22/02/2024
অচিন গাছ I I সিঁন্দুরমতি দিঘি I I পথের গল্প
#অচিন_গাছ
অচিন গাছ মানুষের কাছে আজও অচেনাই রয়ে গেছে। কত বছর আগে গাছটি জন্মেছিল, গাছের নাম কি, তা কেউ ই জানেন না। অনেক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী নমুনা হিসেবে এর ডাল, পাতা ইত্যাদি নিয়ে গেলেও এ গাছের আদি অন্ত বের করতে পারেননি। আর তাই এই গাছের নাম অচিন গাছ।
#সিঁন্দুরমতি_দিঘি
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক রহস্যময় ও বিখ্যাত পুকুর রয়েছে। এই পুকুরগুলোকে ঘিরে বিভিন্ন রকম উপকথা, পৌরাণিক কাহিনী এলাকায় প্রচলিত থাকে। সিঁন্দুরমতি দিঘিটিও তেমনি একটি পুকুর। এর প্রতিষ্ঠাকাল সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন ঐতিহাসিক তারিখ পাওয়া যায়না। তবে পুকুরটি এই এলাকার জনগণের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
বলছিলাম লালমনিরহাট জেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরমতি মৌজায় সিন্দুরমতি দিঘির কথা। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার উত্তরে এই পুকুরটির অবস্থান। দিঘিটি হিন্দু ধর্মের মানুষদের কাছে একটি তীর্থ স্থান। দীঘির জমির পরিমান ১৬.৫ একর।
পুকুরটিকে ঘিরে একটি প্রাচীন কাহিনী এলাকার ভক্তিপ্রবণ মানুষেরা বংশ পরম্পরায় পরম শ্রদ্ধায় বহন করে আসছেন। জনশ্রুতি আছে যে শ্রীলংকা থেকে আগত জনৈক রাজনারায়ণ চক্রবর্তী সন্তান লাভের বাসনায় এই দিঘি খনন করেন । তাঁর দুই কন্যা সন্তান হলে তিনি তাদের নাম রাখেন সিন্দুর ও মতি । সিন্দুরমতি দিঘি খনন সমাপ্ত হওয়ার পর দেখাযায় পানি উঠছে না । স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হয়ে জমিদার নবমীর দিনে পূজার আয়োজন করেন । পূজার আয়োজন করা হয় খননকৃত দিঘির ঠিক মাঝখানে । এই সময় জমিদারের মনে পড়ে যায় তিনি তুলসী পাতা নিয়ে আসেননি। সিন্দুর ও মতিকে পুকুরের শুকনো তলদেশে রেখে ছুটলেন রাজপ্রাসাদে। এমন সময় বিকট শব্দ করে পুকুরের তলদেশ ভেদ করে তীব্রবেগে অজস্র জলরাশি বের হতে লাগল। মুহূর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ পুকুর জলে ভর্তি হয়ে গেল এবং সিন্দুর ও মতি ঐ পানিতে ডুবে মারা যায় । সেই থেকে এই দিঘির নাম হয় সিন্দুরমতি । কালক্রমে ঐ স্থানের নামও হয়ে যায় সিন্দুরমতি ।
এর এক বৎসর পর চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে জমিদার এর এক পূত্র সন্তান জন্ম নেয়। জমিদার নবজাত পুত্রের নাম রাখেন ব্রহ্মদেব। ব্রহ্মদেবের বয়স যখন সাত বৎসর তখন জমিদার আবার এক নিদারুণ পরীক্ষার সম্মুখীন হন। তিনি দৈব আদেশ পেলেন চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের বুধাষ্টমীতে চিলমারীর সন্নিকটে ব্রহ্মপুত্র নদের
ত্রি-ধারায়(ত্রিবেণীতে) ব্রহ্মদেবকে পূণ্য স্নান করতে হবে। সত্যনিষ্ঠ জমিদার নির্ধারিত দিনের এক দিন আগে হাতীর পিঠে চড়ে রওনা হলেন চিলমারীর দিকে। মহাষ্টমীর ব্রাহ্মমুহূর্তে তিন নদীর সঙ্গমে জমিদার পুত্রকে নিয়ে নামেন। প্রথমে জমিদার নিজে স্নান করেন, তারপর পুত্র। পুত্র ব্রহ্মদেব নম: বিষ্ণু: মন্ত্র পাঠ করে নদীতে ডুব দেয়। আর সে ভেসে ওঠেনি। সেই রাতেই জমিদার স্বপ্নে দেখেন তাঁর সন্তানদের পবিত্র জীবন উৎসর্গের স্থান দুটি সর্বযুগের সর্বমানবের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত হবে। সেই থেকে চৈত্রমাসের অষ্টমী তিথিতে চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদের ত্রিবেণীতে এবং নবমী তিথিতে সিন্দুরমতিতে স্নানোৎসব পালন করা হয়।
১৯৭৫ সালে পুকুরটি সরকারী তত্ত্বাবধানে আংশিকভাবে পুনঃখনন করা হয়। সেসময় প্রচুর পরিমাণে প্রাগৈতিহাসিক বিভিন্ন প্রকার পাথরের মূর্তি, অনেক সোনা-রূপা ও তামার মুদ্রা পাওয়া গিয়েছিল। এর সবই ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এলাকার সংস্কৃতি সচেতন জনগণ মনে করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে এখানে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে খননকার্য চালালে আমাদের অতীত ইতিহাসের অনেক অজানা অধ্যায় উন্মোচিত হবে; বাড়বে এলাকার পর্যটন গুরুত্ব। আবহমানকালের বাঙালির তৃষ্ণা মেটানো এই পুকুরের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব তাই খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই।
কিভাবে যাবেন:
দেশের যে কোন স্থান থেকে কুড়িগ্রাম শহরে আসতে পারবেন। কুড়িগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত রাজারহাট উপজেলা। এখানে আসতে বাস কিংবা অটোতে ১০ টাকা ভাড়ায় পৌছে যাবেন। এখান থেকে অটো কিংবা রিক্সায় ১৫ টাকা ভাড়ায় সরাসরি ঐতিহাসিক সিন্দুর মতির দিঘির পাড়ে যেতে পারবেন। সিন্দুরমতিতে থাকার কোন হোটেল পাবেন না। রাত্রি যাপন করতে হলে আপনাকে কুড়িগ্রাম শহরে আসতে হবে।
#পথের_গল্প
#অচিনগাছ
#সিঁন্দুরমতি