22/08/2024
ভারতের বাঁধ দেয়ার সাথে বাংলাদেশের বন্যার কি সম্পর্ক???
ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদী ৫৪ টি, যার ৫৩ টিই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ২০১৪ সালের জাতিসংঘের একাধিক দেশের উপর বয়ে যাওয়া অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী ভারতের এমন কিছু করার অধিকার নাই যার জন্য নদী গুলো বাংলাদেশের অংশে এসে শুকিয়ে যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে ৫৪ টি অভিন্ন নদীর মধ্যে ৪৭ টি নদীর গতিপথে ছোট বড় ৫০০ এর বেশি বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত।
# শুষ্ক মৌসুমে বা গ্রীষ্মকালে এই বাঁধ গুলো দিয়ে তারা নদীর পানি অন্যান্য নদী বা খাল দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে অন্যত্র নিয়ে যায় যা সেচ ও বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করে। বাংলাদেশের দিকে পানি বন্ধ করে দেয় কিংবা খুব অল্প পরমাণে ছেড়ে দেয়। বাংলাদেশের অংশে নদীর প্রবাহ বা স্রোত অনেক কমে যায়। যার ফলে সামান্য পানির সাথে আসা পলিমাটি নদীর তলদেশে জমতে থাকে, কালক্রমে নদীর বিভিন্ন জায়গা ভরাট হতে থাকে, নদীর গভীরতা কমে যায় এবং নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। নদী শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হয়ে গেছে, কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে, মৎস খাত ধ্বংস হয়ে গেছে। সার্বিকভাবে নদীগুলোর অববাহিকায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের সবগুলো নদীতেই প্রায় একি অবস্থা হচ্ছে।
# অপরদিকে বর্ষাকালে যখন প্রচুর বৃষ্টিপাতে নদীগুলোর ভারতীয় অংশে পানির পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায় তখন তারা বাঁধ গুলো খুলে দেয়। তখন বিপুল পরিমাণে পানি বাংলাদেশের দিকে আসতে থাকে। কিন্ত গ্রীষ্মকালে পলি দিয়ে ভরাট হওয়া নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে অতিরিক্তি পানি নদীর দুই কূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে, নদী ভাঙন ও হয়। ফসল, বাড়ি, গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং প্রাণহানিও ঘটে থাকে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে এই চিত্র নিয়মিত ঘটনা।
যদি গ্রীষ্মকালে ভারত ঠিকমত পানি দিত তাহলে নদীগুলোতে স্রোতের গতি থাকত। আর স্রোতের গতি থাকলে পলি জমে নদী ভরাট হতনা, নদী বর্ষাকালে আরও বেশি পানি ধারণ করতে পারত, বণ্যাও হতোনা।
# # # উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এমনিতেই ভারত নদীগুলোতে অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ করে, নদী শাসন করে ২০১৪ সালের জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে কোনরকম সতর্কবার্তা না জানিয়ে বাঁধ খুলে দিচ্ছে যেন এদেশের মানুষ পূর্বপ্রস্তুতি নেয়ার সময়টুকু পর্যন্ত না পায়। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে বন্ধুরাষ্ট্র ভারত আমাদের কতটুকু বন্ধু, তারা কতটুকু ভালো চায়, তারা কতটুকু ক্ষতি চায়। বাংলাদেশের উচিত জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ সংক্রান্ত কনভেনশন এ অনুস্বাক্ষর করে ভারতের বিরুদ্ধে দ্রুত আন্তর্জাতিক মামলা করা। এই দেশের সাথে বন্ধুত্বের নামে নিজেদের স্বার্থ আদায় করবেন, বন্ধু দেশের মানুষদের বর্ষায় পানিতে ডুবিয়ে মারবেন, গ্রীষ্মকালে খরায় মারবেন ঐ আলগা বন্ধুত্ব আর চলবেনা। এ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ, এ দেশের মানুষ এটা আর মেনে নেবেনা। নদী চলবে প্রকৃতির নিয়মে। কোন বাঁধ থাকবেনা, কোন নদীশাসন চলবেনা। পানি পাব সমানে সমান।
# # # # যে যেখানেই থাকুন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথাসাধ্য সাহায্য করুন।