07/05/2024
গল্প:যত্নবান_পুরুষ
পি*রিয়*ডের যন্ত্রণায় বিছানায় ছটফট করে কাতরাচ্ছি আমি। তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। ব্যথার দরুন চোখ দিয়ে পানি চলে আসছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কা*মড়েও ব্যথা সহ্য করতে না পেরে, শেষে নরম তুলতুলে বালিশে মুখ ডুবিয়ে দিলাম। এই সময়টাতে আমার সারা দেহ নিস্তেজ, সবচেয়ে দূর্বল মনে হয়। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে শয্যা*শায়ী হওয়ার মতো অবস্থা। বিয়ের পর এই প্রথম পি*রি*য়ড হলো আমার। তলপেটে হাত চেপে চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলাম বিছানায়।
" সন্ধ্যা বেলা এভাবে শুয়ে আছো কেনো? "
অফিস শেষে এই মাত্রই রুমে আসলো সিহাব। ঘেমে যাওয়া গায়ের শার্ট, সারা মুখ জোড়ে ক্লান্তির চিহ্নই বলে দিচ্ছে, সারাদিন খুব প্যা*রা গেছে তার উপর। চোখ দুটির অবস্থা ভয়াবহ। আমি বালিশ থেকে হালকা মুখ তুললাম। তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে ঠোঁট কামড়ে অস্পষ্ট স্বরে বললাম,
" পেটে পেইন হচ্ছে। "
মিনিট দুয়েক কপাল কুঁচকে ভাবুক হয়ে দাড়িয়ে থেকে, কোথায় যেনো চলে গেলো সিহাব। আমি আগের মতোই চোখ বুঁজে পড়ে রইলাম বিছানায়। প্রায় ঘন্টা খানিক বাদে হঠাৎ পেটের উপর গরম কিছু অনুভব হতেই চট করে তাকালাম আমি। সামনেই আমার স্বামী পে'টে হ-ট ব্যাগ ধরে রয়েছে। আমি প্রশ্নহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই সিহাব বলে উঠে,
" ফেসবুক,ইউটিউব ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম, এই সময় গরম পানির তাপ নিলে ব্যথা অনেকটা কমে যায়। "
প্রথমে লজ্জা,সংকোচ আর জড়তা ঘিরে ধরলো আমায়। লজ্জায় মাথা নুইয়ে মৃদু হাঁসলাম। এভাবে কখনো কল্পনাও করিনি, মাত্র কয়েকদিনের সংসারে আমাকে নিয়ে এতোটা ভাববে। এখনো দুজনের মধ্যে ঠিকমতো বুঝা পড়াও হয়নি। খানিক বাদে পেটে সেই যন্ত্রণা আস্তে আস্তে কমে গিয়ে আরাম অনুভব হলো। এক অন্যরকম আনন্দ মনের মাঝে দোলা দিতেই সে আমার খুব নিকটে এসে, তার অধর ছুঁইয়ে দিলো আমার ললাটে। তার ছোট আদরে চোখের পানি চিকচিক করছে আমার। হাত বাড়িয়ে তার খুঁচা দাড়ি বুলিয়ে দিলাম। সিহাব উঠে পাশের টেবিল থেকে একটি শপিং ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
" এখানে তোমার প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র আছে। প্যা*ড আর কিছু চকলেট। চকলেট খেলে ভালো লাগবে। আরোও দেখলাম, এসময় মুড সুইং বেশী হয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। হুট করেই রেগে যায়। আমি প্রস্তুত, যখন ইচ্ছে গা*লা গা*লি করবে। কখনো বা, রাগা রাগি করে মুখের উপর বালিশ ছুঁড়েও মা*রবে। "
ছেলেটার ছোট ছোট যত্নে ডুকরে কেঁদে দিলাম আমি। উহু! এটা কষ্টের কান্না নয়, বরং খুশির কান্না। হেঁচকি তুলে কাঁদতেই সিহাব হতচকিত হয়। তার খসখসে হাত দুটি আমার গালে রেখে ঠোঁটে গাঢ় চুম্বন করলো। বলল,
" কাঁদছো কেনো? এই তুলতুলে বউটা আমার! তার খেয়ালও তো আমাকেই রাখতে হবে।"
" এতো ভালোবাসেন কেনো আমায়? ভীষন কান্না পাচ্ছে।"
সিহাব চমৎকার হেঁসে উঠে বলল,
" খুব ভালোবাসি যে আমার ছোট্ট বউটাকে। তার কষ্টে আমারও মন কাঁদে। একটু জরিয়ে ধরি?"
কি চমৎকার আবদার। আমি চোখে পানি ঠোঁটে হাসি নিয়ে এগিয়ে গেলাম তার কাছে। দুহাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বুকে চুমু খেয়ে বললাম,
" আপনার ছোট ছোট ভালোবাসাময় যত্ন সারাজীবন মনে থাকবে। এই অগোছালো আমিটাকে গুছিয়ে রাখার জন্য অনেক ভালোবাসা।এভাবে সারাজীবন আগলে রাখবেন তো? "
সিহাব শক্ত করে চেপে ধরলো তার সাথে। চুলের ভাজে হাত গলিয়ে নাক টেনে দীর্ঘ সময় ঘ্রাণ নিয়ে জবাব দেয়,
" শুধু সারাজীবন কেনো? আজীবন, আম*রন। আমার স্বর্ণলতা! আমার ঘরের মহারানী। আপনাকে এই প্রজা ভিষণ ভালোবাসে। ভীষণ। "
নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে আমার। তার বুকের মাঝেই ঘাপটি মে*রে শুয়ে থেকে আল্লাহর কাছে হাজারও শুকরিয়া আদায় করলাম। আমাদের ছোট্ট সংসার এভাবেই গড়ে উঠুক। একজন আরেকজনের ঢাল হয়ে চিরকাল এভাবেই পাশে দাড়াবো। সে অসুস্থ হলে আমি ম-রিয়া হয়ে যাবো। একসঙ্গে যত্ন, আদর আর ভালোবাসায় ডুবে যাই দুজনে।
| সমাপ্ত |
ফাতিহা জান্নাত।
সম্পর্ক হোক পবিত্র ঠিকানা হোক জান্নাত।