
28/09/2025
খোলা চিঠি
বরাবর
মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা
বিষয়: সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি চলমান হয়রানিমূলক আচরণের প্রেক্ষিতে জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণ প্রসঙ্গে।
মাননীয় মহোদয়,
সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বর্তমানে মানসিকভাবে এক অস্বাভাবিক ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি সাত কলেজকে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (DCU) করার পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কিছু বিসিএস ক্যাডার শিক্ষক প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছেন। এই প্রতিবাদ কেবল মতামত প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং তাঁরা আমাদের দৈনন্দিন শিক্ষাজীবনকেও প্রভাবিত করছেন।এসব কর্মকাণ্ড যেমন প্রজাতন্ত্রের একজন সরকারি কর্মচারীর আচরণবিধির নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, তেমনি আমাদের জন্য বিব্রতকর এবং উদ্বেগের বিষয়। এছাড়াও তাঁরা ইন্টারমিডিয়েট শ্রেণির ছাত্র/ছাত্রীদের ব্যবহার করে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করাচ্ছেন। যা পরবর্তীতে তারাই(শিক্ষার্থীরা) স্বীকার করছে।
শিক্ষকদের চাপের কারণে আমরা নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট লিখতে বাধ্য হচ্ছি।
৭ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের পক্ষের শিক্ষার্থীদের সাথেও অনৈতিক আচরণ করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে টিসি দেয়ার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তাদের তথ্য নিয়ে বিভিন্নভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন কলেজের অফিসিয়াল মেসেন্জার গ্রুপে 'ক্লাস নিবেন'- এমন নোটিশ দিয়ে জুম মিটিং-এ ক্লাস তো নিচ্ছেন'ই না, বরং ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্রেইনওয়াশ করার এক অসুস্থ পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষক পরীক্ষার খাতা কঠোরভাবে মূল্যায়নের বিষয়ে হুমকি এবং ইনকোর্স ও ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেওয়ার মতো নোংরা ভয়ভীতিও দেখিয়ে আসছেন। ক্লাসরুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্যও বিভিন্ন কৌশল বাতলে দিচ্ছেন। এমনকি ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীদের হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেন্জার গ্রুপে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য-সংবলিত স্ক্রিনশট দিয়ে তাদেরকে উস্কে দিতেও দেখা গেছে।
এমনকি বিভিন্ন ক্যামপাসে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কলেজের বেসরকারি স্টাফদের চাপ প্রয়োগ করে, চাকুরি থাকা না থাকার বিষয়কে পুঁজি করে তাদের স্বাক্ষর রাখা হচ্ছে, করানো হচ্ছে ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানববন্ধন। এছাড়াও পূজার ছুটিতে কলেজ বন্ধ ঘোষণার পরেও ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ কয়েকটা বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে কলেজে উপস্থিত হতে বলেছেন শিক্ষকরা।
এ সকলকিছুর'ই প্রমাণাদি সংগৃহীত-ও রয়েছে।
এতে আমরা আমাদের মত প্রকাশেও আশঙ্কা-বোধ করছি। এরূপ সহিংস আচরণের জন্য কারো কাছে গিয়ে সহায়তা চাওয়াও আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।আমাদের পিতৃ মাতৃতুল্য শিক্ষক যখন এমন অনৈতিক ও স্বার্থান্বেষী হয়ে ওঠে তখন স্বভাবতই শিক্ষার্থীরা অভিভাবকহীন অসহায়বোধ করে।তাদের আশ্রয়ের জায়গাটি শূন্য হয়ে যায়।
মাননীয় মহোদয়,
আমরা বিশ্বাস করি শিক্ষক হচ্ছেন আলোকবর্তিকা, যিনি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও নৈতিকতায় আলোকিত করবেন, এবং একইসাথে শিক্ষার্থীদের পিতৃ এবং মাতৃ স্নেহে আগলে রাখবেন, এটাই কাম্য, এটাই চিরন্তন প্রত্যাশিত। কিন্তু যখন সেই শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের কাছ থেকেই মানসিক নিপীড়নের শিকার হতে হয়, শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিরাপদ-বোধ করতে হয়, তখন আমাদের মধ্যে আস্থাহীনতা ও ভীতির সৃষ্টি হয়, আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং এক অশান্ত পরিবেশ তৈরি করবে।
করোনাভাইরাস মহামারী, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সর্বোপরি ২৪-এর মহান গণঅভ্যুত্থান- প্রভৃতি কারণে আমাদের শিক্ষাবর্ষগুলো অনেকটাই পিছিয়ে গেছে। এরপর এখন আমরা যে মানসিক পীড়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যে মৃত্যুযন্ত্রণা-সম পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি হয়তো এটার সাথে আর বেশিদিন মানিয়ে নিতে পারবো না। আবার আমরা আমাদের মাথার তাজ, বাবা মা-এর পরে পৃথিবীতে যাঁদের স্থান নির্ধারিত, আমাদের সেই সকল শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সাথে কোনো ধরনের অমূলক আচরণ-ও করতে পারবো না, এটা অসম্ভব। যার ফলশ্রুতিতে আমরা সাত কলেজের ১ লক্ষ ৬৭ হাজার শিক্ষার্থীরা নিরুপায় হয়ে হয়তো 'আত্মহত্যা' ছাড়া আর কোনো পথ খুঁজে পাবো না।
অতএব, আপনার প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ—
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এখনি বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারলে হয়তো ইতিহাসের একটি কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পাবে, আমরাও স্বস্তি নিয়ে বাঁচতে পারবো।
অনার্স শিক্ষার্থীদের প্রতি সহিংস আচরণ বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
শিক্ষকদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক রাজনৈতিক/প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি রোধ করবেন।
আমাদের মানসিক স্বস্তি ও স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন ফিরিয়ে আনতে সঠিক দিকনির্দেশনা দেবেন।
আমরা আপনার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি, যাতে আমরা নির্ভয়ে পড়াশোনা করতে পারি এবং ভবিষ্যতে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারি।
বিনীত,
সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ