Ahamed Jakir ツ

Ahamed Jakir ツ - মানুষ যতটা আপন সাজে

- ততোটাও আপন নয়.!

"বখাটে বউ"(পর্ব-৮)অচেনা লেখক যুথীর চিৎকার শুনে আম্মুসহ খালামনি আর ফুপীও দৌড়ে এলো। ওরা সবাই আমার দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রই...
31/12/2022

"বখাটে বউ"
(পর্ব-৮)
অচেনা লেখক

যুথীর চিৎকার শুনে আম্মুসহ খালামনি আর ফুপীও দৌড়ে এলো। ওরা সবাই আমার দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আম্মু যুথীকে বললো-
__"কি হয়েছে রে যুথী?"
যুথী এমন ভাবে হাপাতে শুরু করলো যেনো আমি তাকে খুন করছিলাম আর সে কোনো মতে বেঁচে গেছে। সে ঘনঘন শ্বাস নিতে নিতে বললো-
__"খালাম্মা বন্ন আফায় পাগল হই গেছে।"
আম্মু অবাক হয়ে বললো-
__"কি করে বুঝলি?"
__"আফায় আমারে খুন করতি লাগছিল।"
আম্মু চোখ কপালে তুলে বললো-
__"কেনো?"
__"আফায় পেছনের দজ্জা দিয়া পলাইতে আছিল আমি ধইরালাইছি তাই।"
আম্মু বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকালো। আমিও বড় বড় চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম-
__"এখন সামনের দরজা দিয়ে পালাবো। দেখি আমাকে কে আটকায়?"
তারপর আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে চিৎকার করে বললাম-
__"কে আটকাবি আমাকে, সামনে আয়।"
আম্মু আমার কথা শুনে আমার হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে রুমে নিয়ে গেলো। রুমে ঢুকে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো-
__"আজ অব্দি একটা প্রেম ভালোবাসা করার মুরদ হয়নি তোর, পালিয়ে কোথায় যাবি আর কার সাথে যাবি পাজি মেয়ে?"
আমি চিৎকার করে বললাম-
__"একাই পালাবো। পালানোর জন্য আবার কামলা লাগে নাকি? রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো। দরকার হলে বনে জঙ্গলে বা মরুভূমিতে ঘুরবো তাও বিয়ে করবো না।"
__"আশে পাশে জঙ্গল আছে?"
__"যেখানে আছে সেখানেই যাবো।"
__"আর মরুভূমিতে ঘুরার জন্য তো তোকে আরব দেশে যেতে হবে তাহলে।"
__"দরকার হলে আরব দেশেই যাবো তাও আমি বিয়ে করবো না।"
__"চুপচাপ ঘরে বসে থাক। যদি বেশি তেড়িবেড়ি করিস তাহলে তার ফলাফল খুব খারাপ হবে কিন্তু বর্ণ।"
আমি চিৎকার করে বললাম-
__"ঘরে বসে থাকবো না। আমি পালিয়ে যাবো, সরো সামনে থেকে।"
__"বেশি কথা বললে তোকে ঝাটা থেরাপি দেবো। চুপ করে ঘরে থাক। বাড়ি ভরা আত্মীয় স্বজন, তারা এসব শুনলে না জানি কি সব ভাববে! কোনো আওয়াজ করবি না বলে দিলাম।"
কথাটা বলেই আম্মু রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিলো। হায়রে জীবনটা আমার বাংলা সিনেমা হয়ে গেছে রে! সেই সিনেমার ভিলেন আমার আম্মু আর যুথী। যুথী ঠিকই বলেছে, এখন আমার শাবনুরের হাল হয়েছে। যদি সিনেমা হতো তাহলে এখন একটা ভীষণ দুঃখের গান হতো।

পালানোর সুযোগ না পেয়ে আমি ফাঁসির আসামী হয়ে বিয়ে নামক ফাঁসি হবার জন্য রেডি হলাম। কি আর করা! বাধ্য হলাম ঐ ধেড়ে বাবুকে বিয়ে করতে, তবে এর শোধ বর্ণিতা নিয়েই ছাড়বে। কাউকে শান্তি দেবো না আমি। আজ থেকে সবার শান্তিকে ছুটি দিয়ে দিলাম।
বরযাত্রী এলো হেটে হেটে, এই ছিল বর্ণিতার কপালে খোদা তায়ালা! ভেউ ভেউ করে কেঁদেও কুল কিনারা না পেয়ে কবুল বলতেই হলো আমাকে। আমার মতো একটা মুক্তার গলায় ঐ বাবু বান্দরটাকে ঝুলিয়ে দিলো সবাই মিলে। আমি তো লুট গেয়া, বরবাদ হো গেয়া খোদা! দুই জন মানুষকে তারা জোর করে ধরে ফাঁসি দিয়ে দিলো। পাশের বাসাটা আমার শ্বশুরবাড়ি। এই দুঃখ কোথায় রাখবো আমি!

বিদায় লগ্নে আব্বুকে খুঁজে পেলাম না। আম্মুও আমার থেকে দূরে দূরে বিষণ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ যুথী দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো-
__"ও বন্ন আফা গো, আপ্নে আমারে মাফ কইরা দিয়েন। কি করুম কন, আমি তো আপ্নেরে না দেইখা থাকতি পারি না। তাই পাশের বাড়িত বিয়া হইবো শুইনা আমি সেরাম খুশি হই ছিলাম। ভাবছিলাম দৈনিক আপ্নেরে দ্যাখতে তো পামু। তাই সবডির লগে হাত মিলাই ছিলাম।"
যুথীর কথা শুনে অবাক হলাম। মানুষের ভালোবাসার রং নির্যাস সব কিছুই ভিন্ন ভিন্ন হয়। একাক জনের ভালোবাসা প্রকাশের ধরন একাক রকমের, এর ভেতর থেকে ভালোবাসা নিংড়িয়ে বের করাটা খুব কঠিণ। যারা বের করতে পারে তারাই জিতে যায়। আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম-
__"আমার রুমে যতো কসমেটিকস আছে সব তুই নিস।"
সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো-
__"আমার ওগ্লা কিচ্ছু লাগবো না আফা। আমি চাই আপ্নে সুখে থাকেন।"
__"পাগলি একটা।"

সবার থেকে বিদায় নিয়ে আমার বর বাবুর পিছু পিছু হেটে হেটে শ্বশুরবাড়ি গেলাম। কতটা হতভাগীনি আমি!
শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতেই একটা মেয়ে আমার হাত ধরে আমাকে বাসর ঘরের বিছানায় বসিয়ে গেলো। সে চলে যাবার আগেই একদল মেয়ে এসে আমাকে ঘিরে বিছানার চার পাশে দাড়িয়ে হিহি শুরু করলো। শাড়ি গহনা পরে আমি আধমরা। এরা সবাই কখন যাবে কে জানে! চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম সারা ঘর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। বেড সাজিয়েছে বেলি ফুল দিয়ে। এসব দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এমন ঘোড়ার ডিমের মূলা মার্কা বিয়েতে এত আয়োজনের কি দরকার ছিল? এখন আমাকে সিনেমা স্টাইলে ঘোমটা দিয়ে বসে থাকতে হবে নাকি? থাকবো না বসে আর ঘোমটাও দেবো না। কে যেনো বললো, বর আসছে। এটা শুনে ওরা সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ওরা বের হয়ে যেতেই আমি আগে টান দিয়ে ঘোমটা খুললাম তারপর ওয়াশরুমে ঢুকে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হলাম। কিসের বাসর টাসর হুম! মানি না আমি এ বিয়ে। আর মানি না ঐ বুড়ো বাবুকে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি বাবু রুমে দাড়িয়ে আছে। ঘোমটা ওয়ালা বউ বিছানায় খুঁজে ছিল কি না কে জানে! আমার এমন পোষাক দেখে সে একটু অবাক হলো মনে হয়। কিছু না বলে সে একটা বই হাতে সোফায় শুয়ে পড়লো। তাকে দেখে আমার মেজাজ ডাবল গরম হয়ে গেলো। ঢং দেখিয়ে বই পড়া হচ্ছে। যতো সব ঢংগি, না না মেল ভার্সনে ঢংগা। বললাম-
__"আমি এখন ঘুমাবো।"
কোনো জবাব নেই। মনে হচ্ছে আমার কথা সে শুনতেই পায়নি। গায়ে আগুন ধরে গেলো। এখন তো বিয়ে করেই ফেলেছি, এখনো কি আমাকে সবার আত্মা ভাবতে হবে নাকি? ঘাড় মোটকে সবাইকে আত্মাগিরি দেখাতে ইচ্ছে করছে। চিৎকার করে বললাম-
__"শুনতে পাচ্ছেন? আমি এখন ঘুমাবো।"
সে আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে অবাক হবার ভান করে বললো-
__"আমাকে বলছেন?"
__"না, আকাশ বাতাসকে বলছি।"
__"আচ্ছা বলতে থাকেন, যদি তারা শোনে।"
__"একদম ন্যাকামী করবেন না। এটা আমার সহ্য হয় না।"
__"আমি নই আপনি ন্যাকামী করছেন। ঘুমাবেন ঘুমান, কে বারণ করেছে?"
__"লাইট জ্বালনো থাকলে ঘুমাবো কি করে?"
__"এভাবেই ঘুমানোর অভ্যেস করেন। আমি অনেক রাত জেগে বই পড়ি।"
__"অতীত ইতিহাস বাদ দিন। বর্তমান হলো নাচতে নাচতে বিয়ে করেছেন তাই মাশুল তো দিতেই হবে আপনাকে।"
__"কে নাচতে নাচতে বিয়ে করেছে? আপনার মতো বখাটে মেয়েকে কোনো ছেলে নাচতে নাচতে বিয়ে করবে না আর আমিও করিনি।"
__"কিহ আমি বখাটে মেয়ে?"
__"সন্দেহ আছে?"
আমি কিছু না বলে বেড থেকে নেমে টেবিল থেকে পানির বোতল হাতে নিলাম তারপর সব পানি ওর গায়ে ঢাললাম। সে লাফ দিয়ে উঠে বললো-
__"এই এই আপনি এটা কি করলেন?"
__"ভিজিয়ে দিলাম।"
__"আপনি যে বখাটে সেটা তো দারুণ ভাবে প্রমান করে দিলেন। ফাজিল বখাটে বদ মেয়ে একটা।"
__"বখাটের দেখেছেন কি? আপনার জীবনটা কয়লা তেজপাতা নিম পাতা আর কচু পাতা করবো। দেখি আপনি কি করেন।"
লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম। সে ওয়াশরুমে গেলো চেঞ্জ করতে। রুমে এসে সে আবার লাইট অন করে বললো-
__"এটা আমার রুম তাই আমার ইচ্ছেই শেষ কথা। মাইন্ড ইট।"
__"খ্যাতা পোড়াই মাইন্ডের। লাইট অফ না করলে লাইট ভেঙে ফেলবো বলে দিলাম।"
__"সাহস থাকলে ভাঙুন। এই বাড়িতে বখাটে গিরি চলবে না বলে দিলাম।"
আমি বেড থেকে নেম বেলকোণ বারান্দায় দাড়িয়ে চিৎকার করে আব্বুকে ডাকলাম। বেশ কয়েকবার ডাকার পরে আব্বু দৌড়ে এলো ওবাড়ির আমার রুমের বেলকোণ বারান্দায়। এসে হতবাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললেন-
__"কি হয়েছে ?"
__"আব্বু লাঠি দাও তো।"
__"কেনো মা?
__"দরকার আছে। কুইক লাঠি আনো।"
__"মা মারামারি করলে সবাই তোকে খারাপ ভাববে।"
__"ভাবুকগে।"
__"স্বামীকে মারতে নেই মা।"
__"কে স্বামী? এ বিয়ে আমি মানি না।"
__"এসব বলতে নেই।"
__"জোর করে বিয়ে দিয়েছো এবার লাঠি দাও বলছি। না হলে আজ আইলা নার্গিস তিতলিসহ নাম না জানা সব সাইক্লোন হবে।"
__"শান্ত হ মা। ছেলেটাকে মারলে তো মরে যাবে সে।"
__"কখন বললাম যে আমি তাকে মারবো?"
__"তাহলে কাকে মারবি?"
__"আমি রুমের লাইট ভাংবো।"
__"কেনো?"
আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম-
__"এত রাতে সে লাইট অন করে বই পড়ছে। আলোতে আমি ঘুমাতে পারছি না আব্বু। আমার ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে। এ তুমি কার সাথে আমাকে বিয়ে দিলে গো!"
বলতে বলতে আমি কেঁদেই ফেললাম।আব্বু অসহায় মুখ করে বললেন-
__"ঠিক আছে আমি এখনই লাঠি এনে দিচ্ছি।"
আমি দাড়িয়ে রইলাম। কয়েক মিনিট পর আব্বু লাঠি নিয়ে এলেন তারপর করুণ মুখ করে ঐ বারান্দা থেকে লাঠি এগিয়ে দিয়ে বললেন-
__"তুই লাইট ভেঙে ঘুমিয়ে পড়িস মা!"
__"আচ্ছা, গুড নাইট আব্বু।"
__"গুড নাইট।"
আমি লাঠি নিয়ে রুমে এসে ডানে বামে আগে পিছে না তাকিয়ে লাইটটা ভেঙে ফেললাম। তারপর ঘুমাতে গেলাম। বাবু অন্ধকারে তাকিয়ে আছে কি না বুঝতে পারছি না। তাকিয়ে থাক বা ঘুমিয়ে থাক, আই ডোন্ট কেয়ার। লাইট ভেঙে শান্তি পাচ্ছি এটাই বড় কথা।

পরের পর্ব আগামীকাল.....

"বখাটে বউ"(পর্ব-৬)অচেনা লেখক ইদানিং আমার আম্মু পাশের বাসার বাবুর প্রশংসার গীত শোনায়। এমন ছেলে নাকি পৃথিবীতে আর দুটো নেই।...
29/12/2022

"বখাটে বউ"
(পর্ব-৬)
অচেনা লেখক

ইদানিং আমার আম্মু পাশের বাসার বাবুর প্রশংসার গীত শোনায়। এমন ছেলে নাকি পৃথিবীতে আর দুটো নেই। আম্মু তো এমনিতেই সব কিছু বেশি বেশি বলে তারপর উপরে এটা তার সদ্য নতুন বান্ধবীর ছেলে। সব মিলেই ঐ বাবুর গীত শুনতে শুনতে আমার কানের পর্দা ফাটার উপক্রম হয়েছে। সন্ধ্যার কফির সাথে আজকাল অন্য খাবারের দরকার হয় না। পাশের বাসার বাবুর প্রশংসা কফিতে চুবিয়ে খেয়েই আমার পেট ভরে যায়। আব্বুকে তো তাও চোখ পাকিয়ে থামাতে পারি কিন্তু আম্মুকে চোখ পাকালে সেও উল্টা ডাবল চোখ পাকায়। কি যে জ্বালায় পড়েছি খোদা! বাড়িতে থাকাই যেনো দুষ্কর হয়ে গেছে। আমার তো রোজ আম্মুর সাথে ঝগড়া হচ্ছে ঐ বুইড়া বাবুকে নিয়ে।
সন্ধ্যায় কফি নিয়ে বসে টিভি অন করে সদ্য বসেছি ওমনি আম্মু জুড়ে দিলেন রেডিও।
__"জানিস বর্ণ ছেলেটা আসলেই খুব ভদ্র। সবাইকে কত্তো সম্মান করে।"
__"না তো জানি না। সে তো কখনো আমাকে সালাম টালাম করেনি তো তাই জানি না।"
__"তোকে সালাম করবে কেনো? তুই কি মুরব্বী নাকি?"
__"ভাবলাম অতি ভালো ছেলেরা হয়তো ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরও সালাম করে। সেখানে আমি তো খুব ছোট না।"
__"তোর সব কথাই আসলে ত্যাড়া ব্যাকা। একটু সোজা ভাবেও তো কথা বলা যায়।"
__"আর ঐ বাবুটার সব কিছুই সোজা তাই না? ওর প্রশংসা তুমি পানিতে গুলিয়ে খাও, খবরদার তার প্রশংসা আমার কফিতে চুবাতে আসবে না।"
__"নিজের তো কোনো গুণ নেই, অন্যের গুণ শুনলে তো গায়ে জ্বালা করবেই। সবই বুঝি।"
__"বুঝেই যখন ফেলেছো যে আমার গায়ে জ্বালা করছে তাহলে জ্বালা দিচ্ছো কেনো?"
__"আর কত কাল এমন ছন্ন ছাড়া বখাটে জীবন নিয়ে থাকবি? এবার অন্তত বিয়ে থা করে আমাকে উদ্ধার কর।"
__"ঐ ছেলের গুণকীর্তনের সাথে আমার বিয়ের কি সম্পর্ক?"
__"সম্পর্ক থাক বা না থাক, বিয়ে তো তোর করা উচিত। কত ভালো ভালো বিয়ের সমন্ধ এলো, তুই সব রিজেক্ট করেছিস। কখনো বিয়ে করবি না বলে গো ধরে বসে আছিস। পাড়ায় কত জন কত কি বলে, সব তো আমাকেই শুনতে হয়।"
__"আমাকে বসিয়ে খাওয়াতে যদি তোমাদের সব টাকা ফুরিয়ে যায় তাহলে টেনশন নিও না, আমি চাকরির চেষ্টা করবো। চাকরি হলেই তোমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। কিন্তু বিয়ের কথা বলবে না। মাইন্ড ইট।"
ওখান থেকে উঠে রুমে চলে এলাম। মেয়েদের জীবনটা কেনো এমন? এদের ইচ্ছের দাম নেই কেনো? মেয়েদের সব পরাধীনতার মূলেই কেনো আরেকটা মেয়ে থাকে? কেনো একটা মেয়ে বিয়ে করতে বাধ্য?

আন্টি যে আমাকে পছন্দ করেন সেটা তার হাব ভাবএ প্রকাশ পায়।
আব্বু যে ঐ বাবুকে খুব পছন্দ করেন তা তার কথাতেই বোঝা যায়। আম্মুরও বাবুর প্রশংসা নিয়ে গীত শোনায়। সব মিলেই বিয়ের কথা শুরু। কিন্তু আমি তো বিয়ে করতে চাই না। যাকে আমি ভালোই বাসি না তার সাথে ঘর বেঁধে কি করবো? আর যতো দূর জানি সেও আমাকে ভালোবাসে না। আমার মাঝে এমন প্রেম ভালোবাসা কাজ করে না। আমি সেভাবে কাউকে ভালোবাসতে পারি না। এমন মজা আমি অনেক ছেলের সাথেই করেছি। জ্বালিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছি। ঐ খোকা বাবুকেও জ্বালিয়ে আমি পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছি। এখানে কোনো ভিন্নতা নেই। যদি ভিন্নতা না-ই থাকে তাহলে বিয়ের কথা কেনো উঠবে?

আন্টি আব্বু আম্মুকে ডেকে বিয়ের কথা বলে গেছেন সন্ধ্যায়। আমি ওরুমে ঢুকার সময় বিয়ের কথা শুনে আর ঢুকিনি, বাহির থেকে সব শুনেছি। কাউকে বুঝতে দিইনি যে আমি সব জেনে গেছি। আমি কাউকে বোঝাতেই পারলাম না যে আমি বন্দী জীবন চাই না, আমি কোনো বন্ধনের দায় নিতে চাই না।
রাতে আব্বু রুমে এসে আমার পাশে বসলেন। আমার মাথায় হাত রেখে বললেন-
__"আর কত বখাটে মেয়ে হয়ে থাকবি? এবার অন্তত বিয়ে করে সংসারি হ মা।"
আমি মাথা নিচু করে বললাম-
__"না আব্বু। আমি এসব পারবো না।"
__"সে খুবই ভালো ছেলে।"
__"তবুও না আব্বু।"
__"তোর আন্টি নিজে তোকে বউমা বানাতে চাইছেন, তার মনে কষ্ট দিবি?"
__"আব্বু তুমি অন্তত আমাকে বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ! আমি তোমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে হয়তো বিয়েটা করবো কিন্তু ভালোবাসাহীন একটা সম্পর্কের দায় কত দিন বহন করতে পারবো বলো? ভালোবাসাহীন বিয়েটা কি আসলেই বিয়ে বলো?"
আব্বু আর কিছু না বলে মুখ ভার করে উঠে চলে গেলেন। আমি চুপচাপ বসে রইলাম। আমি নিজের ইচ্ছের বাইরে যেতে যে পারছি না। ছেলে যতোই রাজকুমার হোক না কেনো আমি বিয়ে করে কারো হুকুমে উঠাবসা করার পক্ষপাতী নই। তাই বিয়ে কখনো করবো না এটাই আমার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

কেউ আমাকে বিয়ের জন্য রাজী করাতে পারলো না। বিয়ের কথা শুরু হবার পর থেকেই আমি ছাদে যাই না, বেলকোণ বারান্দাতেও যাই না। এমনকি বেলকোণ বারান্দার দরজাও খুলি না। সেদিন বাতাসে বেলকোণের জানালার পর্দা সরতেই দেখি বাবু দাড়িয়ে আছে। এই প্রথম আমি তাকে অকারণে এখানে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম। জানি না কেনো সেও বদলে গেছে। আব্বু বললেন সে নাকি সারা বিকেল ছাদে বসে থাকে। আব্বু মাঝে মাঝে ওর সাথে কথা বলেন। ওর মন জুড়ে নাকি বিষণ্নতা ছেয়ে আছে যা আব্বুর অন্তর কাঁদায়।

সন্ধ্যায় আমি পায়ে নেইল পলিশ লাগাচ্ছি আর গান শুনছি। আব্বু রুমে এলেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলেন। মুখ দেখে বুঝলাম ভয়ানক মন খারাপ তার। বুঝতে আর বাকী নেই যে, আমার বিয়ে নিয়েই তার মন খারাপ।
__"কিছু বলবে আব্বু?"
__ "তোর কি অন্তর্দেশ কাঁদে না বর্ণ?"
হঠাৎ আব্বুর মুখে এমন কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। বিয়ে করতে চাইছি না বলে অন্তর্দেশ কাঁদতে হবে? আজব সব কথা বার্তা!
__"অন্তর্দেশ কেনো কাঁদবে?"
__"ছেলেটার বিষণ্নতা দেখে আমার হৃদয় কাঁদে। কিন্তু তোর অন্তর্দেশ কাঁদে না কেনো?"
সত্যিই আমার অন্তর্দেশ কাঁদে না। কেনো কাঁদে না তা আমি জানি না। আর জানতেও চাই না। আমি শুধু জানি এই ভালোবাসা-বাসি আমার আসে না। কিছুতেই না। যেদিন অন্তরের গভীরে ভালোবাসা অনুভব করবো সেদিন বিয়ের কথা ভাববো।

যুথী রুম ঝাড়ু দিতে আমার রুমে এসে বললো-
__"বন্ন আফা দুলাভাই কেমন দুখী দুখী মুখ কইরা দাড়াইয়া থাকে। সে মন কয় আপ্নেরে ভালোবাসে। দ্যাখলে সেরাম মায়া লাগে।"
আমি ওর দিকে তাকালাম। দেখলাম সে মুখটা করুণ করে কথা গুলো বলছে। কিন্তু ওর তো দুলাভাই আছে বলে আমার জানা নেই। আর যদিও বা থাকে সে আমাকে ভালোবাসবে কেনো? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
__"দুলাভাই কে? আর সে আমাকে ভালোবাসবে কেনো?"
সে লাজুক মুখ করে বললো-
__"দুলাভাই হইলো সীমান্ত ভাইজান।"
__"সীমান্ত কে?"
__"আরে আফা পাশের বাসার ঐ পোলাডা। যারে আপনে কা কা শোনাইতেন।"
__"কা কা শোনাতাম মানে?"
__"কা কা মানে আসলে গান।"
ও তাহলে ঐ বুড়ো বাবুর নাম সীমান্ত! আমি রেগে উঠে বললাম-
__"ভাষা ঠিক করে কথা বলবি। আর ঐ ছেলে কবে থেকে তোর দুলাভাই হলো?"

সে লাজুক মুচকি হেসে বললো-
__"হ্যার লগে যে আপ্নের বিয়ার কথা চলতাছে হেডাই আমি জানি।"
ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে সীমান্ত নামের বাবুর সাথে যেনো ওর বিয়ের কথা চলছে। সে যাই হাব ভাব করুক তাই বলে সে সীমান্তকে আমার বর মীন করে দুলাভাই কেনো ডাকবে? রেগে উঠে বললাম-
__"বিয়ের কথা হলেই বিয়ে হয় নাকি? খবরদার তাকে আর দুলাভাই বলে ডাকবি না! তাহলে কিন্তু আমি তোর দাঁত ভেঙে দেবো।"
আমার কথা শুনে সে ডোন্ট কেয়ার মুখ করে বললো-
__"আইচ্ছ্যা ভাইঙ্গেন। তাও ডাকুম।"
কথাটা বলেই সে রুম ঝাড়ু না দিয়েই বেরিয়ে গেলো। আজকাল দেখছি যুথীও আমার বিরোধী দল হয়ে গেছে। মেজাজটা সাত সকালে গরম করে দিয়ে গেলো।

আমিও পণ করেছি, কিছুতেই আমি ঐ খোকা বাবুকে বিয়ে করবো না। ঘোষণা দিলাম যে আমি চিরকুমারী থাকবো। কিন্তু বিস্ময়কর ঘটনা হলো কেউ আমার ঘোষণাকে পাত্তাই দিলো না। ইভেন আব্বুও না। সন্ধ্যায় এক সাথে নাস্তা করার সময় আমি বললাম-
__"আমার একটা কথা ছিল।"
কারো কোনো জবাব পেলাম না। তাই আবার কথা শুরু করলাম।
__"আমি চিরকুমারী থাকতে চাই আর এটাই আমার জীবনের একমাত্র ইচ্ছে। আশা করি তোমারা আমার এই ইচ্ছেটাকে সম্মান করবে।"
আব্বু আম্মু যুথী কেউ আমার দিকে না তাকালো, না কথার জবাব দিলো। মনে হলো কেউ কিছু শুনতেই পায়নি। তাদের অদ্ভুত আচরণ দেখে আমি হতবাক হলাম।
পরের পর্ব আগামীকাল...

"বখাটে বউ"(পর্ব-৩)অচেনা লেখক আম্মুকে পটিয়ে পাশের বাসার ঐ আন্টির সাথে বান্ধবী পাতিয়ে দেবার চেষ্টা করলাম। যেনো তাদের বাড়িত...
26/12/2022

"বখাটে বউ"
(পর্ব-৩)
অচেনা লেখক

আম্মুকে পটিয়ে পাশের বাসার ঐ আন্টির সাথে বান্ধবী পাতিয়ে দেবার চেষ্টা করলাম। যেনো তাদের বাড়িতে গিয়ে ঐ ভদ্র হ্যান্ডসামকে জ্বালিয়ে আসতে পারি। আম্মুকে পটানো খুব সোজা। যদি কেউ আম্মুকে বলে- "বাহ আপনি এত কাজ করতে এক্সপার্ট!
অথবা "আপনার রান্না খুবই চমৎকার। এক কথায় জবাবহীন।"
তাহলেই কেল্লাফতে। হয় আম্মু ফুলে লুচি হয়ে যাবে, নয় গলে স্যুপ হয়ে যাবে। আমি এই সুযোগটাই নিলাম। বানিয়ে বানিয়ে ঐ হিরোর মায়ের কথা বললাম। আম্মু কিচেনে রান্না করছে। আমি প্ল্যান সাজিয়ে নিয়ে হাজির হলাম কিন্তু কি বলে যে শুরু করবো সেটাই বুঝে পাচ্ছি না। যাই হোক কেশে কুশে গলা ঠিক করে বললাম-
__"জানো আম্মু সেদিন পাশের বাসার আন্টি বললেন, তোমার আম্মু এত কাজ করতে পারেন বাবাহ! আমি তো উনার এনার্জী দেখেই অবাক হই।"
আম্মু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
__"সে আমাকে কখন কাজ করতে দেখলো?"
এই রে সেরেছে! তাই তো, তিনি আবার কখন কাজ করতে দেখলেন? এখন কি বলি? ধুর সব প্ল্যান করে সাজিয়ে তবেই পটাতে আসতে হতো। হুড়মুড় করে পটাতে এসে এখন ফেঁসে না যাই। প্লিজ আল্লাহ দেইখো আমি যেনো ধরা না পড়ে যাই। আর একটা উপায় খুঁজে দাও কুইক, যেনো আম্মুকে ম্যানেজ করতে পারি। হঠাৎ কিচেনের জানালা দিয়ে ওদের কিচেনে চোখ পড়লো। আইডিয়াও পেয়ে গেলাম। থ্যাংকস গড! বললাম-
__"তার আর তোমার কিচেন তো সামনা সামনি তাই হয়ত তিনি তোমাকে কাজ করতে দেখেছেন।"
আম্মু বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো-
__"আর কি কি বলেছে রে?"
এই তো লাইনে আসছে ইয়াহু! আমি বেশ উচ্ছাস নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে বললাম-
__"আন্টি বলেছেন, কি দারুণ রান্নার ঘ্রাণ আসে তোমাদের কিচেন থেকে আল্লাহ! তোমার আম্মু নিশ্চয়ই খুব ভালো রান্না করেন!"
Md:AL-amin
এটা শুনে আম্মুর চোখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। আর তার সাথে আমার মুখটাও খুশিতে মাখামাখি হলো। মিশন তরতর করে সাকসেস হতে যাচ্ছে। আম্মু মুখটাকে লাজুক করে বললো-
__"আচ্ছা কাল ওদের বাড়ি গিয়ে তরকারী দিয়ে আসিস আর আমাদের বাড়িতে তাকে আসতে বলিস, পরিচিত হবো।"

এই রে মরেছি! অচেনা মানুষকে তরকারী দিতে যাবো কি করে? উনিই বা তরকারী নেবেন কেনো? ধুর ভাবলাম আম্মু আমাকে সাথে নিয়ে হয়তো ওদের বাড়িতে যাবে পরিচিত হতে। তারপর আমি ওবাড়িতে যখন তখন যাওয়াটা পাকা করে নেবো। তারপর আরাম আয়েশে ঐ বয়রা হিরোটাকে জ্বালাবো। কিন্তু তরকারীর বাটি হাতে সব গুবলেট হয়ে যাবে। আমি মুখটাকে ফাটা বেলুনের মতো করে বললাম-
__"আচ্ছা।"
আম্মু উচ্ছাসিত হয়ে বললো-
__"আমি কাল সকাল সকাল রান্না করবো। তুই সকালে একটু আগেই উঠবি। অতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাবি না। কিসের এত ঘুম ঘুম হ্যাঁ?"

লে ঠ্যালা! এখন সামলাই কি করে!
পটাতে গিয়ে তো নিজেই ফেঁসে গেলাম, ধ্যাত্তেরি। এখন তো দেখছি আমার ঘুমের দিকেও নজর চলে গেছে। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। কিন্তু মনে কথা চেপে রাখলে আখেরি লস আমারই হবে। তাই সরাসরি বললাম-
__"আমি সকালে উঠতে পারি না জানো না?"
আম্মু কড়া ভাষায় বললো-
__"কাল তোকে পারতেই হবে।"
আমিও মুখ ভেংচিয়ে কড়া গলায় বললাম-
__"পারবো না।"
আম্মু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললো-
__"পারবি না বললেই হলো? না পারলে কাল সারা দিন তোর খাওয়া বন্ধ।"
__"কিহ? পাড়া পড়শীর জন্য নিজের পেটের মেয়েকে তুমি খেতে দেবে না?"
__"না দেবো না।"

গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম। পটাতে এসে তো দেখছি জন্মের ফাঁসা ফেঁসেছি। সকালে না হয় উঠে আম্মুকে হেল্প করলাম কিন্তু তরকারী দিতে গেলে ওরা না জানি কি ভাববে? আর তাকে বলবোই বা কি? ঐ ছেলের মাকে তো আমি এখনো চোখেই দেখিনি। হঠাৎ আব্বুর কথা মনে পড়লো। একমাত্র আব্বুই পারেন আমাকে উদ্ধার করতে। যাই আব্বুর সাথে পরামর্শ করে আসি। দৌড়ে আব্বুর কাছে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি সোফায় বসে আব্বু পত্রিকা পড়ে হাসতে হাসতে হেলে হেলে পড়ছেন। পাশে গিয়ে বসে দেখলাম আব্বু ব্যঙ্গরস পড়ছেন। বললাম-
__"তোমার মেয়ে বিপদে আছে আর তুমি ব্যঙ্গ নিয়ে আছো?"
আব্বু পত্রিকা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে বললেন-
__"কি হয়েছে?"
আমি করুণ মুখ করে বললাম-
__"আম্মুকে পটাতে গিয়ে পাশের বাসার আন্টির প্রশংসা করলাম। এখন আম্মু বলছে কাল ওদের বাড়িতে গিয়ে তরকারী দিয়ে আসতে।"
__"নিশ্চয়ই রান্নার গুণ গেয়েছিস?"
__"হ্যাঁ "
আব্বু বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-
__"ক্যালো করেছো। এখন কাল সকালে উঠে আমাকে এক বস্তা বাজার করতে হবে। সে কি আর এক আইটেম রান্না করে পাঠাবে? ইয়া মাবুদ।"
__"বাজারের বস্তা ছাড়ো তো। আমি অচেনা বাড়িতে ঢুকবো তরকারীর বাটি হাতে। গিয়ে কি বলবো সেই বুদ্ধিটা দাও।"
__"থাম ভেবে নিই। তার আগে বল তো তোর মাকে পটাতে কেনো চেয়েছিস?
আমি ফিক করে হেসে বললাম-
__"যেনো ওদের বাড়িতে গিয়ে ঐ হিরোটাকে জ্বালিয়ে আসতে পারি।"
আব্বু খুশি হয়ে বললেন-
__"ভেরী গুড।"
__"এখন তাড়াতাড়ি আইডিয়া ভাবো।"
আব্বু চুপচাপ চোখ বন্ধ করে কি যেনো ভাবলেন তারপর বললেন-
__"শোন তরকারীর বাটি নিয়ে ডোরবেল বাজাবি, দরজা খুললেই ঢুকে পড়বি।"
__"এটা তো সবাই জানে।"
__"জানিসই যখন তাহলে কি জানতে এসেছিস?"
__"ঢুকে গিয়ে কি বলবো? বলবো, হুদাই আমার আম্মু আপনাদের তরকারী দিয়েছে, এখন ভালোবেসে গ্রহণ করেন, তারপর আমার মায়ের বান্ধবী হয়ে যান, আর আমি আপনার ছেলেকে ইচ্ছে মতো জ্বালাই, এটা বলবো?"
আব্বু মুচকি হেসে বললেন-
__"বলে দেখতেই পারিস।"
__"আব্বু ফাজলামি বাদ দিয়ে ভালো বুদ্ধি বের করো।"
আব্বু চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ দম ধরে থেকে বললেন-
__"বলবি আমাদের পাড়ায় নতুন কেউ এলেই আমরা তাদের বাড়িতে তরকারী পাঠাই। এটা আমাদের পারিবারিক রীতি।এটা বলে গল্প শুরু করে দিবি। সহজেই গল্প ছাড়বি না।"
__"দারুণ আইডিয়া। থ্যাংকস আব্বু।"

আব্বুর থেকে বুদ্ধি নিলেও ভরসা পাচ্ছি না। পাশের বাসার আন্টি যদি বলেন-
"আমরা অন্যের বাসার তরকারী নিই না।" তাহলে কি করবো? সে তরকারী না নেয় না নিবে কিন্তু অপমানজনক কোনো কথা যদি বলে তাহলে তো আমি শেষ। খুব টেনশনে ঘামতে শুরু করেছি। ধ্যত্তেরি কিচ্ছু ভাল্লাগছে না। সন্ধ্যায় যুথী কফি নিয়ে রুমে এলো। কফি টেবিলে রেখে বললো-
__"বন্ন আফা সকাল সকাল উইঠেন কিন্তু।"
এমনিতেই আমি টেনশনে ঘেমে নেয়ে একাকার এর মধ্যে ওর এমন কথা শুনে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। ধমকের স্বরে বললাম-
__"তুইও আম্মুর মতো শুরু করলি?"
সে ইনোসেন্ট মুখ করে বললো-
__"খালাম্মায় যা কইতে কইছে তাই তো কইলাম। আমি নির্দোষ আফা।"
রাগে শরীর জ্বলতে শুরু করলো। আম্মুটা আসলেই যা তা। চিৎকার করে বললাম-
__"খ্যাঁতা পোড়াই তোর খালাম্মার কথার। আর বালিশ পোড়াই তোর নির্দোষের। যা এখান থেকে এখন।"
সে করুণ মুখ করে বললো-
__"আমি কি করুম কন, খালাম্মার কথা না শুনলে তো সে রাগ করবো। আবার আপনেও রাগ করেন। আমি যামু কই?"
এই মেয়েকে পটাতে হবে অন্য ভাবে। কুইক একটা আইডিয়া বের করে ফেললাম। সে মেরুন কালারে নেইল পলিশ পছন্দ করে আর এটাই টার্গেট। আমি শান্ত স্বরে বললাম-
__"শোন যুথী তুই শুধু আমার কথা শুনবি তাইলে আমার মেরুন কালারের নেইল পলিশটা তোকে দেবো।"
নেইল পলিশ দেবো শুনে ওর চোখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। কিন্তু সে দুশ্চিন্তার ভান করে বললো-
__"আমি তো ঘুষ খাই না আফা, আমি খুব সৎ। তাও যখন খুশি মনে দিতাছেন তখন নিমুনে। খুশি মনে দিলে তো ঘুষ হয় না তাই না আফা?"
যুথীর কথা শুনে গা জ্বলতে শুরু করলো। হায়রে নিষ্পাপ সৎ রে! সে ঘুষ খায় না। অথচ চুপিচুপি আমার রুমে ঢুকে হাতে পায়ে নেইল পলিশ লাগিয়ে চলে যায়। আমি সব জানি, কিছু বলি না তাই। আর উনি এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো সে পাপের ভয়ে খাটের তলায় থাকে। এখন সব কথা মুখে এসেও থেমে গেলো। যুথীকে চেতিয়ে দিলে বিপদটা আমারই হবে তাই। মনে মনে সব চেপে রেখে বললাম-
__"হ্যাঁ খুশি মনে দিলে সেটা ঘুষ হয় না। তুই নিশ্চিন্তে নিতেই পারিস।"
সে খুশি খুশি চোখে তাকিয়ে বললো-
__"অহন কন আমারে কি কি করতে হইবো?"
__"প্রথমত তুই সকালে আমাকে ডাকবি না। আম্মুকে বলবি ডেকেছিস কিন্তু আমি উঠিনি। যদি তুই দরজায় ধুপধাপ বাড়ি দিয়ে আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাস তাহলে তোর খবর আছে।"
__"আইচ্ছ্যা।"
__"দ্বিতীয়ত আমি যেটা যেটা বলবো সেটা সেটা তুই শুনবি।"
__"বন্ন আফা একটা কামের লাইগা একটা জিনিস দিতাছেন, একটা জিনিসে কি সব কাম হইবো কন?"
বাপরে চালাক মেয়েরে! ঘুষ খায় না মুখে বলছে আবার সব কাজের জন্য ঘুষও চাইছে। এখন কিছু বলা ঠিক হবে না। আপাতত এই বিপদ থেকে আগে উদ্ধার হই তারপর যুথীকেও বোঝাবো যে সে কার থেকে ঘুষ চাইছে।
__"ঠিক আছে আপাতত তুই এই একটা কাজই কর। পরের কাজ পরে দেখা যাবে।"

যুথী চলে গেলো কিন্তু আমি টেনশনে হাটাহাটি করছি। আমি চোখ বন্ধ করে কল্পনা করলাম, তরকারীর বাটি হাতে আমি ওদের দরজায় দাড়িয়ে আছি আর ও বাসার আন্টি বলছেন, "আমরা অন্যের বাসার খাবার নিই না।"এটা শুনে আমি ফাটা বেলুনের মত ঠুস করে ফেটে স্ট্যাচু হয়ে গেছি।

পরের পর্ব আগামীকাল...

16/12/2021

- সবাই কারো না কারো কাছে স্পেশাল 💌

- But আমি ছাড়া✅

16/12/2021

জীবনে এমন কিছু কষ্ট আছে যা একান্তই নিজের ,
কাউকে বলেও বুঝানো যায়না🙂🥀

14/12/2021

Hello আন্টি আপনার মেয়ে 😑

আমারে ভালোবাসে না 😒

ওর Mobile নিয়ে নেন 🥴🤪

12/12/2021

- আমি তাকে যতবার মনে করি.!❤

- সে ততবার "নিঃশ্বাস" ও নেয় না.!🌻

11/12/2021

ভালোবাসতে সবাই পারে🥰

কিন্তু ভালোবেসে মানসিক শান্তি দিতে সবাই পারে না!❤️

11/12/2021

- আমার একটাই বদ অব্যাস 😪❤️

- সবাই আমাকে ভুলে গেলেও আমি কাউকে ভুল'তে পারি না🙃🌺

10/12/2021

- মানুষের পিছনে যেটা হাটে তার নাম ছায়া🙂🌸

- মানুষ যার পিছনে হাটে তা'র নাম মায়া!😪💔.

10/12/2021

- ডি'প্রেশন একটা সুস্থ মানুষকে

- তিলে তিলে অসু'স্থ এবং শেষ করে দেয়!💔

10/11/2021
28/09/2021

😥!!"ডিপ্রেশন কি জিনিস তারাই বুঝে "!! 😥

💔 ....যারা প্রতিনিয়ত নিজের ভেতর.... 💔

🥀 .... "নিজেকে দাফন করে দেয়"....🥀

রং ভরা যৌবন, জং ধরে শেষ....  !!      একপাশে শুরু, অন্যপাশে শেষ...  !!           এটাই জীবন....  !!
27/09/2021

রং ভরা যৌবন, জং ধরে শেষ.... !!
একপাশে শুরু, অন্যপাশে শেষ... !!

এটাই জীবন.... !!

27/08/2021

জুম্মা মোবারক❣️

Address

Rangpur

Telephone

+8801989655370

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Ahamed Jakir ツ posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category