ে তোলা, অর্থাৎ অবৈধ মাদক ব্যবসা করে ধনী হওয়া। আমি তখনো পরিবারের সঙ্গে থাকতাম, তাই আমি চেয়েছিলাম একটি সুন্দর বাড়ি আর সাধারণ কোনো গাড়ি। কিন্তু পুলিশের নযরে না পড়ার মতো। একজন প্রবীণ আমাকে বলেছিলেন, ‘সবসময় দামি গাড়ি চালিও না, কারণ পুলিশ দেখবে তুমি ১৭-১৮ বছরের বেকার, তবুও দামি গাড়ি চালাচ্ছ, তাহ’লে বুঝতে পারবে তুমি অবশ্যই কিছু একটা করছ। সেদিন থেকে আমি শিখলাম একটা সাধারণ গাড়ি রাখব, আর কোনো অনুষ্ঠানে গেলে তখন ভালো গাড়ি ব্যবহার করব। আমার দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল নিজের থাকার মতো একটি সুন্দর জায়গা বা বাড়ি। তৃতীয় লক্ষ্য ছিল, একজন বিশেষ মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা। চতুর্থ লক্ষ্য ছিল আমার স্বাস্থ্য ফিরিয়ে নেওয়া। কারণ আমি বুঝতে পারছিলাম, মদ্যপান আর ধূমপান আমার শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

একটি স্মরণীয় ঘটনা মনে পড়ে, আমি তখন রাস্তা দিয়ে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দু’জন মেক্সিকান মাতাল আমাদের গালিগালাজ করতে শুরু করল। তারা এমন বাজে কথা বলছিল, যা এখানে বলা সম্ভব নয়। আমি রেগে গিয়ে তৎক্ষণাৎ বেল্ট খুলে হাতে জড়িয়ে এক ছেলেকে মারার উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলাম। ঠিক সেই সময় পিছন থেকে একটি পুলিশের গাড়ি চলে আসল। আমি ছেলেটিকে ঘুষি মারলাম, তখন সে আমার দিকে একটি মদের বোতল ছুঁড়ে মেরে বাঁচার চেষ্টা করল।

পুলিশ দেখে আমি দ্রুত দৌড় দিলাম। আমি এ এলাকাতেই বড় হওয়ায় জানতাম, কোন পথ ধরে পালানো উচিত। একসময় আমরা খেলোয়াড় ছিলাম। বেড়ার ওপর দিয়ে খরগোশের মতো লাফিয়ে পালাতাম। কিন্তু এবার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল, কারণ ধূমপান আর নেশার কারণে শরীর দুর্বল ছিল। অবশেষে আমি হাল ছেড়ে বসে পড়লাম। ভেবেছিলাম, পুলিশ এখনই আমাকে ধরে ফেলবে। কিন্তু তারা তখনও মেক্সিকান ছেলেদের নিয়েই ব্যস্ত ছিল। সেই সুযোগে আমি পালিয়ে যেতে পেরেছিলাম। সেই সময়ই আমি গভীরভাবে বুঝতে পারলাম, আমার স্বাস্থ্যের অবস্থা আগের মতো নেই। এই উপলব্ধি আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করল, স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। নিজেকে শক্তিশালী করতে হবে।

আমার ষষ্ঠ লক্ষ্য ছিল আরও ধার্মিক হওয়া। আমি অনুভব করলাম, আমার স্রষ্টার সঙ্গে একটি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যদিও তখন আমার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ছিল মাফিয়াদের মতো। যারা সপ্তাহজুড়ে যাই করুক, রবিবার গির্জায় গিয়ে দান করে এবং কমিউনিটি কাজে অংশ নেয়। কিন্তু বাকি ছয় দিন ঠিক উল্টো জীবন যাপন করে। আমিও ভাবতাম, আমি বাইবেল পড়ব, আমার হাতে সোনার একটি চেইন ছিল, যার ওপর সোনার ক্রস ঝুলত। এটাই ছিল আমার ধর্মীয় অভিব্যক্তি। তবুও আমি জানতাম, জীবনে আধ্যাত্মিকতার প্রয়োজন আছে।

প্রশ্ন : তাহ’লে আপনার হেদায়াতের সঙ্গে সেই ছয়টি লক্ষ্যের কি কোনো সম্পর্ক ছিল?

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : নিশ্চয়ই সম্পর্ক ছিল। আমার ষষ্ঠ লক্ষ্য আধ্যাত্মিকতা ও ধার্মিকতাই ছিল আমার ইসলামে যাত্রার শুরু। একবার আমি আমার এক বন্ধুর বাবার কাছে যাই, যিনি আফ্রিকান-আমেরিকান ছিলেন। তখন আমরা তার ছেলের সঙ্গে মাদক ব্যবসা করতাম। কিন্তু সে বাড়িতে ছিল না। তাই তার বাবা আমাকে বেসমেন্টে অপেক্ষা করতে বললেন। আমি বিরক্ত হয়ে বসে থাকলাম। তখন দেখলাম, তার বাবা কুরআনের তেলাওয়াত শুনছেন। সেই মুহূর্তে আমার মনে গভীর প্রভাব পড়ল এবং আল্লাহর প্রতি একটা টান অনুভব করলাম। আলহামদুলিল্লাহ এই ঘটনাই ছিল আমার জীবনের মোড়। যা আমাকে ইসলামের দিকে নিয়ে গেল। তাই আমার ষষ্ঠ লক্ষ্যই প্রথম লক্ষ্য হিসাবে পূর্ণ হ’ল।

প্রশ্ন : তিনি কি মুসলিম ছিলেন?

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : হ্যাঁ, আমার বন্ধুর বাবা মুসলিম ছিলেন। আমি যখন তার বাড়িতে গেলাম, তিনি তখন কুরআনের তেলাওয়াত শুনছিলেন। যেখানে আরবী পাঠের পরই ইংরেজি অনুবাদ হচিছল। তিনি মনোযোগ দিয়ে সেই অনুবাদ শুনছিলেন। ইসলাম সম্পর্কে আমার আগ্রহ জাগল। তাই আমি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে তাকে বললাম, ‘আমি কি আপনার সঙ্গে বসে ইসলাম নিয়ে কিছু প্রশ্ন করতে পারি? তিনি বললেন, অবশ্যই। আমি টিম্বারল্যান্ড বুট পরে জায়নামাযের ওপর দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম। তিনি নম্রভাবে বললেন, ওটা ছালাতের চাদর। আমি জুতা খুলে বসে পড়লাম। আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, আমি কি মুসলিম হ’তে পারি? কারণ তখনও আমার মনে কিছু ভুল ধারণা ছিল। যেমন ইসলাম কেবল কালো মানুষদের জন্য কিংবা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি হেসে বললেন, ‘অবশ্যই! তুমি সাদা হও, কালো হও, বাদামী, এমনকি বেগুনি বা গোলাপী হলেও তোমার রঙ কোনো বিষয় না। ইসলাম সবার জন্য। তারপর তিনি আমাকে ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানালেন। আমি আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলাম, ‘আপনার কাছে কি ইসলাম নিয়ে পড়ার মতো কিছু বই আছে? আলহামদুলিল্লাহ তিনি আমাকে চারটি বই দিলেন। আমি সেগুলো নিয়ে বাসায় গিয়ে শেলফে রাখলাম। এর একটি ছিল মুসলিমরা যীশু (আঃ) সম্পর্কে কী বিশ্বাস করে। কিন্তু সুবহানাল্লাহ! যখন কেউ সত্যের সন্ধানে থাকে মুসলিম হোক বা না হোক আল্লাহ তার জন্য পথ খুলে দেন।

প্রশ্ন : শেষ পর্যন্ত কীভাবে ইসলাম গ্রহণ করলেন?

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : প্রায় দুই মাস পরে এমন একটি ঘটনা ঘটল, যা আমাকে নাড়িয়ে দিল। সেটি ছিল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা। তখন আমি এমন এক সময় পার করছিলাম, যখন আমার লাইসেন্স স্থগিত ছিল এবং আমি অন্য একজনের পরিচয়ে গাড়ি চালাতাম। কারণ সেই সময় কম্পিউটারে ছবি দেখা যেত না। তাই উচ্চতা, ওজন, চুলের রঙ আমার বন্ধুর বিবরণের সাথে মিলে যাওয়ায় আমি তার নাম ব্যবহার করতাম। সেই দিন আমরা গাঁজাসহ কিছু অবৈধ বস্ত্ত সেবন করে গাড়ি চালানোর সময় দুর্ঘটনার শিকার হই। আমি জানতাম পুলিশ এলেই আমি জেলে যাব। আমি তাদের আসার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু অদ্ভুতভাবে তারা আসতে দেরি করল। মনে হ’ল এটি হয়তো আমার পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ। তখনই আমি গাড়ি ফেলে ছোট এক বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে বন্ধুর বাড়ির দিকে দৌঁড়াতে শুরু করলাম। যেন কোনো হলিউড সিনেমা চলছে যে গাছপালা, কুকুর, হেলিকপ্টার সবই ছিল। আলহামদুলিল্লাহ ধরা পড়িনি।

এরপর আমি গাড়িহীন হয়ে পড়ি। সেই একঘেয়ে সময়ে হঠাৎ মনে পড়ে গেল ইসলাম নিয়ে কিছু বই তো আমার কাছে আছে! তখন আমার জীবনের ছয় নম্বর লক্ষ্য ছিল আরও ধার্মিক হওয়া। তাই ভাবলাম, ধর্ম নিয়ে কিছু পড়া যাক। আমি বইগুলো হাতে নিলাম। একটির নাম ছিল The Religion of Truth অর্থাৎ ‘সত্যের ধর্ম’। বইটি খুলতেই আমার মনোযোগ আটকে গেল। এটা ছিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা, লাইলাতুল জুম‘আ। আমি বইটি এক বসাতেই পড়ে শেষ করে ফেললাম। চারটি বিষয় আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল।-

(১) তাওহীদ হ’ল এক আল্লাহর উপাসনা : ইসলামের সবচেয়ে বড় বার্তা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। একজন মুসলিম হিসাবে কোনো মধ্যস্থতাকারী নেই, আপনি সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন। খ্রিস্টধর্মে যেমন গির্জায় গিয়ে পাদ্রীর সামনে পাপ স্বীকার করতে হয়। ইসলামে এমন কিছু নেই। আমি ভাবলাম, সে কে? যে আমাকে ক্ষমা করে? ইসলাম আমাকে শিখাল ক্ষমা চাইতে হয় সরাসরি আল্লাহর কাছে। এটি আমার অন্তরে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

(২) পবিত্রতা ও ছালাতের প্রস্ত্ততি : আমি জানতাম না একজন মুসলিম কীভাবে ছালাতের জন্য নিজেকে প্রস্ত্তত করেন। যেমন একান্তভাবে থাকা, বসে টয়লেট ব্যবহার করা যাতে কাপড়ে নাপাকি না লাগে। পশ্চিমে এইসবকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমি নিজেও আগে অস্বস্তি বোধ করতাম। অথচ মুসলিমদের এই পবিত্রতা আমাকে মুগ্ধ করল। এমনকি একজন শিক্ষিকা শুধুমাত্র একজন মুসলিম ছাত্রের পবিত্রতা দেখে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

(৩) শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনব্যবস্থা : ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ আমাকে অনেকটা মালকম এক্সের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সোজাসাপ্টা পথ কালেমা, ছালাত, যাকাত, ছিয়াম ও হজ্জ একটি শৃঙ্খলার বার্তা দেয়। আমি বুঝলাম, এটাই আমার প্রয়োজন। এই শৃঙ্খলা আমার জীবনকে সোজা করতে সাহায্য করবে।

(৪) শুধু বিশ্বাস নয়, কাজও যরূরী : ইসলামে শুধু মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললেই হবে না, সেটা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে হবে। আমি বুঝলাম, বিশ্বাস ও আমলের মধ্যে ভারসাম্যই প্রকৃত মুসলিম হওয়ার চাবিকাঠি। এটি ছিল আমার কাছে অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত। এই চারটি বিষয় আমাকে এতটাই আলোড়িত করল যে, আমি আর দেরি করিনি।

পরদিন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ইসলামই আমার একমাত্র পথ। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার বন্ধুর বাবাকে ফোন করলাম। তিনি আমাকে ওয়াশিংটন ডিসির ইসলামিক সেন্টারে নিয়ে গেলেন। সেখানেই আমি আমার শাহাদাহ পাঠ করলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমার জীবনের নতুন সূচনা হ’ল।

প্রশ্ন : শাহাদাহ পাঠের সময় আপনি কি অনুভব করেছিলেন?

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : শাহাদাহ গ্রহণের মুহূর্তটি ছিল আমার জীবনের এক স্মরণীয় ও অন্তর্দর্শনভরা সময়। কিন্তু সত্যি বলতে সেই মুহূর্তে আমি ভীষণ নার্ভাস ছিলাম। আমাকে শাহাদাহ শেখাচ্ছিলেন। আর আমাকে সেটা আরবীতে বলতে হবে। আমি তখন বললাম, ‘আমি তো কেবলমাত্র লেভেল ১ স্প্যানিশ পারি, আরবীতে শাহাদাহ বলা তো অসম্ভব লাগছে! আমি তখনো মুসলিম ছিলাম না, কিন্তু মুসলিমদের সঙ্গে ইসলামিক সেন্টারে মাগরিবের ছালাতে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি ছালাতে দাঁড়িয়ে থাকলেও ভিতরে ভিতরে যেন ভেঙে পড়ছিলাম। তখন ইমাম ছাহেব আমাকে বললেন, চিন্তা করো না, এটা সহজ হবে। আমি তার পেছনে ধীরে ধীরে বলতে লাগলাম, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। আরবীতে উচ্চারণটা ছিল যেন জিহবার উপর মধুর মত নরম, স্বচ্ছন্দ। সেই মুহূর্তে আমি অনুভব করলাম, যেন আমার বুক থেকে বিশাল এক বোঝা নেমে গেল। যেন আমি সত্যিই বদলে যাচ্ছিলাম। চারপাশের সবাই এসে আমাকে আলিঙ্গন করছিল, অভিনন্দন জানাচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল, আমি একটি নতুন পরিবারের অংশ হয়ে গেছি। এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করছিলাম।

প্রশ্ন : ইসলাম গ্রহণের পর আপনার পরিবারের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : আলহামদুলিল্লাহ আমার পরিবার অত্যন্ত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। যদিও তারা ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছু জানত না। কিন্তু তারা আমার ব্যক্তিত্ব ও জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তনে খুশি ছিল। তারা ভাবতেও পারেনি যে এই পরিবর্তনটা দীর্ঘস্থায়ী হবে। আমার দাদা যিনি ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিতে প্রবেশ করা প্রথম মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যদের একজন, তিনিও খুশি হয়েছিলেন। তিনি প্রায় বলতেন, আমি জানি না মুসলিমদের মধ্যে কী আছে তাদের মসজিদ, তাদের কুরআন? কিন্তু ছেলেটা বদলে গেছে, ভালো হয়েছে। এখন সে রাতে বাইরে যায় না, ঘরের কাজে সাহায্য করে’। এটা তার চোখে একটা প্রশংসনীয় পরিবর্তন ছিল।

প্রশ্ন : মুসলিম হওয়ার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আগের জীবনের পরিবেশ থেকে নিজেকে আলাদা করা। আমি যেখানেই ছিলাম, সেটি ছিল আমার প্রাক্তন জীবনের ঠিক দরজার পাশে। একধরনের টান অনুভব করতাম। একবার তো আমি ইসলাম গ্রহণের মাত্র ৯ দিন পর রাস্তার সেই পুরনো পথে হেঁটে যাচ্ছিলাম, ঠিক যেন ফিরে যেতে চলেছি। ঠিক তখনই এক বন্ধু আমাকে বলল, ‘দেখ, সে তো বলে সে মুসলিম, কিন্তু তার আচরণে আমাদের সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই’। কথাটা যেন বজ্রপাতের মতো হৃদয়ে আঘাত করল। আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম, ‘তুমি মুসলিম হলে কেন? শুধু নামের জন্য, না সত্যিই আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য? এরপর প্রায় এক থেকে দেড় মাস আমি এক ভেতরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেলাম। শরীরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। মন, দেহ, আত্মা সবই যেন এক পরীক্ষা পার করছিল। কিন্তু আমি নিজেকে ধরে রেখেছিলাম, মসজিদে যেতাম, মুসলিমদের সাহচর্যে থাকতাম। নবী করীম (ছাঃ)-এর যুগেও নব মুসলিমদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল ছিল ‘দারুল আরকাম’। তেমনি আমিও আমার চারপাশের মুসলিম ভাইদের মাঝে আশ্রয় পেয়েছিলাম। সেই পরিবেশই আমাকে টিকিয়ে রেখেছিল। এখন পেছনে তাকালে মনে হয় আলহামদুলিল্লাহ এটি ছিল আল্লাহর অশেষ রহমত।

প্রশ্ন : আপনি প্রথম কাকে দাওয়াত দিয়েছিলেন?

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : আমি যাকে প্রথম দাওয়াহ দিয়েছিলাম, তিনি ছিলেন আমার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আল্লাহর অশেষ কৃপায় তিনি আমার কথা শুনলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন। যদিও তিনি পরে কিছুটা পথভ্রষ্ট হয়ে যান, আমি আশা করি আল্লাহ তাঁর অন্তরের ইখলাছ জানেন। এরপর আমি অনেক বন্ধুদের ইসলামের দিকে ডাক দিয়েছি। কেউ কেউ প্রভাবিত হয়েছিল, কেউ বলেছিল, ‘আমি এক বছরের মধ্যে মুসলিম হবো কিন্তু নানা ব্যস্ততায় পিছিয়ে গেছে। কেউ শুনেইনি, কেউ শুনে চিন্তা করেছে। আমি আমার পরিবারের সাথেও কথা বলেছিলাম। বিশেষ করে আমার দাদীর উপর বেশি মনোযোগ দিয়েছিলাম। কারণ তিনি ছিলেন সেই মানুষ যিনি আমাকে বড় করেছেন। যখন আমি মাত্র পাঁচ বছরের, তখন আমার বাবা-মা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তখন আমি, আমার ভাইবোন এবং চাচাতো ভাইবোন মিলে ছয়জন একসাথে বড় হচ্ছিলাম, আর আমি ছিলাম সবার ছোট।

আমার দাদীর সাথে ছিল আমার এক অটুট সম্পর্ক। তিনি তখন বয়সের ভারে ক্লান্ত, হুইলচেয়ারে বসে থাকতেন। আমি কুরআন জোরে পড়তাম যেন তিনি শুনতে পারেন। আমি তাঁকে বলতাম, আমরা মুসলিমরা কী বিশ্বাস করি? বিশেষ করে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে। তিনি হতবাক হয়ে যেতেন, যেন কোনো অজানা সত্য তাঁর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। একদিন আমি যখন তাঁকে গোসল করাতে সাহায্য করছিলাম, তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আমার কথা বিশ্বাস করেন? এটা কি আপনার কাছে সত্য বলে মনে হয়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি তাঁকে কালেমা পড়ে শুনালাম, ব্যাখ্যা করলাম, কীভাবে উচ্চারণ করতে হয়। তিনি আমার সাথে শাহাদাহ পাঠ করলেন, আলহামদুলিল্লাহ।

পরে আমি বিদেশে চলে যাই। তাঁর সাথে খুব বেশি সময় কাটাতে পারিনি। কিন্তু আমি যখন আলেমদের জিজ্ঞেস করি, তারা বললেন, যেহেতু তিনি ঈমান এনেছেন এবং কালেমা পাঠ করেছেন, ইনশাআল্লাহ তিনি মুসলিম হিসেবেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এই ঘটনাটি আমার জীবনে এক গভীর ছাপ ফেলেছে। কারণ তিনি শুধু আমার দাদী নন, ছিলেন আমার জীবনের মূল ভিত্তিগুলোর অন্যতম। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত দান করুন।

প্রশ্ন : আপনি এমন কোনো ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন যা কখনো ভুলতে পারবেন না?

আব্দুর রহীম ম্যাকার্থী : আলহামদুলিল্লাহ, এমন অনেক ঘটনা আছে। তবে বিশেষ একটি ঘটনা বলি যা খুবই আবেগময় এবং আপনাদের কাছেই প্রথমবার শেয়ার করছি। আমি কাতার বিশ্বকাপে দাওয়াহ কার্যক্রমে ছিলাম। হঠাৎ এক কাতারী বোন আমাকে ফোন করে জানালেন একজন ৬ বছর বয়সী আমেরিকান ছেলে ইসলাম গ্রহণ করতে চায়! আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, এই বয়সে সে কী বুঝবে? হয়তো মজা করছে। কিন্তু তাঁরা অনুরোধ করলেন, যেন আমি আসি। আমি যখন সেখানে পৌঁছালাম, ছেলেটির মা বললেন, সে নিজের ইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করতে চায়। আমি তাকে শিক্ষা দিচ্ছি, নিজেও শিখছি। সে ছেলেটি কাতারে একটি স্কুলে পড়ছে, যেখানে তাঁর বন্ধুরা মুসলিম। ইসলামিক স্টাডিজের ক্লাসগুলো তার মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সে তার মাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করত, আমরা কেন ছালাত পড়ি? আর তার মা তাকে বুঝিয়ে বলত, ‘আল্লাহ আমাদের সবকিছু দেন, তাই আমরা তাঁরই উপাসনা করি। একজন ৬ বছর বয়সী বাচ্চার এমন ঈমান, এমন উপলব্ধি দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। সে স্পষ্টভাবে জানত সে কী করছে। সেই দিনই সে শাহাদাহ পাঠ করে মুসলিম হয়।

তারপর আমি তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আপনার কী হবে? তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘আমি ইসলামকে বিশ্বাস করি, কিন্তু অপেক্ষা করছিলাম বিশেষ কোনো সময়ের জন্য’। আমি বললাম, ‘এটির চেয়ে বিশেষ মুহূর্ত আর কী হ’তে পারে! আপনার সন্তান আজ মুসলিম হয়েছে! এই কথার পর তিনি বললেন, ‘আপনি ঠিক বলেছেন’। আর সেদিনই তিনি তার ছেলের সাথে ইসলাম গ্রহণ করলেন। সুবহানাল্লাহ! সে দিনটি ছিল চোখে পানি আসার মতো এক মুহূর্ত। সেখানে উপস্থিত সবাই কেঁদে ফেলেছিল। পরে জানতে পারি তার স্কুলে একটি বড় সেলিব্রেশনও করা হয়েছিল তার ইসলাম গ্রহণ উপলক্ষ্যে।

[তথ্য সূত্র : ইন্টারনেট]

অন্যায়ভাবে মানব হত্যার পরিণতি (পূর্ব প্রকাশিতের পর)ফায়ছাল মাহমূদ [কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ;শি...
30/06/2025

অন্যায়ভাবে মানব হত্যার পরিণতি (পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ফায়ছাল মাহমূদ
[কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ;
শিক্ষক : আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, রাজশাহী]
মুসলিমের জীবন, সম্পদ ও সম্মানের পবিত্রতা : মুসলিমের জীবন, সম্পদ ও সম্মান হরণ করা হারাম। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুসলিমদের পরস্পরের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানের নিরাপত্তা সম্পর্কে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,فَإنَّ دِمَاءَكُمْ وَأمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِيْ بَلَدِكُمْ هَذَا فِيْ شَهْرِكُمْ هَذَا ‘তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের ইযযত পরস্পরের উপরে এমনভাবে হারাম, যেমন এই দিন, এই শহর ও এই মাস তোমাদের জন্য হারাম।[1]

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কাবা প্রদক্ষিণকালে বলছিলেন,مَا أَطْيَبَكِ وَأَطْيَبَ رِيحَكِ، مَا أَعْظَمَكِ وَأَعْظَمَ حُرْمَتَكِ، وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَحُرْمَةُ الْمُؤْمِنِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ حُرْمَةً مِنْكِ، مَالِهِ، وَدَمِهِ، وَأَنْ نَظُنَّ بِهِ إِلَّا خَيْرًا- ‘তুমি কতই না পবিত্র এবং তোমার সুগন্ধি কতই না মনোমুগ্ধকর! তুমি কতই না মহান এবং তোমার মর্যাদা কতই না উচ্চ! যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, সেই সত্তার শপথ! আল্লাহর কাছে মুমিনের সম্মান তোমার সম্মানের চেয়েও অধিক। তার সম্পদ ও রক্ত (পবিত্র), আর আমরা তার সম্পর্কে কেবল সুধারণাই পোষণ করি’।[2]

ইসলামে মানুষ হত্যার বিধান : আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে মানুষ হত্যাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং এর জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রেখেছেন। অন্যায়ভাবে কারো জীবন নেওয়া পৃথিবীর অন্যতম জঘন্য কাজ। আল্লাহ বলেন, وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ- ‘ন্যায্য কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। এসব বিষয় তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা অনুধাবন করো’ (আন‘আম ৬/১৫১)।

হত্যা গুরুতর ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ : আব্দুল্লাহ ইবনু বুরায়দা তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, قَتْلُ الْمُؤْمِنِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ زَوَالِ الدُّنْيَا ‘মুমিনকে হত্যা করা আল্লাহর নিকট গোটা পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার চেয়ে গুরুতর’।[3]

আবুদ দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,كُلُّ ذَنْبٍ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَغْفِرَهُ، إِلَّا مَنْ مَاتَ مُشْرِكًا، أَوْ مُؤْمِنٌ قَتَلَ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا-. ‘আল্লাহ (চাইলে) সব গুনাহই ক্ষমা করবেন; কিন্তু মুশরিক অবস্থায় কেউ মারা গেলে অথবা ঈমানদার ব্যক্তি অপর কোনো ঈমানদারকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে (তা ক্ষমা করবেন না)।[4]

মুসলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণের ভয়াবহ পরিণতি : আহনাফ ইবনু কায়েস (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আবু বাকরা (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি বলেন,إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِى النَّارِ، قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا الْقَاتِلُ فَمَا بَالُ الْمَقْتُولِ قَالَ إِنَّهُ كَانَ حَرِيصًا عَلَى قَتْلِ صَاحِبِهِ- ‘দু’জন মুসলিম তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হ’লে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ হত্যাকারী (তো অপরাধী) কিন্তু নিহত ব্যক্তির কি অপরাধ? তিনি বললেন, (নিশ্চয়ই) সে তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল’।[5]

অস্ত্রের দ্বারা ইঙ্গিত করার নিষেধাজ্ঞা : ইসলামে মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উত্তোলনকেও অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে, তা সে ঠাট্টাচ্ছলেই হোক বা প্রকৃত অর্থেই হোক। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,لاَ يُشِيرُ أَحَدُكُمْ عَلَى أَخِيهِ بِالسِّلاَحِ، فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِى لَعَلَّ الشَّيْطَانَ يَنْزِعُ فِى يَدِهِ، فَيَقَعُ فِى حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ- ‘তোমাদের কেউ যেন তার কোনো ভাইয়ের উপর অস্ত্র উত্তোলন করে ইশারা না করে। কেননা, সে জানে না হয়তো শয়তান তার হাতে ধাক্কা দিয়ে দিবে, ফলে (মুসলিম হত্যার অপরাধে) সে জাহান্নামের গর্তে নিপতিত হবে’।[6]

ছহীহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ أَشَارَ إِلَى أَخِيهِ بِحَدِيدَةٍ، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَلْعَنُهُ، حَتَّى يَدَعَهُ وَإِنْ كَانَ أَخَاهُ لِأَبِيهِ وَأُمِّهِ- ‘যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের প্রতি কোনো লোহার অস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করে, সে ব্যক্তিকে ফেরেশতাবর্গ অভিশাপ করেন, যতক্ষণ না সে তা ফেলে দেয়। যদিও সে তার সহোদর ভাই হয়’।[7]

খোলা তরবারি দেওয়া-নেওয়াও নিষিদ্ধ : ইসলাম মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাপ খোলা তরবারি বহন ও আদান-প্রদান করতে নিষেধ করেছে। জাবের (রাঃ) বলেন,نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُتَعَاطَى السَّيْفُ مَسْلُولًا- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পরস্পর (খাপ খোলা) উলঙ্গ তরবারি আদান-প্রদান করতে নিষেধ করেছেন’।[8] কারণ ধারালো অস্ত্র খোলা অবস্থায় হস্তান্তর করলে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি থাকে।

ভ্রুণ হত্যাও মানব হত্যার ন্যায় অপরাধ : জাহেলী যুগে দারিদ্রের ভয়ে বা কন্যাসন্তান হলে সামাজিক মানক্ষুণ্ণের ভয়ে ছোট নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা হ’ত। কখনো উত্তপ্ত মরুভূমির বুকে জীবন্ত পুতে ফেলা হ’ত নিষ্পাপ শিশুদের। ইসলাম এই ঘৃণ্য প্রথাকে কঠোরভাবে নিষেধ করে এবং এর জন্য আল্লাহর সম্মুখে লাঞ্ছনা ও শাস্তির ঘোষণা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا- ‘তোমরা দরিদ্রতার ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমরা তাদের ও তোমাদের রূযী দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/৩১)। বর্তমানেও জন্মের পূর্বে গর্ভের জীবন্ত সন্তানকে হত্যা করা একটি মারাত্মক অপরাধ, যা সুস্পষ্ট হত্যার শামিল। ক্বিয়ামতের দিন এই শিশুদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করবেন, ‘কি অপরাধে সে নিহত হয়েছিল?’ (তাকবীর ৮১/৯)।

মানুষ হত্যার অনুমতিপ্রাপ্ত কারণসমূহ : ইসলামে কেবল তিনটি নির্দিষ্ট কারণে মানুষের জীবননাশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে তার জন্য অবশ্যই ইসলামী আদালতের মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণপূর্বক রায় থাকতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ، يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، إِلَّا بِإِحْدَى ثَلَاثٍ: الثَّيِّبُ الزَّانِي، وَالنَّفْسُ بِالنَّفْسِ، وَالتَّارِكُ لِدِينِهِ الْمُفَارِقُ لِلْجَمَاعَةِ- ‘ঐ মুসলিম ব্যক্তির রক্ত হালাল নয়, যে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তবে তিনটি কারণের একটি ঘটলে তা হালাল। (১) বিবাহিত হয়ে ব্যভিচার করলে। (২) যদি কেউ অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা করে (ক্বিছাসের ক্ষেত্রে)। (৩) যদি সে মুসলিম সম্প্রদায় ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়’।[9]

উল্লেখ্য যে, মুরতাদ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার পর তাকে তওবা করার জন্য নির্ধারিত সময় প্রদান করতে হবে। যদি সে তওবা করে, তাহ’লে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হবে না।

হত্যার ইহকালীনশাস্তি : হত্যাকারীর দুনিয়ার শাস্তি হ’ল ক্বিছাছ। ক্বিছাছ শব্দটি এসেছে (قصص) শব্দ থেকে, যার অর্থ সমপরিমাণ বা অনুরূপ। হত্যার বদলে হত্যা বা আঘাতের বদলে সমপরিমাণ আঘাত করার অনুমোদিত প্রতিবিধানকে ক্বিছাছ বলা হয়।

আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে হত্যার অপরাধে অপরাধী ব্যক্তির জন্য সুষ্পষ্টভাবে শাস্তি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنْثَى بِالْأُنْثَى فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ ذَلِكَ تَخْفِيفٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ فَمَنِ اعْتَدَى بَعْدَ ذَلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيمٌ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! নিহতদের বদলা গ্রহণের বিষয়টি তোমাদের উপর বিধিবদ্ধ করা হ’ল। স্বাধীনের বদলে স্বাধীন, দাসের বদলে দাস ও নারীর বদলে নারী। এক্ষণে যদি তার (নিহত) ভাইয়ের পক্ষ হ’তে তাকে কিছু মাফ করা হয়, তবে তাকে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে তাগাদা করা হয় এবং সঙ্গতভাবে সেটি পরিশোধ করা হয়। এটি তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ হ’তে লঘু বিধান ও বিশেষ অনুগ্রহ। অতঃপর যদি কেউ এর পরে সীমালংঘন করে, তবে তার জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (বাক্বারাহ ২/১৭৮)।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنْفَ بِالْأَنْفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِهِ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ- ‘আর আমরা তাদের উপর বিধিবদ্ধ করেছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখম সমূহের বদলে যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সেটি তার জন্য কাফফারা হয়ে যায়। বস্ত্তত যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী ফায়ছালা করে না, তারাই যালেম’ (মায়েদাহ ৫/৪৫)।

ক্বিছাছ বা দিয়াত নিহতের ওয়ারিছদের অধিকার : ইসলামী শরী‘আতে হত্যার ক্ষেত্রে নিহতের ওয়ারিছদের জন্য দু’টি প্রধান অধিকার রয়েছে। ক্বিছাছ বা দিয়াত গ্রহণের অধিকার। আবু শুরাইহ খুযাঈ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قُتِلَ لَهُ قَتِيلٌ بَعْدَ مَقَالَتِي هَذِهِ فَأَهْلُهُ بَيْنَ خِيَرَتَيْنِ أَنْ يَأْخُذُوا الْعَقْلَ أَوْ يَقْتُلُوا- ‘আমার এই বক্তব্যের পর কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা হলে তার ওয়ারিছরা দু’টি অধিকার পাবে। দিয়াত গ্রহণ করবে অথবা হত্যাকারীকে হত্যা করবে’।[10]

নিহতের পরিবার তাদের নিকট পসন্দনীয় বিধান বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قُتِلَ فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ إِمَّا أَنْ يُعْقَلَ، وَإِمَّا أَنْ يُقَادَ أَهْلُ الْقَتِيلِ ‘কাউকে হত্যা করা হ’লে নিহতের পরিবার দু’টি বিনিময়ের মধ্যে পসন্দনীয় একটি বিনিময় গ্রহণ করতে পারবে। তার দিয়াত বা রক্তপণ প্রদান করা হবে অথবা তার ওয়ারিছদেরকে তার ক্বিছাছ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে’।[11]

এই হাদীছগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, ইসলামী শরী‘আত নিহতের ওয়ারিছদেরকে হত্যার বিচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দিয়েছে। তারা চাইলে ক্বিছাছ (প্রাণের বদলে প্রাণ) দাবী করতে পারে অথবা দিয়াত (রক্তমূল্য) গ্রহণ করে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিতে পারে। এই বিধান ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমাজের দুর্বলদের অধিকার সংরক্ষণেও সহায়ক। হত্যাকারীর দুনিয়াবী শাস্তির সাথে নিহত ব্যক্তির সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, الْقَاتِلُ لَا يَرِثُ ‘হত্যাকারী (নিহত ব্যক্তির) ওয়ারিছ হবে না’।[12]

অন্যায়ভাবে হত্যাকারীর পরকালীন শাস্তি : যদি হত্যাকারী পৃথিবীতে তার হত্যার যথোপযুক্ত শাস্তি গ্রহণ না করে, তওবা না করে বা তার বিচার করা না যায় কিংবা তার হত্যার বিষয়টি গোপন থাকে, তাহ’লে উক্ত হত্যাকারীর জন্য পরকালে মহাশাস্তির ব্যবস্থা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَيَقْتُلُونَ الَّذِينَ يَأْمُرُونَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ- أُولَئِكَ الَّذِينَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَا لَهُمْ مِنْ نَاصِرِينَ- ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে ও অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করে এবং লোকদের মধ্যে যারা ন্যায়ের আদেশ দেয় তাদেরকে হত্যা করে, তুমি তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির সুসংবাদ দাও’। ‘এরাই হ’ল তারা যাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সকল আমল বরবাদ হয়ে গেছে। আর তাদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (আলে-ইমরান ৩/২১-২২)।

সূরা ফুরকানের ৬৩ থেকে ৭৩ নং আয়াতে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দাদের তেরটি গুণের উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে ৮ম গুণটি হ’ল, وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا- يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا- ‘যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করেনা। আর যারা আল্লাহ যাকে নিষিদ্ধ করেছেন তাকে সঙ্গত কারণ ব্যতীত হত্যা করেনা এবং যারা ব্যভিচার করেনা। যারা এগুলি করবে তারা শাস্তি ভোগ করবে’। ‘ক্বিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল থাকবে’ (ফুরক্বান ২৫/৬৮-৬৯)।

আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَوْ أَنَّ أَهْلَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ اشْتَرَكُوا فِي دَمِ مُؤْمِنٍ لَأَكَبَّهُمُ اللَّهُ فِي النَّارِ- ‘যদি আকাশমন্ডলী ও যমীনের সকল অধিবাসীরা সম্মিলিতভাবে একজন মুমিনকে হত্যা করে, তাহ’লে আল্লাহ সকলকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’।[13]

ইবনে আববাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,يَجِيءُ المَقْتُولُ بِالقَاتِلِ يَوْمَ القِيَامَةِ نَاصِيَتُهُ وَرَأْسُهُ بِيَدِهِ وَأَوْدَاجُهُ تَشْخَبُ دَمًا، يَقُولُ: يَا رَبِّ، قَتَلَنِي هَذَا، حَتَّى يُدْنِيَهُ مِنَ العَرْشِ ‘ক্বিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি তার হত্যাকারীকে সঙ্গে করে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। এমতাবস্থায় হত্যাকারীর মাথা ও চুল তার হাতেই থাকবে। শিরাগুলো থেকে রক্ত ঝরতে থাকবে। আর সে বলতে থাকবে, হে আমার প্রভু! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এভাবে বলতে বলতে সে হত্যাকারীকে আরশের অতি নিকটে নিয়ে যাবে’।[14]

এছাড়াও একজন মুসলিমকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করার ক্ষেত্রে কুরআনে শাস্তির বিশেষ বিধান উল্লেখ রয়েছে,وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا- ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হ’ল জাহান্নাম। সেখানেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে লা‘নত করেছেন এবং তার জন্য কঠিন শাস্তি প্রস্ত্তত রেখেছেন’ (নিসা ৪/৯৩)।

ক্বিছাছের গুরুত্ব ও সমাজে এর প্রভাব : কুরআনে ক্বিছাছের বিধান কোনো রাষ্ট্রে যথাযথভাবে কার্যকর হলে অন্যায় রক্তপাত, হানাহানি, খুন-খারাবী ও হত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধ সমাজে বিস্তার লাভ করবে না। রাজনৈতিক প্রভাবে, ক্ষমতার দাপটে চাইলেই কেউ এ অপরাধ করার দুঃসাহস দেখাতে পারবে না। সমাজ থেকে অবিচার ও যুলুম বহু গুণে হ্রাস পাবে। ইসলামী খেলাফতের স্বণৃযুগের ইতিহাস তার প্রমাণ। ইতিহাসে যে কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ দমন করতে ক্বিছাছের বিধান যতটা কার্যকরী হয়েছে, মানব রচিত কোনো আইন দ্বারা এমন সফলতা আসেনি। তাই ক্বিছাছের বিধান হ’ল মানবজীবন রক্ষার হাতিয়ার ও রক্ষাকবচ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَاأُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ- ‘আর হে জ্ঞানীগণ! ক্বিছাছের মধ্যেই তোমাদের জন্য জীবন নিহিত রয়েছে, যাতে তোমরা সতর্ক হও’ (বাক্বারাহ ২/১৭৯)।

ক্বিছাছের বিধান বিশ্ব মানবতার এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত এবং মানুষের মধ্যে সাম্য ও সমতার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। জাহেলী যুগে হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে কোনো সমতা ছিল না; প্রভাবশালী ব্যক্তিরা হত্যার সাথে জড়িত থাকলে তাদের প্রাণদন্ড হ’ত না। এই ভারসাম্যহীন, অনৈতিক ও মানবতা বিরোধী বিধান বিলুপ্ত করে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিছাছের বিধান নাযিল করেছেন, যা মানবসমাজে শান্তি ও সমতা নিশ্চিত করে।

হত্যাকান্ডের ভয়ংকর পরিসংখ্যান : দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে আধুনিক বিশ্বে মানব ধ্বংসকারী অস্ত্রই হয়ে উঠেছে শক্তি ও সম্মানের মূল মাপকাঠি। ন্যায় ও সততা প্রায় ভূলুণ্ঠিত। ফলে প্রতিনিয়ত বিশ্বজুড়ে চলছে অহরহ হত্যাকান্ড। প্রলম্বিত হচ্ছে লাশের সারি, উচ্চকিত হচ্ছে রক্তের ঢেউ। তুচ্ছ স্বার্থ, অন্যায়ের প্রতিবাদ অথবা মতের বৈপরীত্বের কারণে পাখির মতো গুলি করে হত্যা বা শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে গণহত্যা চলছে মুড়ি-মুড়কির মত অনায়াসে।

(১) বাংলাদেশে হত্যাকান্ডের পরিসংখ্যান : পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ‘২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ১৬,৫৫৫টি হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা থেকে জানা যায়। যার বার্ষিক গড় ৩,৩১১ জন। ২০২৪ সালের শেষ পাঁচ মাসে (আগস্ট থেকে ডিসেম্বর) বাংলাদেশে ১,৫৬৫ জন খুন হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৩১৩ জন। আর সমগ্র ২০২৪ সালে মোট খুন হয়েছে ৩,৪৩২ জন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ, যার মধ্যে পেশাজীবীর সংখ্যা বেশি’।[15] যা বিগত বছরের তুলনায় ক্রমবর্ধমান।

(২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট হত্যাকান্ডের পরিসংখ্যান : ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি) এর তথ্যানুসারে, ‘২০২০ সালে ৪,৩০০ এর বেশি মার্কিন তরুণ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট আঘাতের কারণে নিহত হয়েছে’।[16] বর্তমানে এ সংখ্যা বছরে পাঁচ হাযার অতিক্রম করেছে। এ চিত্র কেবল বাংলাদেশ বা যুক্তরাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ নয়। বরং সর্বোন্নত ও উন্নয়নশীল দু’টি দেশের এই চিত্র সারাবিশ্বের প্রতিচ্ছবি।

পক্ষান্তরে সঊদী আরবে ক্বিছাছের বিধান ও দ্রুত বিচার ব্যবস্থা থাকায় ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৪ সালে সঊদী আরবে কমপক্ষে ১০০ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে, যার মধ্যে ক্বিছাছ হিসাবে ৪১ জন এবং বাকীদের বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ ছিল। উল্লেখ্য যে, এর মধ্যে আবার ৪৩ জন ছিলেন বিদেশী’।[17]

উপসংহার : অন্যকে হত্যা করার দ্বারা মানুষ নিজের ধ্বংস ত্বরান্বিত করে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, যেসব অপরাধে নিজেকে জড়িয়ে ফেলার পর তার ধ্বংস থেকে আত্মরক্ষার উপায় থাকে না, সেগুলোর একটি হ’ল কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা’ (বুখারী হা/৬৮৬৩)। ইসলামে অন্যায়ভাবে হত্যাকে এমন এক জঘন্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে, যা মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে চরম ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। ক্বিছাছের বিধান মানব সমাজ রক্ষার এক কার্যকর হাতিয়ার, যা সমাজে ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য। মুসলিমদের জন্য এই বিধানগুলো মেনে চলা কেবল ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নয়, বরং একটি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের চাবিকাঠি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের সকলকে এই মহাপাপ থেকে দূরে থাকার এবং তাঁর বিধান মেনে চলার তাওফীক দান করুন।-আমীন!

Address


Alerts

Be the first to know and let us send you an email when তাওহীদের ডাক-Tawheeder Dak posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to তাওহীদের ডাক-Tawheeder Dak:

Shortcuts

  • Address
  • Telephone
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share

তাওহীদের ডাক, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০২০

www.tawheederdak.com

pdf লিংক- https://l.facebook.com/l.php?u=http%3A%2F%2Fahlehadeethbd.org%2Fmagazine%2F48.tawheeder_dak_september_october_2020.pdf%3Ffbclid%3DIwAR0HjMdpa53rlP70MaxXtjtnF5P0gAzVMMSK0khPymCMgYG2r1C1J5wxEXI&h=AT2r_ufplcYCsoTU0P_gjIIDytKcllUD6WRhcSFpTge7_1FOy9NrlhiRaK7BM_fX-SAGI9QcL_U-DyFzInVLoClBsz7jq1g8lXkI8EFWtMgmXMxJRSXyOANNXFYCsO5FZ-CNN9MbHGO-OD2hGKPlQE0E5dE-8psUOVT1QDAkONy8N8OOS5DYYfFEDGlMr2FidfbWieGL9txyT5XekxE7fGdd-54TQAz7s6A9wxwKkdwKGEaACV64qZJikSLJpasC-Fq4iX1C07sPYhIshWMLwWgYmnGzZifOE5jZyvQppG5weHlVVbUM_zxTykXVpgoL1w8iYHINmvFZ6Ld66hRW9zsaNRC5ZqvOb6c0ks-90kad6FPNQ0NBlTv8nns2gyw8266urVMKfdR8zB4E5yVd5SExdj1npAsh5nTWwENovFzVxfwYootab7nHNOQl1d8f8hXP7YymI38XLRo1KjvT7U0KjeRLtNpErtvX7mihronWuzh6FzgUGxJSfgUCC8k2J4GMzAfsoZFPo8KoMXTNfTCVW6GMksDv5LlrtDRIscVl4I8OEZduiQ5XjlJFQlUBeL_YDJYECHFO1eVH5bAFsM-cbyPsYMpV9eQLIzbVFDnfuO8AxBiPfc--4_M

🔴ভিতরে যা আছে-

🗞সম্পাদকীয়