
02/09/2025
সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ভাষ্য অনুযায়ী শিবিরের ঢাবি সেক্রেটারি এসএম ফরহাদদের সাথে সমন্বয় করেই ৯ দফা প্রস্তুত করা হয়েছিল। জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফরহাদ পত্রিকার বিভিন্ন অফিসে ৯ দফা পৌঁছে দেয়।
৬ জন সমন্বয়ক পুলিশ হেফাজতে, তখন সাদিক কায়েম, ফরহাদ এবং ৩-৪ টা ছেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে গেছে। অথচ সেই ফরহাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছে মুজিবাদী বামপন্থী একটা মেয়ে। যে কিনা বিভিন্ন সময়ে মুজিবের ছবি আর্ট করছে, যার ছাত্রলীগের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, এমনকি সে ৩০ জুলাই হাসিনার মেট্রোরেলের গ্লাস ভাঙা নিয়ে ফেসবুকে কান্নাকাটি করছে।
একজন জুলাই যোদ্ধাকে এভাবে হেনস্তা করার পরেও আমি জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়কদের কারো কোনো প্রতিবাদ দেখিনি। অথচ তারা জুলাই বিক্রি করেই খাচ্ছে।
বলা হচ্ছে ফরহাদ ছাত্রলীগ করতো। কিন্তু অনেক আগেই এই প্রোপাগন্ডার জবাব দেওয়া হয়ছে যে, ঢাবি শিবির সেক্রেটারি ফরহাদ আর হল ছাত্রলীগের ফরহাদ এক ব্যক্তি নয়।
এসএম ফরহাদ হোসেন ঢাবির ২০১৬-১৭ সেশনের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্র। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এস এম ফরহাদ হোসেন নিজেই ফেসবুকের এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পোস্টে তিনি লেখেন, আমাকে অনেকেই ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।
“যেহেতু আমার নামের সাথে আমার ছোট ভাই S M Farhad এর নামের মিল আছে। তাই অনেকেই কনফিউশনে আছেন। সেজন্য আমার অবস্থান ক্লিয়ার করছি। আমার নাম-SM Farhad Hossain, সেশন-২০১৬-১৭, বিভাগ-ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য, বাড়ি-সাতক্ষীরা। আর আমার হলের ছোট ভাইয়ের নাম-SM Farhad, সেশন-১৭-১৮, বিভাগ- সমাজকল্যাণ, বাড়ি- চট্টগ্রাম।”
অর্থাৎ শিবিরের ফরহাদ আর ছাত্রলীগের ফরহাদ একই ব্যক্তি নয়। শিবিরের ফরহাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের এবং কবি জসীম উদদীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ২০২২-২৩ সেশনে তিনি জসীম উদদীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতিও ছিলেন। এবং সে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আপনারা সবাই জানেন, আমাদের দেশে প্রায় সব অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হয়ে থাকেন ক্ষমতাশালী দলের প্রতিনিধিরা।
ফরহাদ যেহেতু ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন এবং একইসাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ–এর সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি পুরস্কার পেয়েছেন। এই পুরস্কারগুলো তিনি পেয়েছেন তার মেধা ও যোগ্যতার কারণে—কখনো দলীয় রাজনীতি করার জন্য নয়।
তাই কোনো পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তার সাথে ক্ষমতাশালী দলের কারো ছবি থাকা আসলে খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।
যদি ধরেও নেই, ফরহাদ একসময় ছাত্রলীগ করতো, কিন্তু জুলাই বিপ্লবের সময় তো ফরহাদরাই আওয়ামিলীগের পতন ঘটিয়েছে। তাই ফরহাদের অতীত নিয়ে প্রশ্ন তোলা অর্থহীন।
ফরহাদ আগে কী ছিল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং জুলাই বিপ্লবে তার ভূমিকা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।
মুজিবের খুনিরা একসময় আওয়ামী লীগ করতো। কিন্তু তাদের কি এখন আওয়ামী লীগ বলা যায়? মোস্তাক আহমেদকে কি আওয়ামিলীগ বলা যাবে?
তাহলে ফরহাদ একসময় কী করতো সেটা মুখ্য বিষয় নয়। আসল বিষয় হলো তার জুলাই বিপ্লবে কি অবদান ছিল। ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতা ছিল হাসনাত, সার্জিস, মাহিন সরকাররা। তারা অপরাধী না হলে ফরহাদ কেন অপরাধী হবে?
আজকাল খুব সহজেই কাউকে রাজাকার বা স্বাধীনতা বিরোধী ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে শিবিরের মতো সংগঠনকে এভাবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এখানে একটা মৌলিক প্রশ্ন আসেইনস্বাধীনতা বিরোধী বলতে আমরা কাকে বুঝি?
ফরহাদের উদাহরণ ধরা যাক। তার বয়স মাত্র ২৫ বছর। ১৯৭১ সালে সে তো জন্মই নেয়নি। তাহলে তাকে কীভাবে রাজাকার বা স্বাধীনতা বিরোধী বলা যায়? জন্মের বহু বছর পর যাদের বয়স এখনো তরুণ পর্যায়ে, তারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কীভাবে অবস্থান নেবে?
স্বাধীনতা বিরোধী মানে কি যে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরেছিল? নাকি স্বাধীনতা বিরোধী মানে হচ্ছে বিরোধীদল বা ভিন্নমত পোষণ করি। আওয়ামিলীগ দেখতাম বেগম খালেদাজিয়া জিয়াউর রহমান'কে স্বাধীনতা বিরোধী বলতো।
যদি দ্বিতীয় সংজ্ঞাই ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটা ভয়ংকর প্রবণতা। কারণ এতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত হয় এবং ভিন্নমতের মানুষদের দমন করার জন্য ইতিহাসকে ব্যবহার করা হয়।
ফরহাদের মতো একজন তরুণ, যে জন্মই নিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে, তাকে “রাজাকার” বা “স্বাধীনতা বিরোধী” বলা মানে হলো ইতিহাসকে হাস্যকর করে তোলা।
শেষ একটা কথা বলি, ডিবেটিং ক্লাবের ছবি দিয়ে যদি ফরহাদকে ছাত্রলীগ বানিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে শেখ মুজিবের কবর জিয়ারত করা আর হাসিনার সাথে ছবি থাকা সত্ত্বেও কেন তারেক রহমানকে আওয়ামী লীগ বলা যাবে না? যদি ছবিই কারো রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রমাণ হয়, তাহলে এই যুক্তি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
ফরহাদের মতন একজন জুলাই যোদ্ধাকে মুজিববাদি শাহবাগীদের দ্বারা হেনস্তা এবং মানহানি করার প্রতিবাদ জানিয়ে রাখলাম।