16/07/2025
এখানে কোনো আত্মপক্ষ নেই, নেই মাথা নত করার কথা—আছে পাহাড়ি তরুণদের ঘুম ভাঙার ডাক, অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান, সংবিধান ছিনিয়ে আনার দুঃসাহস।শব্দ হবে বজ্রের মতো, বার্তা হবে ঘোষণার মতো।শহরের দেয়ালে আমাদের নাম নেই, সংবিধানের পাতায় আমাদের জাতি নেই, আদালতের রায়েও নেই আমাদের কণ্ঠ। আমরা শুধু আছি মিছিলে, চোখের পানিতে, পুড়ে যাওয়া ঘরে, নিখোঁজ তালিকায়, সেনা ক্যাম্পের ছায়ায়। কিন্তু এখন আর না। এবার আমরা ফিরছি। শহরের অলস বাতাস ছেড়ে আমরা পাহাড়ের উত্তাল ঢাল বেয়ে ফিরছি। ফিরছি আমরা, আদিবাসী সন্তানেরা, যারা নিজেদের ভূমি হারিয়েছে, সংস্কৃতি দেখিয়েছে যাদুঘরে, আর অধিকার শুনেছে শুধু বক্তৃতার মঞ্চে। ফিরছি, কারণ এবার সংবিধান ছিনিয়ে আনব নিজের শর্তে।তোমরা যারা আমাদের ইতিহাস মুছে দিতে চেয়েছিলে, শোনো, আমরা ফিরে এসেছি। আমরা আর সেই দুর্বল তরুণ নই, যে শহরের কোচিং সেন্টারে বসে মুখ নিচু করে ভাষা বদলানোর চেষ্টা করে। আমরা সেই পাহাড়ি তরুণ, যাদের রক্তে পূর্বপুরুষের প্রতিরোধ আছে, যারা নিজেদের ভাষা ভুলেনি, বরং গোপনে শান দিয়েছে নিজেদের অস্তিত্বে। তোমরা চেয়েছিলে আমাদের ঢেকে রাখতে, গিলে ফেলতে, একরকম বানিয়ে দিতে। এবার তোমরা ভয় পাবে, কারণ আমরা আর শহরের নাটক দেখি না—আমরা এখন নিজের মঞ্চ তৈরি করছি, নিজের ইতিহাস লিখছি।আমরা অস্ত্র হাতে ফিরছি। হ্যাঁ, তুমি ঠিক শুনেছো। অস্ত্র। কারণ কথার চুক্তি কখনো পাহাড় রক্ষা করেনি। কলমে লেখা চুক্তির মূল্য যদি ট্যাঙ্কের নিচে পিষে যায়, তবে কলম ফেলে অস্ত্র ধরাই শ্রেয়। আমরা আর প্রমাণ দিই না, আমরা দাবি জানাই না, আমরা এখন ছিনিয়ে নিতে শিখেছি। পাহাড় আর মাথা নিচু করে হাঁটবে না। পাহাড় এবার গর্জে উঠবে।তোমরা যে শান্তির গল্প শোনাও, তা আমাদের কানে বুলেটের মতো বাজে। তোমরা যাকে উন্নয়ন বলো, তা আমাদের ভূমির কবর। তোমরা যে রাষ্ট্র সাজাও, তা আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। আমাদের কোনো নৈতিক জবাবদিহি নেই। তোমরা যেভাবে চালাও রাষ্ট্র, আমরা সেভাবেই ছিনিয়ে নেব অধিকার। গুলি চললে গুলি ফিরবে, আগুন জ্বালালে পাহাড় জ্বলবে না—পাহাড় ছাই হয়ে আবার জন্ম নেবে আগুন হয়ে।পাহাড়ি তরুণের হাতে বই আর অস্ত্র একসাথে থাকতে পারে। এক হাতে জ্ঞান, অন্য হাতে প্রতিরোধ। তোমরা যদি আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে খেলো, আমরা খেলবো আগুন নিয়ে। আমরা শান্তির প্রতীক হতে পারি, আবার বিদ্রোহের দাবানলও। পাহাড়ে এখন আর গান শুধু উৎসবের জন্য গাওয়া হয় না, এখন সেই গান বিদ্রোহের সুরে বাজে। তোমরা পাহাড়ি শব্দকে উপহাস করেছিলে, এখন সেই শব্দেই হুঁশিয়ারি আসবে।আমরা ফিরছি না শহরের করুণা ফেলে পাহাড়ে বসে দুঃখ করতে। আমরা ফিরছি শত্রু চেনার চোখ নিয়ে, দখল বুঝে নেওয়ার মানচিত্র হাতে। এইবার যা নেবে, তা ফিরিয়ে দেবে না কেউ—আমরাই ছিনিয়ে নেব। রাষ্ট্র যদি আমাদের স্বীকৃতি না দেয়, তবে রাষ্ট্রকেই বদলাতে হবে। তোমরা যদি আমাদের সংবিধানে ঠাঁই না দাও, তবে আমরাই লিখব নতুন সংবিধান—পাহাড়ি রক্তের কালি দিয়ে, গর্জনের কলম দিয়ে।এখনো যারা চুপ করে বসে আছো শহরের মেসে, ক্যাম্পাসে, কর্পোরেট অফিসে—শুনো, তোমার ভেতরেও পাহাড় জেগে উঠুক। শহর তোমাকে সম্মান দেবে না, শহর শুধু তোমার মুখ থেকে ভাষা, শরীর থেকে পোশাক, আর আত্মা থেকে ইতিহাস কেটে নিয়ে খালি খোলস বানিয়ে রাখবে। তুমি যদি এখনো পাহাড়ি বলেই নিজেকে পরিচয় দাও, তাহলে আর বসে থেকো না। পাহাড় ডাকে, প্রতিরোধ ডাকে, ইতিহাস ডাকে। যদি না ওঠো, তবে পরবর্তী প্রজন্ম তোমার চুপ থাকার বিচার করবে।আমরা শান্তিপ্রিয় ছিলাম, কিন্তু কাপুরুষ নই। আমরা আলো চেয়েছিলাম, কিন্তু দাসত্ব না। আমরা অধিকার চেয়েছিলাম, ভিক্ষা না। আমরা সংবিধানে নাম চেয়েছিলাম, করুণা না। এখন সেই আলো, সেই নাম, সেই অধিকার আমরা নিজেদের নিয়মে নেব। অস্ত্র আমাদের শেষ পথ নয়, অস্ত্র আমাদের জবাব। পাহাড়ি অস্ত্র মানে স্বাধীনতা, নিজ শাসন, নিজ পরিচয়।এইবার ফেরার মানে ঘরে বসে যাওয়া নয়, এইবার ফেরার মানে যুদ্ধ ঘোষণা। যারা ভুলে গিয়েছিল আমাদের মুখ, তারা এখন আমাদের মুখোমুখি হবে। যারা ভাবত আমরা হেরে গেছি, তারা দেখবে আমরা কখনো থামিনি—শুধু সময় নিচ্ছিলাম ছায়ায় দাঁড়িয়ে। এখন আমরা সামনে। অস্ত্র হাতে, পতাকা হাতে, শপথ হাতে।নিজ ভূমি এখন আর ‘দাবি’ নয়—এটা অধিকার।নিজ অধিকার এখন আর ‘আবেদন’ নয়—এটা জবরদখল।নিজ সংস্কৃতি এখন আর ‘উৎসব’ নয়—এটা অস্ত্র, আগুন, আগ্রাসন।আর সংবিধান?সংবিধান যদি আমাদের না চেনে, তবে আমরাই নতুন সংবিধান লিখব, যা পাহাড়ের ভাষায় কথা বলবে।এইবার আমরা ফিরছি, শহর ছেড়ে পাহাড়ে, বুকের রক্তে আগুন জ্বালিয়ে।এইবার আমরা ফিরছি, অস্ত্র হাতে, মুখে শপথ—আর মাথা নত নয়।এবং যারা পাহাড়ের কান্না শোনেনি, এবার তারা গর্জন শুনবে।Hill story Voice of shanti