01/07/2025
🌧️ গল্পের নাম: “হারিয়ে যাওয়া সন্ধ্যা”
একটা বর্ষার দিন। মেঘে আকাশ ঢেকে আছে, বৃষ্টি নামবে নামবে করছে। গ্রামটার নাম চন্দ্রপুর। সেখানে থাকত ছয় বছরের একটি ছেলে — নাম তার তানিম। সে ছিল খুব চঞ্চল, খেলাধুলা আর ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করত। একদিন বিকেলে গ্রামের মেলার দিকে একাই হাঁটতে বের হয় সে। মা তখন রান্নায় ব্যস্ত, বাবা মাঠে।
মেলার ভিড়ে সে প্রথমে খুব মজা পাচ্ছিল — বেলুন, নাগরদোলা, জিলাপি… কিন্তু ধীরে ধীরে চারপাশের মানুষ অচেনা হয়ে উঠল। মেলার শেষে হঠাৎ সে টের পেল, মা-বাবা কেউ নেই। সে ঘুরে ঘুরে চিৎকার করতে লাগল, “মা… মা… আমি কোথায়?” কিন্তু কেউ তো তাকে চিনে না।
সেই রাতে, এক বৃদ্ধ লোক — নাম হাকিম চাচা, তাকে কাঁদতে দেখে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন। খাওয়ালেন, সান্ত্বনা দিলেন। কিন্তু ছেলেটা কিছুতেই তার বাড়ির ঠিকানা বলতে পারছিল না — নামটা ছাড়া কিছুই মনে নেই।
দিন পেরিয়ে মাস হল, মাস পেরিয়ে বছর। হাকিম চাচা তাকে নিজের ছেলে হিসেবে বড় করতে থাকলেন। নতুন নাম দিলেন – রিফাত।
রিফাত বড় হতে লাগল। তার ভেতরে সব সময় একটা অদ্ভুত শূন্যতা থাকত। মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভেঙে কান্না পেত, মায়ের মুখ মনে পড়ত – যদিও পরিষ্কার নয়। শুধু একটা জিনিস তার মনে গেঁথে ছিল — তার মায়ের কপালে একটা লাল টিপ, আর তার নাম ধরে ডাক “তানিম… আয় খোকা…”
🌸
১৫ বছর পর...
রিফাত এখন কলেজ পড়ুয়া। একদিন সে শহরের এক চিত্র প্রদর্শনীতে গিয়েছিল। হঠাৎ এক নারীর মুখ দেখে সে থমকে যায় — যেন সেই মুখটা বহুদিন আগে দেখা… কপালে লাল টিপ…।
সে এগিয়ে যায়, নারীর চোখেও অশ্রু। তারা দু’জনেই থমকে যায়।
“তুমি… তানিম না?” নারীর কণ্ঠ কাঁপছে।
রিফাতের চোখে জল এসে যায়।
“মা…”
বুকের ভেতরে আটকে থাকা দীর্ঘশ্বাস এক মুহূর্তে ছুটে যায়। মা-ছেলে আবার এক হয়। গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়ে — হারিয়ে যাওয়া তানিম ফিরে এসেছে।
আর হাকিম চাচা?
তিনি শুধু হেসে বলেন, “তুই আমার ছেলে ছিলি, আছিস… থাকবি। মা যেখানে, ঘর সেখানে।”