
26/05/2025
শিক্ষা—এ যেন এক আলো, যা অন্ধকার অন্তঃকরণকে করে উন্মীলিত। অথচ আমাদের সমাজে এই আলোকে কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার একচেটিয়া সংজ্ঞায় আবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। যেন শিক্ষা মানেই সার্টিফিকেট, ডিগ্রি, চাকরির হাতছানি—এই ভাবনাটিই এখন প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রকৃত শিক্ষা তো আত্মার পরিশুদ্ধি, চরিত্রের দৃঢ়তা ও চিন্তার স্বাধীনতাকে উদ্বুদ্ধ করে।
শিক্ষা মানুষের পশুত্বকে মোচন করে তাকে মানুষে রূপান্তরিত করে। কিন্তু বর্তমানে আমরা যা দেখি, তা যেন শিক্ষার মুখোশ। আমরা বিদ্যালয়ে পাঠ করি, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই, একের পর এক ডিগ্রির মালা গাঁথি, অথচ নিজের আত্মাকে চিনতে শিখি না। আমাদের শিক্ষা যদি মানুষকে মানবিক না করে, তাহলে সে শিক্ষা ভার বইবার বোঝা ছাড়া আর কিছু নয়।
আধুনিক সমাজে প্রযুক্তি, প্রতিযোগিতা ও ভোগবাদিতা শিক্ষাকে এক প্রকার যন্ত্রনির্ভর বানিয়ে ফেলেছে। পাঠ্যবই মুখস্থ করে আমরা হয়তো কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে যে প্রশ্ন—"আমি কে?"—তার জবাব মেলে না। আর এটাই আজকের শিক্ষার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।
শিক্ষা হওয়া উচিত এমন এক অগ্নিশিখা, যা মানুষের বিবেককে জাগ্রত করে, মননকে প্রসারিত করে এবং সমাজকে করে আলোকিত। কেবলমাত্র জীবিকার জন্য শিক্ষিত হওয়া নয়, জীবনকে সুন্দর করে তোলার জন্য শিক্ষিত হওয়াই অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
যে শিক্ষা মানুষকে সৎ হতে শেখায়, পরের দুঃখে কাতর হতে শেখায়, হৃদয়ের স্বরকে জাগিয়ে তোলে—সেই শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। একালের তরুণরা যদি শিক্ষা গ্রহণ করে কেবল চাকরির আশায়, তবে সে শিক্ষার স্বাদ একদিন বিস্বাদে রূপ নেবে। কারণ, চাকরি পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু মানুষ হয়ে ওঠা—তা আরও কঠিনতর শিল্প।
শেষ কথা এই—শিক্ষা যদি মনুষ্যত্ববোধ না জাগায়, তবে সে শিক্ষা নিরর্থক। এবং যে জাতি কেবল শিখে, কিন্তু মননে অন্ধ, সে জাতি কেবল দেহে বেঁচে থাকে, প্রাণে নয়। প্রকৃত শিক্ষা সেই যে, যা মানুষকে মানুষ করে তোলে।