23/10/2025
🍁 কেন ও কীভাবে শুরু হল ভাইফোঁটা উদযাপন? 🍁
স্কন্দপুরাণে উল্লেখ আছে যে এই দিনে যমরাজকে প্রসন্ন করলে উপাসক কাঙ্খিত ফল লাভ করেন। এটি উদযাপনের পিছনে একটি পৌরাণিক কাহিনীও রয়েছে।
◼️ যম-যমীর (যমুনার) কাহিনী ◼️
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ভাই-বোনের এই পবিত্র উৎসবের কারণ সূর্য কন্যা যমুনা (যমী) ও পুত্র যম। সূর্যদেব বিবস্বান এবং তাঁর পত্নী সাঙ্গ্যার (বা সঞ্জনা) দুই যমজ সন্তান ছিল, এক পুত্র যম এবং কন্যা যমুনা (যমী)। কিন্তু একটা সময় এল যখন দেবী সাঙ্গ্যা তার স্বামী সূর্যদেবের তাপ সহ্য করতে না পেরে, তিনি সূর্যদেবের কাছে তার ছায়া রেখে উত্তর মেরুতে তপস্যা করতে যান। [ঠিক যেমন রামের বনবাসকালে সীতামাতা তার ছায়া অর্থাৎ ছায়াসীতাকে পাঠিয়েছিলেন রাবণকে ভিক্ষা দেবার জন্য এবং প্রকৃত সীতা কুঠিরের মধ্যেই ছিলেন। রাবন ছায়াসীতাকে প্রকৃত সীতা ভেবে অপহরণ করে।] এরপর দেবী ছায়ার সংসারে তপ্তি ও শনি নামে আরও দুটি সন্তানের জন্ম হয়। যম ও যমুনার প্রতি ছায়ার কোনো প্রেম ছিল না, কিন্তু যম ও যমুনার মধ্যে অনেক ভালোবাসা ছিল। দেবী ছায়া যম ও যমুনার সাথে দুর্ব্যবহার করতে লাগলেন। এতে ব্যথিত হয়ে যম যমপুরী নামে নিজের একটি নতুন শহর (লোক) প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে চলে যান।
এক সময়ে, যমুনা তার ভাই যমকে যমপুরীতে পাপীদের শাস্তি দিতে দেখে ভীষণ দুঃখিত হন, তাই তিনি গোলোকে থাকতে শুরু করেন। শাস্ত্র অনুসারে, যমুনা তার ভাই ‘যম’কে খুব ভালবাসতেন, তিনি বারবার তার ভাই যমকে তার বাড়িতে এসে খাবার খাওয়ার জন্য অনুরোধ করতেন।
ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যমরাজ তার কাজে ব্যস্ত থাকায় বোন যমুনার বাড়িতে যেতে পারছিলেন না। এভাবেই সময় কাটছিল। বহুদিন পর, একদিন যমের মনে পড়ল তার বোন যমুনার কথা এবং তার বোনের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু যমরাজ ভাবলেন আমি প্রাণ হরণ করতে যাই সকলের গৃহে। কেউ আমাকে তাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে চায় না। আমার বোন সদিচ্ছা নিয়ে আমাকে বহু দিন ধরে আমন্ত্রণ করছে, তা পালন করা আমার কর্তব্য। যমুনা যেহেতু পাপীদের শাস্তি দিতে দেখে ভীষণ কষ্ট পেয়ে যমপুরী ত্যাগ করেছিলেন, তাই বোনের বাড়িতে আসার সময় যমরাজ নরকে বসবাসকারী জীবদের মুক্তি দেন। এরপর তিনি তার দূতদের যমুনার সন্ধান করতে বললেন, কিন্তু দূতেরা তাকে খুঁজে বের করতে সফল হয়নি, তারপর যমরাজ স্বয়ং গোলোকে গেলেন যেখানে তিনি বিশ্রামস্থলে যমুনার সাথে দেখা করলেন। সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া। 🌺🌿
ভাইকে দেখে যমুনা খুশিতে আনন্দে আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন এবং তাকে খুব ভালোভাবে স্বাগত জানালেন। যমরাজকে উপাসনা করার পর বিভিন্ন পদযুক্ত অত্যন্ত সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করেন। যমুনার এই আতিথেয়তায় খুশি হয়ে যমরাজ বোনকে বর চাওয়ার আদেশ দেন। বোন যমুনাদেবী কলিযুগের মানুষদের মঙ্গল নিয়ে চিন্তিত হয়ে বললেন, “হে ভ্রাতা! আপনি প্রতি বছর এই দিনে আমার বাড়িতে আসবেন এবং আমার মতো, এই যম দ্বিতীয়ার (Yama Dwitiya) দিনে যে সকল ভাইবোন আমার জলে স্নান করবে ও যে বোন এই দিনে তার ভাইদেরকে সম্মানের সাথে ভাইফোঁটা দিয়ে এই দিনটিকে উদযাপন করবে সেই ভাইদের যেন যমলোকের কঠোর অত্যাচার-যন্ত্রণা সহ্য করতে না হয়।“
ভগিনীর জনকল্যাণময় কামনা দেখে যমদেব বললেন, “তথাস্ত! আমিও তাই আশা করি ! কিন্তু যেসব ভাইয়েরা তাদের বোনদের অসম্মান করে বা বারবার অপমান করে, আমি তাদের যমপাশে বেঁধে যমপুরীতে নিয়ে যাব, কিন্তু তারপরও যদি সে তোমার জলে স্নান করে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করে, তবে সে স্বর্গে স্থান পাবে।”
সেই থেকে বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনটিতে যে ভাই-বোন হাত ধরে যমুনায় ডুব দেবেন তারা নরক থেকে মুক্তি পাবেন। যে কারণে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আজও ভাইফোঁটার দিনে ভাই-বোনেরা যমুনা নদীতে স্নান করতে সমবেত হয়।
🍁 ভাইফোঁটা উদযাপনের ধর্মীয় গুরুত্ব🍁
স্কন্দ পুরাণে ভাইফোঁটা অর্থাৎ ভাতৃদ্বিতীয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, কার্তিকে শুক্লা দ্বিতীয়ার দিন যমুনা তার ভাই যমকে অর্থাৎ যমরাজকে বাড়িতে পূজা করে সম্মান করেছিলেন এবং নিজ হাতে বিভিন্ন পদযুক্ত অত্যন্ত সুস্বাদু খাবার তৈরি করে ভাইকে খাওয়ান। ভাইফোঁটা উপলক্ষে যমরাজ তার বোন যমুনাকে বর দিয়েছিলেন যে যম দ্বিতীয়ার দিন যে ভাই তার বোনের কাছ থেকে ফোঁটা ও তার বোনের তৈরি খাবার গ্রহন করবে তার অকালমৃত্যুর ভয় থাকবে না।
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে যে ভাই-বোনরা মথুরায় যমুনার বিশ্রাম ঘাটে স্নান করেন, তাদের অকালমৃত্যুর ভয় থাকে না। পুরাণ অনুসারে, এই দিনে করা যমরাজের পূজায় যমরাজ প্রসন্ন হন এবং কাঙ্ক্ষিত ফল প্রদান করেন।
🍁 কৃষ্ণলীলায় ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের উল্লেখ আছে কি? 🍁
🟣 নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তার বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তার কপালে ফোঁটা দিয়ে তাকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়।
🟣 যমুনার একটি স্থান কালীয়দহ নামে পরিচিত। কার্তিকমাসের শুক্লাপক্ষের দ্বিতীয়ায় সকালবেলায় শ্রীমতী রাধারাণী সহ অন্যান্য গোপীরা স্নান করছিলেন। রাধারাণী গোপীদের কাছ থেকে শুনলেন সেদিন ভাইফোঁটা উৎসব। কৃষ্ণের জ্যাঠামশাই উপানন্দের কন্যা সুনন্দা সেদিন কৃষ্ণ ও বলরামকে সুন্দর করে সাজিয়ে তাদের ললাটে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে নানাবিধ মিষ্টান্নাদি ভোজন করিয়েছেন। কৃষ্ণ-বলরামও বোন সুনন্দাকে নতুন বস্ত্র ও অলংকারাদি দান করেছেন।
একথা শুনে রাধারাণীও তাঁর দাদা শ্রীদামকে চন্দন ফোঁটা দিয়ে, মিষ্টান্নাদি ভোজন করিয়ে প্রণাম করলেন এবং শ্রীদাম বোন রাধাকে বস্ত্র অলংকার নিবেদন করলেন। এভাবে ব্রজের সমস্ত বোনেরা ভাইদের কপালে ফোঁটা দিতে লাগল।
হরে কৃষ্ণ 🌺🌿
#কালেক্টেড